কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ ৫ম সংখ্যা

অথ লুপ্তলাঙ্গুল কথা


হে বিদ্বব্জন, পূর্বে উল্লিখিত 'বাবু'র ন্যায় একবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে মনুষ্যকুলে আরও একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের দর্শন ঘটিবে যাহারা নিজদিগকে 'কবি' বলিয়া আখ্যা দিয়া আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগিবেন। আপনারা সকলেই অবগত আছেন কবিরা সাধারণতঃ কাগজ কলম লইয়া কাব্য রচনা করিয়া থাকেন, কিন্তু এই যুগের 'কবি'রা কলম লইয়া কাগজে কবিতা লিখিতে অভ্যস্ত হইবেন না। কমপিউটার নামক একটি যন্ত্রের সাহায্য লইয়া কাব্য রচনায় মগ্ন থাকিবেন। এইসকল মনুষ্য নেটিজেন কবি বলিয়া খ্যাত হইবেন। পুরাকাল হইতে কাব্য রচনায় ছন্দ, মাত্রা প্রভৃতি কিছু পূর্বনির্ধারিত প্রথা বাংলা সাহিত্যে বর্তমান। কিন্তু এই বিশেষ কবিরা সেই সকল প্রথাগত ছন্দ বা মাত্রা মানিতে সচেষ্ট না হইয়া বরং বলিবেন ছন্দ বা মাত্রার বাঁধনে তাঁহাদের কাব্যিক ভাব নষ্ট হইয়া যায়। প্রথাগত বাক্য রচনার পদ্ধতি তাঁহারা ভাঙ্গিয়া শব্দ ওলটপালটে তাঁহারা বেশি আনন্দ উপভোগ করিবেন। কেহ কেহ দুই তিনটি শব্দ একসাথে জুড়িয়া এবং ক্রীয়াপদ বাদ দিয়া নতুন শব্দ গঠনে লিপ্ত হইবেন। যতি চিহ্ণের ব্যবহার এঁনারা প্রায় ভুলিয়াই যাবেন। স্বপক্ষ সমর্থনে এই নব্য 'কবি'রা যাহাই বলে থাকুন না কেন, প্রকৃতপক্ষে যথাযথ যতি চিহ্নের ব্যবহার এই 'কবি'রা কখনই জানিবার চেষ্টা করিবেন না। এই সমস্ত 'কবি'রা তাঁহাদের স্বরচিত কবিতা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করিতে সমর্থ হইবেন না, কারন প্রথাগত কোন ব্যাকরণ মানিয়া কোন বাক্যই কবিতায় সম্পূর্ণরুপে বিদ্যমান থাকিবে না। কয়েকটি স্বাধীন শব্দ পাশাপাশি বসিয়া নিজেদের মধ্যে বিবাদে বিদ্যমান থাকিবে। তাঁহাদের লেখা কবিতা কেবল পাঠক/পাঠিকারাই ব্যাখ্যা করিতে সমর্থ ইবেন।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, কিছু মনুষ্য যাঁহারা নিজেদের অধিকতর বোদ্ধা ভাবিয়া আত্মসন্তুষ্টি লাভ করিয়া থাকিবেন তাঁহারা সমাজে পাঠক/পাঠিকা বলিয়া খ্যাত হইবেন। একটি কবিতাও না লিখিয়া তাঁহারা অন্য ব্যক্তির কবিতার সমালোচনায় নিজের সমস্ত সময় ব্যয় করিতে ব্যস্ত থাকিবেন। আধুনিক সমাজব্যবস্থা এইসকল কার্যাবলী উৎসাহ প্রদানের জন্য মধ্যে মধ্যে আলোচনাসভা বলিয়া বিশেষ সভায় এইসকল কবিদের বিশেষ বিশেষ পুরস্কার দানে সরস্বতীর বরপু্ত্র/কন্যা রুপে স্বীকার করিয়া তাঁহার বক্ষের ছাতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করিবেন। ফলস্বরুপ তাঁহারা সহজেই পরবর্তীকালে নিজইচ্ছায় যাহাই লিখিবেন তাহাই প্রথা বলিয়া সকলকে মান্য করাইতে সচেষ্ট হইবেন।

হে বিদ্বজন, কাগজ কলম ছাড়িয়া এই সকল 'কবি'রা অন্তর্জালে ফেসবুক নামে একটি সমাজব্যবস্থায় আত্মবিসর্জন দিয়া থাকিবেন। ইহার নামে ফেস অর্থাৎ মুখ থাকিলেও মুখপাত্র কেহ থাকিবেন না, পরিবর্তে সকলেই বাছিয়া বাছিয়া অন্যকোন সুশ্রী তরুণ-তরুণীদের ছবি লাগাইয়া নিজেকে সুশ্রী প্রতিপন্ন করিতে সচেষ্ট থাকিবেন। যদিও এখানে কোন বুক বা বইএর কোনরুপ দর্শন না পাইলেও বুক অর্থাৎ বক্ষ বিদীর্ণ করিবার বা ইচ্ছানুসারে স্ফীত করিবার সকল উপকরন প্রভুত পরিমানে এস্থলে বিদ্বমান থাকিবে। এই সমাজব্যবস্থায় নারী পুরুষদের আর পুরুষরা নারীদের (যদিও ইহার ব্যতিক্রম থাকার সম্ভাবনা প্রবলরুপে বর্তমান থাকিবে) সহিত গল্পগুজবে কালাতিপাত করিতে মগ্ন থাকিবেন। নিন্দুকেরা ইহাকে প্রেমালাপ বলিতে সচেষ্ট হইবেন। একে অপরের নিকট নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমানার্থে কেহ কেহ অপরের রচিত কাব্য নিজের বলিয়া চালাইতে সচেষ্ট হইবেন। এই চৌর্যবৃত্তিতে ধরা না পড়িলে এবং ক্রমান্বয়ে তিনি 'কবি' বলিয়া খ্যাতি লাভ করিবেন। এইরুপে মুখোশধারি আন্তর্জালিক সমাজব্যবস্থাই প্রকৃতপক্ষে এ যুগের 'কবি'দের সূতিকাগৃহে পরিনত হইবে। 

অতএব হে বিদ্বজন, আপনি যদি আপনাকে এই যুগের 'কবি' বলিয়া ভাবিতে আনন্দ পান তাহা হইলে আসুন ফেসবুক নামক সূতিকাগৃহে কদলীবালার সহিত কথোপকথনে মগ্ন হন। কুন্ঠা করিবেন না, যে সমস্ত কথা আপনি কোনদিন মুখে আনিতে শরম বোধ করে থাকেন, অনায়াসে আপনি আপনার পিতৃ/মাতৃ স্থানীয় কাহারও সম্মূখে কহিতে পারিবেন। সুতরাং কালাতিপাতে আর কাজ নাই,

এক্ষনে আমিও 'হাংরী' বোধ করিতেছি ...

পারিবারিকের পক্ষে - 
সুমিত রঞ্জন দাস
সম্পাদক

শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১২

রবি শংকর স্মরণে - জাকির হোসেন

পন্ডিত রবি শংকর স্মরণে


উত্তর প্রদেশের বারানস কাঁদে !
বাংলাদেশের নড়াইলে তোমার পৈত্রিক নিবাস -
কালিয়া কাঁদে !
বিশ্বজুড়ে সুরের মূর্ছনায় বিষন্ন ব্যবধান ।
হটাত করেই তোমার শান্তিধামে গমন !
সমস্ত ভারত জুড়ে শোকের নীরবতা ।
বাংলাদেশ জুড়ে সংগীতপ্রেমীদের বেদনা ।
ভালবাসার তানপুরা-সেতার আর বাজবেনা !

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর হাত ধরে -
তোমার সাধনা, মনন, ইচ্ছে-বলয়,
দোসর-জনম তুমে পেলে শাস্ত্রীয় সংগীতে ।
মহাকবি ইকবালের কাব্য-সুরেও তোমার কীর্তি ।
স্মৃতিময় হলো 'পথের পাঁচালী', 'অপরাজিত' এবং
'অপুর সংসার' এর সঙ্গীতগুচ্ছ ।
চীরকাল তুমি অমর বাংলাদেশের হৃদয়ে !
লাল-সবুজ পতাকার ভালবাসায় ।
'ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ' -
তোমার মরণোত্তর উপহার ।
তোমার প্রতি বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতা ও
আজীবন সন্মাননা ।

তুমি নেই ! তবু আছ আমাদের হৃদয়ে !
বাংলাদেশের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু তুমি ।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মানবাধিকার ও
'মানুষ মানুষের জন্য' - মানবতায় ছিলে তুমি ।
একদিকে-
বর্বর পাক-স্বৈরাচার বাহিনীর নির্মম গণহত্যা,
বাংলার আকাশ-বাতাস কাঁদছে বারুদে !
লক্ষ লক্ষ শরণার্থী প্রতিবেশী ভারতে অমানবিক জীবনে,
ধর্ষিত হচ্ছে কত অজানা বীরঙ্গনা সে বাংলায় !
নদীর জলে লাশ ও রক্তস্রোত !
স্বাধীনতার জন্য বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ।
অন্যদিকে-
নিউইয়র্ক এর ম্যাডিসন-স্কয়ার-গার্ডেনে,
'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' ।
মানবতা ও অধিকার আদায়ের উত্সাহে -
তোমার সেতারে বাজলো 'বাংলার ধুন' ।
জর্জ হ্যারিসনের 'বাংলাদেশ' গানে,
বব-ডিলানের গিটারেও মানবতার সুর ।
বাংলার মুক্তিযুদ্ধ ও অসহায় শরণার্থীদের জন্য -
তোমার ও ভিনদেশী বন্ধুদের,
'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' ও আন্তর্জাতিক অনুদান ।

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরের জাদু তুমি ।
পশ্চিমা দেশে দেশে তোমার সেতারে মুগ্ধ কত শ্রোতা ।
যেন সমার্থক - তুমি ও ভারতীয় সঙ্গীত !
ভারত সরকার ও জনগনের অনন্য সন্মাননায় তুমি ।
'রাষ্ট্রপতি পদক', 'পদ্মভূষণ' ও 'ভারতরত্ন' ভূষণে তুমি ।
ভারতীয় রাজ্যসভার সন্মানিত সদস্যও ছিলে তুমি ।
তিন-তিনবার 'গ্রামি-অ্যাওয়ার্ড' জয়ে তুমি ।
ভিনদেশী কত 'সন্মানসূচক' উপাধিতেও তুমি !

তোমার পরস্পরা -
স্মৃতিময় অন্নুপুর্না দেবী, শু-জোন্স ও সুকন্যা কৈতান ।
তোমার উত্তরসুরী -
শুভেন্দ্র, আনুশকা শংকর ও নোরা-জোন্স ।
আপন সংস্কৃতি ও ঐতিয্য ধারণে ওরা প্রতিষ্ঠিত ।
তবুও ! এ যেন হটাত -
তোমাকে না পাওয়ার বেদনায় ওরা !
ওদের নীরব অশ্রুজল ও পিতৃহারা আর্তনাদ !

বিশ্ব-সংগীত জগতের কিংবদন্তী তুমি ।
কাঁদালে সেতারের মূর্ছনায় ! কাঁদালে বিশ্বকে !
প্রশান্ত, আটলান্টিক, আরব-পারস্য ও
ভারত মহাসাগরের শোকগাঁথায় তুমি ।
চিরন্তন, চীরসবুজ, শাস্ত্রীয় ও ধ্রুপদী পান্ডিত্যে তুমি ।
বঙ্গোপসাগর হতে জলকণা যাত্রায় -
মেঘের বন্ধুবেশে, হিমালয়ে শুভ্রতায় তুমি ।
তুমি রয়ে গেছো আজন্মলালিত সংগীতের প্রেমে !
মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসায় ।

হটাত তোমার শান্তিধামে যাত্রা !
তবুও সংগীতের মূর্ছনায়, সেতার-বীন-বাদ্যে,
বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে -
ইথারে সামাজিক যোগাযোগে, বন্ধু-সভায়
মানবতার প্রার্থনায়,
পরম করুনাময় সৃষ্টিকর্তার কাছে আর্জি সবার !
" চীর শান্তিময় হোক তোমার আত্মা,
তোমার পরিবারের প্রতি সমবেদনা "

চীরকাল তুমি রবে বিশ্ব-সংগীতের হৃদয়ে !
আগামী প্রজন্মের চেতনায়, উত্সাহে -
শান্তির শপথে, মানবতার জয়োগানে !
গর্বিত ভারত ও বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা নিবেদনে -
ধরনীর আকাশে সন্ধ্যাতারা রূপে !
কবিতায়, গানে - নতুন বাণী-চিরন্তনে

" সেতার যদি হয় অবিনশ্বর -
শুধু তুমিই সেথায়, পন্ডিত রবিশংকর "

ছোটগল্প - মৌ দাশগুপ্ত

“বলাই” বাহুল্য


বিয়ের পনের বছর পরেও বাঁজা অপবাদ ঘুচল না সুরমার। উঠতে বসতে শাশুড়ীর খোঁটা আর যখন সহ্য হল না তখন স্বামী শ্রীনাথের হাতে পায়ে ধরে ওর বড় ননদ কাজলের যমজ ছেলে “কানাই-বলাই” এর মধ্যে থেকে বলাইকে দত্তক নিল সুরমা।

ঘরের মধ্যে শ্রীনাথের অবস্থাই ভাল, বড়লোক শ্বশুরের কল্যাণে প্রোমোটারি করে বেশ দুপয়সার মুখ দেখেছে, অতএব ওর সাথে সুসম্পর্ক রাখতে সবাই আগ্রহী। ছোট ননদ লতারও দুই ছেলে, সেও চেয়েছিল বৌদি যেন তার এক ছেলেকে দত্তক নেয়। কিন্তু শাশুড়ীর ইশারায় শিকে ছিঁড়ল কাজলের ভাগ্যে। সুরমার ছেলে পাওয়া নিয়ে কথা, কিন্তু দুই বোনে একটু মন কষাকষি হয়ে গেল ওর অজান্তেই।

ছেলে পেয়ে সুরমারা স্বামী-স্ত্রী খুশি হলেও, ব্যাপারটা ভাল ভাবে নিল না ছোট নন্দাই আদিনাথ। গ্রামের একমাত্র হাতুড়ে ডাক্তার আদিনাথ আবার এবাড়ির গৃহ-চিকিৎসকও বটে। ফলে ঘরের অনেক গোপন(গুহ্য) কথা ওর জানা। এদিকে শালাজ নন্দাইয়ের সম্পর্কটাও বড় মধুর, তাই ঠাট্টা-ইয়ার্কি চলেই। আদিনাথ একদিন কথায় কথায় জানাল সন্তানহীনতাটা সুরমার দোষ নয়, প্রয়োজনে ও প্রমাণও দিতে পারবে। আদিনাথ লোকটা বড় নাছোড়বান্দা, তাই খানিক ইতস্তত করলেও, নিজের সক্ষমতাটা জেনে নিতে প্রমান যাচাইয়ে রাজী হয়ে গেল সুরমা। তারপর, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সুরমার কোল আলো করে এল সিদ্ধিনাথ। সুরমার ঘরে এখন চাঁদের হাট ...

অন্য খবর??

“বলাই” বাহুল্য...

গল্পকথা - সায়ক চক্রবর্তী

চিহ্ন


বেঁচে থাকার সংজ্ঞা সম্পর্কে তখনও একটা সুস্পষ্ট ধারণা জন্মেনি। বয়স নিতান্তই কম হওয়ায় এইসব গুরুগম্ভীর বিষয় মাথায় ঢুকত ঠিকই কিন্তু স্থায়ী হত না। এভাবে এক একটা বসন্ত আসা যাওয়া করছিল নিজের মনে। আমাদের পাশের বাড়িতে এক নতুন ভাড়াটিয়া এলো। ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশ ছুঁই কি ছুঁই, ভদ্রলোকের নাম তরুণ রায়, ধাম কলকাতা কিন্তু এখানে এসেছেন একটা যে কাজে সে কাজের জন্য আমাদের এলাকা সত্যি যোগ্যতম। কাজটা হল লেখালেখি। আমাদের এলাকা নন্দন কানন না হলেও দু একজন দেবতুল্য মানুষ আসেন বটে বেড়াতে। প্রকৃতি যেন নিখুঁত করে সাজিয়েছে এই গ্রাম। আমি রক্তিম। আমি আপাতত বাবার হোটেলের ভাত ধ্বংস করে সেই শক্তিতে দু একটা কবিতা গপ্প লেখার চেষ্টা করছি দিনরাত আর তাই একটু আধটু বুঝি। তরুণ রায়ের লেখা যখন আমি পড়লাম তখন যেন হাতে স্বর্গ পেলাম। হাতের কাছেই গুরুদেব, বৃথা দৌড়ে কাজ কি? আমি প্রায় ওনার চ্যালা হয়ে গেলাম। এরকম দক্ষতা এবং সাহিত্যের উপর দখল আমি এর আগে কাউকে দেখিনি অথচ ভাগ্যের গায়ে শ্যাওলা পড়ে পিছলে গেছে খ্যাতি। নাম নেই একফোঁটা, কিন্তু এতে তার দুঃখও নেই। অনেকবার উনি চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা পাঠানোর, কোথাও ছাপেনি। উল্টে কোন কোন জায়গা থেকে তো এমন উত্তর এসেছে যে আমি হলে পিণ্ডি চটকে ছেড়ে দিতাম সম্পাদকের। একদিন জিজ্ঞেস করলাম – ‘ আচ্ছা জেঠু, জীবনের উদ্দেশ্য কি?’ তিনি বললেন – ‘ জীবন মানে চিহ্ন’। আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম ওনার মুখের দিকে। ভাসা ভাসা কিছু তরঙ্গ আমার মননকে ছুঁয়ে গেলো।সেদিন আর কোন কথা হয়নি। উনি একটা পত্রিকায় লেখা পাঠাবেন বলে একটা গল্প লিখছিলেন। আমি বলে উঠলাম – ‘আবার পাঠাবেন? এরা তো আপনার লেখার কদর বোঝে না!, উনি একটু লিখে ; বললেন – ‘একদিন বুঝবে - শেষদিন বুঝবে।‘ আমি আবার থ হয়ে গেলাম। আর বাক্যব্যায় না করে বাড়ী ফিরে এলাম। এভাবে দিনের পর দিন ওনার সান্নিধ্য পেয়ে তখন আমিও একটু পাতে দেবার মত লিখতে শুরু করেছি। অনেকগুলো বছর এভাবে কেটে গেছে যেমন যায়।

সেদিন খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমি সন্ধ্যায় জেঠুর বাড়ী গিয়ে দেখলাম – কলম চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেছে। আশেপাশের লোকজনদের খবর দিলাম। এরপর কয়েকমাস কেটে গেছে। হঠাৎ একটা জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকায় দেখলাম ওনার লেখা ছাপা হয়েছে। দেখে যে আনন্দটা পেলাম সেটা চোখের জলের সাথেই ধুয়ে চলে গেলো। কয়েক সপ্তাহ পর আবার একটা লেখা... এভাবে প্রায় দু তিন মাস পর এখানে ওখানে ওনার লেখা... আলোচনা... বাড়িতে বুদ্ধিজীবীদের ঢল... পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ... চলল ২ বছর আরও। এখন তরুণ রায় বাংলার অন্যতম এক খ্যাতনামা সাহিত্যিক। দুদিন আগে আমি অফিস থেকে এসে যথারীতি চা খাচ্ছি আর বই নিয়ে বসেছি। হঠাৎ মনে হল – ‘ আমি ওনাকে কি কম ভালবাসতাম নাকি শ্রদ্ধাভক্তি কম ছিল? তেমন তো অভাব বোধ করছি না! কারণটা কি!’। টেবিলে ওঁর লেখা বইয়ের স্তূপ দেখে উত্তর পেয়ে গেলাম। আমি আজকাল অফিসে যাই না। আঁচড় কাটি সাদা পাতায় যদি একটা দাগ স্পষ্ট হয়ে। ইচ্ছে করে আমারও টেবিলে পড়ে থাকতে – উদাস অথচ উজ্জ্বল!

কবিতা - কোয়েল বসু সাহা

নষ্ট মেয়ে


গ্রীষ্ম শ্রাবণ এক করে ,
দিনরাত মুখ গুঁজে লিখত কত কথা,
একটা মেয়ে,
কেউ বলত কাব্য, আর কেউবা দিতো
হেসেই উড়িয়ে।

কি লিখতিস, বল না আমায়, ও মেয়ে ?

নদির জলে পা ডুবিয়ে,
সূর্য টাকে গায়ে মেখে পাখীর সুরে সুর মেলাতো
সেই মেয়ে।
কেউ বলত, গান ধরেছে, আর কেউবা দিতো
হেসেই উড়িয়ে।

কি গাইতিস, বল না আমায়, ও মেয়ে?

রাতের তারা গুনত সে যে আপন মনে,
চাঁদের সাথে
বলত কত মনের কথা
ফিসফিসিয়ে,
কেউ বলত, মান করেছে, আর কেউবা দিতো
হেসেই উড়িয়ে।

কিসের এত মান ছিল তোর, বল না আমায়, ও মেয়ে?

একদিন সে এঁকেছিল একটা ছবি,
বীভৎস এক রক্তাক্ত হৃদপিণ্ড,
হাজার হাজার সূচ বিঁধানো
নীল রক্ত ক্ষরণ ছিল স্পষ্ট,
যেন জলজ্যান্ত।
কেউ দেখেনি, সেই ছবিটা আঁকড়ে কত কেঁদেছিল,
কেউ শোনেনি , সেদিন কিসের বেদন বীনা বেজেছিল,
কেউ বোঝেনি, কোন অভিমান সেই মেয়েকে পুড়িয়ে ছিল,
কেউ জানেনা, কেন সে মেয়ে ধুলোর দরে বিকিয়েছিল,
কেউ খোঁজেনি, অন্ধগলির দেওয়াল ঘেসে দাঁড়িয়েছিল,
সেই মেয়ে টাই,
কেউ তো দয়া দেখিয়ে তাকে কিনেছিল,
আর কেউবা দিল হেসেই উড়িয়ে।

কেমন আছিস এখন রে তুই, বল না আমায়,
ও নস্ট মেয়ে !!

কবিতা - মৌ দাশগুপ্ত

নীরবতা


চাওয়া আর না চাওয়ার মাঝে যেটুকু দূরত্ব আছে,
সেখানে আলগোছে বসে আছো তুমি, নীরবতা,
দৃষ্টির কোণে দুঃখবিলাসী সময়ের নিরাপদ আশ্রয় জুড়ে থাকা,
অভিমানী পাথুরিয়া প্রাণ, কখনো বা শব্দপুঞ্জের ধূলোয় ঢাকা,
কখনো শব্দকোষের কান্নাভেজা বেদনার সাদা থানে আবৃত।
তুমি আপনমনে একটা করে শব্দ খুঁজে নিচ্ছো,
আর তাকেই পরিচিত জ্ঞানে দুহাত বাড়িয়ে ছুটে ছুটে যাচ্ছো,
আলোর শেষ ঠিকানায়, চোরাকান্নার মিথ্যে বৃত্তে।

পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে যেটুকু দূরত্ব আছে,
সেখানে রটনার ডালে আঁধার চিড়ে একখন্ড চাঁদ ফুটেছে,
আর সেই চাঁদফোটা উল্লাস দেখতে তুমি পায়েপায়ে এসে দাঁড়িয়েছ,
মরাজোৎস্নায় আশঙ্কার বুনোসাপ একেবেঁকে হাঁটছে বুকের ভেতর।
তার হিমস্পর্শ জানান দিচ্ছে কিছু স্মৃতি আর পুরানো ব্যাথার অনুরনন।
সামনে তোমার আগোছাল ঝোপঝাড়, কাঁটালতায় ঘেরা বুনো কার্পেট।
তোমার সোনার কাঠি একবার ছুঁইয়েই দেখো না নীরবতা,
স্মৃতির উৎসবে না পাওয়ার বেদনা কেমন জাগিয়ে রাখে ঘুমের ভেতর!

ওগো মায়াবিনী নীরবতা, এই যে কবিতার অক্ষরে অক্ষরে
উজ্জ্বল হয়ে উঠছো তুমি, এর পর এলোকেশের গ্রণ্থিতে গুঁজে নেবে
নতুন একটা দিন, তোমার কপালেই জ্বলে উঠবে প্রভাতী সূর্য্য,
হয়তো, কিছুক্ষন মোহিনী চোখে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে, নির্নিমেষে,
লাজুক হাসি টোল খেয়ে উঠবে তোমার গোলাপ-মসৃন গালে,
এরপরে ভালোবেসে তাকাই যদি, চোখে যদি চোখ পড়ে,
তো মনে মনে লজ্জা পেওনা যেন।আমি যে সৃষ্টির আদি থেকেই
তোমায় আগলে রেখেছি, আমার স্বভাবে বাঁচবো বলে।

কবিতা - ঋতুপর্ণা সরকার

হিসেব


ছোটবেলায় মা অঙ্ক শিখিয়েছিলেন। যোগ, গুন ,ভাগ দিয়ে শুরু হল.........
পরে দশমিক থেকে জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি থেকে পারমুটেসোন,কম্বিনেশন!
অঙ্কটা ভালই পারতাম,শুধু বিয়োগটা ভাল লাগত না!
ভাবতাম,
যা আছে তার থেকে বিয়োগ করবো কেন?
আমার উনিশ বছর বয়েসে যেদিন মা মারা গেলেন,
সেদিন থেকে আমি বিয়োগের অঙ্কটা বুঝি।

যোগ ,গুন তো সহজেই পারতাম,নামতা টাও ছিল সড়গড়!
জীবনের একটা সময়ে গুনটা সহজেই করে নিলাম,
এক গুনিতক দুই সমান দুই হয়ে গেলাম।
অনায়াসে।
ঠিক তার পাঁচ বছর পরে যোগ ভুলে গেলাম!
আমি দুই এর সাথে আর যোগ করতে পারিনি......।
আমরা দুই ই রয়ে গেলাম।

জীবনের পথে চলতে গিয়ে দেখলাম বিভাজন!
সত্তার থেকে আত্মার
আত্মার থেকে মানুষের
মানুষ থেকে জীবনের।
বিভাজিত সেই জীবন থেকে পিছু হটতে হটতে আজকাল ভাগটা আমি ভালই করি,
বিয়োগটাও বুঝি!
শুধু যোগটাই মিলল না!!



কবিতা - আরশাদ উল্লাহ

মাধুরী


একাকিত্তের যন্ত্রনায় অসহায় আমি
বারবার তোমাকে ভাবি!
সাদা গিটার কিনে বাজাই এখন
শুধু তোমাকে ভেবে...
সেদিন তো হঠাৎ এসেছিলে তুমি
গিটারের ঝঙ্কার শোনে!
দাঁড়িয়ে দাঁতে নখ কাটতে কাটতে
তুমি চলে গেলে কিছু না বলে!
সাদা গিটার দেখেও কি কিছু তুমি বুঝলে না?

পুরানো গিটার রেখে নতুন গিটার বাজাই
তার মানেও কি তুমি বুঝলে না?
তুমি কিছু জানতেও চাইলে না!
সেদিন দাঁড়িয়ে কি যেনো কি বলে গেলে
অস্ফুট কন্ঠে - কিছুই যে বুঝলাম না!
যখন গিটার বাজাই
তখন নিরবে এসে তুমি দাঁড়িয়ে শোন
আর - দাঁতে নখ কাট শুধু...
আমাকে বলার কি কিছু নেই তোমার, মাধুরী?

কবিতা - ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তা


শিরোনামহীন


কেন এত জতুগৃহ,
কেন মানুষ এত অচেতন,
যে মেয়েটি সংসারের হাসি দেখবে বলে ফুসফুসে জমিয়েছে তুলোর আঁশ,
কান বধির হয়ে গেছে সেলাইয়ের একটানা ঘর্ঘরে;
যে শিশুর হাত ফুসফুস ঝাঁঝরা করেছে ব্যারাইটা, সোরা, গন্ধক অ্যালুমিনিয়াম ম্যাগনেসিয়াম হা, স্ট্রনসিয়াম নাইট্রেট;
যার হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা বার্থ ডে উপহারের স্তুপ
তারা তবু বেঁচে ছিল ঢাকা বজবজ শিবকাশিতে।
বেঁচে ছিল না বাচার মত মুখে তবু হাসি ছিল,
চোখে ছিল সামান্য স্বপ্ন হয়ত
জতুগৃহে প্রবেশের সময় তারা বোঝে নি
এটাই শেষ দিন বোঝে নি আজ ঘটবে বিস্ফোরণ,
সমস্তই শেষ হয়ে যায় লাশের স্তুপে চেনা শরীরটাকে খোঁজে হাহাকারে আত্মজন।





কবিতা - সাবর্ণ গোস্বামী

ঘুমাব এবার


যদি ঘুম আসে ঘুমাব এবার ,
অনেক তো হল ঘরের আলেখ্য আঁকা ,
উপলক্ষ্যের বিপ্লবী মোদো নেশায় -
কবিতায় রোজ লালা ঝরানো , কবি!

চৈত্রের দিন ডেকে নিয়ে যায় এসে ,
শীত দুপুরকে লোভ দেখিয়ে চাঁদের ,
বিকেলের শালে আদুরে ওমের জ্বর
ডেকে যায়, ঘুম আয়,আয় ঘুম দুটি চোখে ।

যদি ঘুম আসে ঘুমাব এবার ,
অনেক তো হল অচেনা প্রেমের পিঠ ছোঁয়া ,
প্রবাসী তৈলচিত্রের প’রে উল্লাসে দিনভর -
নেত্রজ জলাধার উপুড় করা , কবি!

গ্রীষ্মের সমাধি শেষে আষাঢ় জলকণা ,
শোকহীন হয়ে শরতে ওড়ায় ঘুড়ি ,
কার্তিক তবু শিশির শিকরে কাঁদে ,
অভ্র ছোঁয়না ঋতুর বরণডালার প্রদীপ।

যদি ঘুম আসে ঘুমাব এবার ,
জাগবনা আর অরন্য রঙ গায়ে মেখে ,
অনেক হয়েছে পাথর জমানো ঘাসে ,
পাথর স্পর্শে জলের স্বচ্ছ আলোর সাম্পানে -
গৃহউদাসীন কিশোরী জাগানো ,কবি!



কবিতা - আহমেদ মুনীর

আবার কখন কোথায়


আবার কখন কোথায় দেখা হবে তোমার সাথে
সেই কবে থেকে তোমাকে দেখব বলে
আমি গুণছি অপেক্ষার প্রহর
কাদামাটির আমিষ আর পূর্ণিমার রেণু হাতে নিয়ে
কতদিন কতবছর পর আবার আমরা ছুটবো
নক্ষত্র গতিতে উর্ধ্বাকাশে
লতানো জীবনটা আবার ভালবাসার আধানে
জড়াবে তোমকে অভিমানে
নিশ্ছিদ্র্র সীমারেখায়
শিয়রের বা-দিকে ফিরে দেখব
তোমার অধর অশ্রু মুখ
আলো আঁধারি জলাভূমি সমুদ্র নেকট্যে
শুনব তোমার ঘুম ভাঙ্গানিয়া গান
তোমার সুগভীর শ্বাস প্রশ্বাস পদধ্বনি কন্ঠস্বর ।।

তোমার হাত ধরে হাঁটবো নিঝুম বনভূমির প্রান্ত ঘেঁষে
ভরা ভাদ্রের রোদ্দুরে
কিংবা জ্যোৎস্না ভেজা গভীর রাত্রিতে
হিমশীতল জলবায়ু ছুঁয়ে দিবে হৃদয় ও শরীর
স্পর্শ সুখে ঘুমাব বেলায় অবেলায়
তোমার ঝাঁকুনিতে ফিরে পাব সম্বিৎ
পৌঁছাব চেনা অচেনা শহর নগর বন্দরে ।। 


কবিতা - কাজী এনামুল হক

বেশ্যার ঘরে নেমন্তন্ন


আজ আর খাবোনা,
আলু ভর্তা, ডাল ভাত
রুচি নেই মুখে
প্রতিদিন একই খাবারে বিস্বাদ লাগে।
বেশ্যার ঘরে নেমন্তন্ন,
রুইয়ের মুড়ো আর মুগডালে
কাঁচালঙ্কার মুড়িঘন্ট খাওয়াবে,
কচি পাঁঠার ঝোল
ঘরের পুরোনো অম্বল
বাসমতি চালের ভাত
আহা! যেন পুজোর প্রসাদ।

কি যে বলোনা তুমি!
লজ্জা হবে কেন? বামুনের ছেলে
বেশ্যার ঘরে অন্নগ্রহন এইতো আপত্তি?
মন্দিরের পুরোহিত যখন নিত্যনতুন
সেবাদাসী বুকে জড়িয়ে রাত কাটায়
তখন তোমাদের ঘেন্না হয় না কেন?
কেন বলোনা ঐ মন্দিরে
আর কোনদিন পুজা হবে না।
দূর্গা, সরস্বতী, মা কালি
শুধু অবাক দৃষ্টিতে দেখে
সাধু নামক শয়তানের শিশ্নলীলা।

ক্রমান্বয়ে তোমাদের নীরবতায়
অনিয়ম হয়ে যায় নিয়ম,
কুলের বালা কুল হারায়
অকুলে ভাসায় জীবনের জ্বীর্ন্তরী ।
আমার নাড়ীতে ক্ষুধা, বুকে তৃষ্ণা
আমি মানবোনা এসব মিথ্যে নিয়ম
নুনভাতে ভরেনা পেট, ক্ষুধায় পিত্ত জ্বলে
আমি অবলীলায় তোমাদের সবার সামনে
হেঁটে হেঁটে চলে যাবো বেশ্যার ঘরে।
ক্ষুধার কাছে ঘৃণা তুচ্ছ
জীবনের পিবরীতে মানসম্মান হাস্যকর।

তোমাদের সবার মতো সেও একজন নারী
হয়েতো কারো কণ্যা, কারো বোন
ছিলো হয়তো একদিন কারো প্রিয়তমা স্ত্রী,
কারো বা দরদী, মমতাময়ী ‘মা’।
লুন্ঠিত যৌবন পাঁজরে বেঁধে
কষ্টের কষ্টিপাথরে জীবন ঘসে ঘসে
আজ তার করুন বর্ত্মান।
আমি প্রণাম জানাই মমতাময়ী ‘মা’ কে
যার আঙ্গিনার মাটিতে গড়ো পুজার প্রতিমা
আজর তার অতিথী আমি; হোক সে
কলির দ্রৌপদী, কালেভদ্রে পঞ্চভোগ্যা!



কবিতা - ফারহানা খানম্

অঞ্জলি


জোনাক আলয় জ্যোৎস্না বুনে রাতের
ছায়াকে বিচূর্ণ করেছ .
কালপুরুষ বিস্ময়ে দেখলো ,তুমি
মিষ্টি হেসে ইজেলে তুলির শেষ টান দিয়ে
আকাশ রাঙ্গালে । শঙ্খ- ভোরে তোমার
দুচোখ গহীন গাং শিরায় শিরায় বিরহ ;
ডুবলে যমুনার অন্তস্রোতে।

আশ্চর্য বিস্ময় ছিল ওই সম্বোধনে !
রাত্রির নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে
বলি দেখো এটাই ঐশ্বর্যময়ী লগ্ন মিলনের ।

বোধনের কাল তখনো বাকী
তুমি চারুকেশী জ্যোৎস্নায় ভাব- সমাহিত
মুগ্ধ প্রশান্তিতে ';
অতঃপর নিরেট মগ্নতা ভেঙ্গে জেগে উঠলে
পুরাণের অর্জুনের মতো ! !
দেয়াসীরা মাঙ্গলিক আচার শেষে এঁকে দিল
চন্দনের টিপ ।

দৃষ্টি মেলে দেখো , হাতে অঞ্জলি
কাজল টানা চোখে অপেক্ষায় শিশিরসিক্ত
শ্যামাঙ্গী অপরাজিতা। 



কবিতা - আবদুল্লা আল নোমান দোলন

মেঘের বাঁধন ছিঁড়া অবাক রোদ্দুর


মেঘের বাঁধন ছিঁড়া অবাক রোদ্দুর;
তির্যক আলোর ছুটাছুটি,
তুমি কি এমন করে আসিবে ছুটে?
অনুভবের বগলে দিবে সুড়সুড়ি।
শিশির ভেজা সবুজ ডগা
আলোমেখে মুক্তোররুপ,
ভেজা পাপড়ীতে চুম্বন এঁকে
দিবে কি অপার্থিব সুখ।
সোনালী রোদ্দু লুটোপুটি খায়
কাঁচামাটির বুকে,
সোঁদাগন্ধ হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসে
লম্বা দম যায় নাকে।
লোমশ বুকের অদৃশ্য্ স্তর
ভিজে জুবুথুবু নোনা জলে,
নিও চুষে সব-উষ্ণ আলিঙ্গনে
তোমার যে বুকে ঢেউ খেলে।
মেঘের বাঁধন ছিন্ন করা অবাক রোদ্দুর
জাগিয়ে তুলে নিস্তেজ ধরণী,
ভেজা কাক তুল্য্ এই হৃদয়
জাগাবে কি হে রমণী?
বিরহ বিষের ধংশনে নীলাভ হৃদয়;
কাল পেরিয়ে আজ কালো মেঘ,
তোমার মিষ্টি প্রেমের আলোয় ছুঁয়ে দাও
জাগিয়ে তুলো প্রণয় আবেগ।




কবিতা - মোঃ সরোয়ার জাহান


মানুষ ঠিক সময়ে রুখে ওঠে


হাহাকার করে ওঠে সীমাবদ্ধতা
কবির বুকে বিঁধে বল্লম
ক্ষতমুখে লাগে লবণাক্ত জ্বালা!

তবুও বিবেক বিক্রি করে না মানুষ
যাদের দেশ প্রেমে বিবেকে ধরেছে পোকা
সে পোকা নির্ধনে মানুষ নামে রাজপথে!

মানুষ জানে কিসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে
মানুষ ঠিক সময়ে রুখে ওঠে এবং রুখে দেয়!





কবিতা - সিদ্ধার্থ শর্মা

শাশ্বত ভাবনা


বিনিদ্র রাত -
অস্তিত্বের খোলা জানালা ...
এক পশলা বৃষ্টি নিরুদ্বেগ
জলমাখা ধুলিকণা
হামাগুড়ি দিয়ে ঢোকা
ল্যাম্পপোস্টের নিভু আলো
বাক্যরহিত স্পর্ধা
অপ্রাপ্তির বেদনার দহনে
আকাঙ্খার ঘৃতাহুতি
লোভী স্ফুলিঙ্গ
গ্রাস করে চেতনা
মুঠো মুঠো ছাই পায় ঠাঁই।
পাশে শুয়ে ভালবাসা
চিন্তার রেখাহীন নিষ্কলুষ মুখ
শান্ত সৌন্দর্যে টলমল
পুতুল খেলার মন নিয়ে
সজীব সবুজ স্নিগ্ধ
পরিচ্ছন্ন আকাশে পূর্নিমার চাঁদ
জোছনা ভাষা ধানক্ষেত
কোজাগরী চরাচর
খুঁটে খাওয়া স্বপ্নগুলো
ইঙ্গিত হীন শান্ত ঘুম।
ধুসর আলখাল্লা পরে এস ঘুম
রমনীয় চামর বুলিয়ে
মুছে দেয় চোখের কালি
নিরন্তর যন্ত্রনার পাঁচালি
নিয়ে যাও নির্ঘুম রাত্রি ক্লান্তিভার
মন্ত্রপূতঃ জল ছিটিয়ে শেষ কর
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত
লাঞ্ছিত ভঙ্গুর জীবনের ইতিবৃত্ত
করোটি পূর্ণ নিরাকার অভিমান
নাহলে অন্তিম শ্বাসবায়ু টুকু। 


কবিতা - সাথী প্রজাপতি

অনুভূতি ও পার্থক্য


তুমি চাইলে তাই কিছু না ভেবে
বাড়িয়ে দিলাম হাত, ঘন অন্ধকার রাতে
একপাশে চাঁদ দিল আলো আর
অন্য পাশে ঝি ঝি পোকার ডাক
মাঝে একটি ছায়ার মিলন
দেহ কি দুটি ছিল? শিশিরে ভেজা
ঘাস ছুঁয়ে এগিয়ে যাওয়া
নৌকাতে কি বৈঠা ছিল? না ভেবে পাড়ি দেওয়া।
স্বপ্নের ঘোর কুয়াশার চাদরে
অনুভূতি আর প্রশ্নের জাগ্রত মিলন।

কখনো কি দেখছ মাকড়সা কিভাবে জাল বুনে
চলে আপন অস্তিত্ব জানান দিয়ে?
ওরা কি স্বপ্ন দেখে, কেমন হয় ওদের স্বপ্ন?
নাকি অস্তিত্বের লড়াইয়ে সবটুকু অনুভূতি
দিয়ে নীড় বুনে শুধুই আপনার জন্য?
মাঝ রাতে যখন অনুভূতির জাল
আমাকে জড়িয়ে বুনে চলে
আমি তখন একাকী দাঁড়িয়ে থাকি
দেয়ালের এক প্রান্তে হেলান দিয়ে
রাত এমন হয়, খেয়াল তখন ধারণ করে
মাকড়সার রূপ, অস্তিত্ব, অনুভূতি, স্বপ্ন
আমার হয় না, আমি তখন বন্দী।

কষ্ট, ভালবাসা, স্বপ্নের রঙ ও
পার্থক্য খুঁজি তোমার আর মাকড়সার।

কবিতা - স্নেহাশীষ ব্যানার্জী



কিশলয়

খোলা জানালা দিয়ে হাতছানি দেয় অমলের দইওয়ালা ,
বেশ কঠিন ভেবেই প্রশ্নপত্র এড়িয়ে যায় কিশলয়ের দল ,
যদিও অমল ও দইওয়ালা টা সিলেবাসে আছে ,
তবু রচনাধর্মী উত্তর হয়ে কখনো ধরা দেয় নি ওরা ।

গণিতের মুকুল কীভাবে নব হল ভাবতে বসেছে সব চারাগাছ ,
যতবার যোগের চিহ্ন ধরে , দমকা হাওয়া কান মুলে দেয় ,
বলে , “ওরে ওটা ভাগের চিহ্ন , শিখবি কবে ?”

ভাগ আর বিয়োগই শিখল সবাই ,
বড় হয়ে কিশলয় অমল আর দইওয়ালার মত মাকে ভুলে গেল ,
চারাগাছ ভাগের চিহ্ন না বুঝেও মাটি ভাগ করল ,
দলিল থেকে ওরা বিয়োগ দিলো যাবতীয় যোগের সম্ভাবনা ।

লম্বায় বাড়ে সব চারাগাছ , কচিপাতা প্রস্থ বাড়ায় জ্ঞানের ,
সিলেবাসে ঠাসা বুকটা প্রতিদিন পাতলা হয় ,
ধুলো পড়ে সহজ পাঠে ’ !
জীবনের সহজ পাঠ যে কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি’-তেই আছে
কলসি হাঁড়ির ঢাকনা খুলে কেউ দেখে না ।
বৃষ্টির মধ্যেও নম্বর খোঁজে পিপাসার্ত চারাগাছ
কিশলয় ভেজে নম্বরে , পাতা ভর্তি নম্বরে ।

কবিতা - শ্যামল রায়চৌধুরী

নীরা র নীড়ে র টানে


অন্তহীন সীমার মাঝে
দাঁড়িয়ে তুমি নীরা ,
যুগে যুগে বহমান...
হৃদয়ে কড়া নাড়া ,
কবির কল্পনা কিংবা
প্রেমিকের দৃষ্টি ,
কখনও বা ভালবাসা
কারো অনাসৃষ্টি...
বয়স বাড়ে নাকো
ঐ এলো চুল ...
হেনার গন্ধ
ভুল ... সব ই ভুল ,
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন রচি
ভোরের শিশিরে ...
চিলে কোঠার নিশ্বাসে তে
অলস দুপুরে ,
ধরা দিয়েও দাও না ধরা
মোচড় দেওয়া ব্যাথা ...
পক্ককেশে চিনচিনে ঐ
ধূসর মলিনতা ,
সুনীল সাগর......পাল তুলে দি
কোন অজানার পানে ,
আসব ফিরে বারে বারে

নীরা র নীড়ে র টানে

কবিতা - মহঃ মেহেদী হাসান

চে-সুগন্ধী


মানুষের মাজা বাজারে ঘুরে-চরে, চলে-ফিরে
দেখেছি অনেক পন্য; কতরকমে সাজানো-সার বেঁধে মগ্ন-
বাজার আজকে সয়লাব, খোলা মুদ্রানীতির বিশ্ব।
সাবান, শ্যাম্পু, ফেসওয়াস, রোল-অন ডিওডোরেন্ট-স্প্রে--ফূৎকার--চুরুটের ধোঁয়া
হরেক রকম গেঞ্জী, সার্ট, ফতুয়া, টুপি, অন্তর্বাস-কাচুলী, জাঙ্গিয়া, পাদুকা।

হঠাৎ আবিষ্কার তুমি
সমাজতন্ত্রের মোড়কে-তোমার সুদৃশ্য, চকচকে মোহ ধরা প্যাকেটে
ঝিমিয়ে পড়া বিপ্লব, জং ধরা মানবতা;
দেদারচ্ছে বিকোচ্ছো-আদর্শের ট্রেডমার্ক-স্টারমার্ক লাগিয়ে।

যদিও অমূল্য, তবুও এখন দামী সবচেয়ে এই ভূমায়-
উন্মুক্ত বাতাস-অক্সিজেন হয়ে বদ্ধ পিপায়।

মধ্যবিত্ত-(ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর, সর্বহারা)
এখন বেকার বুদ্ধিজীবি-অকেজো সাহিত্য সম্পাদক;
দু-মুঠো অন্ন যাও জোটে নিকোটিনের অভাব মোটে ঘোচেনা

কবিতা, ছোট গল্প, মুক্ত গদ্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ লেখা হবে,
তোমার গাঢ়-লাল টকটকে রক্ত ছেনে ছেনে;
তোমার লাঞ্ছিত মৃত্যু, বাঞ্ছিত জীবন বাক্স বন্দী করে-
অনেক দামে বিকোবে সাহিত্য বাজারে!

রাজপথে নামার আগে-
তোমার চিত্রাঙ্কিত ডিওডোরেন্ট -
দুই বগলে আচ্ছামত;
গা থেকে ভুস-ভুস করে বেরোবে চে-চে গন্ধ -
দেহ-কাঁপানো, মন-ধাঁধানো, হৃদয়-দোলানো, চে-চে সুগন্ধ - 


কবিতা - বিবেকানন্দ জানা

চুপথাকবার নয় আর চিত্ত


অর্থের কেউকেটা নয়তো,
ভয়ে ভীত কেঁদে ওঠে চিত্ত
পৃথিবীর কাছে আমি ভিত্য ।
চিন্তার নাই আর চিত্ত
শুধাও হয়ে গেছে তিক্ত ।
মারবার নেই আর চিন্তা
র্নিভয়েও কেঁদেওঠে আত্মা।
অর্থের লোভে ওরা পিপাসু
চুপ থাকবার নেই আর চিত্ত
পৃথিবীও চলেগেছে বিক্রীর দোকানে।
মিথ্যায়ও কেন চুপ চিত্ত?
চুপ থাকবার নেই আর চিত্ত।
লাল জিবে লালা ঝরা লোভে
মারা গেছে পাড়া গাঁয়ে ভিত্য,
জল নেই ঠোট ফাটা চিৎকার,
পৃথিবীও ডাক শুনে বার বার
চুপ থাকবার নেই আর চিত্ত।
আশ্বিনে নেই আর বৃষ্টি,
মরুভূমিও মরেগেছে তেষ্টা,
প্রকৃতির বুকেদেখো চেলাকাঠ
মন্দিরে নেই আর ভক্ত,
মুছে গেছে চেনা শোনা সত্যি
ভাবলেও কেঁদেওঠে চিত্ত।
ঐ দেখো বুকফাটা কান্না
শান্তির গান শুনি হৃদয়ে
শুনি ঐ নইবেদ্য,
চুপ থাকবার নয় আর চিত্ত
ঐ দেখো চিত্তের ফুলদানি
নেই তার চেতনার শব্দ
অর্থের ঘুনধরা চিন্তায়
ভুলে গেছে প্রতিবাদের শব্দ।
ঐ দেখো খিটখিটে চিন্তা
শব্দের নেই আর বেড়াজাল
শাস্তির কাঠগোড়ায় দঁত গুলো
শক্তের অপরাধে শান্তি
চুপ থাকবার নয় আর চিত্ত।
মরেনিকো অর্থের পিপাসা
বিল পাস হয়ে গেছে মৃত্যুর।
ঠিকানার ডাকঘর বন্ধ
চেতনার পরে আছে শান্তি,
ভিড়ের মাঝে দেখো চিৎকার
মিছিলের মাঝে দেখো গরুও
দিতে থাকে মিথ্যার স্লোগান
চুপ কেন চিত্তের ডাল গুলো?
ফুল ফুটবার সময় কবে আসবে?
চুপ থাকবার নয় আর চিত্ত।
দেহ আজ ব্যবসার ফুলদানি
বিক্রির দোকানে সন্মান
নেই আর কোনো কিছুর মাপকাঠি।
মিথ্যার তিরে গাথা পৃথিবী
জড় হয়েও কথাবলে হিরা-চুনি-পান্না
মিথ্যার বুকে দেখো শান্তি।
কেউকেটা করে কেন কাটা কাটি
রাজনিতির মঞ্চে দেখো স্বর্গের স্বপ্ন,
বাস্তবের ফুল আর ফোটেনা,
শিশু ও নেচে যায় মঞ্চে,
সে আজ বিনোদনের অপ্রাধী।
ভিড় করে জমে আসে শব্দে
বলবার নেই আর আবকাশ
চুপ থাকবার নয় আর চিত্ত।


কবিতা - সুমন নস্কর

আমি তুমি এবং চাঁদ


এবার তুমি ঘুমাও,
আমি সচেতনভাবে নিখোঁজ হবো
তুমি রাতের নিস্তব্ধতায় নিয়যিত করো নিজেকে
আমি ব্যস্ত থাকব সাদা-কালো অনুভূতির অস্ত্রপ্রচারে
তুইম এখন নিমগ্ন থাকো বিভাবরী মুর্ছনায়
আমি হৃদপিন্ডে আরো বেশী স্পন্দন জমা করি
এখনো যে কিছুটা রাত বাকি আছে
তুমি বদলে নিও নিজেকে,
আমারো ভীষণ ইচ্ছে করে আমারই মত হয়
তোমার অপ্রিয়, অপছন্দের বাক্স খুলে
মুক্ত করে দেব আমারি হলুদ চাঁদকে
আর আলোকিত হবে আমারই একটুকু মধ্যবিত্ত পৃথিবী

কবিতা - অনন্যা

স্মৃতিহন্তা


কি যেন একটা বলার ছিলো তোমায়
ভুলে গেছি -
একলা পথে চলতে চলতে কখন যেন
তোমার হাত টি ধরার ছিল-
তাও ভুলে গেছি ।
ভেবেছিলাম স্বপ্ন দেশে উড়িয়ে দেবো
আমার ইচ্ছে পাখি
সেটাও ভুলেছি ।
ভুলেছি সবই ,
কিন্তু যাকে চেয়েছি বারবার ভুলতে
কেন সেই অতীত স্মৃতি ফিরে আসে আমার হৃদয় প্রান্তে ?
ঈশ্বর তুমি এতো নির্দয় কেন ,
আমার সকল স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়ে
কেন তুমি মুক্তি দাও না আমায় হৃদয়ের বধ্যভূমি হতে ...।

ডিজিটাল আর্ট - ঝুমা মজুমদার

অ্যাবস্ট্রাক্ট ওয়ার ...



বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা



“অসতো মা সদগময়,তমসো মা জ্যোতির্গময়,মৃত্যুর্মা অমৃতংগময়”

দীপাণ্বিতার অমানিশা,
অন্তরে তার আলোর তৃষা।
তৃপ্ত হোক দীপ্তিতে সে,
ঘুচিয়ে আঁধার সর্বনেশে।
জ্ঞানের আলো তমোহরা
আলোয় সাজুক আজকে ধরা,
“আলো আমার আলো ওগো, আলোয় ভুবনভরা”

দীপাণ্বিতার আলোকধারায় স্বাগত .....আলোর উৎসব আপনাদের সকলের জীবনকে আলোকময় করে তুলুক,কলমচারিতার আরম্ভেই আপনাদের সকলকে কবিতার পরিবারের পক্ষ থেকে দীপাবলীর শুভ কামনা জানাই ।

দীপাবলীর রেশ এখনও আকাশে বাতাসে ছড়ানো, আলোর উৎসবের রোশনাই এখনও আমাদের মনে,এর মধ্যেই প্রকাশিত হল আমাদের কবিতার পরিবারের সাহিত্য মুখপত্র “পারিবারিক”।“পারিবারিক”-র বয়স খুব অল্প (এটি মোটে চতুর্থ সংখ্যা) এবং আমাদের অভিজ্ঞতাও খুব কম। তারপরেও কবিতার পরিবারের সকল সদস্য এবং শুভানুধ্যায়ীদের অনুপ্রেরণায় অসমসাহস নিয়ে “পারিবারিক”কে বিবিধ সাহিত্য-অলঙ্কারে সাজানোর এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। শব্দেরা জীবনের আত্ম কথা বলে , আর কলমনিষিক্ত বাক্যরাজি বলে আত্মার কথকতা....এই অনুভবটাতেই পারিবারিক দিনে দিনে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়ে ওঠার প্রয়াস পাচ্ছে। তাই সাফল্য বা জনপ্রিয়তার হিসাবে নয়, আপনাদের ভালোবাসা পেলেই আমাদের পথচলা সার্থক।

যতবার শুরু করতে যাই ততবারই ঐ লাইনটার কথা মনে পড়ে

" তারপর যেতে যেতে যেতে এক নদীর সঙ্গে দেখা..."
কবিতাকে দিকশূণ্যপুরে পাঠিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল
অরণ্য অথবা পাহাড় কিংবা সাগরের........।
আর সেসব না হয়ে যদি কেবল নদীর সঙ্গেই দেখা হতো তাও নাহয় চলতো ।
কিন্তু ওসব কিছু হল না , সে দেখা পেল একটা শবের ;
কবিতা চমকে উঠে মানতেচাইলো তাও ...
কিন্তু খই ফুল আর অগুরূর গন্ধে ভরা শববাহকরা কই ?
কেউ নেই কেন? শুধু ঐ শবের পাশে আবছা দাড়িয়ে আছে আরেক অন্য মৃত্যু ।
সে মুখ ঘুরিয়ে তাড়াতাড়ি পা চাললো যে দিক পাহাড় দেখা যায় সেই দিকে,….।
তারপর যেতে যেতে যেতে সে খুঁজতে থাকে জোৎস্নার ঝর্ণাকে ,
নিদেন পক্ষে প্রেমের সঙ্গে দেখা হলেও চলতো …
কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ক্ষিদের….

পূজোর ছুটীতেই নীললোহিত হারিয়ে গেল দিকশূণ্যপুরে,সাথে নিয়ে গেল কাকাবাবু-সন্তু,নীরাকেও। সাহিত্যপ্রেমী বাঙ্গালীর কাছে ম্লান হয়ে এল শারদীয়ার উচ্ছ্বাস, ঈদের আনন্দ।এরই আগে চিরজীবনের মত এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্য দুই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব,কবি হুমায়ূন আহমেদ আর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।জীবনের একেকটা অধ্যায়ে জীবনটা কাটতে থাকে একেক রকম করে।তাতে প্রাপ্তির আনন্দ যেমন আছে তেমনিই আছে বিচ্ছেদের দুঃখ। জন্ম - মৃত্যু দুই-ই একে অপরের পরিপূরক যে! একই সুতায় সেসব গাঁথা বলেই হয়ত একটার সাথে একটা যোগ করা অংকের মতন। দিন যায় দিন আসে, পরে থাকে অভিজ্ঞতা।রচয়িতা চলে গেলেও রচনা তাঁর / তাঁদের সাক্ষর বহন করে নিয়ে যায় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে।এটাই বিদ্যাদেবীর অমরত্বের আশীর্বাদ, তাঁর সেবকদের জন্য।কবিতার পরিবারের পক্ষ থেকে সাহিত্যের এই অমর সেবকদের উদ্দেশ্যে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।

দীর্ঘ সামাজিক জীবনে মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, নিত্যকার মান- অপমান, জীবনের পলে পলে ক্ষয়, গলিত ও যান্ত্রিক জীবনচর্চা -¬ তবুওতো মানুষ মানুষের জীবনেই বাঁচে । মানবসভ্যতার তীব্র সঙ্কটের মধ্যেও তার অস্তিত্ব বজায় রাখে । অন্তরশায়ী এই গভীর বেদনাবোধের ,অনুভবের প্রতিনিয়ত নুতন করে বাঁচার ইচ্ছা, মূর্তরূপ নেয় লেখার আখরে, কাব্যের ব্যঞ্জনায়,তুলির আঁচড়ে। ব্যক্তগত কিংবা সমষ্টিগত চিন্তা,অনুভুতির স্বতস্ফূর্ত উৎসারণ, জীবনের প্রতি অদম্য বিশ্বাস, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীল মনোজগত আর তার প্রত্যয় ও ভাষার কারিগরি দক্ষতা, এই বিবর্তনের ধরন-ধারন যাচাই করতে, আমাদের হাতিয়ার লেখনী কিংবা তুলি, আর সেই লেখনীর সামনের সাদা পাতা,তুলির উপযুক্ত সাদা ক্যানভাসের প্রতিরূপ আমাদের পারিবারিক।

কবিতার পরিবারের সকল সদস্যের, পারিবারিকের সকল শুভানুধ্যায়ী পাঠক/পাঠিকার ভালোবাসার,ভালোলাগার সরল অনুভবে পারিবারিকের শিশু মনের কোনে সুপ্ত জ্ঞানবৃক্ষ শিকড় ছড়িয়ে ডালপালা মেলে ঘুম ভাঙ্গছে।- ছুঁয়ে ফেলছে নিয়মে আড়াল করা নন্দিত সুখ, আস্বাদন কেউ করুক বা নাই করুক। রঙ্গীন জেল্লার বলয় পার হয়ে স্মৃতি মঞ্জুষার যত অভিজ্ঞান আজ বৃত্তকারে আবর্তিত হচ্ছে তাকে ঘিরে। বাংলা ভাষার সৃজনশীলতা ও প্রয়োগ নিয়ে “পারিবারিক”-এর ভাবনা সকলকে উৎসাহিত করবে এই আশা রাখি । আমরা দুই বাংলার সাহিত্যানুরাগীদের ভাবনার ফসল।আমাদের সাহিত চর্চার খবর যদি কেউ জানতেই না পারে তাহলে আমাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ । তাই নিজেদের আলোকিত করতে পারিবারিককে আরো উজ্জ্বল ও আকর্ষনীয় করে তুলন। আরও সুন্দরভাবে “পারিবারিক”কে সাজানো যায় কি’না এ ব্যাপারে আপনার / আপনাদের সুচিন্তিত মতামত থাকলে জানান। আপনাদের সবাইকে অনুরোধ, মনের সমস্ত দূয়ার খুলে প্রাঞ্জলভাবে পারিবারিকে লিখুন। “পারিবারিক”পড়ুন ও পড়ান। আমাদের উৎসাহ দিন, উজ্জীবিত করুন।পরিশেষে সকল লেখক/কবি/চিত্রকরবন্ধুদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সুন্দর সুন্দর রচনার জন্য এবং সে সাথে “পারিবারিক”-এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি!

“শুভম করতি কল্যাণম,আরোগ্যম ধন সম্পদা,শস্ত্রবুদ্ধি বিনাশায়,দীপজ্যোতি নমস্তুতে।।“


পারিবারিকের পক্ষে
মৌ দাশগুপ্তা
অতিথি সম্পাদক