কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৩

পারিবারিক - ২য় বর্ষ ১ম সংখ্যা

সম্পাদকীয়


সম্প্রতি পালন করলাম ১৫ই আগষ্ট, ভারতের চির আকাঙ্খিত স্বাধীনতা দিবস। আমরা নিজেদের মতো করে দিনটি ভরিয়ে তুলি সেই সব বীরদের স্মৃতিতে যাঁরা নিজেদের জীবন দান করে উপহার দিয়ে গেছেন আমাদের স্বাধীনতা। আসলে আমাদের সামগ্রীক জীবনচর্যায় আমরা এত ব্যস্ত থাকি যে কখনো অনুভবই করতে পারি না যে কত রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ এই স্বাধীনতা উপভোগ করছি। তাই সমান্য প্রচেষ্টা আমাদের কবিতার পরিবারের তরুণ প্রবীণ কবিদের কবিতার ডালি দিয়েই বরণ করার। এছাড়া আমাদের আর উপায়ই বা কী, যতটুকুই বা করি, স্বাধীনতা আনতে যে পরিমান রক্ত বয়ে গেছে তার তুলনায় বড়ই নগন্য।

প্রকাশিত হলো এবারের পারিবারিক - বিশেষ স্বাধীনতা সংখ্যা। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, প্রকাশিত কবিতা-প্রবন্ধ-মুক্তগদ্য সম্পর্কে আপনাদের অভিমত অবশ্যই জানাবেন ‘কমেন্ট বক্স’-এ। সেইসঙ্গে কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন পারিবারিক-কে আরও সমৃদ্ধ করুন আপনাদের স্বরচিত মননশীল কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ পাঠিয়ে।

আমাদের কাছে লেখা পাঠাবার ঠিকানা : kobitaar.poribaar@gmail.com




পারিবারিক ব্লগজিনের পক্ষে

সুমিত রঞ্জন দাস

মুক্তগদ্য - জয়ন্ত সাহা

স্বাধীনতা দিবসে পরবাসে অসংলগ্ন টুকরো চিন্তা
(আত্মসমালোচনা)
জয়ন্ত সাহা


আজ সারা ফেসবুক জুড়ে স্বাধীনতা পুজো - স্বাধীনতা উৎসব - তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া - অনেকটা ভাবনা - চেতন অবচেতনের সমস্ত পরিশীলিত অনুভব দিয়ে কত লেখা কত কবিতা ভাবনা চিন্তা। কিন্তু একটা মিল আছে - সেটা হচ্ছে নৈরাশ্য, নৈরাজ্য আর নৈব্যক্ত নৈঃশব্দ হাহাহাকার বেদনা। মনে হয় যেন কিছু ঠগ, জোচ্চর, শয়তানের কুক্ষিগত হয়ে গেছে সব সুখ - আনন্দ - শান্তি।

বিষয়টা একেবারেই ভুল - একটা জিনিস চিন্তা করতে হবে - আমরা কিন্তু নিজেরাই নিজের কাছে পরাধীন। আমরা প্রায় কেউ-ই নিজের জীবন বাঁচিনা - অন্যের জীবন বাঁচি।

ধার করা জীবন - যেখানে শখ আহ্লাদ উন্নতি সমস্ত কিছুই দেখাবতের ওপর নির্ভর করে - ছেলে মেয়ে ভালো রেজাল্ট করলো - যতক্ষণ পর্যন্ত না দশ বিশটা আহা বাহ শুনলাম মন তৃপ্তি পায় না, বাচ্চাটা নব্বই শতাংশ নাম্বার পেয়েছে - মন খুশি নয় পড়শীর বা বান্ধবীর ছেলে একানব্বই শতাংশ পেয়েছে যে, বাবা হাসপাতালে তো বন্ধুরা কেন আহা উহু করছে না ? মন খারাপ - কেউ ধর্তব্যেই নিচ্ছে না "লোক আজকাল সব সেল্ফিশ হয়ে গেছে" সাথে সাথে সিদ্ধান্ত, পাড়াতে একটা ঘটনা ঘটে গেছে - বিষয়টা ইম্পর্টান্ট-ই না যতক্ষণ পর্যন্ত ষ্টার আনন্দ কিংবা চব্বিশ ঘন্টা টি ভি তে না দেখাচ্ছে - আর দ্যাখালেই ব্যাস! "ওই দেখো পৌছে গেছে! দেখেছ এদের আর খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই", একটা হোটেলে খেতে গেলাম কি একটা জায়গাতে ঘুরতে গেলাম - ব্যাস! যতক্ষণ পর্যন্ত না দশ বিশ পঁচিশটা ছবি আপলোড করতে পারলাম আনন্দ পনেরো আনা মাটি।

এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায়। কিন্তু একটি বৃদ্ধ পথে অসুস্থ হয়ে পড়লেন, একটি বাচ্চাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, একটি মেয়ে ইভ টিজিঙের শিকার হচ্ছে আমরা অপেক্ষা করি অন্য কেউ সাহায্য করুক - আমরা আগামীকাল পেপারে পড়ব - শেষ পর্যন্ত কি হোলো। যদি সেরকম একটা কিছু ঘটে যায় ব্যাস! সাজুগুজু করে মোমবাতির মিছিলে হাটবো - কত চিন্তা করি আমরা সমাজের জন্য।

এত চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে - এত দরিদ্র হয়ে যাচ্ছি আমরা - আমি নিজেকে এনালিসিস করেই বুঝি। যখন এসেছিলাম পাঁচ বছর আগে মিডল ইস্টে - ভেবে এসেছিলাম যাচ্ছি মাত্র দুটো বছরের জন্য - যেই কোম্পানিতে কাজ করতাম নাছোড় ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে অনুরোধ করেছিলাম "স্যার দু বছরের জন্যে ছুটি দিন!" উনি জীবন দেখেছেন - তাই মুচকি হেসেছিলেন "ওকে জয়ন্ত তুমি যাও! পাঁচ বছর পরে দেখা কোরো।" এখন বুঝি - গরীব হয়ে গেছি আরও বেশি।

আমার পারাদীপের দিনগুলি ছিল সোনায় বাঁধানো (যদিও তখোনো তা রিয়েলাইজ করতাম) - কিন্তু এখন চাহিদা আর যোগান - যোগান আর চাহিদা। ..... এই চাহিদার আবেদনে সাড়া দিতে গিয়ে ধাপ্পার শিকার হচ্ছি। বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে না পড়িয়ে টিউটরিয়াল হোম বা প্রাইভেট টিউসন ফেঁদে বসে শিক্ষকের ধাপ্পা, নার্সিং হোমগুলোতে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ব্যবসা বাড়িয়ে চিকিত্সকের ধাপ্পা, ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ারের ধাপ্পা, ইস্টার্ন বাইপাসে ওৎ পেতে বসে থাকা শিকারী পুলিসের ধাপ্পা, ওকালতি আর রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজী এর তুলনায় আমার কাছে নগন্য। ওদের কাছে তো কিসছু আশাই করিনা। কাকে ধাপ্পা? নিজেকেই নিজে ধাপ্পা। তবে ব্যতিক্রমী শিক্ষক, চিকিত্সক, উকিল, শান্তিরক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার-ও আছেন - সংখ্যা নগন্য - তাদের কে "ইউজলেস" বিশেষণ জুড়ে দিতেও ভুলি না।

আমার মনে হয় স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক মুষ্টিমেয় কয়েকজন যারা কনস্ট্রাকটিভ কাজের সাথে যুক্ত। নিরুচ্চারে আত্মম্ভরিতা ছাড়া তারা নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন এখনো। তাইনা দেশটা চলছে - তাইনা বেঁচে আছি. স্বাধীনতা একেবারে অর্থহীন শব্দ নয় - এই মানুষগুলি চিরদিন স্বাধীন ছিলেন আছেন ও থাকবেন। আমার মনে হয় স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মবলিদান দেওয়া মানুষগুলি ছিলেন প্রকৃত স্বাধীন - কারণ ওনারা মহত উদ্দেশ্যের তুলনায় ব্যক্তি স্বার্থকে অনেক ছোট মনে করতেন - আপন চাহিদা মেটানো তাদের কাছে ছিল সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

স্বাধীনতা দিবসে ওই মহতী চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হবার মানসিকতায় উত্তরণ হলে সঠিক ভাবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হবে.

নতুবা কেন জানিনা স্বাধীনতা শব্দটাই আমার কাছে একটা বিরাট ধাপ্পা -

স্বাধীন ভাবে চিন্তা করা, উপলব্ধি করা, দায়িত্ব কর্তব্য বোধে উদ্বুদ্ধ হওয়া এগুলো ভুলে যদি যাচ্ছি তাহলে দিন দিন আরও পরাধীন হয়ে পরছি।

গহীন নির্জনতায় স্বাধীনতা কাঁদে
কৌরব রৌরব বেওয়ারিশ আর্তনাদে
পাংশু মুখে অন্বেষণ দ্বার থেকে দ্বারে
রুদ্ধ বাতায়নে অনাহূত আমার আমি
ক্লান্ত, রিক্ত, ব্যর্থ বারে বারে
কোমল নিষাদ ভুলে গলায় বুভুক্ষু সুরে
নাকে বারুদের গন্ধ
শরীরে দগদগে ঘা ব্যথা প্রচন্ড
চোখে সত্যের অপলাপ
কানে ঝরাপাতা করুন বিলাপ
ভবঘুরে বাতাসের সশব্দ আলাপ
ঘন কালো মেঘ আঁধারপ্রাচীর মেলে
ঝঞ্ঝাঅশনি শিখায় ওঠে জ্বলে।
বিমূর্ত একটি প্রশ্ন সহসা বলে ফেলে -
স্বাধীন হতে চাওয়া জীবন তুমি কি পেলে? 


গল্প - শ্রীশুভ্র ভট্টাচার্য

ব্রাউনিঙের কবিতা সংকলন
শ্রীশুভ্র ভট্টাচার্য


অরুণ যে আমার বিশেষ নিকট বন্ধু তা নয়! তবে একেবারেই আলগা বন্ধুত্বও নয়! তাই ওর বিবাহে বরযাত্রীর যাওয়ার নিমন্ত্রণ না পেলেও বৌভাতে যাবার অনুরোধ এড়াতে পারিনি! কিন্তু মুশকিল হল কি দেওয়া যায় উপহার হিসেবে? যেটাই ভাবি সেটাই বড়ো খেলো মনে হয়! সাধারণ কেরানীপকেটের চৌহদ্দীতে যা হয় আর কি! যদিও উপহার যা দেব তা দেব ঐ অরুণের বৌকেই! পাক্কা ব্যবসায়ী অরুণ সামান্য তুচ্ছ উপহার নিয়ে মাথা ঘামাবে না জানি তবু ন্যূনতম ভদ্রতা রক্ষার দায় তো থাকেই! যদিও জানি অরুণের সাথে ওর ব্যবসায়ে লাভজনক কোনো বড়ো পার্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে খুশি করা যেত ওকে! কিন্তু আমি ছাপোষা মানুষ, আদার ব্যাপারীও নই! এটা তেমন উপলক্ষও নয়!

তবে সুকন্যা থাকলে আজ আমায় এত ভাবতে হতো না! কোথায় কোনটা মানানসইসেটা বুঝবার একটা দারুণ ক্ষমতা ছিল ওর! রুচিশীল একটা মনের তন্বী মেয়ে! ডানাকাটা পরী নয়, কিন্তু অপরূপ একটা দ্যুতি ছিল টানা দুটি চোখে! দৃষ্টির সেই গভীরতায় ছিল আত্ম প্রত্যয়ের দীপ্তি! আর ছিল কাব্য প্রীতি! নিজে লিখত না! কিন্তু ভালো কবিতার কদর জানতো! ইউনিভার্সিটির তুখর ছাত্রী! ইংরেজী সাহিত্যের বর্ষসেরা! সাহিত্য আমার বিষয় নয়! তবু সুকন্যাই আমাকে সুসাহিত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়! সেই থেকে আমারও কবিতা প্রীতি! সুকন্যা প্রেম! কবিতার মধ্যেই শ্বাস নিত যেন মনে হতো! আস্তে আস্তে আমাকেও ডোবালো ওতেই!
ব্রাউনিঙের কবিতা ছিল ওর খুব প্রিয়! খুব আবৃত্তি করতো!

সুকন্যার আবৃত্তি যে খুব উচ্চমানের ছিল তা হয়তো নয়! কিন্তু ওর মুখচোখের দীপ্তি বলার ছন্দ মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতো আমায়! তার কারণ যতটা কাব্য প্রেম ততটাই ওর প্রতি আমার দূর্বলতা! এই ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী দিনগুলোও একদিন স্মৃতির সরণীতে ঢুকে গেল! জীবিকার সন্ধানে কে কোথায় ছিটকে গেলাম! সুকন্যাও উচ্চতর বিদ্যার্জনের জন্য বাইরে চলে গেল! কিন্তু গেলেও যোগাযোগ যে রাখা যেত না তা হয়তো নয়! হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের রত্ন সুকন্যা আর আমার মতো সাধারণ মানুষের প্রতি বিশেষ টান অনুভব করেনি বলেই ধীরে ধীরে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল আরও! ব্যাপারটা এতই স্বাভাবিক ছন্দে ঘটে গিয়েছিল যে বুঝতেই পারিনি কখন সুকন্যা সরে গেছে দূরে!

বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলি এভাবেই মানুষের জীবনে কতো সহজেই যেন স্মৃতি হয়ে যায় একদিন! রোজকার বন্ধুদের, যাদের ছাড়া একদিনও চলে না, কালের গতিতে তারাও কোথায় হারিয়ে যায়! কিন্তু সুকন্যা! সেতো শুধুই বন্ধু ছিল না! তাকে ঘিরে ভবিষ্যৎ জীবনের সপ্নাভ আশার বিস্তার ছিল প্রতিদিনের শাখা প্রশাখায়! তবু সেও তো দূরে সড়িয়ে নিল নিজেকে! তবু এত দিন পরে আজ তাকেই মনে পড়ছে বড়ো বেশি করে! এই আগোছালো জীবন হয়ত আর আগোছালো থাকতনা! সামান্য একটা উপহার নির্বচন করতে কি বেহাল দশা আজ! এই সবই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল ওকে বলেছিলাম ব্রাউনিঙের কবিতা সংকলন উপহার দেব ওর জন্মদিনে! মহালয়ার দিন! দেবীপক্ষের সূচনায়! কিন্তু সে আর দেওয়া হল কই!

সত্যি সুকন্যাকে উপহারটা আর দেওয়ার সুযোগ ঘটেনি! এতদিন পর সেকথা মনে হতেই মনটা বড়ো বিষন্ন হয়ে গেল! মনে পড়ে গেল ব্রাউনিঙের দ্য লাস্ট রাইড টুগেদারের কথা! সুকন্যার আবৃত্তির সাথে আমিও গলা মেলাতাম কখনো সখনো! আসলে ব্রাউনিঙের মধ্যে যে দুরন্ত প্যাশানের সুতীব্র প্রকাশ ছিল, সেটা আমাদের উন্মন করে তুলত প্রথম যৌবনের তরুণ দিনে! হঠাৎ মনে হল, অরুণের বৌভাতে ব্রাউনিঙের সংকলন দিলে কেমন হয়? যদিও অরুণের জীবনে প্রফিট এণ্ড লসের ব্যালেন্স শীট ছাড়া অন্য কোনো কাগজের গুরত্ব নেই বিশেষ! তবে ওর বৌ হয়তো সাহিত্যপ্রেমী হতেও পারে! ওদের নবজীবনের শুভারম্ভ ব্রাউনিঙের রোমান্টিকতায় ভরপুর হয়ে উঠুক না কেন দাম্পত্যের প্রতিদিনের বাসরে!

অরুণদের পয়সা বুঝি মেঝেতে গড়াগড়ি যায়! এমন এলাহী ব্যাপার আগে কোনো বৌভাতে দেখিনি কখনো! গেটের সামনে দেশী বিদেশী কত রঙের ছোট বড়ো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে! আমন্ত্রীতদের পয়সার আভিজত্য পোশাকের গন্ধেই স্পষ্ট বোঝা যায়! এই রকম ধনদৌলতের ঐশ্বের্য্যের মাঝে নিজের কেরাণী গন্ধওয়ালা অস্তিত্বটা নিয়ে, একটা ব্রাউনিঙের কবিতার বই সম্বল করে ঢুকতে বড়ই সঙ্কোচ হচ্ছিল! নিজেকে এত অসহায় মনে হচ্ছিল যে ভাবছিলাম ফিরে যাব কিনা! অন্তত আসার জন্য বড়ই মর্মপীড়া অনুভব করছিলাম!

অরুণ বোধহয় কাউকে খুঁজতে বেড়িয়ে ছিল! আমায় দেখতে পেয়েই সহাস্যে এগিয়ে এলো! সাথে নিয়ে ভেতরে গেল! কিন্তু আমার সাথে কথা বলার অবসর নেই! আমায় বসিয়ে আবার কার সাথে চলে গেল বাইরে! আমি একা জড়সড় বসে হয়ে চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছিল্লাম! এই ধনৈশ্বর্য্যের বৈভবের মাঝে নিজেকে খুবই অপাঙতেয় লাগছিল! বেশ অনেক্ষণ পরেই অরুণের আবার আমার ওপর নজর পড়ল! আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম! নিজের অস্বস্তিতে বেশ হাঁফিয়ে উঠছিলাম! অরুণ নিজেই আমায় নিয়ে দোতলায় উঠল! নববধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে! আমাকেও উপহারটা দিতে হবে! নববধুকে ঘিরে স্বভাবতই অপরূপা মায়াবিনী সুন্দরীদের ভিড়! উৎসবের আনন্দে উৎসাহিত মুখগুলির কলধ্বনিতে মুখরিত পরিবেশ!

আগেও দেখেছি এইরকম বিবাহ অনুষ্ঠানে সাজসজ্জার ভিড়ে নববধুটি যে কে তা বুঝে উঠতে কয়েক সেকেণ্ড দেরি হয়ে যায়! নববধু হয়তো কারুর সাথে গল্পই করছিলেন! এইরকম বৈভবে উচ্চবিত্ত সমাজের সুসজ্জিত বেশভুষার ঝাঁচকচকে মানুষজনের মধ্যে আমি এতই বেমানান যে, সঙ্কোচ আর লজ্জা আমায় পীড়া দিতে থাকল! কিন্তু আসরে নেমে পড়েছি, আর ভাবা চলে না! মুখে একটা কৃত্রিম কষ্টকলপিত হাসি টেনে এগোলাম! এই অবস্থায় নিজেকে আয়নায় কেমন দেখাতো ভেবে সত্যিই হাসি পেল! সেই নিদারুণ হাসি মুখেই নববধুর নিকটবর্তী হলাম! অরুণ ওর বৌয়ের সাথে আলাপ করিয়ে দিতে উদ্যত হল! অরুণের ডাকে ওর নব পরিণীতা বধু আমাদের দিকে ফিরতেই মুখে হাসি ঝুলিয়ে উপহারটি দিতে হাত বাড়ালাম!

ব্রাউনিঙের কবিতা সংকলন! যে উপহার একদিন সুকন্যার জন্মদিনে ওর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল, আজ অরুনের বৌভাতে সেইউপহার তার বৌয়ের হাতে তুলে দিতে এসেছি! অরুণের গর্বিত হাসির লহড়াতেই দৃষ্টিবিনিময় হল নববধুর সাথে! আর তখনই বেনারসী আর স্বর্ণালঙ্কারের সজ্জায় সুকন্যাকে দেখে চমকে ওঠার পালা আমারই! কিন্তু সুকন্যা ওর, আমায় চেনার চমকটাকে কি অদ্ভুত সহজভাবেই না মনভোলানো হাসিতে ঢেকে দিলো! আরও আশ্চর্য ওর ঐ অভিজাত হাসির উপরেই ভর করে আমিও কত সহজেই সামলে নিলাম নিজেকে! তুলে দিলাম ওরই হাতে আমার ক্ষুদ্র উপহার ওর প্রিয় ব্রাউনিঙের কবিতা সংকলন! যেখান থেকে একদিন আবৃত্তি করতাম আমরা দ্য লাস্ট রাইড টুগেদার!


কবিতা - সুবর্ণা গোস্বামী

কে তুমি নাবালক ঈশ্বর? সুবর্ণা গোস্বামী



কে তুমি নাবালক ঈশ্বর?
গড়িয়ে নিচ্ছ পৃথিবীর গোলক,
অন্তহীন অবৃন্তক ছায়াপথে।
কাফনে মোড়াচ্ছো বিমর্ষ ক্রীড়াভূমি,
উত্তর গোলার্ধ অতর্কিতে কেড়ে নিচ্ছে
দক্ষিন গোলার্ধের সবুজ শস্যমাঠ;
আশ্রয়হীন মরুভূমি মাতৃহীন বালকের ক্ষোভে
ভূ-মধ্যসাগরে নিয়ত ফুঁসছে।

কে তুমি নাবালক ঈশ্বর?
ধোঁয়ায় টানছ পারমাণবিক নিকোটিন,
সরিয়ে নিচ্ছ মানবতার টেকটোনিক প্লেট,
অস্তিত্বে ভূমিকম্প,মগজে অসারতা,
মতান্তরে শান্তিপ্রিয় অভ্যাসের আরামকেদারা।
কখনও কখনও পাথুরে শ্বেতপরীটার চোখেও
উষ্ণ পস্রবন, প্রতিবাদহীন কন্ঠের লজ্জায়।

কে তুমি নাবালক ঈশ্বর?
বিশ্বজুড়ে প্রতীকী আবাসন,চোরা উপনিবেশ,
মুখগহ্বরে পৈশাচিক নীল দাঁত উদ্যত,
নীল নদের বুকের আঁচলে বর্বরতার ক্ষত
কোন জল ধোবে তোমার স্থলিত কামনার আঠা,
ভেজা ট্রাউজার ?

কে তুমি নাবালক ঈশ্বর?
কেড়ে নিচ্ছ মা ক্যাঙ্গারুর ওম থেকে
সদ্যোজাত ছানা,
লরেশিয়ার ভূ-খণ্ডের মত শত ছিন্ন শরীর,
সমস্ত সাইবেরিয়াব্যাপি মৃত হরিণের দেহ,
মৃতভূকদের উল্লাসে আরও খানিকটা মৃত।

কে তুমি নাবালক ঈশ্বর?
জীবনকে সংক্রমিত করেছ অপমৃত্যুর অসুখে,
সমান্তরাল প্লাবনে আবিষ্ট বিষুবরেখার বসতি,
ডুবে যাচ্ছে পৃথিবীর শেষ সভ্যতার চিহ্ন;
জলবায়ু সম্মেলনে বিষবাস্পে নাভিশ্বাস নিচ্ছে স্বদেশ।

কে তুমি নাবালক ঈশ্বর?
য়্যুরোপের পাঁচ তারকায় দাঁড়িয়ে থুতু ছিটাচ্ছ
তৃতীয় বিশ্বের টিনের চালে,
প্রতীকী দাক্ষিণ্যে সকালে বিল্লাচ্ছ মৌরুটি ,
বিকেলে বোমারু বিমান,শতধা পাকস্থলী।

কে তুমি নাবালক ঈশ্বর?
আঠারো বছর তোমার কবে পূর্ণ হবে?

কবিতা - নাশিদা খান চৌধুরী


ময়না তদন্ত
নাশিদা খান চৌধুরী



বিরোধীতায় বিপ্লব ডাকেনি কোন হুতাশে, তবু মর্মে মর্মে নজরদারী।
শব্দেরা থমকে যায় অনাহুত আতঙ্কে।
খুঁজে খুঁজে তোলপাড় তেপান্তর শুদ্ধ। থলে থেকে বেরোয় না চক্ষুশূল।

ক্লান্ত মন, সজাগ চোখ। বাতাসেও দুলে ওঠে ইন্দ্রিয়ের খেলাঘর।
বিধিনিষেধ মেপে মেপে জীবনপ্রবাহ! বালাই ষাট!
অসভ্যতা মেপে চলে অহরহ। চোখ তো নয় যেন টেলিস্কোপ!

বুকের পাটাতনে তোলপাড়।
যত্ন আত্তিতে লালায়িত মুখপোড়া অবিশ্বাসে অনর্গল ময়না তদন্ত চলে ইতিবৃত্তের।

কবিতা - তন্ময় ভট্টাচার্য

ভয়ার্ত ঔদাসিন্য
তন্ময় ভট্টাচার্য


কোনো এক গুটিবসন্ত শহরের চামড়ায়
নিয়ে আসে মৃত্যুর দাসখত।
সভয়ে এড়িয়ে চলে কাঁচঘেরা অভিজাত গন্ডি।
শুকনো পাতারাও আর মরতে চায় না,
সময়ের হাওয়ায় ভর করে পালিয়ে যায় দূরে।
ধুলোমাখা গাড়ির কঙ্কালটা
প্রাণপণে জপতে থাকে শেতলার নাম।
স্যুট-বুট পরা চর্বির বায়নাকুলার চোখ...
স্বল্পবাস তরুণীর সৌন্দর্যহানির আশঙ্কা...
কালো চশমায় স্বাস্থ্য দফতরের থিসিস...
পৌরসভার মানসিক তৎপরতা।

হঠাৎ এক অন্যমনস্ক লেখক
পথ ভুলে এসে দাঁড়ালো
সেই শহরের মাঝখানে;
সারা গায়ে বসন্তের ছোঁয়াচ মেখে
চলেও গেলো হাসতে হাসতে...

অধোমুখে দাঁড়িয়ে প্রশাসন।

কবিতা - অনুপ দত্ত

ও তুমি এসেছ ... কি সুন্দর স্বপ্নময়
অনুপ দত্ত


ভালবাসার জন্ম খোঁজো
সময়৷ক্ষণ৷তিথি৷ সে তো লেখা থাকে না ভালবাসার খাতায়
অত তিথি ক্ষণ সজ্ঞা হিসেব করে কি ভালবাসা হয়৷
সবুজ পাতার দেশ গিয়ে দেখেছ কি ভালবাসা!
চিরাতন রুহিতনের বিবিকে গিয়ে শুধাও ভালোবাসা
মাছের শরীরে জলের ভালবাসা৷ মাছ'ও কি মাপে৷
মাপে কি দিগন্ত রোদ বর্ষা শেষে ভিজে প্রান্তর ভালবাসা৷
ধুসর ঝরে যাওয়া পাতায় কি লেখা থাকে সবুজ পাতার ভালবাসা৷

অত হিসেব নিকেশ’এর ভালবাসা শেষে কি ভালবাসা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে!
হিসেব করে কি ভালবাসা হয়৷
ভালবাসার অঙ্গ ধরে দেখ৷ সে এক নির্মল শরীর৷
একটু ছোঁয়াতেই লজ্জাবতী শিরশিরিয়ে বলে ওঠে
“ও তুমি এসেছ.....কি সুন্দর স্বপ্নময়”৷


কবিতা - দীপিকা রয়

ঘুনেপোকা আর আমি
দীপিকা রয়


একাকীত্বআমাকে ঘিরে ফেলেছে
নিঃশ্বাসআমার বন্ধ হয়ে আসছে
মাথারমধ্যে একটা ঘুনে পোকা আপন ছন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে...
আরআমাকে কি যেন বলার সুযোগ খুঁজছে...
খানিকটারাগ হলো ঘুনেপোকার উকিঁ ঝুঁকি দেখে...
বললামতুমি কি কিছু বলতে চাও আমাকে?
সেবলল, তোমার কষ্ট দেখতে আমার ভালো লাগে না;
তবেকেমন দেখতে চাও আমাকে?
জগতেযত কষ্ট আছে তার চেয়ে সুখ আছে বেশী
কেনতুমি কষ্টের জল খাচ্ছো?
জেগেওঠো, ফিরে আস আলোয়,
দু’চোখ ভরে দেখ আলোর ঝর্ণাধারা
কতসুখ রয়েছে পৃথিবীতে...

ঘুনেপোকা,আমি যে আলো দেখার সাহস পাই না;
যখনিআলো দেখার চেষ্টা করছি
তখনিআমার হৃদয়ে ছোবল দিয়েছে কষ্ট
এতটুকুভালবাসা পাইনি, পেয়েছিঅবহেলা
না,নাআমি আর আলো দেখতে চাই না...

তুমিজীবনকে এমন করে দেখছো কেন?
যেতোমাকে ভালবাসে তার দিকে হাত বাড়াও
নতুনভাবে,নতুনরূপে সাজাও জীবনটাকে
চারিদিকেদেখো কত আনন্দ, কত মধুর এই পৃথিবী...

আমিযে নতুন পুরাতনের হিসাব দিয়ে
জীবনসাজাতে চাই না,ঘুনেপোকা!
আমিচাই- সত্যিকারের ভালোবাসা,
পেতেচাই,শুধু আমার করে আমার আপনজন... 


কবিতা - মাসুদুল আলম

কন্যা বিদায়
মাসুদুল আলম


দু’চোখ ঝরে পাড় ভাঙ্গে বুকের মাঝে
বাবা গো মাগো দাওগো বিদায় মোরে
শেষ বিদায় নিতে দাও চরণ তোমাদের ছুঁয়ে
নয়ন ভাসে বুক ভিজে যায় কাজল ধোয়া জলে
তোমাদের ছেড়ে যাচ্ছি গো আজ মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে।
বরষার মত নয়ন ঝরে উৎরায় কষ্ট মনে
বাইশটি বছর পার করিলাম তোমাদের অঙ্গনে
আঁচল তলে ছায়া দিয়ে রেখেছিলে আমায়
আজ বুঝি তোমাদের বাঁধন খুলে দিলে সহসায়।
বাবার আদর ছিল আমার আঁকা নীড় স্বপ্ন জুড়ে
হেঁসে খেলে মেতে ছিলাম তোমাদের মায়া ঘিরে
আজ যাচ্ছি ছেড়ে তোমাদের আঙ্গিনা
চেনা সব অচেনা করে বন্দী হতে পরের ঘরে।
পাগলী মা আমার_
এইতো রীতি এইতো নীতি,তোর মা ওতো এসেছিলো
তার মায়ার সংসার ছাড়ি......
বাবাকে রেখো গো মা তোমার আঁচল বাঁধা আঙ্গিনায়
মা যে তোমার শেষ ঠিকানা বাবা
তোমার কষ্টের গড়া বাগিচায়......
বিদায় দাও গো মা, বিদায় দাও গো বাবা
পরকে করিতে আপন বাহির পানে যাই
তোমাদের মান রাখতে যেন পারি
সেই দোয়াটুকু চাই।।

কবিতা - শিবুতোষ রায়

হে আকাশ তুমি বলে দাও
শিবুতোষ রায়


হে আকাশ তুমি বলে দাও,মাটির পৃথিবীকে
যতগুলো ঝড় বয়ে গেছে এই নীল অস্তিত্বে,
তাদের সবগুলো সহ্য করেছি আমি নির্দ্বিধায়
বলে দাও,এবার অবাক হোক মাটির পৃথিবী।

হে আকাশ তুমি বলে দাও,কাঁটাভরা পথটাকে
সেটা যেন আরো অসীম আর দূর্গম হয়।
গন্তব্যে চলাটা সোজা হোক আমি চাই না,
শত প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে করে
যেন আমার অপরাজেয় দুরন্তগতি হয় সার্থক।

হে আকাশ তুমি বলে দাও,মায়াবতী নারীদের
যতটুকু শোকাশ্রু ঝড়েছে আমার মায়াচ্ছন্ন হয়ে
তার এতটুকুতেও প্রলাপ বকি নি,করি নি শব্দ।
অপ্রকাশিত আমার এক ঘেঁয়ে মায়ার মিছিল
এই অসীম স্তব্ধতায় নির্বাক বাতাসও পরাজিত।

হে আকাশ তুমি বলে দাও,নিষ্ঠুর নিয়তিকে
সে যতই উল্টো দিকে আমার পথ রচনা করুক
জন্মান্তর আর পার্থিব দোষে
আমাকে দিকভ্রান্ত করুক হাজার বার,
তবু আমার লক্ষ্যে ঠিক আমি পৌঁছে যাবো।

হে আকাশ তুমি বলে দাও,এলোমেলো কষ্টগুলোকে
ওরা যতই আমাকে আবৃত করে রাখুক
বুকের মাঝে করে যাক্‌ আঘাত একের পর এক,
তবু কোনো প্রলেপেই অবরুদ্ধ হবো না আর
কষ্টরা নষ্ট হবে উদীপ্ত শিখার সংস্পর্শে।

হে আকাশ তুমি বলে দাও,সীমাহীন দারিদ্র্যতাকে
ওর উপস্থিতিতে পৃথিবী যতই দূর্বোধ্য গদ্য হোক
জীবনে দারিদ্র্যচিহ্ন আরো স্পষ্ট হয়ে দেখাও দেয় যদি
তবু আমি লিখে যাবো কবিতা ফুল পাখীদের নিয়ে
সরল পদ্যে পদ্যে ভরে তুলবো আমার সুখের রাজ্য।

হে আকাশ তুমি বলে দাও,শিহরিত মৃত্যুকে
তার থাবা আমার যত কিছুই ছিনিয়ে নিক্‌
তার ভয়াল রুপের শিকার
আমার চারপাশে পড়ে থাকা লাশের স্তুপ
আমাকে যতই চঞ্চল করুক;

হোক তার ছোঁয়া জীবনের শেষ প্রান্ত
তবু সে আমাকে হারিয়ে দিতে পারবে না,কেননা
আমি পান করেছি চিরঞ্জীব চিত্রকল্পের অমৃতসুধা।

কবিতা - মুস্তফা কামরুল আখতার

বিস্মরণ, অবোধ্য জংলাভুমিতে
মুস্তফা কামরুল আখতার


না হয় চেয়েছিলাম একটিবার সামান্য আশ্বাস, একটানা
বলে যাব আমার সারাদিনের গল্পগুলো, তুমি
অতি সাধারণ গল্পও অনেক বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে শুনবে ।
আমি তোমার চিবুকে সামান্য হাসির আভাসে শঙ্কিত হয়ে
বলবো, 'তুমি কি হাসছো ?'

না হয় চেয়েছিলাম সমস্ত কুশলতায় শোনাবো তোমাকে
আমার জল থই থই বেদনার কী কষ্ট, তার সবটুকুই ।
আমার গল্পের বেদনা তোমাকে চেপে ধরবে, আর তোমার গলা
বুজে আসবে আমার গল্প শুনতে শুনতে । তখন কান্নাভরা অস্ফুট
সুর আমার,'বিধি রে, আমায় ছাড়া রঙ্গ করার মানুষ পাইলি না !'
বলতে বলতে সকল বিকেল রাত হয়ে গেলে হঠাৎ
বলে উঠবো, 'তোমার কি বিরক্ত লাগছে ?'

আমি না হয় একটু বেশিই, না হয় চেয়েছিলাম আমার আগোছালো
কথায় তুমি অকারণেই মুগ্ধ হয়ে যাবে, অথবা আমার অযথা কথার
জঞ্জালকে কবিতা ভেবে উচ্ছ্বসিত হয়ে আলমারির কোণ
হতে বের করে আনবে তোমার নিজস্ব অস্কার । বলবে,'আমি
যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দগুলো শুনলাম ।' আসলে, একটু
গুটিয়ে যাই, 'আমি কি তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি, বলো ?'

আমার রঙ-হারানো শৈশব আর পুড়তে থাকা চমকহীন সবগুলো গল্প,
মানসগঠন, হাঁটার ভঙ্গি, কথার ঢং সব এক বড় গুনচিহ্নের নিচে
চাপা দিয়ে দিও তুমি । দরকারই বা কি, এছাড়া আমার আমিত্ব তুমি
কী ভাবে অনুভব করবে, বলো ?

না হয় চেয়েছিলাম, তোমার চাওয়াগুলোর
দীর্ঘ লিস্টিও না হয় পুরেছি পকেটে, এক এক করে শোধ করব ভেবে !
তাতে কি, ভেবো না তো, অনেক কেঁদেছো, আর নয় । কিছুতেই
মনে করো না, কী চেয়েছিল একজন, হোক না ভেজা চোখ !
বলে দিও, ' ফ্যাচফ্যাচে ভেজা চোখে ভীষণ এলার্জি আমার !

কবিতা - অরুণ সেনগুপ্ত

অঞ্জলি
অরুণ সেনগুপ্ত


রামধনু রঙ অবাক করা
বৃষ্টি ঝরা মন খারাপ
শীতল ছায়া ঘনিয়ে আসে
জড়িয়ে কত গল্প আলাপ ।

শিউলি ফোটার দিন যে এল
চতুর্দিক ঝরা তুষার
মেঘের তুলো যায় ছড়িয়ে
শরৎ বুঝি নবীন ঊষার ?

মন চলে যায় পিছন ফিরে
উরিধান পেটের ভিতর
সূচ বিঁধিয়ে দিন গড়ান
ভাইবোন কি খাচ্ছে আদর ?

নতুন গন্ধ আয় উবে যা
কান্না কতনা রাত গড়ায়
সিঁড়ির নীচে হর্ষ বিন্দু
কার হস্ত মুখ মুছায় ?

শুকনো চক্ষু নয়ন মেলে
গোটা হ্রদ লবণ জলের
চতুর্দিক ঝরা তুষার
ঢেরা দেয় হাড়-হাঁ কালের !

হাড়-হাঁ কাল হস্ত দু'জোড়া
কেউ কি ধুলো আজ অব্দি
'শরৎ তোমার অরুণালোর
অঞ্জলি ' মুগ্ধ-অবধি !

কবিতা - রবিউল মানিক

অন্ধ পেঁচা
রবিউল মানিক


গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম
কবিতার ভাষা আর ছন্দ,বিভাজিত ছন্দের ভেতর
বিন্যাসিত অতীত;যখন
পাখির ডানায় ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতাম এবং
স্পর্শ পেতাম ফুলের
সকালের শিশিরকণা এখনো কুলকুল শব্দে ভেঙে ফেলে
দ্বন্দ্ব,অসাধারণ উপমা
যেখানে ঘুমন্ত মানুষের স্বপ্ন স্বচ্ছতায় পরিপূর্ণ
সমূহ সাফল্যহীনতার মধ্যে অবশেষে
মহাকালিক আকাশে জমে থাকা অনন্ত জ্যোৎস্নারাশির মধ্য
থেকে বের হয়ে আসে অন্ধ পেঁচা

কবিতা - দীপক মান্না

তুমি আমার
দীপক মান্না


তুমি আমার গদ্য দিনের ফুল,
মধ্যরাতের তপ্ত ছোঁয়ায় শিহরিত শত ভুল।

তুমি আমার চোখ জুড়ানো আঁখি,
ভরদুপুরে পিয়াল শাখায় গোপন কথার পাখি।

তুমি আমার মায়ায় মোড়া ভোর,
শ্রাবণ মাসে আকাশ জুড়ে বর্ষা ঘন ঘোর।

তুমি আমার একলা নদীর নুড়ি,
চলার পথে তোমার সাথে গল্প কতই জুড়ি।

তুমি আমার বিষণ্ণ বেলার গান,
তোমার ছোঁয়ায় ভাঙছে কেমন হৃদয় অভিমান।

তুমি আমার নিশুত রাতের চাঁদ,
তোমার ভিতর হারিয়ে যাওয়ার কঠিন সে এক ফাঁদ।

তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া সকাল,
তোমারই ভিতর লুকিয়ে আছে আমার ইহকাল।

কবিতা - অহনা চক্রবর্তী

নাগরিক ক্লান্তি
অহনা চক্রবর্তী


আমাদের গতি অবরুদ্ধ,
আমাদের প্রতিপদে ভ্রান্তি;
আমাদের চাওয়া-পাওয়া প্রতিদিন
গ্রাস করে নাগরিক ক্লান্তি।

তুমি হাঁটো আমি হাঁটি প্রতিদিন,
জীবনের নানা অলি গলিতে;
কিছুতে মেলেনা পথ দুজনার
জীবন যে মাপা রঙ তুলিতে।

একই তুলি একই রঙে সাজানো
জীবনের কানভ্যাসে শান্তি!
আমাদের চাওয়া-পাওয়া প্রতিদিন,
গ্রাস করে নাগরিক ক্লান্তি।

কবিতা - হরপ্রসাদ রায়

অপলাপ
হরপ্রসাদ রায়


অনামী সময় আসে আর যায় ইচ্ছে মত
আমার ইচ্ছের ধার ধারবার অবকাশ নেই
অথচ আমাকে ঘিরেই লিখছে নিজের নাম

প্রতিবাদী কথা দেওয়ালের রঙ রোজ বদলায়
ভরসায় শুধু খড়িমাটি ফেলে ঘুনে ধরা ছাদ
বিবর্ণ দিন আলোর আড়ালে লুকাতে চায়
হেমন্তে রাখা খড় কুটো গুলো আধ-ভেজা জলে
আফসোস গুলো গজিয়েছে যেন ব্যাঙের ছাতায়
বেনামী গন্ধ মৌতাত নিয়ে হাতছানি দেয়

নিলয় অলিন্দ অনুভূতিশীল ফাঁকা গরাদে
আনমনা সাঁচে অবহেলা হয়ে ঝুলন্ত লতা
মেহুল হাওয়ায় মাথা দুলিয়ে দিচ্ছে সায়

প্রতিবেশী খুঁজে ফিরে আসে শুধু মিশ্র আবেগ
রুপোলী পাড়ের মেঘেও যেন কি ভ্রূকুটি লেখা
বেনামি জীবনে নাম খোঁজা মানে আইন ভাঙা ।


কবিতা - অনুপম রায়

প্রিয় রাগিণী 
অনুপম রায়


আজ আমি প্রিয়ার চোখে রাগ দেখেছি
তাই--
ছন্দ গেছে কেটে !
আসলে ওকে আমি... এত্তো ভয় পাই ...

যেমন করে চাঁদ-জোছনায়
জল লেগে থাকে ঠোঁটে !

ভুল বোঝাবুঝির শেষ ছিল না
ঘুম এসেছিল চোখে
তা বলে ওকে এড়িয়ে চলা !

সহসা চন্দ্রলোকে--
অপূর্ব সব কাজল কালোর
হাজার চন্দ্রকলা

প্রিয়ার চোখের গোপন রাগের
ঋষি-শিল্পী আমি
আমার আঁকা রঙ-তুলিতে
প্রিয়া আমার রাগে

আমার আগে প্রিয়া
আমি প্রিয়ার অনুরাগে !

কবিতা - নিবেদিতা ব্যানার্জি

আবার একদিন
নিবেদিতা ব্যানার্জি


আজ শেষ আবার একটা দিন ,
অনন্ত তো ছিল না, ফুরোতেই হত ,
তাই ফুরিয়ে গেল !!
আর দশ টা দিনের মতই শুরু হয়েছিল ,
কিন্তু বিশেষত্ব হীন থাকলো কি ?
নাহ ! বোধ হয় নয় ....
একটা মেয়ের খবর পেলাম ,
ওই মেয়ে টা ...আজ হারিয়েছে
নিজের অস্তিত্ব ....সমালোচনার মাঝে ছড়িয়েছে !!
একটা ছেলে ....খুব ই পথক্লান্ত ,
ওই মেয়েটার হাত ধরে জীবনের পথ ধরেছে ....
মেয়ে টা রোজ ভাবে ...ওর জন্যই কি?.....
ছেলেটি ভুলেছে ওর জীবন সঙ্গীত ???
ও হয় ক্লান্ত ..শীর্ণ ??...পা গুলো ভারী হয় ,
চলা কঠিন হয়ে ওঠে ???
মেয়েটা ভাবে হাত ছাড়িয়ে ছুটে পালায় ,
পারেনা !! দুটো হাতের আঙ্গুল যে ফাঁকে ফাঁকে গোঁজা!!
শিথিলতা পায়ে আসে ...হাতে আসে না তো ???
ওরা আবার হাঁটে!! হাঁটতেই থাকে ....
শ্রান্ত !! ক্লান্ত পায়ে ...গভীর ভাবে ধরা হাতে ,
সুধু উস্নতার আদান প্রদান ....
জীবনের উঁচু নিচু পথ পেরিয়ে ...
অভিমান অভিযোগ নিয়েও অনন্ত ওদের যাত্রা ....
হাত থেকে হাতে যায় একটাই স্নায়ু বার্তা ,
"পাশে আছি ".....

কবিতা - তাসমিনা জামান

নির্মম সমাপন
তাসমিনা জামান


সবুজ হয়ে ওঠা দগদগে ঘা'টা
মাঝে মাঝেই অগ্ন্যূৎপাত করে জ্বলে ওঠে
হিম করা কুৎসিত অট্টহাসি দিয়ে ,
পুরনো সেই জ্বলন দরজায় দাঁড়িয়ে
হাতছানি দেয়, শিউরে উঠি
সংকীর্ণ করে দেয় আমার ছোট্ট জগতকে ।

বিদ্রোহী হয় মন-
লীন হয়ে যাওয়া আমিকে জাগায়
জমে থাকা দৈনতায় থুবড়ে পরি
পথের মাঝে সময় ক্রমশঃ ফুরিয়ে আসে
হারিয়ে সব নিয়ন্ত্রণ বহুদুরের আধারেতে ঘটে
আপনার নির্মম সমাপন ।

ভেবেছিলাম ভুলে যাব সব
কতদিনই বা লাগে ভুলতে
এ যেন এক চক্র - ঘুরে ঘুরে আসে বার বার
আপাদমস্তক মগ্ন হই ভুলে যাওয়ার সাধনায় ।

সর্বগ্রাসী ঝড় যখন বুকে, উড়ে যাবার ভয় নাই
পুড়েছে তো সবই , এখন আগুনে কি এসে যায় ।

কবিতা - শিপ্রা হালদার

এ কি প্রেম?
শিপ্রা হালদার


রাতের পর রাত ঘুমোতে পারি না
বুকে এসে জমা হয় কতশত স্মৃতি ।।
তোকে যদি বলি একথা,
তুই বলবি এটাই তো প্রেম...
বয়স বেড়েছে অনেক
সাথে সাথে বেড়েছে মন।
ফেলে আসা দিনগুলো,
আজ অনন্ত অনিশ্চয়তার মাঝে,
অবোধ্য প্রশ্ন চিহ্নের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
কুয়াশা জড়ানো রাত ফিরে ফিরে আসে,
তোর ভালবাসায় মুছে গেছে অনেকটা সময়।
আকুল ঘাসের মতো শেষ ভালবাসাটুকু
তুই গিলে নিয়েছিস.........আর
উপড়ে দিয়েছিস আমাকে নিদ্রাহীন রাত।
আজ আদি অনন্ত নীলাকাশ তোকে শুভেচ্ছা জানায়
কারন আজ নক্ষত্র নেমে এসেছে তোর জীবনে।
বর্ষার সর্বনাশা স্রোতে ভেসে যাচ্ছে আমার হৃদয় ।
কোনো রাশ আজ আর আমি টানতে পারছিনা,
T.S. Eliotএর মতো বলতে ইচ্ছে করছে---

burning...burning...burning...।
রাতের পর রাত এই না ঘুমোতে পারার বিস্ফোরন ,
জানি না এর মানে কি??
তোকে বললে তুই বলতিস ----
এটাই তো প্রেম।।

কবিতা - নাফিসা ইসলাম

অরুন্ধতী চোখ
নাফিসা ইসলাম


খুব সাধারণ এই "আমি"
তুমি ভেবে নিলে অসাধারণ
বললে,
"তোমার অরুন্ধতী চোখ দুটো
আমাকে দেখায় পথ চলতে আলো "
কিন্তু,

এই 'আমি' যে খুব সাধারণ
আদুল শিশুর শরীরে
জড়িয়ে থাকা মাটির মতন
ভালবাসা মাখা মন
তোমার সাথে মিলি, হাসি, খেলি
কেটে যায় বিনিদ্র প্রহর
বাঁধি স্বপ্নে ভালবাসায় মনঘর

এইভাবে,
বয়ে যায় সোনালী সময়———
যেদিন আকাশ মেঘে ঢাকা

অরুন্ধুতি চোখ ঝাপসা

বুঝলে,
নিতান্তই সাধারণ 'আমি'
জোলো, বেহিসেবী, এলোমেলো

আবেগে চাইছি ভীষন
বায়বীয় শরীর শুধু ছুঁতে চায় মন,
ধীর পায়ে লুকালে কুজ্ঝটিকায়।
আর ডাকলে না কাছে
বসলে না পাশে হেসে
রাখলে না হাতে হাত ভালবেসে,
বুঝলাম,

আজ শুধু কুয়াশা সাঁঝে
ঘোলা জল দুজনের মাঝে,
জানলাম,
তোমার মন আমার মনকে
আজ আর চায় না ছুঁতে
আমার অরুন্ধতী চোখ আর
পথ দেখায় না তোমাকে...।

কবিতা - নাজমুল হাসান মজুমদার

বিপ্লব অথবা মৃত্যু
নাজমুল হাসান মজুমদার


বিপ্লব অথবা মৃত্যু ,
যেকোন একটাকে আমি বেছে নেবো ,
কিন্তু সেই বিপ্লবের মধ্যেও বিপ্লব থাকবে
আর সেই মৃত্যুর মধ্যেও বিপ্লব থাকবে ।

আমার ঘাম জড়ানো শাটের বোতামের সুতোতেও
ভালোবাসার বিপ্লব থাকবে ,
থাকবে একটা হাসির জন্যে
আমার মৃত্যুর বিপ্লব ।

ছাপোষা একটা মানুষ হয়ে
একটা স্বপ্ন সত্য করার বিপ্লব থাকবে ,
থাকবে একটা শিশুর নিশ্চিন্ত ঘুমের জন্যে
একটা টুকরো ভুমির জন্যে বিপ্লব ।

বিপ্লব থাকবে ,
একটা চোখ বন্ধ করা সমাজের জন্যে
কেউ একজন মৃত্যুটাকে বুকে নিয়ে
বিপ্লবে নেমে পড়বে ।

একটা মুক্ত আকাশের নিচে
প্রাণভরে বেঁচে থাকার জন্যে একটা বিপ্লব হবে ,
বিপ্লব হবে ,
শ্রমিকের ঘামের কাঁচা পয়সার হিসেব পেতে
বিপ্লব হবে ।

বিপ্লব হবে ,
আমার নিয়ন আলোয় চোখ ধাঁধানো শহরে
একটা শিশুর মুখে এক টুকরো রুটি তুলে দিতে
বিপ্লব হবে ।

বিপ্লব হবে ,
সমাজের কালো হাতগুলো ভেঙে দিতে
একটা শক্ত বিপ্লব হবে ।

বিপ্লব হবে ,
একটা আলাভোলা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে
একটা ফকিরও দেবে তার উপার্জনের অর্থ ।

বিপ্লব হবে ,
অনেকগুলো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে
কেউ একজন নিজের মৃত্যুকে বরণ করবে।

বিপ্লব অথবা মৃত্যু ,
যেকোন একটাকে আমি বেছে নেবো ,
কিন্তু সেই বিপ্লবের মধ্যেও বিপ্লব থাকবে
আর সেই মৃত্যুর মধ্যেও বিপ্লব থাকবে ।

কবিতা - জিনাত জাহান খান

লোনা পানির ফসফরাস
জিনাত জাহান খান

নাম প্রশ্নের উত্তর মৌন-আগন্তুকের নাম দেই সময়। নামাবলীও বলতে পারি ।

জীবনের কুসুমিত ঘ্রাণ ও ভালবাসা, আদিগন্ত মাঠের সবুজ খুঁটে-খুঁটে ,অলি-গলি,নগরে-প্রান্তে,আত্ম-প্রেমে মগ্নতা বিছিয়ে চলে সময় নামের এই আগন্তুক। বিড়ালের পায়ের ধ্বনিতে এই সময়,যেন কেউটে কিংবা চন্দ্রবোড়া সাপ!

যার সামসংকীর্তন বিষ নিঃশ্বাস অথবা মরণ ছোবল আহত করে প্রতিনিয়ত,রহস্যের ঘোরাটোপ রূপালি চাঁদকে ছুড়েঁ দেয়া প্রশ্ন-বাণে, মগ্নচৈতন্য থেকে মাথা তুলে বলে, “ সামান্যই চাই,শোনো আধুলী মাত্রই চাই,অনেক কিছুর মাঝে কিছু একটা খুঁজি।” মনের কথা মন থেকে খুলে, সময় তাঁর মুঠো ভর্তি করে তুলে দেয় আমার মুঠোয়। আমি পকেটে পুরে রাখি ,গান গাই তাস্বরে “ ও বিধির কি হইলো !”

নিমিষেই অর্ন্তঃদৃষ্টি,ঝাপসা হয়ে খুঁজে খুঁজে তালাশ করে আমার দেহ, কই আমি? আমার অস্তিত্ব কই? কার হাতে নাটাই? এ যেন নতুন জন্ম,নতুন আমি কিংবা নতুন আর এক সময়। নেশার ঘোরে ছুটছি, কাগজের গ্লোব হাতে নিয়ে,শিবনেত্র শহর থেকে উপশহরে।

আমার চলার পথে ঝর্ণায় গলছে বরফ আর পথে পথে ফুটে উঠছে অজস্র বনফুল। সময় আমাকে দ্রাবক করো,দ্রোণ ! সময় সেঁচে পেয়েছি অনেক; ভুলেছি তারুণ্য-তুফানে উপচানো লোনা পানির ফসফরাস। শূন্যে বিদ্ধ করি আত্মার অদৃশ্য ছুরি, ভুলে যাই চিরন্তর গন্তব্যে অনন্তের অপার উড্ডীন।

কী অনুপমে নিবন্ধ লেখে পান্থ ! আমিতো বলেছি, সামান্যের মাঝেই কিছু না কিছু পাওয়ার আছে,আছে ভ্রমণের ইতিবৃত্ত।

কবিতা - আহমেদ মুনীর

জীবন ক্যাম্বিস আহমেদ মুনীর
কী সুতীব্র ঘূর্ণন আর দহন
আবছা আলোয় প্রজ্বলিত
অক্ষরেখায় জীবাশ্ম ভস্ম
পরমাণু আগ্নেয় গোলায় জীবন কুন্ডলী
মিশে যায় মিশে থাকে আঁধারী জীমৃতনাদ
স্বপ্নভাঙ্গা ঝিরিলোকে সুগভীর পাহাড়ী তরঙ্গ
জলাধারে জলাবন বুকফাঁটা দীর্ঘশ্বাস
নীল সবুজ অতলে দোদু্ল্যমান স্ফটিক
উষ্ঞ স্রোতো স্রোতোবহা অন্তরীক্ষ
ক্ষীয়মাণ সাদা কালো সবুজ ধূসর জলধর
অঙ্গারে বিচিত্র অঙ্গ অনুষঙ্গে বোধ
বিপ্রতীপ রোধ
অবিনশ্বর অচেনা অজানা রমণ
কক্ষপথ আঁকড়ে ক্ষয়িষ্ঞু ভরবেগ
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্দু বিসর্গে অনন্ত আকাঙ্খা শোঁক
অস্থির বিষবাষ্পে উগরে ওঠে
অম্লরস জৈবিক অসাধ্য স্খলণ পরিপাতন
ভয়ে নির্ভয়ে এগিয়ে চলে নির্বাক পথিক
অনাবশ্যক আবশ্যক গন্তব্য দৃষ্টিরেখা
সমবিন্দুর সমিল অমিল মহামিলন ।।

স্রোতের উল্টোপথে বিহঙ্গ ছোটে
স্মৃতির সুতোয় বিস্মিত বিহান
আকণ্ঠ নীল গোলাপে
ফুলেল উৎসব
মূক বধির উল্লাস
বীভৎস উপচ্ছায়ায় জীবন ক্যাম্বিস ।।

কবিতা - প্রন্দীপন মন্ডল

স্বাধীনতার হযবরল
প্রন্দীপন মন্ডল


স্বাধীনতা? সেটা কি জিনিস?
প্রশ্ন সুধায় অষ্টাদশ আর অষ্টাদশী
তাদের জীবনের বাক্সে শুধু
সানগ্লাস আর পারফিউমের আবৃতি।
স্বাধীন হলে কি পারফিউমে আরও মদিরতা আসে?

স্বাধীনতা? চেনা চেনা লাগে
কতই বা হল, এইতো সবে একুশ পার
ঘরের বাইরে পা রাখতে গেলে
এখনও ভেতরের বাধা দুর্বার
স্বাধীন হলে সবকিছু থেকে কি মুক্তি মেলে?

স্বাধীনতা? চিনিতো তাকে
ওইতো সে পাড়ার ওই ফুটফুটে মেয়ে
পোষাকে আধুনিকতার কাটাকুটি
ফোনে সর্বদা করত আঁকিবুঁকি
জান্তব উল্লাসে সেদিন স্বাধীনতার পোশাক হল ছিন্নভিন্ন।

তাও নয়? তাহলে স্বাধীনতা কি?
কবে কোনখানে হয়েছিল পতাকা উত্তোলন
তার জন্য আজ পিঠ সোজা করে
করব সমবেত গান?
NONSENSE!! Get a life, man!!

আজও যন্ত্রণা প্রকাশে লাগে ভয়
স্বামীর ভয়ে, পরিবারের ভয়ে, নিজের ভয়ে
নিষেধের বজ্রমুষ্টি বা তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি
আমরা আসলে বেঁচে আছি পরাধীনতার ভয়ে
স্বাধীনতা নামক স্বর্গের দূত কি পারবে সেই ভয় কাটাতে?

প্রেমের নাগপাশে মন পরাধীন
স্বাধীনতা!! সেকি সোনার পাথরবাটি, কল্প রঙিন?

কবিতা - সিধ শর্মা

স্বাধীনতা বয়ান
সিধ শর্মা


মর্মন্তুদ বিরহের স্মৃতি নিয়ে আজ
ইতিহাসের বালুকাবেলায় শরশয্যা
দেশমাতৃকা শয়ান
শ্মশানের নীরবতা ভাঙ্গে হায়নার হাসি
লোভী শকুন ওড়ে ঘোলা আকাশে
স্বাধীনতা বয়ান।

"ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়।"
বুকফাটা আর্তনাদের পৃথিবী
দিগদিগন্তে অসহায়তার এক ছবি
কলমের কালি শুকিয়ে নির্বাক কবি।

স্বাধীনতার রূপকার নেতাজি সুভাষ
সয়েছে মসনদলোভী নেতার উপহাস
আকাশে বাতাসে পোড়া বাস
পতাকা টাঙিয়ে গীধ্র উল্লাস।

ক্ষুদিরাম, বিনয়, বাদল, দীনেশ প্রফুল্ল চাকী
আত্মবলিদান প্রপঞ্চ সমাজের ঋণ শোধ বাকী
ক্ষুধিত পাষান হাহাকার ফাঁকি ফাঁকি ফাঁকি
মাতঙ্গিনী, প্রীতিলতা, কল্পনা-র ছবি আঁকি।

স্বাধীনতার ভোর চকলেট, জিলিপির গন্ধ
নেতা মন্ত্রীর সাজানো বাক্য বন্ধ
নেশায় চুর হয়ে স্বাধীনতার বন্ধ্যা সন্ধ্যা
ইজ্জত সম্ভ্রম লুটোনো আয়েশা, সবিতা, ছন্দা।

শত শহীদের শুধতে রক্তঋণ
বঞ্চনার করুণ কাহিনী ভরা দিন
শোষকের উৎপীড়নে জীবন সঙ্গীন
তবুও চারণ কবির বীন -

স্বাধীনতা, খোঁজে ক্ষীণ আলোর মাঝে
কাঁটাতার স্মৃতিবাঁকে রক্তরঞ্জিত এক সাঁঝে
মনলিখিয়ের প্রার্থনা……
মানবতা স্বাধীন হউক
স্বাধীন ভারত দীর্ঘজীবি হউক।
উদয়াস্ত পরিশ্রম করে যে মানুষ খেটে খায়
সে যেন পেটপুরে দুবেলা যেন খেতে পায়।

কবিতা - দীপক মান্না

স্বাধীনতা দিবস
দীপক মান্না


তুমি এলে কোনো ফুল ফোটেনা আর
লজ্জাবতীর প্রতিটি পাতা, মাথা নুয়ে দাঁড়ায়,
পেখম মুড়ে বসে কাঁদে, অসহায় প্রজাপতি
আর, আকাশের মেঘ অঝোরে ঝরে সারাদিন।

যারা স্বাধীন হল, তারা অস্ত্র নিয়েছে হাতে,
রক্তের মেহেন্দি দিয়ে নকসা কাটে চেতনা জুড়ে
তারাই জেনেছে স্বাধীনতার মানে।

তাইতো, মিড-ডে মিলে হারিয়ে যাচ্ছে শিশু
দু-চেলা হয় কলেজ কিশোরী ধানের ক্ষেতে,
ফুটপাথে ক্ষুধার্ত পেট মেলে ধরে ভিখারির দল।

কতটা স্বাধীন হলে, দুমুঠো অন্ন পাওয়া যায়!
সন্ধ্যে রাতে নিশ্চিন্তে বারি ফেরে একলা মেয়ে!
গর্জে ওঠে সুপ্ত প্রতিবাদ! কান্না থামে মানুষের!
কে দেবে উত্তর! কারাই বা জানে তার গভীরতা!

কারা কবে মুছিয়ে দিয়েছে নির্লিপ্ত চোখের জল?
সর্বহারাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার অধিকার?
রক্ত শরীরে মেশে না আজ, শরীর রক্তে মিশে যায়।

তুমি কি তবে হারিয়ে যাচ্ছ, অবক্ষয়ের হাত ধরে?
দেখ, কিভাবে ছোট ছোট শিশুরা পতাকা নিয়েছে হাতে!
নির্যাতিত, বুভুক্ষু মানুষ, ওরা কি হয়েছে স্বাধীন?

ওদের জীবনে স্বাধীনতার কুসুম ফোটাও তুমি,
তেরঙ্গার আবীর ছুড়ে, মুক্তির প্রশস্ত পথ দেখাও।

করো অঙ্গীকার।

কবিতা - ঋত্বিক দাশ শর্মা

মৌনতা ছাড়া স্বাধীনতা নেই
ঋত্বিক দাশ শর্মা


বিচিত্র বাতি নিয়ে এলে সেই সন্ধিক্ষণে, ৬৭ বছরের স্বাধিনাতা ...
উদযাপনের বিদ্রুপ আমাকে বার বার পরিচয় করিয়ে দেয়
কিছু কান্নার সাথে, কিছু স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্টের সাথে ...
দেশমাতৃকার নগ্নরূপে মালা পরাবার যোগ্যতা হারায় ।

মায়াবী কোমল একান্ত আচলে মুখ ঢেকে আর স্তন পান করা যায় না
বিষ পানে বাধ্য হই কৄত্তিম পাওডার থেকে নিরগত তরল যা পুষ্টিকর
এখনো চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যায় নি ঘুম আসবে বলে...
পথে ঘাটে ট্রেনে বাসে জন্মিবার স্বাধীনতা হারাইনি, হয়ছি নভশ্চর ।

বোঝাতে পারি না নিজেকে পাঠশালায় শোনা নীতিকথার ভাষা
শিক্ষার স্বাধীনতা আইন হয়েছে শুনেছি রাজনিতির স্বার্থে
মহাজ্ঞেনী মহাজন আর আসবে না পথ দেখাবে বলে
এই দ্বিচারিতা... স্বজনপোষণ... দুর্নীতি...এ কোন স্বাধীনতার অর্থে...???

দুমুঠো অন্ন আর এক টুকরো বস্ত্র, এইতো পরম চাওয়া ছিল তোমার কাছে
এগরোল বিরিয়ানি মল কালচার প্রসাধনে পাশ্চাত্যকে পিছনে ফেলেছি
স্বাধীনতা পেয়েছি মদিরায় ডুব দিয়ে অনৈতিক উপার্জনের
বাক স্বাধিনতার নামে সংবাদমাধ্যমে অসামাজিক কুরুচিকর স্বার্থান্যেসি হয়েছি ।

জীর্নতার ছায়া দেশের চারিপাশে সুরক্ষার বলয় ভাঙ্গছে নাড়ী সম্মান এর
লক্ষীবাঈ মাতঙ্গিনী নিবাদিতারা আজ আর জন্ম নেবে না বোধহয় ...
তাই ‘মা’ বলেও ছার দেবেনা ধর্ষণের স্বাধীনতা পাওয়া মহানাগরিক,
হে ভারতজননী, মৌনতা ছাড়া গোপন রাখা আর কিছু স্বাধীনতা নেই তোমার মনেহয় ।

কবিতা - সমর কুমার সরকার

স্বাধীনতা
সমর কুমার সরকার


গিন্নী শুধায়,“বলো দেখি,স্বাধীনতা
কাকে বলে ? কেমন করে মেলে কোথা ?”
আমি বলি,“সে কি! তুমি তাও জানো না ?
বলছি শোনো,- যেমন পাখী মুক্ত ডানা
ছড়িয়ে ভাসে নীল আকাশে,আপন মনে,
নেই কো বাধা,নেই কোন চাপ কোন খানে,
খেয়াল খুশী বাঁচতে চাওয়ার সার্থকতা,
মুক্ত জীবন,মুক্ত প্রাণ ই স্বাধীনতা।

কিন্তু,ধরো; সেই পাখী কে গায়ের জোরে,
পুষবে বলে রাখলে খাঁচায় বন্দী করে,
সোহাগ করে যতই না দাও শস্য দানা,
বন্ধ খাঁচায় মনের সুখে উড়তে মানা,
পাখীর বাঁচা-মরা হলে তোমার অধীন,
জানবে,পাখীর জীবন বৃথা,সে পরাধীন।
স্বাধীনতা জীবনে তে সুখের খনি,
পরাধীনের জীবন ভরা শুধুই গ্লানি।”

গিন্নী আমায় বললো তখন শ্লেষের স্বরে,-
“বলার আগে দেখেছো কি বিচার করে ?
স্বাধীনতার মানে তোমার ভাল ই জানা,
আমার বেলায় তবে কেন উল্টো গোনা ?
মুখে বলো,নারী পুরুষ সমান সমান,
আমি স্বাধীন আছে তোমার এমন প্রমাণ ?
সংসার তো দেখছি এখন বাঁশের খাঁচা,
তার ভিতরে বন্দী আমি লক্ষ্মী পেঁচা।

এনেছিলে সুখ ও দুখের সঙ্গী করে,
‘সব অভিনয়’,পড়লো ধরা ক’দিন পরে।
হঠাৎ দেখি,পরাধীন এক বন্দী নারী,
বাধ্য হয়ে রান্নাঘরে ঠেলছি হাঁড়ি।
বাসন মাজা,কাপড় কাচা,ঘর গুছানো,
ছেলে মেয়ের লালন পালন,মন ভুলানো,
এসব কাজেই জীবন কেটে গেলো বৃথা,
একে তুমি বলবে নারীর স্বাধীনতা ?

পুরুষ জাতি তোমরা দেখি বেজায় রসিক!
নিজের বেলায় সব কিছু চাই সঠিক সঠিক।
এক বার ও কি ভেবে দেখো কিসের দোষে,
নারী জাতি র জীবন কাটে এমন ক্লেশে ?
যাদের বলো বড়াই করে জীবন সাথী,
হও না কেন তাদের ব্যথায় সমব্যথী ?
মুক্ত করে দাও গো এবার খাঁচার পাখী,
ঝাপটে ডানা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি।”

কবিতা - ঋতুপর্ণা সরকার

দেশ
ঋতুপর্ণা সরকার


লাল মাটির রুক্ষ রাস্তা
অথবা গ্রীষ্মের দুপুরে একা হাঁটা পীচগলা পথ
পাশে বৃষ্টির অপেক্ষায় নিষ্ফলা ক্ষেত
আর আশাহত চোখে অভাবের নিয়তি
দারিদ্রের ঘামে পুষ্ট ওই ক্ষেতের ফসল।
এই আমার দেশ!

হাড় কাঁপানো শীতে মহার্ঘ শালে নিজেকে মুড়ে দেখি
আমার গ্রামের স্কুলের বাচ্চাদের খালি পা,
খড়ি ওঠা চামড়া, শরীরে জীর্ণ ইউনিফর্ম
শিউড়ে উঠে বলি ‘ ঠাণ্ডা লাগবে যে!’
সরল হাসিতে উত্তর ‘পুখরে ডুব দিলম দিদিমনি, ঠাণ্ডা নাই’
আমার কাছে এই তো দেশ!

ঘোর গ্রীষ্মের দুপুরে চতুর্দিক ফুটিফাটা
টিউবওয়েলের নিষ্ফলা আর্তনাদ
মাটি মেশানো একটু জল এ তেষ্টা মিটিয়ে
ক্লাসে এসে বসে আমার ছাত্রী।
দশ বছরের বালিকা।
ক্লাসে ফ্যান নেই
ঘামের সাথে কটু গন্ধ মিশিয়ে হটাৎ বমি তার
‘সকালে কিছু খাসনি?’
বোবা দৃষ্টিতে খুঁজে পাই আমার উত্তর
আর
আমার দেশকেও!

এবার বর্ষায় বৃষ্টি পড়েনি।
গ্রীষ্ম বড় প্রলম্বিত!
ক্লাশে ঢুকতেই সামনের বেঞ্চির ছাত্রীটির প্রশ্ন
‘দিদি মাধ্যমিক হবে এবার?’
আমার অবাক দৃষ্টিতে তার উত্তর
‘চাষ হয়নি যে এবার , খাবো কী?’
লজ্জিত আমি খুঁজে পাই আমার দেশকে।

আমার দেশ?
মীড ডে মিলের ঘণ্টায় থালা হাতে ছুটে যাওয়াতে আমার দেশ
শুকনো লাড্ডুতে খুশী চোখে আমার স্বাধীনতা
রিপোর্ট কার্ডে টীপ সই এ আমার দেশ
ক্লাস এইটের বিবাহিতা ছাত্রীর সিঁদুরে আমার পতাকার রং
অনাহারে অপুষ্টির কান্নায় আমার দেশ গাঁথা
হেলথ সেন্টারের আয়রন ট্যাবলেট এ আমার দেশ
খালিপেটে প্রেয়ারে জাতীয় সংগীত গাওয়াতে আমার স্বাধীনতা দিবস পালন!
তব শুভ নামে জাগে
তব শুভ আশীষ মাগে
গাহে তব জয়গাঁথা......

কবিতা - সন্দীপ দাশ

ভারতবর্ষ
সন্দীপ দাশ

এতটা পথ পেরিয়ে এসেও
তোমার দু'চোখে জল ! পুত্র- কন্যার
হাতে হাত রেখেও তুমি
অসম্ভব স্থিতিশীল... আবেগহীন !
তোমার এক হাতে অফুরন্ত নিত্য নতুন খাদ্য উপকরণ আর
অন্য হাতে চিরদিনের ডাস্টবিন- রেললাইন-
ছুঁড়ে দেওয়া কলার খোসা......
তবু, তুমি অভুক্ত... চরম বিস্ময় !
তুমি এখনো ঠিক করতে পারোনি
কোনটা তোমার গ্রহণযোগ্য।
পুত্র- কন্যা, তাদের উত্তরসূরি
সবাইকে নিয়ে ষাট বছরের নিজস্ব ভরাট সংসার,
তবু, তুমি আবেগহীন !
তবু, তুমি সুখী নও !
অথচ, তোমার পুত্র- কন্যারা
বেশির ভাগই সুখী(অন্তত তাদের ভাষায়)।
আর তুমি, তুমি এখনও আপনজন খুঁজছ !
এরা তবে কে তোমার ?

একশ ত্রিশ কোটি সন্তানের জননী, মাগো,
আজও বুঝলে না
যার স্বামী নেই, এ যুগে তার কিছু নেই।
পুত্র- কন্যা সব মিথ্যে...... সব......।।

কবিতা - মনোজিৎ দত্ত

পন্‌র আগষ্ট ... জিন্দাবাদ।
মনোজিৎ দত্ত



হালাই ...
হগল বছরই পন্‌র আগস্ট -
পতাকা তোলার উৎস'ব যাই
... কেরে যাই -ঠিকঠাক বুঝিনা

হগলে যায় ... আমিও যাই
কেরে যাই ... জানিনা।

হেরা কয় -
স্বাধীনতা দিবস ...
পতাকা ঊঠব ...
ইস্কুলের মাইয়ারা নাচ্‌ব ...
পুলিশে লেফ-রাইট মারব ...
পুলাপানে ব্যায়াম দেখাইব ...
ডিগবাজি খাইব ..

বাড়িত আইয়া চিন্তা করি ...
কেরে গেছ্‌লাম ... কেরে গেছ্‌লাম ...
কোনো উত্তর নাই।
পইরত্যাক বারই মনে হয় ...
আর যাইতাম না
কিন্তু ঠিকই যাই
বারে বারে যাই
পইরত্যাকবারই যাই।

যাই ...
রইদে পুড়ি ... বৃষ্টিত্‌ ভিজি
আর, উত্তর খুঁজি
... কেরে যাই... কেরে যাই।

অখন বুঝি -
ইডার লগে রক্তের একটা টান আছে।
যেমন ... নিজে্রার ভালা কিচ্ছু শুনলে
মনডা ভালা লাগে
ই..রকমই পন্‌র আগষ্ট আইলে
মন্‌ডা নাইচ্যা উঢে ...রক্তের'ই টানে ।

মাইয়াডা ক্ষুদিরামের ইতিহাস পড়লে -
আমি বুঝি -
আম্‌রার শরী'র ক্ষুদিরামের রক্ত
এই রক্তে মরনের বিষ থাক্‌লেও
ইডা মরনরে ডরায় না
এই রক্তে পুষ্টি না থাক্‌লেও
ইডাত্‌ স্বাধীনতার রঙ মাখা।

আমি বুঝতাম পারি -
জীবনের পাতাত্‌ স্বাধীনতা না থাক্‌লেও -
আম্‌রার রক্তে ... যে স্বাধীনতা
আম্‌রার চওখে ... যে স্বাধীনতা
আম্‌রার বুকে ... যে স্বাধীনতা -
ঘুমাইয়া রইছে -
ইডা একদিন জাইগ্যা উঠবই ... উঠব
উঠবই ... উঠব
উঠবই ... উঠব।

এইলাইগ্যাই বুধ হয় ...
পইরত্যাক বছর
আগষ্ট মাস আইলই আমার মনডা
খুশীত্‌ নাইচ্যা উঢে।

হ... বাবুরা
আমি পইরত্যাকবারই ...
পন্‌র আগ'ষ্ট -
পতাকা তুলাত্‌ যাইমু,

পন্‌র আগষ্ট ... জিন্দাবাদ।
স্বাধীনতা দিবস ... জিন্দাবাদ।