সাড়া
এতক্ষণে ধাঁধাটা পরিষ্কার হল পরাশরের। আবছা কুয়াশার মধ্যে ফুটে উঠছে ছেলেবেলা। রাঙাভাই চৌকির মধ্যিখানে কাঁথাকানির বিছানায় শুয়ে ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে উঠছে। কাঁদছে। কাকিমা দৌড়ে এসে আঁচলে হাতের জল মুছে চাপড়ে দিচ্ছে। আলতো ছোটো ছোটো চাপড়। বুকে। আবার শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে একরত্তি ভাই। যেন পুতুল একখানা। হাঁ করে চৌকির কোণাটা ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পরাশর। মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠছে ভাই।
ও এমন করে কাঁদছে কেন?
সবে মায়ের গব্ভ ছেড়ে বেরিয়েছে তো। তাই এখনও মায়ের বুকের ধুকপুকটা শুনতে পায়। আর যেই হারিয়ে ফেলে, ওমনি কাঁদে। তখন চাপড় মেরে থামিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়, ঠাকুমা বুঝিয়ে বলেছিল।
মাথায় একটা জাড় কেটে যাচ্ছে পরাশরের। বৌ বলে পাগল। ছেলে বলে, ঢিলে। কপালে টাটকা কাটাটায় রক্ত শুকিয়ে জমে কাঠ হয়ে আছে। খুন্তি, বউয়ের। কাল সকালেই পড়েছে। পরাশর জলখাবারের জলমুড়িতে একটু চিনি চেয়েছিল। কচি ছেলের মতো ফুটফুটে সকালের রোদ দেখে খুব ফুর্তি হয়েছিল পরাশরে। চড়া-পড়া জিভটা শুলিয়ে উঠেছিল খুব। গরুর দড়িটা হাতে পাকিয়ে নিয়ে উঠোন ছাড়তে ছাড়তে ছেলে বলেছিল, চিনি কেন? একেবারে এইটা নাও না। দড়িটা একটু উঁচু করে দেখিয়েছিল নিতাই। দড়ি, গরু, সন্তান, - তারই। সব তার। ওই ছেলের ন্যাংটোবয়সের নালঝরা মুখের মতোই রোদ। একাবোকা। ন্যাওটা। কেবলই কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে গায়ে। খুন্তির ঘা খেয়ে মাথা ঝোঁকাতেই মাটির ওপর শাদা আলোয় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরতে দেখে হেসে ফেলে পরাশর। কী সুন্দর! কী মিল! রক্তের ফোঁটাটা পড়তেই যেন টাক্রায় হালকা আওয়াজ করে শুষে নিল মাটি। বউ, রক্ত, মাটি – সবই তো তার। পরাশর ঝুঁকে দেখতে গেল ...
কাপড়পেটার মুগুরটা পড়েছিল পিঠে। অমন মার এতদিনে গতরে সয়ে গেছে, কিন্তু এই মনজোড়া সুন্দরটা ভেঙে দেওয়ার জন্য খুব দুঃখ পেয়েছিল পরাশর। তারপর যাচ্ছেতাই গালিগালাজ। মর্ মর্ মর্ ... কিসের এত সুখ রে তোর চারধারে ... কুকুরের মতো বাতাস শুঁকে শুঁকে কী খুঁজিস তুই দিনরাত? পাগলের হদ্দ পাগল ... পাগলের ঝাড় ...
বুকটা মাটিতে ঠেকিয়ে অনেকদিন পর শুয়েছিল পরাশর। আর তখনই ওই ধুকপুকটা মাটি থেকে যেন দশহাতে উঠে এল বুকে। নিঃসাড়ে। তবে কি মায়েরই বুকের ধুক্পুক্?
লোহার লাইন কাঁপিয়ে ঝম্ঝম্ করে প্রায় এসে পড়েছে ট্রেনখানা। একগাল হেসে খুব প্রসন্নমনে লাইন থেকে গলাখানা তুলে নিল পরাশর।
এতক্ষণে ধাঁধাটা পরিষ্কার হল পরাশরের। আবছা কুয়াশার মধ্যে ফুটে উঠছে ছেলেবেলা। রাঙাভাই চৌকির মধ্যিখানে কাঁথাকানির বিছানায় শুয়ে ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে উঠছে। কাঁদছে। কাকিমা দৌড়ে এসে আঁচলে হাতের জল মুছে চাপড়ে দিচ্ছে। আলতো ছোটো ছোটো চাপড়। বুকে। আবার শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে একরত্তি ভাই। যেন পুতুল একখানা। হাঁ করে চৌকির কোণাটা ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পরাশর। মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠছে ভাই।
ও এমন করে কাঁদছে কেন?
সবে মায়ের গব্ভ ছেড়ে বেরিয়েছে তো। তাই এখনও মায়ের বুকের ধুকপুকটা শুনতে পায়। আর যেই হারিয়ে ফেলে, ওমনি কাঁদে। তখন চাপড় মেরে থামিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়, ঠাকুমা বুঝিয়ে বলেছিল।
মাথায় একটা জাড় কেটে যাচ্ছে পরাশরের। বৌ বলে পাগল। ছেলে বলে, ঢিলে। কপালে টাটকা কাটাটায় রক্ত শুকিয়ে জমে কাঠ হয়ে আছে। খুন্তি, বউয়ের। কাল সকালেই পড়েছে। পরাশর জলখাবারের জলমুড়িতে একটু চিনি চেয়েছিল। কচি ছেলের মতো ফুটফুটে সকালের রোদ দেখে খুব ফুর্তি হয়েছিল পরাশরে। চড়া-পড়া জিভটা শুলিয়ে উঠেছিল খুব। গরুর দড়িটা হাতে পাকিয়ে নিয়ে উঠোন ছাড়তে ছাড়তে ছেলে বলেছিল, চিনি কেন? একেবারে এইটা নাও না। দড়িটা একটু উঁচু করে দেখিয়েছিল নিতাই। দড়ি, গরু, সন্তান, - তারই। সব তার। ওই ছেলের ন্যাংটোবয়সের নালঝরা মুখের মতোই রোদ। একাবোকা। ন্যাওটা। কেবলই কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে গায়ে। খুন্তির ঘা খেয়ে মাথা ঝোঁকাতেই মাটির ওপর শাদা আলোয় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরতে দেখে হেসে ফেলে পরাশর। কী সুন্দর! কী মিল! রক্তের ফোঁটাটা পড়তেই যেন টাক্রায় হালকা আওয়াজ করে শুষে নিল মাটি। বউ, রক্ত, মাটি – সবই তো তার। পরাশর ঝুঁকে দেখতে গেল ...
কাপড়পেটার মুগুরটা পড়েছিল পিঠে। অমন মার এতদিনে গতরে সয়ে গেছে, কিন্তু এই মনজোড়া সুন্দরটা ভেঙে দেওয়ার জন্য খুব দুঃখ পেয়েছিল পরাশর। তারপর যাচ্ছেতাই গালিগালাজ। মর্ মর্ মর্ ... কিসের এত সুখ রে তোর চারধারে ... কুকুরের মতো বাতাস শুঁকে শুঁকে কী খুঁজিস তুই দিনরাত? পাগলের হদ্দ পাগল ... পাগলের ঝাড় ...
বুকটা মাটিতে ঠেকিয়ে অনেকদিন পর শুয়েছিল পরাশর। আর তখনই ওই ধুকপুকটা মাটি থেকে যেন দশহাতে উঠে এল বুকে। নিঃসাড়ে। তবে কি মায়েরই বুকের ধুক্পুক্?
লোহার লাইন কাঁপিয়ে ঝম্ঝম্ করে প্রায় এসে পড়েছে ট্রেনখানা। একগাল হেসে খুব প্রসন্নমনে লাইন থেকে গলাখানা তুলে নিল পরাশর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন