কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।
কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৩

কবিতা - কচি রেজা

সাদা ইউনিফর্ম
কচি রেজা



(১)
সাদা য়ুনিফর্ম হয়ে তুমি আমার কাছে আসো
কিছু উৎপন্ন ডিম রেখেছি দেখো হারমনিয়ামের রীডে

(২)
পরীক্ষা করো আমাকে চোখদুটিতে কেন উভলিঙ্গ পোকা
পাগলের জনন কোষ বলে আমি ও কি নিরপেক্ষ মৃগী রোগী

(৩)
একসাথে নেচে জোড়া লেগে গেছে বুকের কবুতর
তুমি চলে গেলে সাদা কাগজেও আরেকটি তুমি

(৪)
কান্না দেখে চশমাও ভিজেছিল খুব
বাইবেল না কি সংক্রামক প্রাচ্যদেশী এই অহংকার
তোমাকে নয় নিজেকে উপভোগ করার জন্যই
বিকিনি খুলতে দিয়েছি সুস্বাদু হরিণকে

(৫)
কাঁটাচামচে বৈশিষ্ট্য কেটে খাচ্ছে ঘনিষ্ঠতা
পাতলা কাচের শব্দে জোড়াঠোঁট কেটে যায়

(৬)
তোমাকে চুম্বন করে যে জীবাণু করি পান
তুমি তার রাখো নি সন্ধান

(৭)
আমিও মেটালকয়েন খুঁজে বেড়াচ্ছি সীবিচে
নিঃসঙ্গতা চায় না কেউ তার সমকক্ষ হোক
ডিটেকটর সংকেত দিলে উঠে আসে
পেশীহীন শামুকের সঙ্গমদৃশ্য

(৮)
কোথাও গেলে দেহ রেখে যাই
কেউ ষ্ট্রাকচারের প্রশংসা করলে
দু'জন ইঞ্জিনীয়ারের নাম বলি

(৯)
প্রেম দিয়ে কি আরেকটি সংসদ ভবন গড়বেন, লুই কান
আমার লবন নিন

কবিতা - অনুপ দত্ত

সেই লোকটা
অনুপ দত্ত



সেই লোকটা৷ কত দিন বসে আছে ফুটপাতে
যেন পৃথিবী অভিমান নিয়ে এক কোনে চেয়ে আছে
নিজেকে হরফ করে বিছানোর ছায়া কবে ঢাকা পড়েছিলো...
এই পৃথিবীর মুখে৷হাস্যরসে ভরপুর নিবাসী শাস্ত্রের সংলাপে৷

যেন আঘাতে, ঐশ্বরিক প্রেমের আঘাতে গাছের আড়ালে
গাছপালা ভেঙ্গে ফোকরে ফোকরে জেগে ওঠে ভূষন্দির মাঠ৷

যেন কতদিন,ঘুমায়নি যৌবন৷
চেয়ে চেয়ে কেটে গাছে জীবনের উলঙ্গ করা রাত৷

যেন শরীর,ভাঙ্গা আয়নায় জড়িয়ে শিহিরণ ধরে
রেখেছিল কাঁপা কাঁপা এক হাত৷
যেন ফেরিওয়ালা,কতদিন ফেরি করে নি কল্পবিদ্যা খেলা
সাজায়নি রং মাখা প্রেমের আকুলি বিতান৷

পথের ও পাশে ছেঁড়া ছেঁড়া প্রেমপত্র
উড়ে এসে জোড়েনি এপাশের ফুটপাথে
সেই মানুষের ছেঁড়া ছেঁড়া হৃদয়ের ঘরে
ছেঁড়া শাড়ী ছেঁড়া হৃদয় জোড়েনি কোনদিন৷

যেন টোপ ফেলা, অলক্ষে গাঁথা হয়নি ফল৷
ও ফুটপাতে বসে থাকা ভাঙ্গা কৃষ্ণকলি ছেঁড়া শাড়ী শরীর আধার৷
যেন ময়না পাড়ার মাঠে জাগেনি হরিন চোখে হিল্লোল৷
লাগেনি চৈত্র মাদল৷কোমর ভাঙ্গা লজ্জাবতী গান৷সুদৃশ ফুলেল বান
লাগেনি কোন অযথা সসমীর রোখ
কিন্তু সময় জানিয়ে গেছে সেই কবে থেকে .....
" তা সে যতই কালো হোক...দেখেছি তার কালো হরিন চোখ "

কবিতা - ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

একান্তে
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত




হঠাৎ স্তব্ধতা নেমে আসে,
হঠাৎ থেমে যায় কথা বলা, নিঃশ্বাস;
ঘাতক হাইওয়েতে পড়ে থাকে অবশেষ।
অনিদ্রা ক্রমশ জমতে থাকে কালো কফির কটুগন্ধ,
রাত কত এখন?
শরীর ক্লান্ত অবশ,
তবু ঘুম নেই।

জীবন কি আসলে কতগুলো মুহুর্ত?
যে মুহুর্ত রণিত হয় ইথারে তরঙ্গে,
যে মুহুর্তের লয় ক্ষয় নেই,
ওই দেখি আত্মজন একে একে যারা ছাড়িয়ে সীমানা
পৌঁছে গেছেন তারাতে,
আকাশের নির্বিবাদি ভোরে।

কিছুই হারায় না,
সুরে বাজে রাত্রিকালীন ভায়োলিন,
একে একে জেগে ওঠে তরঙ্গ ঢেউ,
ভেসে ওঠে মুখগুলো,
হাসি কথা,
ঠিক যেন তারা ঘোরে ফেরে তোমার পাশে-
একান্তে।

কবিতা - আরশাদ উল্লাহ্‌

পাঁচটি হাইকু
আরশাদ উল্লাহ্‌



পূজাপার্বণ,
শুভ্র শেফালী হাতে
ভক্ত পূজারি

শারদ সন্ধ্যা,
দূরে পর্বত 'পরে
উজ্জ্বল তারা

স্নিগ্ধ সুবাস,
তাজা শিউলী হাতে
সুশ্রী তরুণী

পতিত পত্র,
পর্বত পথে হাঁটি
মর্মর ধ্বনি

ঝিঝির ডাক
মাতৃ-বুকে সন্তান,
ঝরিত পত্র

কবিতা - সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী

বসন্তবৌড়ির ডাক
সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী



অনেকদিন পরে পাপড়ি খুলে গেল,
কেমন আছিস বসন্তবৌড়ি?

এখন বিকেল দেখিনা রঙীন
বিকেলগুলোয় ধার নেই আর
এখন সোজা কথা বলতেও
ভুলভাবে নেশাগ্রস্ত হই,
থাক যত বাজে কথা -
কেমন কাটালি ঐ বিহীনসময়?

শেষবার ঝগড়ায় ভুলেই ছিলাম
তোর অনাথ বাড়ির চলতি গল্পকথা
তোর অনর্থক বন্ধুত্বের অপছন্দ কাহিনীমালা।
থাক তেঁতো স্বাদ, আয়
গয়নার বাক্স নিয়েই কথা শুরু হোক
কিম্বা তোর অহঙ্কারী বাবা বিষন্ন মা,
সেই হারানো বিকেলের মতোই।

আয় আবার শেষ পীত আলোর কণা
গায়ে মেখে ফুচকার জলের বিন্দু
চেটে নিই তোর আঙুলের গোলাপী আভায়।
এখনো মনখারাপী শুষ্ক আবহাওয়া ঘিরে
শ্বাসকষ্ট তোর কল্পবিলাসে!

এ নিস্পৃহ সময় কাটিয়েছি দুস্থ রামের গ্লাসে,
এই কবছর বসন্তবরণ ভিআরএসে ছিল
সারাটা সময় জুড়ে শুধু শীত শুধুই বরফপাত।

শুধুই বলার থাকে সারা দিনমান?
শুধুই কি কাজের কথায়
প্রত্যাশায়
নষ্ট করি এ প্রান্তসময়?
আজকাল সব কিছু থেকে যায়
অনুভবে
বুকের অদৃশ্য তানপুরায় কবে
যেন বেজেছিল সূক্ষ টোড়ির তান
জাননা তুমি?

আর আজ ফিরেই যদি এলে -

যা চলে গেছে, ফেরে না কেন কিছুতেই...!

কবিতা - ঝুমা মজুমদার

একটা সাদামাটা গল্প 
ঝুমা মজুমদার



কোনদিন আগুনে পুড়তে শিখি নি
গলতে পারি নি বরফের মত অকপটে 
শুধু নতজানু চিলেকোঠার প্রথম বর্ষার কাছে
পরাজিত সৈনিকের বেশে ।

ভেজা জবজবে শরীরটাকে আস্তে আস্তে ঠেলে দি
শতছিদ্র ঘুণেকাটা ইতিহাসের পাতায়,
হলদেটে মলাটের ভাঁজে,
খোলা চুলে আমার অতীত
তোমার বুকে মুখ গুজে
নিশ্চিন্তে !

আজ যদি ফের বৃষ্টি আসে তালাবন্ধ চিলেকোঠায়
গুমোট মেঘের বুক ভেঙ্গে
ঝাপসা চোখে ছুঁয়ে দেখো,
আঙ্গুলের ডগায় এক চিলতে অতীত কে
স্পর্শে, গন্ধে, অনুভবে ...

কবিতা - সৌম্যেন্দু হালদার

দুটি কবিতা
সৌম্যেন্দু হালদার



জীবন একটি স্বপ্ন

স্বপ্নের শেষে হাতটি বাড়িয়ে দাও।
আগে যেভাবে দিতে।
এসক্যালেটারে বেসামাল হয়ে পড়লে।
নৌকা একটু বেশি দুলে উঠলে।
দূরপাল্লার ট্রেনে চড়ে বসলে।
যখন জীবন কথা বলে তখন কেউ ফুরিয়ে যায় না!
কেননা ও শুধু বেঁচে থাকার কথা বলে।
যদিও বাঁচতে বাঁচতে এমন একদিন আসে
যেদিন পাগল হৃদয়টা আর হাত বাড়িয়ে দেয় না।


আর্জি

সে তোমাকে ছুঁয়ে আছে তুমি তার কাছে যাও।
সে তোমাকে খুঁজেছে কিন্তু পায় নি, তার কাছে যাও।
তোমাকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে উঠেছিল যারা
তাদের ও বাঁচিয়ে রাখবে বলেছে
আর অন্য পথগুলিকে পথভ্রষ্ট করে দেবে বলেছে।
তুমি ওর কাছে যাও।
ও জানে তুমি চলে যেতে পারো।
তাই শেষবারের মতো ও তোমাকে
রজনী শেষের প্রদীপটির কথা বলেছে।
হয়ত আর কোনও কথা কোনোদিন বলতে পারবে না।
তুমি ওর কাছে যাও।

কবিতা - অরুণ সেনগুপ্ত

ঈর্ষা
অরুণ সেনগুপ্ত



ঈর্ষাকাতর চোখ রোজ হেঁটে যায়
তিনতলা বাড়ি ওই - সাদা দেওয়াল
পায়রা ওড়ে দুবেলা ; শান্ত ঘুমায় ।
অদৃশ্য ধারহীন এক তরোয়াল
সুনিপুণভাবে খালি মর্মে খোঁচায় ।
পানের লতিকা ফেলি গা মেটাতে ঝাল ।
ফিরতে আসতে যাই ; শরীর গোলায়
নিজের মনেই নিজে দিই গালাগাল ।
ফুটফুটে দেওয়াল ঝিলিক রৌদ্রে
আছাড়ি পিছাড়ি ঢেউ খেলে যায় রোজ
বোলাই কালির তূলি হিংস্র আঁচড়ে
ক্ষত করি , তার নেই কোনই গরজ ।
কেমন আকাশে ওড়ে ; উড়েই তো যায় -
ঈর্ষা চোখ যতই সিঁড়ি টপকায় ।

কবিতা - পৃথা রায় চৌধুরী

চন্দ্রাহতা
পৃথা রায় চৌধুরী



অপরপক্ষের দেওয়ালে সিঁদুরে স্বস্তিক জানান দিয়েছে
তোমার কাছে, বাজি রেখেছি অপার আশার এক সিন্ধু অনন্ত
তীর ধনুক শিশু শেষটা প্লাস্টার জড়ানো বোকামির দায় নিয়েছে;
সশব্দ তাগিদে ফুটে ওঠে শুধু উৎসাহী আকুলতা,
চোখ দাও মনের মতো করে, যেখানে হাওয়ারও রঙে
বাঁধা থাকে পুনর্জন্মে তোমাকে পাবার মানতনুড়ি।

স্থির আয়নায় গতিশীল হয়ে যায় ছবি,
অন্তহীন মধ্যরাতে সুর তোলে সর্বনাশী কুহকিনী
সম্পর্ক কন্ট্র্যাক্টে সৃষ্টিকর্তার দায়সারা সই মেলে না;
মন দিয়ে নাড়ির টানে ভালোবাসা উল্কি ফোটাবো
আসন্ন স্নানকালে স্খলিত বর্ম অস্বাভাবিক সুস্থির,
চাঁদ টেনে নেয় ভেঙে পড়া বাঁধের সংযমী নুড়ি অনায়াসে।

কবিতা - বর্ণালী গুপ্ত

ইনটারমিসন
বর্ণালী গুপ্ত



শেষ বিকেলের বৃষ্টিধারা আমাকে নাও
স্পর্শ স্নানে ধুয়ে দাও আমার বিগত শোক তাপ
নীলাভ জ্বরো রাতের অনুভুতি মাখা গান,
নিজের অজান্তেই লেখা নিষিদ্ধ অনুভব,
আজ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ধাতব খাঁচায় সঙ্গাহীন।
কত না লেখা কবিতার পংক্তি,কত না দেখা দৃশ্যের অনুরণন,
কত সুর স্পন্দ্‌ন রাগরাগিণীর নিখুঁত চলন।
সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে দাও সেই অনুভব
জীবনের তুচ্ছ খাঁচা বন্দী পাখি ডানা ঝাপটে নিজেই
আকাশ হয়ে উঠুক ...
নীল আকাশ.......আমাকে নাও।

কবিতা - নাশিদা খান চৌধুরী

প্রবোধ
নাশিদা খান চৌধুরী



মনি-মুক্ত, সমুদ্র সেঁচে
এক বালতি বিষাদ কুড়োনো গেল
দেনা পাওনার শেষ বিকেলে;

আকাঙ্ক্ষায় কিছু জটিলতা ছিল
লোভ ছিল তার চাইতে বেশী।
তীক্ষ্ণ নজরে বাদ পড়েনি বাড়তি উচ্ছৃংখলতা
বিষবাষ্পে মজে যাওয়া কিছু কথপোকথন...
শুধু মুখ বুজে সয়ে যাওয়া সেচ ভূমিকা।

গোঙানো রাতের ফেটে যাওয়া কর্ণকুহরে
শ্রবণেন্দ্রিয় জাগ্রত করে, আড়চোখে দ্যাখে -
খেলতে খেলতে পুড়ছে তমসার প্রহর।

ইচ্ছে করে,
বিষাদের সাথে ছাই মেখে বিষিয়ে দি লোভীমুখ
অনর্গল লাঙল চালিয়ে প্রতিশোধ নেই নোনাভূমিতে
অট্টহাসি নিয়ে দেখে নেই শেষ অধ্যায়ের রঙ্গমঞ্চ
জিঘাংসার সুত্রপাতে নিরাময় হোক;

আহ্! পারিনা...
উল্টো, প্রতিনিয়ত উত্তাল ঢেউ-এ জলাঞ্জলি দেই কাপুরুষ মন। 


কবিতা - আলি রেজা

প্রখর শিকারী
আলি রেজা



দুপুরের দহনকে আঁচলে গিট মেরে কিশোরীটি ঘাসফড়িংয়ের পিঠে চেপে বসে। শস্যখেতে কলসীর কণা, রক্তের ঘ্রাণ পাই আলপনা আঁকা পায়ের গোলাপি ডিমে, রুপান্ধ কিশোরীর মুখে মাদলের কাঁপন, লাভার স্রোত কোন চিহ্ন রাখেনি তার তামাটে উদরে, অনতিগভীর নাভির পাড়ে সোমত্ত পলির স্তর।

ভো-কাট্টা ঘুড়ির সুতো ধরে আকাশে উড়াই, আমার কখনো না্টাই হলো না। আর স্পর্ধা কেন?

সন্ধ্যা হলেই ফিরে আসি মাটির ডেরায় পূর্ব-পুরুষের প্রত্নভূমি, এখানে প্রতিটি রাত প্রখর শিকারী।

কবিতা - আব্দুল্লাহ্ জামিল

কবিতা ত্রয়ী
আব্দুল্লাহ্ জামিল


বিরহের নেশা

এবং কেউ চলে যায় আজ
বহুকালের না বলা কথা বলা হয়ে যায়
মরণের বহুকাল আগে
অতঃপর বিচ্ছিন্ন সংযোগ

তখন মেঘলা আকাশের হেঁয়ালিপনা
কখনো কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝরে
কখনো হাল্কা রোদের পরশ বুলায়
কিংবা ঝমঝম বৃষ্টিতে ভেজায়

তারপর ভুলে যাওয়া পথে
চলতে চলতে চলে যায় বিস্মৃত জগতে
এই প্রেমের গান গাইনি কোনদিন
অথচ বিরহের গানও কতো আনন্দদায়ক

না কিছু আশা করতে নেই
তাতে শুধু কষ্ট বেড়ে যায়
আমি তো আর কষ্ট চাই না
এখন বিরহের নেশায় বুঁদ হয়ে আছি


ক্ষুধাচিত্র

লাজ-লজ্জাবিহীন এই রাঁধুনী নির্ভর ক্ষুধা ভালো লাগে না
অত বকবক করা কেনো?
নির্লিপ্ত সূর্যটা শুধু জ্বালা ধরানো কিরণ ঢেলে যায় মনে
আর ভালো লাগে না এ’ অসহ্য পরনির্ভর ক্ষুধা
অথচ দেখেছো দেশখেকো রাজনীতিকেরা আজ
সুন্দরী গণিকার যোনি চেটে তৃপ্তির ঢেকুরে করছে ক্ষুধা নিবারণ!

এখানে তো শুধু আত্মঘাতী ক্ষুধায় কাতর মানুষের দল
একে অন্যের সব ইচ্ছেগুলোকে চিবিয়ে চিবিয়ে
আখের নিরস ছোবড়া বানিয়ে ফেলে
আর নিরাশার ঘুম চোখে আশা পূরণের ব্যর্থ স্বপ্ন দ্যাখে।


সম্মানী

বৃদ্ধ এ’ বালুকা বেলায় তরুণী ও যুবতী ঢেউগুলো
কেমন আছড়ে আছড়ে পড়ছে আজ
আয়নাতে মুখ দেখি রোজ
শ্যাওলা পড়া দেয়ালেতে চুনের ছিটা লেগে আছে
এ’ দেয়ালে প্রেমালেখ্য লেখা যাবে না
কি করে বোঝাবো
এ’ ভালোবাসার উপযুক্ত সম্মানী আমার কাছে নেই

কবিতা - আহমেদ মুনীর .

বোধ 
আহমেদ মুনীর .

এক লাজুক প্রহর জেগে ওঠে বোধে
পরাভূত হয় প্রতিবার অনুভূতি নিদ্রা
চপলা হরিণী তার সঙ্গীর কপোলে নাকে মুখে
মুক্তোর ঝিলিমিলি স্পন্দিত স্নিগ্দ সরোবরে
পারিজাত পুষ্পে বিমোহিত স্পর্ধিত উল্লাসে
বুনো গন্ধে পৃথিবী থেকে ইউটোপিয়্যান নক্ষত্রলোকে
প্রবাহমান মৃত্যু দুঃখ ও যন্ত্রণার স্রোত
তবুও রৌদ্রের রঙ ছড়ায় বিস্তৃত মাঠে বনভূমে
চারদিকে ফসলের বীজ
এই মাটি ঢের ফলবান খরস্রোতা নদী
এখানে সহস্র প্রাণারাম আসে
শালিক দোয়েল আর হরিণের পাল
গতিশীল নভোনীলা এখানে কিছুটা কাল ভালোবেসে
লুফে নেয় উষ্ঞ সুখের মৃম্ময়ী আঁশ ।।

আশ্চর্য! একবিংশ শতাব্দীর এই পরম চরম দিনেও
পরমাণু এবং অতি-জনন তত্ত্বেরও উর্ধে
পাথরে পাথরে আগুন জ্বলে যন্ত্রণা বাড়ে
তবুও পাথর বিগলিত হয় না মোমের মত
তবুও জ্বলে যন্ত্রণায় উত্তাপে
নীল কঙ্ক্রীটে সুবিন্যস্ত এই আবার কেমন পাথর
কে জানে কে জানে ।।


তবুও শব্দকে ধরে রাখি
জীবন আর চেতনাবোধে অঙ্কুরিত সভ্যতার লোভে
শিল্প ও কবিতাকে আশ্চর্য ও অলৌকিক বিন্যাসে
আমি সাজিয়ে রাখি আমারই উদ্যানে অন্তরীক্ষে
বুকের মধ্যে হৃদয়ে বাজে সারাক্ষণ
আদিম ও সনাতন
ক্ষয়িষ্ঞু আভার মত
সেই এক নাছোড় অনুগ্র বোধ ।।

কবিতা - মেঘলা জান্নাত

কবিতার সুরে তীব্র ঝঙ্কার
মেঘলা জান্নাত



কবিতা তবে কি?
যেমনি মানুষ উদঘাটন করেছে বহু সত্য
রচনা করেছে যুগে যুগে অনেক তত্ত্ব
তবে কি এমনি করেই জন্ম নিয়েছিল শিল্পকলা
আর তারই অন্যতম সৃষ্টি এ কবিতামালা ?

কবিতা তবে কি?
কল্পনার অসীম মূর্তরূপে বিরাজমান
গভীর অনন্তকে পাঠকের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যে সচেষ্ট শান
তবে কি তেমনি প্রচেষ্টা এমন কবিতা লেখার প্রয়াস
এমতাবস্থায় কবিগন কি কেবলই ফেলবেন দীর্ঘশ্বাস?

কবিতা তবে কি?
অনুভূতির সুন্দর ও শাশ্বত প্রকাশই যদিবা পাঠকের কাছে কবিতা হয়
পাঠক নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারলেন কিনা তা-ই বিচার্য বিষয়
গন্তব্য কোথায় কবিতার?বা কবিতা কি সকলের জন্যে নয় ?
কবিতার সূক্ষ শরীরে রক্তের আঁচড় কেটে ফোটা অস্ত্রাঘাত !
যেমনি করে"স্বাধিনতা"নিয়ে সৃষ্ট কবিতা হয়ে উঠেছে,লেখনী নির্ঝরে বজ্রপাত ।

কবিতা তবে কি ?
নির্দিষ্টস্থান কোথায় কবিতার?নাকী এ এক দখল করা জমিন?জমিদারের ।
কারাইবা দিয়েছিল কবিতায় ব্যাপক রূপ!চক্ষুকর্নরঞ্জক লোমহর্ষক সব আবিস্কারের!
পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক,তবে কি দূর্বোধ্যতাই কবিতার অলঙ্কার ?
কি করেইবা হয়েছিল উদয় স্রোষ্টারূপি কবিমনে অহঙ্কার ?
কবিতায় যেন আজ রক্তশূন্যতার শঙ্কা!
কে করবে এর ভবিষ্যৎ রক্ষা?

এবার কি তবে পারবেনা প্রজন্ম,কবিতার গায়ে লাগাতে তীব্র ঝঙ্কার!

এবার হোক তবে কবিতা..................
শৃঙ্খল মুক্তির জন্যে কবিতা,
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা,
গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা,
স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা,
স্বাধীনতার পক্ষে কবিতা,
ভালবাসার আহব্বানে কবিতা.......

কবিতা - শ্যাম রায়

জয় মা  আগমনীশ্যাম রায়



পৃথিবীতে আগুন
আগুনে পৃথিবী
কোনটা ?

বিষাদের স্বপ্ন
স্বপ্নে বিষাদ
ক্ষণটা ,

শরতের প্রকৃতি
প্রকৃতিতে শরৎ
মনটা~

কাশে দোল
দোলে কাশ
ঢেউটা ...

প্রভাতে শিউলি
শিউলি প্রভাতে
গন্ধটা ...

বীরেনবাবুর ভোর
ভোরে বীরেনবাবু
প্রাণটা !

আশ্বিনের শারদপ্রাতে
শারদপ্রাতে আশ্বিন
ঘণ্টা ...

আগমনী বাতাসে
বাতাসে আগমনী
সুরটা ...

জাগো দুর্গা
দুর্গা জাগো
রেশ টা.....

সবার ভালো
ভালোয় সবে
শেষ টা ...।।


কবিতা - সন্দীপ দাশ

অনাবৃষ্টি
সন্দীপ দাশ


বৃষ্টি এলো না !!!
বৃষ্টি এলো না......
অথচ, এক পশলা বৃষ্টির ভীষণ প্রয়োজন।
সব ধুয়ে মুছে গেলে
সারাদিনের অস্বস্তি কিছুটা অন্তত কমে—
তবু, বৃষ্টি এলো কই......
পাশের বাড়ির মঞ্জুলাদি আজ
অনেকদিন পর হাওয়াইন গীটারে গান তুলছে,
“এবার নীরব করে দাও হে তোমার......”
ওপাশের বাড়ির তন্ময় সকাল থেকে দরজা এঁটে বসে।
সকালের পেপার বলছে,
মেয়েটা হাতের শিরা কেটে বৃষ্টি আনতে চেয়েছিল...
সকলেই বৃষ্টির খোঁজে,
তবু, বৃষ্টি এলো কি?
ক’জনের জীবনেই বা বৃষ্টি আসে?
যাদের এলো বা আসবে,
তারা অঝোর ধারায় ভিজে নেয়
বারংবার আর আমাদের,
যাদের জীবনে বৃষ্টি এলো না, তারা,
ঘণ্টা- মিনিট- সেকেন্ড গুনতে গুনতে
আরও বেশি অস্বস্তির দিকে এগিয়ে চলেছি......
ক্রমশই......
বৃষ্টিহীন আকাশে খুব তাপ। ...
তা তুমি জানবে কেমন করে?
তোমার আকাশ তো কোনদিন তাপমান নয়।
তোমার আকাশে আসে শীত আর বসন্ত;
শীতে পাতা ঝরিয়ে বসন্তে আবার নতুন পাতা...
তুমি কি বুঝবে বৃষ্টিহীনতার কি জ্বালা???

কবিতা - সুবর্ণা গোস্বামী

ক্ষত
সুবর্ণা গোস্বামী



এরকম হয় মাঝে মাঝে,
শিকারী পাখির কাছে অনুরোধ করি
বিঁধে থাকা সূচ খুলে দিতে,অরব শরীরময়।
যন্ত্রণার জলচৌকি চৌচির তবু
থামবার নয় তার অমোঘ নখর,
জলসাঘরের রঙিন জানালার কাচে
চোখ রাখলে দেখা যায়
হাড়,মাংস প্রনয়ের ক্ষত,
ধূপের নিহত নিঃশ্বাস,
অলিতে গলিতে পড়ে থাকা হৃদয়ের মৃতদেহ আর
বিষের পেয়ালাটিকেও।

এরকম হয় মাঝে মাঝে,
মাঝরাতে বুকে ভর দিয়ে উঠে আসে স্বপ্নের ধ্বংসস্তূপ
বুকের উপর নিয়ে ঘুমিয়ে থাকি
দেখি সে আমারই মতন কেউ,সহোদরা?
কখনও স্নেহের চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে দেই চুল,
কখনও কৌশলে চোরাবালিতে ফেলে
দেখি মুগ্ধ চোখে নিঃশেষে ডুবে যাওয়া তার।
দাবদাহ, সূচ আর ঘৃণার চুম্বন,
ফিরে ফিরে আসে
তারা তো মানুষ নয়,
আমাকে একলা ফেলে কি করেই বা যাবে?

এরকম হয় মাঝে মাঝে
যত্নে লুকিয়ে রাখা অমরত্বের কবচ
ছুঁড়ে দেই অসুখের পায়ের উপরে।

কবিতা - মনোজিৎ দত্ত

সত্যের শস্য দানা
মনোজিৎ দত্ত



যতই লাঙ্গল দিই...আমার শব্দগুলো
জল - মাটি -কাঁদায় ঠিকঠাক মেশেনা
খুব একটা ভাল ফলন হবেনা জানি
তবুও কবিতার প্রান্তিক চাষীতো ...
ঘাম ঘাম চেষ্টার খামতি নেই।

জানি ... সব ঋতুতেই
কবিতার কমবেশ ফলন হয়
একেক ঋতুর একেক স্বাদ।
আমিও চেষ্টা করি ...
তবুও আমার শীতের কবিতা -
গরমে ঘেমে উঠে
আমার গরমের কবিতা ... শীতে জুবুথুবু।
কোকিল বসেনা বসন্তে কবিতার ডালে
ঝুলে থাকে আত্মঘাতী কৃষকের লাশ
শরতের সাদা মেঘের ভেলা বিবর্ণ
তবুও ঘাম ঘাম চেষ্টার খামতি নেই।

প্রেমের কবিতা লিখলে
লোকে বলে - এটা সুইসাইড নোট
বিপ্লবের কবিতা যেন শোকপ্রস্তাব
প্রতিবাদের কবিতা জঙ্গী হয়ে উঠেনা
শব্দেরা যেন শবযাত্রার মৌনমিছিলে।
জ্যোৎস্নার কবিতায় সূর্যের বিদ্রুপ
... চাঁদও যে সূর্যের কাছে ঋণী
বৈরী-বাতাসে স্বপ্ন-চোখে অন্ধকার।
তবুও ... ঘাম ঘাম চেষ্টার খামতি নেই।

আমার ঘাম ঘাম চেষ্টার খামতি নেই
আসছে দিনে -
অন্ধকারে না ... অন্ধকার পুঁতবো
লাঙ্গলের ফলায় - কবিতার শরীরে।
সত্যের হাজার ওয়াট হ্যালোজেনে
জমাট অন্ধকার কবিতা হয়ে উঠবে।

জমাট অন্ধকার 'কবিতা' হয়ে উঠবে।

কবিতা - স্বাতী বিশ্বাস

রূপকথা
স্বাতী বিশ্বাস



কোথায় গেল রূপকথারা তেপান্তরের মাঠ
ক্যামন করে হারিয়ে গেল মুন্সিগঞ্জের হাট।

অরুণ বরুণ কিরণমালা বুদ্ধু ভুতুম সোনা
নীলকমল আর লালকমলের স্বপ্নে আনাগোনা।

ডালিমকুমার ক্যামন করে লুকিয়ে ডালিম গাছে
রাজকন্যার ঘুম ভাঙিয়ে রাখতো নিজের কাছে।

সোনার কাঠি রূপোর কাঠি জীয়ন কাঠি হয়ে
দেশের মানুষ উঠত বেঁচে আবার হেসে গেয়ে।

ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী আর সাত সমুদ্র নদী
হীরের গাছে মোতির ফুল নানান রঙের ছবি।

ঠাকুরমায়ের ঝুলির থেকে কতই গল্প কথা
স্বপ্নে এসে দেখা দিতো সোনালী রূপকথা।

রাক্ষসেরা যাতেই হারে  রাজপুত্রের কাছে
এটাই শুধু কাম্য ছিলো ভুল না হয় পাছে।
কেউ শোনেনা ওসব  কথা  নেই যে ঠাকুরমা
নিজের গাছ কাটছি নিজেই মুড়িয়ে নটেখানা ।

রাজপুত্তুর পালিয়ে গেছে পক্ষী রাজে চেপে
তাইতো আঁধার লেগে আছে এই বৃত্ত ব্যপে।
কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৩

কবিতা - কচি রেজা

সাদা ইউনিফর্ম
কচি রেজা



(১)
সাদা য়ুনিফর্ম হয়ে তুমি আমার কাছে আসো
কিছু উৎপন্ন ডিম রেখেছি দেখো হারমনিয়ামের রীডে

(২)
পরীক্ষা করো আমাকে চোখদুটিতে কেন উভলিঙ্গ পোকা
পাগলের জনন কোষ বলে আমি ও কি নিরপেক্ষ মৃগী রোগী

(৩)
একসাথে নেচে জোড়া লেগে গেছে বুকের কবুতর
তুমি চলে গেলে সাদা কাগজেও আরেকটি তুমি

(৪)
কান্না দেখে চশমাও ভিজেছিল খুব
বাইবেল না কি সংক্রামক প্রাচ্যদেশী এই অহংকার
তোমাকে নয় নিজেকে উপভোগ করার জন্যই
বিকিনি খুলতে দিয়েছি সুস্বাদু হরিণকে

(৫)
কাঁটাচামচে বৈশিষ্ট্য কেটে খাচ্ছে ঘনিষ্ঠতা
পাতলা কাচের শব্দে জোড়াঠোঁট কেটে যায়

(৬)
তোমাকে চুম্বন করে যে জীবাণু করি পান
তুমি তার রাখো নি সন্ধান

(৭)
আমিও মেটালকয়েন খুঁজে বেড়াচ্ছি সীবিচে
নিঃসঙ্গতা চায় না কেউ তার সমকক্ষ হোক
ডিটেকটর সংকেত দিলে উঠে আসে
পেশীহীন শামুকের সঙ্গমদৃশ্য

(৮)
কোথাও গেলে দেহ রেখে যাই
কেউ ষ্ট্রাকচারের প্রশংসা করলে
দু'জন ইঞ্জিনীয়ারের নাম বলি

(৯)
প্রেম দিয়ে কি আরেকটি সংসদ ভবন গড়বেন, লুই কান
আমার লবন নিন

কবিতা - অনুপ দত্ত

সেই লোকটা
অনুপ দত্ত



সেই লোকটা৷ কত দিন বসে আছে ফুটপাতে
যেন পৃথিবী অভিমান নিয়ে এক কোনে চেয়ে আছে
নিজেকে হরফ করে বিছানোর ছায়া কবে ঢাকা পড়েছিলো...
এই পৃথিবীর মুখে৷হাস্যরসে ভরপুর নিবাসী শাস্ত্রের সংলাপে৷

যেন আঘাতে, ঐশ্বরিক প্রেমের আঘাতে গাছের আড়ালে
গাছপালা ভেঙ্গে ফোকরে ফোকরে জেগে ওঠে ভূষন্দির মাঠ৷

যেন কতদিন,ঘুমায়নি যৌবন৷
চেয়ে চেয়ে কেটে গাছে জীবনের উলঙ্গ করা রাত৷

যেন শরীর,ভাঙ্গা আয়নায় জড়িয়ে শিহিরণ ধরে
রেখেছিল কাঁপা কাঁপা এক হাত৷
যেন ফেরিওয়ালা,কতদিন ফেরি করে নি কল্পবিদ্যা খেলা
সাজায়নি রং মাখা প্রেমের আকুলি বিতান৷

পথের ও পাশে ছেঁড়া ছেঁড়া প্রেমপত্র
উড়ে এসে জোড়েনি এপাশের ফুটপাথে
সেই মানুষের ছেঁড়া ছেঁড়া হৃদয়ের ঘরে
ছেঁড়া শাড়ী ছেঁড়া হৃদয় জোড়েনি কোনদিন৷

যেন টোপ ফেলা, অলক্ষে গাঁথা হয়নি ফল৷
ও ফুটপাতে বসে থাকা ভাঙ্গা কৃষ্ণকলি ছেঁড়া শাড়ী শরীর আধার৷
যেন ময়না পাড়ার মাঠে জাগেনি হরিন চোখে হিল্লোল৷
লাগেনি চৈত্র মাদল৷কোমর ভাঙ্গা লজ্জাবতী গান৷সুদৃশ ফুলেল বান
লাগেনি কোন অযথা সসমীর রোখ
কিন্তু সময় জানিয়ে গেছে সেই কবে থেকে .....
" তা সে যতই কালো হোক...দেখেছি তার কালো হরিন চোখ "

কবিতা - ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

একান্তে
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত




হঠাৎ স্তব্ধতা নেমে আসে,
হঠাৎ থেমে যায় কথা বলা, নিঃশ্বাস;
ঘাতক হাইওয়েতে পড়ে থাকে অবশেষ।
অনিদ্রা ক্রমশ জমতে থাকে কালো কফির কটুগন্ধ,
রাত কত এখন?
শরীর ক্লান্ত অবশ,
তবু ঘুম নেই।

জীবন কি আসলে কতগুলো মুহুর্ত?
যে মুহুর্ত রণিত হয় ইথারে তরঙ্গে,
যে মুহুর্তের লয় ক্ষয় নেই,
ওই দেখি আত্মজন একে একে যারা ছাড়িয়ে সীমানা
পৌঁছে গেছেন তারাতে,
আকাশের নির্বিবাদি ভোরে।

কিছুই হারায় না,
সুরে বাজে রাত্রিকালীন ভায়োলিন,
একে একে জেগে ওঠে তরঙ্গ ঢেউ,
ভেসে ওঠে মুখগুলো,
হাসি কথা,
ঠিক যেন তারা ঘোরে ফেরে তোমার পাশে-
একান্তে।

কবিতা - আরশাদ উল্লাহ্‌

পাঁচটি হাইকু
আরশাদ উল্লাহ্‌



পূজাপার্বণ,
শুভ্র শেফালী হাতে
ভক্ত পূজারি

শারদ সন্ধ্যা,
দূরে পর্বত 'পরে
উজ্জ্বল তারা

স্নিগ্ধ সুবাস,
তাজা শিউলী হাতে
সুশ্রী তরুণী

পতিত পত্র,
পর্বত পথে হাঁটি
মর্মর ধ্বনি

ঝিঝির ডাক
মাতৃ-বুকে সন্তান,
ঝরিত পত্র

কবিতা - সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী

বসন্তবৌড়ির ডাক
সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী



অনেকদিন পরে পাপড়ি খুলে গেল,
কেমন আছিস বসন্তবৌড়ি?

এখন বিকেল দেখিনা রঙীন
বিকেলগুলোয় ধার নেই আর
এখন সোজা কথা বলতেও
ভুলভাবে নেশাগ্রস্ত হই,
থাক যত বাজে কথা -
কেমন কাটালি ঐ বিহীনসময়?

শেষবার ঝগড়ায় ভুলেই ছিলাম
তোর অনাথ বাড়ির চলতি গল্পকথা
তোর অনর্থক বন্ধুত্বের অপছন্দ কাহিনীমালা।
থাক তেঁতো স্বাদ, আয়
গয়নার বাক্স নিয়েই কথা শুরু হোক
কিম্বা তোর অহঙ্কারী বাবা বিষন্ন মা,
সেই হারানো বিকেলের মতোই।

আয় আবার শেষ পীত আলোর কণা
গায়ে মেখে ফুচকার জলের বিন্দু
চেটে নিই তোর আঙুলের গোলাপী আভায়।
এখনো মনখারাপী শুষ্ক আবহাওয়া ঘিরে
শ্বাসকষ্ট তোর কল্পবিলাসে!

এ নিস্পৃহ সময় কাটিয়েছি দুস্থ রামের গ্লাসে,
এই কবছর বসন্তবরণ ভিআরএসে ছিল
সারাটা সময় জুড়ে শুধু শীত শুধুই বরফপাত।

শুধুই বলার থাকে সারা দিনমান?
শুধুই কি কাজের কথায়
প্রত্যাশায়
নষ্ট করি এ প্রান্তসময়?
আজকাল সব কিছু থেকে যায়
অনুভবে
বুকের অদৃশ্য তানপুরায় কবে
যেন বেজেছিল সূক্ষ টোড়ির তান
জাননা তুমি?

আর আজ ফিরেই যদি এলে -

যা চলে গেছে, ফেরে না কেন কিছুতেই...!

কবিতা - ঝুমা মজুমদার

একটা সাদামাটা গল্প 
ঝুমা মজুমদার



কোনদিন আগুনে পুড়তে শিখি নি
গলতে পারি নি বরফের মত অকপটে 
শুধু নতজানু চিলেকোঠার প্রথম বর্ষার কাছে
পরাজিত সৈনিকের বেশে ।

ভেজা জবজবে শরীরটাকে আস্তে আস্তে ঠেলে দি
শতছিদ্র ঘুণেকাটা ইতিহাসের পাতায়,
হলদেটে মলাটের ভাঁজে,
খোলা চুলে আমার অতীত
তোমার বুকে মুখ গুজে
নিশ্চিন্তে !

আজ যদি ফের বৃষ্টি আসে তালাবন্ধ চিলেকোঠায়
গুমোট মেঘের বুক ভেঙ্গে
ঝাপসা চোখে ছুঁয়ে দেখো,
আঙ্গুলের ডগায় এক চিলতে অতীত কে
স্পর্শে, গন্ধে, অনুভবে ...

কবিতা - সৌম্যেন্দু হালদার

দুটি কবিতা
সৌম্যেন্দু হালদার



জীবন একটি স্বপ্ন

স্বপ্নের শেষে হাতটি বাড়িয়ে দাও।
আগে যেভাবে দিতে।
এসক্যালেটারে বেসামাল হয়ে পড়লে।
নৌকা একটু বেশি দুলে উঠলে।
দূরপাল্লার ট্রেনে চড়ে বসলে।
যখন জীবন কথা বলে তখন কেউ ফুরিয়ে যায় না!
কেননা ও শুধু বেঁচে থাকার কথা বলে।
যদিও বাঁচতে বাঁচতে এমন একদিন আসে
যেদিন পাগল হৃদয়টা আর হাত বাড়িয়ে দেয় না।


আর্জি

সে তোমাকে ছুঁয়ে আছে তুমি তার কাছে যাও।
সে তোমাকে খুঁজেছে কিন্তু পায় নি, তার কাছে যাও।
তোমাকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে উঠেছিল যারা
তাদের ও বাঁচিয়ে রাখবে বলেছে
আর অন্য পথগুলিকে পথভ্রষ্ট করে দেবে বলেছে।
তুমি ওর কাছে যাও।
ও জানে তুমি চলে যেতে পারো।
তাই শেষবারের মতো ও তোমাকে
রজনী শেষের প্রদীপটির কথা বলেছে।
হয়ত আর কোনও কথা কোনোদিন বলতে পারবে না।
তুমি ওর কাছে যাও।

কবিতা - অরুণ সেনগুপ্ত

ঈর্ষা
অরুণ সেনগুপ্ত



ঈর্ষাকাতর চোখ রোজ হেঁটে যায়
তিনতলা বাড়ি ওই - সাদা দেওয়াল
পায়রা ওড়ে দুবেলা ; শান্ত ঘুমায় ।
অদৃশ্য ধারহীন এক তরোয়াল
সুনিপুণভাবে খালি মর্মে খোঁচায় ।
পানের লতিকা ফেলি গা মেটাতে ঝাল ।
ফিরতে আসতে যাই ; শরীর গোলায়
নিজের মনেই নিজে দিই গালাগাল ।
ফুটফুটে দেওয়াল ঝিলিক রৌদ্রে
আছাড়ি পিছাড়ি ঢেউ খেলে যায় রোজ
বোলাই কালির তূলি হিংস্র আঁচড়ে
ক্ষত করি , তার নেই কোনই গরজ ।
কেমন আকাশে ওড়ে ; উড়েই তো যায় -
ঈর্ষা চোখ যতই সিঁড়ি টপকায় ।

কবিতা - পৃথা রায় চৌধুরী

চন্দ্রাহতা
পৃথা রায় চৌধুরী



অপরপক্ষের দেওয়ালে সিঁদুরে স্বস্তিক জানান দিয়েছে
তোমার কাছে, বাজি রেখেছি অপার আশার এক সিন্ধু অনন্ত
তীর ধনুক শিশু শেষটা প্লাস্টার জড়ানো বোকামির দায় নিয়েছে;
সশব্দ তাগিদে ফুটে ওঠে শুধু উৎসাহী আকুলতা,
চোখ দাও মনের মতো করে, যেখানে হাওয়ারও রঙে
বাঁধা থাকে পুনর্জন্মে তোমাকে পাবার মানতনুড়ি।

স্থির আয়নায় গতিশীল হয়ে যায় ছবি,
অন্তহীন মধ্যরাতে সুর তোলে সর্বনাশী কুহকিনী
সম্পর্ক কন্ট্র্যাক্টে সৃষ্টিকর্তার দায়সারা সই মেলে না;
মন দিয়ে নাড়ির টানে ভালোবাসা উল্কি ফোটাবো
আসন্ন স্নানকালে স্খলিত বর্ম অস্বাভাবিক সুস্থির,
চাঁদ টেনে নেয় ভেঙে পড়া বাঁধের সংযমী নুড়ি অনায়াসে।

কবিতা - বর্ণালী গুপ্ত

ইনটারমিসন
বর্ণালী গুপ্ত



শেষ বিকেলের বৃষ্টিধারা আমাকে নাও
স্পর্শ স্নানে ধুয়ে দাও আমার বিগত শোক তাপ
নীলাভ জ্বরো রাতের অনুভুতি মাখা গান,
নিজের অজান্তেই লেখা নিষিদ্ধ অনুভব,
আজ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ধাতব খাঁচায় সঙ্গাহীন।
কত না লেখা কবিতার পংক্তি,কত না দেখা দৃশ্যের অনুরণন,
কত সুর স্পন্দ্‌ন রাগরাগিণীর নিখুঁত চলন।
সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে দাও সেই অনুভব
জীবনের তুচ্ছ খাঁচা বন্দী পাখি ডানা ঝাপটে নিজেই
আকাশ হয়ে উঠুক ...
নীল আকাশ.......আমাকে নাও।

কবিতা - নাশিদা খান চৌধুরী

প্রবোধ
নাশিদা খান চৌধুরী



মনি-মুক্ত, সমুদ্র সেঁচে
এক বালতি বিষাদ কুড়োনো গেল
দেনা পাওনার শেষ বিকেলে;

আকাঙ্ক্ষায় কিছু জটিলতা ছিল
লোভ ছিল তার চাইতে বেশী।
তীক্ষ্ণ নজরে বাদ পড়েনি বাড়তি উচ্ছৃংখলতা
বিষবাষ্পে মজে যাওয়া কিছু কথপোকথন...
শুধু মুখ বুজে সয়ে যাওয়া সেচ ভূমিকা।

গোঙানো রাতের ফেটে যাওয়া কর্ণকুহরে
শ্রবণেন্দ্রিয় জাগ্রত করে, আড়চোখে দ্যাখে -
খেলতে খেলতে পুড়ছে তমসার প্রহর।

ইচ্ছে করে,
বিষাদের সাথে ছাই মেখে বিষিয়ে দি লোভীমুখ
অনর্গল লাঙল চালিয়ে প্রতিশোধ নেই নোনাভূমিতে
অট্টহাসি নিয়ে দেখে নেই শেষ অধ্যায়ের রঙ্গমঞ্চ
জিঘাংসার সুত্রপাতে নিরাময় হোক;

আহ্! পারিনা...
উল্টো, প্রতিনিয়ত উত্তাল ঢেউ-এ জলাঞ্জলি দেই কাপুরুষ মন। 


কবিতা - আলি রেজা

প্রখর শিকারী
আলি রেজা



দুপুরের দহনকে আঁচলে গিট মেরে কিশোরীটি ঘাসফড়িংয়ের পিঠে চেপে বসে। শস্যখেতে কলসীর কণা, রক্তের ঘ্রাণ পাই আলপনা আঁকা পায়ের গোলাপি ডিমে, রুপান্ধ কিশোরীর মুখে মাদলের কাঁপন, লাভার স্রোত কোন চিহ্ন রাখেনি তার তামাটে উদরে, অনতিগভীর নাভির পাড়ে সোমত্ত পলির স্তর।

ভো-কাট্টা ঘুড়ির সুতো ধরে আকাশে উড়াই, আমার কখনো না্টাই হলো না। আর স্পর্ধা কেন?

সন্ধ্যা হলেই ফিরে আসি মাটির ডেরায় পূর্ব-পুরুষের প্রত্নভূমি, এখানে প্রতিটি রাত প্রখর শিকারী।

কবিতা - আব্দুল্লাহ্ জামিল

কবিতা ত্রয়ী
আব্দুল্লাহ্ জামিল


বিরহের নেশা

এবং কেউ চলে যায় আজ
বহুকালের না বলা কথা বলা হয়ে যায়
মরণের বহুকাল আগে
অতঃপর বিচ্ছিন্ন সংযোগ

তখন মেঘলা আকাশের হেঁয়ালিপনা
কখনো কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝরে
কখনো হাল্কা রোদের পরশ বুলায়
কিংবা ঝমঝম বৃষ্টিতে ভেজায়

তারপর ভুলে যাওয়া পথে
চলতে চলতে চলে যায় বিস্মৃত জগতে
এই প্রেমের গান গাইনি কোনদিন
অথচ বিরহের গানও কতো আনন্দদায়ক

না কিছু আশা করতে নেই
তাতে শুধু কষ্ট বেড়ে যায়
আমি তো আর কষ্ট চাই না
এখন বিরহের নেশায় বুঁদ হয়ে আছি


ক্ষুধাচিত্র

লাজ-লজ্জাবিহীন এই রাঁধুনী নির্ভর ক্ষুধা ভালো লাগে না
অত বকবক করা কেনো?
নির্লিপ্ত সূর্যটা শুধু জ্বালা ধরানো কিরণ ঢেলে যায় মনে
আর ভালো লাগে না এ’ অসহ্য পরনির্ভর ক্ষুধা
অথচ দেখেছো দেশখেকো রাজনীতিকেরা আজ
সুন্দরী গণিকার যোনি চেটে তৃপ্তির ঢেকুরে করছে ক্ষুধা নিবারণ!

এখানে তো শুধু আত্মঘাতী ক্ষুধায় কাতর মানুষের দল
একে অন্যের সব ইচ্ছেগুলোকে চিবিয়ে চিবিয়ে
আখের নিরস ছোবড়া বানিয়ে ফেলে
আর নিরাশার ঘুম চোখে আশা পূরণের ব্যর্থ স্বপ্ন দ্যাখে।


সম্মানী

বৃদ্ধ এ’ বালুকা বেলায় তরুণী ও যুবতী ঢেউগুলো
কেমন আছড়ে আছড়ে পড়ছে আজ
আয়নাতে মুখ দেখি রোজ
শ্যাওলা পড়া দেয়ালেতে চুনের ছিটা লেগে আছে
এ’ দেয়ালে প্রেমালেখ্য লেখা যাবে না
কি করে বোঝাবো
এ’ ভালোবাসার উপযুক্ত সম্মানী আমার কাছে নেই

কবিতা - আহমেদ মুনীর .

বোধ 
আহমেদ মুনীর .

এক লাজুক প্রহর জেগে ওঠে বোধে
পরাভূত হয় প্রতিবার অনুভূতি নিদ্রা
চপলা হরিণী তার সঙ্গীর কপোলে নাকে মুখে
মুক্তোর ঝিলিমিলি স্পন্দিত স্নিগ্দ সরোবরে
পারিজাত পুষ্পে বিমোহিত স্পর্ধিত উল্লাসে
বুনো গন্ধে পৃথিবী থেকে ইউটোপিয়্যান নক্ষত্রলোকে
প্রবাহমান মৃত্যু দুঃখ ও যন্ত্রণার স্রোত
তবুও রৌদ্রের রঙ ছড়ায় বিস্তৃত মাঠে বনভূমে
চারদিকে ফসলের বীজ
এই মাটি ঢের ফলবান খরস্রোতা নদী
এখানে সহস্র প্রাণারাম আসে
শালিক দোয়েল আর হরিণের পাল
গতিশীল নভোনীলা এখানে কিছুটা কাল ভালোবেসে
লুফে নেয় উষ্ঞ সুখের মৃম্ময়ী আঁশ ।।

আশ্চর্য! একবিংশ শতাব্দীর এই পরম চরম দিনেও
পরমাণু এবং অতি-জনন তত্ত্বেরও উর্ধে
পাথরে পাথরে আগুন জ্বলে যন্ত্রণা বাড়ে
তবুও পাথর বিগলিত হয় না মোমের মত
তবুও জ্বলে যন্ত্রণায় উত্তাপে
নীল কঙ্ক্রীটে সুবিন্যস্ত এই আবার কেমন পাথর
কে জানে কে জানে ।।


তবুও শব্দকে ধরে রাখি
জীবন আর চেতনাবোধে অঙ্কুরিত সভ্যতার লোভে
শিল্প ও কবিতাকে আশ্চর্য ও অলৌকিক বিন্যাসে
আমি সাজিয়ে রাখি আমারই উদ্যানে অন্তরীক্ষে
বুকের মধ্যে হৃদয়ে বাজে সারাক্ষণ
আদিম ও সনাতন
ক্ষয়িষ্ঞু আভার মত
সেই এক নাছোড় অনুগ্র বোধ ।।

কবিতা - মেঘলা জান্নাত

কবিতার সুরে তীব্র ঝঙ্কার
মেঘলা জান্নাত



কবিতা তবে কি?
যেমনি মানুষ উদঘাটন করেছে বহু সত্য
রচনা করেছে যুগে যুগে অনেক তত্ত্ব
তবে কি এমনি করেই জন্ম নিয়েছিল শিল্পকলা
আর তারই অন্যতম সৃষ্টি এ কবিতামালা ?

কবিতা তবে কি?
কল্পনার অসীম মূর্তরূপে বিরাজমান
গভীর অনন্তকে পাঠকের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যে সচেষ্ট শান
তবে কি তেমনি প্রচেষ্টা এমন কবিতা লেখার প্রয়াস
এমতাবস্থায় কবিগন কি কেবলই ফেলবেন দীর্ঘশ্বাস?

কবিতা তবে কি?
অনুভূতির সুন্দর ও শাশ্বত প্রকাশই যদিবা পাঠকের কাছে কবিতা হয়
পাঠক নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারলেন কিনা তা-ই বিচার্য বিষয়
গন্তব্য কোথায় কবিতার?বা কবিতা কি সকলের জন্যে নয় ?
কবিতার সূক্ষ শরীরে রক্তের আঁচড় কেটে ফোটা অস্ত্রাঘাত !
যেমনি করে"স্বাধিনতা"নিয়ে সৃষ্ট কবিতা হয়ে উঠেছে,লেখনী নির্ঝরে বজ্রপাত ।

কবিতা তবে কি ?
নির্দিষ্টস্থান কোথায় কবিতার?নাকী এ এক দখল করা জমিন?জমিদারের ।
কারাইবা দিয়েছিল কবিতায় ব্যাপক রূপ!চক্ষুকর্নরঞ্জক লোমহর্ষক সব আবিস্কারের!
পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক,তবে কি দূর্বোধ্যতাই কবিতার অলঙ্কার ?
কি করেইবা হয়েছিল উদয় স্রোষ্টারূপি কবিমনে অহঙ্কার ?
কবিতায় যেন আজ রক্তশূন্যতার শঙ্কা!
কে করবে এর ভবিষ্যৎ রক্ষা?

এবার কি তবে পারবেনা প্রজন্ম,কবিতার গায়ে লাগাতে তীব্র ঝঙ্কার!

এবার হোক তবে কবিতা..................
শৃঙ্খল মুক্তির জন্যে কবিতা,
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা,
গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা,
স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা,
স্বাধীনতার পক্ষে কবিতা,
ভালবাসার আহব্বানে কবিতা.......

কবিতা - শ্যাম রায়

জয় মা  আগমনীশ্যাম রায়



পৃথিবীতে আগুন
আগুনে পৃথিবী
কোনটা ?

বিষাদের স্বপ্ন
স্বপ্নে বিষাদ
ক্ষণটা ,

শরতের প্রকৃতি
প্রকৃতিতে শরৎ
মনটা~

কাশে দোল
দোলে কাশ
ঢেউটা ...

প্রভাতে শিউলি
শিউলি প্রভাতে
গন্ধটা ...

বীরেনবাবুর ভোর
ভোরে বীরেনবাবু
প্রাণটা !

আশ্বিনের শারদপ্রাতে
শারদপ্রাতে আশ্বিন
ঘণ্টা ...

আগমনী বাতাসে
বাতাসে আগমনী
সুরটা ...

জাগো দুর্গা
দুর্গা জাগো
রেশ টা.....

সবার ভালো
ভালোয় সবে
শেষ টা ...।।


কবিতা - সন্দীপ দাশ

অনাবৃষ্টি
সন্দীপ দাশ


বৃষ্টি এলো না !!!
বৃষ্টি এলো না......
অথচ, এক পশলা বৃষ্টির ভীষণ প্রয়োজন।
সব ধুয়ে মুছে গেলে
সারাদিনের অস্বস্তি কিছুটা অন্তত কমে—
তবু, বৃষ্টি এলো কই......
পাশের বাড়ির মঞ্জুলাদি আজ
অনেকদিন পর হাওয়াইন গীটারে গান তুলছে,
“এবার নীরব করে দাও হে তোমার......”
ওপাশের বাড়ির তন্ময় সকাল থেকে দরজা এঁটে বসে।
সকালের পেপার বলছে,
মেয়েটা হাতের শিরা কেটে বৃষ্টি আনতে চেয়েছিল...
সকলেই বৃষ্টির খোঁজে,
তবু, বৃষ্টি এলো কি?
ক’জনের জীবনেই বা বৃষ্টি আসে?
যাদের এলো বা আসবে,
তারা অঝোর ধারায় ভিজে নেয়
বারংবার আর আমাদের,
যাদের জীবনে বৃষ্টি এলো না, তারা,
ঘণ্টা- মিনিট- সেকেন্ড গুনতে গুনতে
আরও বেশি অস্বস্তির দিকে এগিয়ে চলেছি......
ক্রমশই......
বৃষ্টিহীন আকাশে খুব তাপ। ...
তা তুমি জানবে কেমন করে?
তোমার আকাশ তো কোনদিন তাপমান নয়।
তোমার আকাশে আসে শীত আর বসন্ত;
শীতে পাতা ঝরিয়ে বসন্তে আবার নতুন পাতা...
তুমি কি বুঝবে বৃষ্টিহীনতার কি জ্বালা???

কবিতা - সুবর্ণা গোস্বামী

ক্ষত
সুবর্ণা গোস্বামী



এরকম হয় মাঝে মাঝে,
শিকারী পাখির কাছে অনুরোধ করি
বিঁধে থাকা সূচ খুলে দিতে,অরব শরীরময়।
যন্ত্রণার জলচৌকি চৌচির তবু
থামবার নয় তার অমোঘ নখর,
জলসাঘরের রঙিন জানালার কাচে
চোখ রাখলে দেখা যায়
হাড়,মাংস প্রনয়ের ক্ষত,
ধূপের নিহত নিঃশ্বাস,
অলিতে গলিতে পড়ে থাকা হৃদয়ের মৃতদেহ আর
বিষের পেয়ালাটিকেও।

এরকম হয় মাঝে মাঝে,
মাঝরাতে বুকে ভর দিয়ে উঠে আসে স্বপ্নের ধ্বংসস্তূপ
বুকের উপর নিয়ে ঘুমিয়ে থাকি
দেখি সে আমারই মতন কেউ,সহোদরা?
কখনও স্নেহের চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে দেই চুল,
কখনও কৌশলে চোরাবালিতে ফেলে
দেখি মুগ্ধ চোখে নিঃশেষে ডুবে যাওয়া তার।
দাবদাহ, সূচ আর ঘৃণার চুম্বন,
ফিরে ফিরে আসে
তারা তো মানুষ নয়,
আমাকে একলা ফেলে কি করেই বা যাবে?

এরকম হয় মাঝে মাঝে
যত্নে লুকিয়ে রাখা অমরত্বের কবচ
ছুঁড়ে দেই অসুখের পায়ের উপরে।

কবিতা - মনোজিৎ দত্ত

সত্যের শস্য দানা
মনোজিৎ দত্ত



যতই লাঙ্গল দিই...আমার শব্দগুলো
জল - মাটি -কাঁদায় ঠিকঠাক মেশেনা
খুব একটা ভাল ফলন হবেনা জানি
তবুও কবিতার প্রান্তিক চাষীতো ...
ঘাম ঘাম চেষ্টার খামতি নেই।

জানি ... সব ঋতুতেই
কবিতার কমবেশ ফলন হয়
একেক ঋতুর একেক স্বাদ।
আমিও চেষ্টা করি ...
তবুও আমার শীতের কবিতা -
গরমে ঘেমে উঠে
আমার গরমের কবিতা ... শীতে জুবুথুবু।
কোকিল বসেনা বসন্তে কবিতার ডালে
ঝুলে থাকে আত্মঘাতী কৃষকের লাশ
শরতের সাদা মেঘের ভেলা বিবর্ণ
তবুও ঘাম ঘাম চেষ্টার খামতি নেই।

প্রেমের কবিতা লিখলে
লোকে বলে - এটা সুইসাইড নোট
বিপ্লবের কবিতা যেন শোকপ্রস্তাব
প্রতিবাদের কবিতা জঙ্গী হয়ে উঠেনা
শব্দেরা যেন শবযাত্রার মৌনমিছিলে।
জ্যোৎস্নার কবিতায় সূর্যের বিদ্রুপ
... চাঁদও যে সূর্যের কাছে ঋণী
বৈরী-বাতাসে স্বপ্ন-চোখে অন্ধকার।
তবুও ... ঘাম ঘাম চেষ্টার খামতি নেই।

আমার ঘাম ঘাম চেষ্টার খামতি নেই
আসছে দিনে -
অন্ধকারে না ... অন্ধকার পুঁতবো
লাঙ্গলের ফলায় - কবিতার শরীরে।
সত্যের হাজার ওয়াট হ্যালোজেনে
জমাট অন্ধকার কবিতা হয়ে উঠবে।

জমাট অন্ধকার 'কবিতা' হয়ে উঠবে।

কবিতা - স্বাতী বিশ্বাস

রূপকথা
স্বাতী বিশ্বাস



কোথায় গেল রূপকথারা তেপান্তরের মাঠ
ক্যামন করে হারিয়ে গেল মুন্সিগঞ্জের হাট।

অরুণ বরুণ কিরণমালা বুদ্ধু ভুতুম সোনা
নীলকমল আর লালকমলের স্বপ্নে আনাগোনা।

ডালিমকুমার ক্যামন করে লুকিয়ে ডালিম গাছে
রাজকন্যার ঘুম ভাঙিয়ে রাখতো নিজের কাছে।

সোনার কাঠি রূপোর কাঠি জীয়ন কাঠি হয়ে
দেশের মানুষ উঠত বেঁচে আবার হেসে গেয়ে।

ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী আর সাত সমুদ্র নদী
হীরের গাছে মোতির ফুল নানান রঙের ছবি।

ঠাকুরমায়ের ঝুলির থেকে কতই গল্প কথা
স্বপ্নে এসে দেখা দিতো সোনালী রূপকথা।

রাক্ষসেরা যাতেই হারে  রাজপুত্রের কাছে
এটাই শুধু কাম্য ছিলো ভুল না হয় পাছে।
কেউ শোনেনা ওসব  কথা  নেই যে ঠাকুরমা
নিজের গাছ কাটছি নিজেই মুড়িয়ে নটেখানা ।

রাজপুত্তুর পালিয়ে গেছে পক্ষী রাজে চেপে
তাইতো আঁধার লেগে আছে এই বৃত্ত ব্যপে।