কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩

ম্যানিফেস্টো - জয়ন্ত সাহা

আধুনিক কবিতা একজন সাধারণ মানুষের ভাবনায়


কবিতার পরিবারের দুই কাছের মানুষ সুমিত রঞ্জন দাস ও সিদ্ধার্থ শর্মার অনুরোধ অগ্রাহ্য না করতে পেরে এই লেখা লিখতে বসেছি - যদিও আমি নিজেই সন্দিহান আধুনিক কবিতার বিচারবোধ নিয়ে কিছু লেখার সক্ষমতা সম্বন্ধে। আমি নিজে ঠিক আধুনিক বলতে যা বোঝায় সেরকম কবিতা লিখে অভ্যস্ত নই - কিন্তু সমসাময়িক আধুনিক কবিতার পাঠক। সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে, মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু মানবচিত্তের ইচ্ছার আরতিতে কল্পনা চিরকাল মুক্ত বিহঙ্গের মত থাকে - আবার সামাজিক নিয়মে বাঁধা, অস্থির সমাজের কর্দম ও ক্ষতচিহ্ন মাখা, দগদগেঘায়ে লিপ্ত অনুভব-ও জুড়ে থাকতে চাইছে। আবেগ প্রবন ও আধুনিক কবিদের মধ্যেসবচেয়ে গীতিময় আমার প্রিয় বদ্ধুদেব বসুর মতে - "কবিতা এমন কোনো পদার্থ নয়যাকে কোনো একটা চিহ্নদ্বারা সনাক্ত করা যায়' যেহেতু আধুনিকতা হচ্ছে সমাজপ্রগতির নির্ণয়ক তাই মৌলিক প্রেম, প্রকৃতি - র সাথে চার পাশের মানুষ, সামাজিক আন্দোলন, ইত্যাদি অজান্তেই হয়ে ওঠে কবিতার মূল উপকরণ।কবিকে মনোযোগীহতে হবে দেখতে তার কাব্যকে ঘিরে আছে কিনা তীব্র সচেতনতা ও অনুভবের পটভূমি।অনেকেই যারা কবিতা বুঝলাম না কবিতা বুঝি না বলে খেদ প্রকাশ করেন তাদেরভাবতে হবে - কবিতা বোঝা নয় - কবিতা অনুভবের - কবিতা উপলব্ধির। কবি ও পাঠকের মেলবন্ধন ঘটে কবিতা। আর এই মেল্বন্ধনেই অপজাতের বিষয়াশ্রয়ী হয়েও অনেকসময়-ই কবিতা উঁচু জাতের শিল্প কর্ম হতে পেরেছে। কনোর রকম ছুৎমার্গ ছাড়াইপড়তে ভালো লাগে সেই সব কবির কবিতাও যারা তাবৎ সংস্কার ও প্রথা ভাঙার আন্দোলনে সুর্যের মত দ্বিধাহীন, এমন কিছু তরুন কবির সন্ধান-ও পেয়েছি এইবৈদ্যুতিন মাধ্যমের দ্বারা। হাংরি আন্দোলনের বয়স ছিল মাত্র চার বছর -কিন্তু আজ-ও এই পঞ্চাশ বছরে পরে কাউকে কাউকে দেখি এর ভাবধারাতে উদ্বুদ্ধহতে।

মজা হলো এই যে বিশ্বে যেই কবিতাগুলো বেশি জনপ্রিয় তার মধ্যেপ্রেমের কবিতার সংখ্যাই বেশি। বৈষ্ণব পদকারকার দেহাত্মা আর পরমাত্মার সংশ্লেষণ ঘটিয়েছিলেন তাদের কবিতায়। সেই ধারায় লেখা অনেক কবির কবিতায়আজকাল দেখি দেহাত্মা অর্থাৎ দেহজ অনুভব বেশি প্রাধান্য পায় কিন্তুপরমাত্মিক অনুভব উহ্য থেকে যায়। তাদের ভাবতে হবে এই গ্যাপ টা। পরকিয়াপ্রেমে অনেকের অনুরক্ততা কবিতায় ফুটে ওঠে - রাধা-কৃষ্ণ, ইউসুফ-জুলেখা -এদের কাছে দারুন অনুভব আনে। আবেগময় অনুভূতিতে শব্দের ব্যঞ্জনায় সাজিয়ে আবেগের উন্মাদনায় সৌন্দর্যের আস্বাদন ঘটান কত কবি আজ-ও। কিন্তু কবিতা লিখতে লিখতে কবি যখন এই বোধে উপনীত হন - প্রেম শাশ্বত, প্রেম চিরন্তন তখনঅনেক সময়-ই প্রেমের কবিতা লিখতে আর তার মন চায় না।আজকাল আধুনিক গদ্য কবিতার ভ্যন্তরে-ও অনেক কবি সহজ ও সচেতনভাবে উপস্থাপনায় প্রিয়া ও রাজনীতিকে তুলনা করতে পারেন। গদ্যগুণসমৃদ্ধ আধুনিক কবি ছন্দবিহীন পঙ্ক্তি দ্বারাও যখনগদ্যে লুক্কায়িত ছন্দ পাঠকের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হন - তা অসাধারনতায় পৌঁছে যায়। তবে সাধারণ পাঠকের কাছে খুব ন্যায্য কারণেই একটা ভাবনা আসতেপারে আধুনিক কবিতা ঠিক কতটা ভাবোন্মাদ অথবা কতটা ভাবগ্রাহী হলে কোনোকবিতাকে কবিতা রূপে গ্রহণ করা যেতে পারে। এই ভাবনাটাকেও আধুনিক কবিদেরগুরুত্ব দেওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি। তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ, আখ্যানমূলক, অন্ত্যমিলবিশিষ্ট লেখা পড়তে অভ্যস্ত পাঠকের কাছে গদ্যে ছন্দ খুঁজে দেওয়াআধুনিক কবিদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রপঞ্চর পরে প্রপঞ্চ নির্মাণের তাগিদ বাংলা কবিতা সাহিত্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন