কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যা



অন্তর্জাল এখন কবিতা চর্চার সবচে’ জীবন্ত ক্ষেত্র। এখানে প্রবীণ - নবীন সবাই আছেন। কবিতা পোস্ট করার পরেই পাঠকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কবিতা কর্মীকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। তিনি জেগে ওঠেন আরও একটা নতুন কবিতা লেখার বাসনায়। একদিকে নানা প্রতিষ্ঠান , প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা , তোষামোদী চক্র- অন্যদিকে প্রাণের উচ্ছাস। আমরা অবাধ সৃষ্টিক্রিয়ার পক্ষে। এই প্রক্রিয়াকে গতি দিতে ‘পারিবারিক
ব্লগ ম্যাগাজিন নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। একদল তরুন প্রচলিত ধারার বিপরীতে, পদলেহী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দ্রোহের পতাকা উড়িয়ে দিতে চাইছে।
জীবনযাপনের অন্য নাম হোক কবিতাযাপন। আমাদের স্বপ্ন, ক্রোধ, ভালোবাসা শব্দে শব্দে অনূদিত হোক। অতল খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসে আবার আমরা কবিতায় আশ্রয় নেবো, বৈদিক মন্ত্রের সংহতিতে তৈরি হবে নতুন নতুন স্তোত্র - জীবনসংহিতা ।

সবাইকে শারদীয়া পূজা ও ঈদ উল্ আজহার শুভেচ্ছা । 



সরদার ফারুক
অতিথি সম্পাদক

পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত

কবিদের ২২গজ -২


উসকানি দিওনা কবি মৃদু চিমটি কেটোনা পঙ্ক্তির

আমার উজ্জয়িনী স্বর্গ-গণিকা মিঠে-জহরের কলি
ঘুমে কতো নিদান রয়েছে,দেখেছি পালতোলা কবির আকাশ
মৃদু-মর্মর প্যারিসের চাঁদ কাজরিকে দেয় আতসবাজীর প্রেম
উচ্চনিনাদ উচ্চনিনাদ পাগলা ঘন্টি শ্লেষ,আমাকে দিওনা ট্রাপিজ
কবি হে, রসহীন তন্তুবায় তুমি তাকিয়ে আছো যুবতী উত্তেজনা
কবি হে, হারেমের খুব কাছে রাতটুকু জটিল রঙচটা দাম্পত্য-জীবন
কবি হে, ফরাসি মদের নটরাজ তুমি পরমানুবিদ্যুত তুমি মতলবি ঝাঁপ
কবি হে, চমৎকার উড়িয়ে দলাম খাজুরাহো অসংগতির আঁচে,ধরো ধরো
নারীর চুমুতে কল্পনা মাখি মশগুল তরবারি

কবিরা মৃত পাখি ওজনে উঠেছে,কবির হ্যাংওভার দূষণের মাত্রা জানেনা


কবিকে পারমিট দাও ইন্ডিয়া,পারমিট দাও ,কবিরা ঢাকার রমনায় বলবে

‘চেল্লাচেল্লি করবো না, শুধু দশ পিঁপে মদে সাঁতার কাটবো’

সরদার ফারুক

বিশেষ রচনা

কবিতা লেখা


কখনো কখনো কবিতা লেখাকে আমার মাছ ধরার সাথে তুলনা করতে ইচ্ছে হয় । আপনি ছিপ নিয়ে বসে আছেন পুকুরের পাশে । হয়তো অনেকক্ষণ পর একটু ফাৎনা নড়ে উঠলো , আপনি ছিপটা টান দিলেন - কিছুই উঠলোনা । চতুর মাছ টোপ খেয়ে পালিয়ে গেছে । অথবা কখনো দেখলেন আস্ত বড়শিটাই গায়েব - কাছিম কিংবা কাঁকড়ার কাজ । আপনি জানেন না , মাছ পাবেন কিনা , তবু ছিপ নিয়ে বসে থাকতেই হবে। মাঝে মাঝে আপনার মনে হতে পারে আপনি যেন কখনোই লেখেননি , অথবা আর কখনোই লিখতে পারবেন না । সে বড় কষ্টের কাল । আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে পৌঁছায় । তবে যারা চেষ্টা-কবি বা সেয়ানা কবি - তাদের কোন অসুবিধা নেই ।তারা যে কোন বিষয় ঠিক করে , আগে থেকে অভিধান থেকে কিছু শব্দ বের করে, নিয়মে সাজিয়ে কারখানার মতো উৎপাদন চালিয়ে যান । কবিকে থাকতে হয় অপেক্ষায় -কখন আসবে সেই বুনো হাওয়ার গোপন প্ররোচনা ,বেপরোয়া চিত্তবিকার! আমার মনে হয় খুব যুক্তিবাদী এবং সুস্হির লোকেদের জন্য কবিতা না। কবিতা কিছু যুক্তিহীন আবেগ ও বিশৃঙ্খলাকে ধারণ করতে চায় । সেয়ানারা জাগতিক সাফল্যও চায় ,আবার কবিখ্যাতিও চায় । চারপাশে তাই দেখবেন আমলা কবি , ব্যবসায়ী কবির ভিড়। স্তুতি , খ্যাতি ,পদক এদের পায়ের কাছে গড়াগড়ি খায়। প্রকৃত কবির এসবের দরকার নেই। তার চাই আনন্দ -দিগ্বিজয়ী সম্রাটের আনন্দ ।

কারো কারো কাছে কবিতা লেখার পুরো বিষয়টাই একটা দুরারোগ্য ব্যাধি বলে মনে হয় - লোকনিন্দা , উপহাস যার একমাত্র পুরষ্কার ! হতে পারে , তবু অনেকেই এই অসুখ পুষে যাবে আমরন - ‘অসম্ভবের পায়ে’ মাথা কুটে মরবে। ধরা দাও, ধরা দাও ‘অধরা মাধুরী’ ছন্দোবন্ধনে!

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য

সময়ের স্রোত
(দ্বিতীয় কিস্তি)



চোখ বুঁজলেই সেই মারের কথা আজকাল মনে পড়ে তার! প্রিন্সিপালের সঙ্গে তর্ক করার পরের দিন ভোর বেলা, পুলিশ এসে ঘিরে ফেলল তার বাড়ী। বাবা জিজ্ঞেস করলেন অফিসারকে- কি করেছে আমার ছেলে?

-ওসব কৈফিয়ত আপনাকে দেবো না!

- আপনারা তো ব্রিটিশের পুলিশ নন, এভাবে আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে পারেন না!

-আব্বে বুঢ্ঢা! চোপ! বেশী প্যায়তাঁরা করলে তোকেও নিয়ে যাব!

-আমি, স্বাধীনতা সংগ্রামী। এভাবে অপমান করছেন কেন?স্বাধীন দেশের পুলিশের এই ব্যবহার!!!!!!!!!!!

-চোপ শালা! স্বাধীনতা সংগ্রামী মারাচ্ছে। তোর ছেলে কমিউনিষ্ট পার্টি করে আর দুটো খুনও করেছে! তুই তো সব জেনে ছেলেকে আড়াল করছিস!

-দেখুন! আমার ছেলের সাথে রাজনৈতিক পার্থক্য আছে। ওদের সব কথা আমি মানিও না। কিন্তু, ওরা কোনো খারাপ কাজ করছে বলে আমি মনে করি না!!!!! আর খুন? আমার ছেলে ওর ধারকাছ দিয়েও মাড়ায় না!

- অনেক ভাষণ দিয়েছিস রে বুড়ো! সর!

বলে বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুমন্ত অপুকে তুলে নিয়ে গেছিল ওরা! বাবা অপমানে হতচকিত হয়ে গেছিলেন! বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন- ইয়ে আজাদী ঝুঠা হ্যায়!

বিড়বিড়ানির মধ্যে অপুকে টেনে হিঁচড়ে মারতে মারতে ভ্যানে তুলল পুলিশ।

মাথার ওপর একটা ডিসি ফ্যান, ঘড়ঘড় করে ঘুরছে! দুই পুলিশ অফিসার একটা টেবিলের সামনে বসে! সামনে মদের গ্লাস, মনে হল অপুর! আর প্লেটে কাজু বাদাম, কিশমিশ!

-এনেছি স্যার- হারামির বাচ্চাকে!

- ওয়েল ডান! গুড জব!

অপুর দুপাশে দুই কনষ্টেবল, মোটা মোটা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে।

বাঁ দিকের পুলিস অফিসারটা বলল-

-কিরে, শুয়োরের বাচ্চা! খুনটা করেছিলি কেন?

- আমি খুন করি নি!

- তাই নাকি?শালা খানকির বাচ্চা! খুন করিস নি?

- গালাগালি করছেন কেন, মা তুলে?বললাম তো, আমি খুন করি নি!

- ওরে! দ্যাখ! দ্যাখ! কেমন সতীর বাচ্চা এসেছে রে! রামভজন!!!!! লাগাও মধুমতি!

ধাঁই করে লাঠির বাড়ি পড়ল অপুর হাতে! একটা কাজু মুখে পুরে দ্বিতীয় জন বলল-

-সাবাশ! দ্যাখ! দ্যাখ! সতীর বাচ্চা কেমন নুয়ে পড়েছে! বলি পিস্তল দেখেছিস?

- হ্যাঁ ! অতি কষ্টে বলল, অপু!

- এই তো! এক মধুমতীতেই কাত! তা শালা মার্ক্সের বাচ্চা! কোথায় দেখলি?

- এই তো ওই ইনস্পেকটারের কোমোরে!

- শালা! মাজাকি!!!!!!! লাগাও পিয়াসা!

- আরও চারটে লাঠির বাড়ি পড়ল অপুর গায়ে!


চলতো হয়তো! কিন্তু, এক হোমড়া চোমড়া পুলিশ অফিসার ঘরে ঢুকলেন! সেই দুজন মদের গ্লাস লুকোনোর জায়গা খুঁজতে ব্যস্ত তখন!

- হোয়াটস দিস! আপনারা বিনা ওয়ারেন্টে বিষ্ণুদার ছেলেকে ধরে এনেছেন কেন?

- স্যারররররররররররররররররররর!

- শাট আপ! বেআইনী কাজ করছেন। ওপেনলি মদ খাচ্ছেন! বিনা কারণে থার্ড ডিগ্রি চালাচ্ছেন!! মগের মুলুক নাকি? যান! ওকে বাড়ী ছেড়ে দিয়ে আসুন!

অত কষ্টের মধ্যেও হেসে ফেলল অপু। এটাই কি লিবারেল বুর্জ্জোয়াজিজম্!!!!!!!!!!!!!!!!!

বাবা, খবর দিয়েছে বোধহয় হারাণ কাকাকে! হারাণ কাকা বাবার ন্যাংটো বয়সের বন্ধু নারাণজেঠুর ছোটো ভাই!

কিন্তু, পুলিশ কি সবার বন্ধু হয়?

পুলিশ যে সবার বন্ধু হয় না, সেটা টের পেয়েছিল অপু কমঃ মহাদেব ব্যানার্জ্জি মার খাওয়ার পর! কমঃ মহাদেব ব্যানার্জ্জিকে আগের দিনও স্যার বলেছে যে পুলিশ, মন্ত্রী হবার সুবাদে! পরের দিনই মন্ত্রীত্ত্ব চলে যাওয়ার পর, সেই পুলিশই লাঠি মেরে কমঃ এর হাত ভেঙ্গে দিয়েছিল।এটা , যুক্তফ্রন্ট সময়ের কথা। রণি মুর নামে সেই পুলিশটার মুখে তখন হ্রিংসতা ছিল ।

ততদিনে অপু সেলসের চাকরী পেয়ে গেছিল। মজার ব্যাপার, যিনি ইনটারভিউ নিয়েছেলেন, তিনি পার্টি দরদী ছিলেন।

ইনটারভিউতে জিজ্ঞেস করেছিলেন-Will you be able to sale pharma products?

-Sir, if you ask a football player- Can you play football? I think, he will definitely answer:-

Let me go to the filed and prove you! Same with me!

-Hmm! How many times you lie?

-It’s a situational demand. I won’t deny that I lie, but that depends!

- Do you think, your political background will be a hindrance or advantage to this profession?

- Sir! I think positive! Positive thinking is always advantageous in any layer of life!

-Okkkkk! Mr.Chatterjee, you are through!

জীবনদা, একটা কথা প্রায়ই বলতেন- দেয়ার আর মোর কমিউনিষ্টস, আউটসাইড দ্য কমিউনিষ্ট পার্টি।

অপু বলেছিল- একটু বুঝিয়ে বলুন!

-দ্যাখো, জীবনের সংগ্রামে লড়াই করা মানুষ, ঠিক তার বন্ধু চিনে নেয়। যদি কোনো কারণে, সেই বন্ধু, শত্রুও হয়ে যায়, তাও মানুষ বুঝতে পারে! তত্ত্বের কচকচানি না বুঝলেও মানুষ বোঝে- মানুষই তার বড় শত্রু। মুখোমুখি সব সময় দুটো পক্ষ! এক পক্ষ প্রলেতারিয়েত। অপর পক্ষ, বুর্জ্জোয়া!

-আচ্ছা জীবনদা, প্রলেতারিয়েত কথাটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?শুনি, কিন্তু ঠিক বোঝাতে বা বুঝতে পারি না!

-এরা হলো সেই শ্রেণী, যাদের নিজেদের খাটবার ক্ষমতা ছাড়া আর কিছুই নেই। এদের অস্তিত্বের একমাত্র উপায় হলো, পুঁজিপতিদের কাছে নিজেদের খাটবার ক্ষমতাকে বিক্রী করা।

-আর লুম্পেন প্রলেতারিয়েত?

-এক কথায়, শোষিত সমাজের শ্রেণীচ্যুত লোকেরা!

- হুম!

- শোনো অপু! সব কথাই অভ্রান্ত বলে ধরবে না!‍ প্রয়োগে প্রমাণ হবে, কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়! এটাই হলো মূল কথা!

-বেশ!

- একটা ব্যাপারে আমি বুদ্ধদেবকে খুব মানি!

- সে কি! জীবনদা!!!!!!!

- ওনার তিনটে কথা জানো?বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, সংঘং শরণং গচ্ছামি! ধর্মং শরণং গচ্ছামি!

- একটু বুঝিয়ে বলুন।

- বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি! এখানে বুদ্ধ মানে জ্ঞান! সাবজেক্ট নলেজ না থাকলে তুমি কিছুই করতে পারবে না! তাই প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং অধীত বিদ্যাতে জ্ঞান বাড়াও!

- তার মানে আগে থিয়োরী?

- এগজাক্টলি! কিন্তু থিয়োরী ওনলী। নট হাইপথেসিস!

- বেশ!

-সংঘং শরণং গচ্ছামি! এখানে কথাটি খুব পরিস্কার! সংঘ অর্থাৎ- অরগানাইজেশন! এর তিনটে অর্থ আছে! প্রথমে নিজে সংগঠিত হও। সংগঠিত কর, তারপর সংগঠিতদের এক ছাতার তলায় আনো!

-এবার বাকী আর একটা!

-হ্যাঁ! ধর্মং শরণং গচ্ছামি! এখানে ধর্ম অর্থে – মনুষ্য ধর্ম। আর, মনুষ্য ধর্ম মানেই সৃজন শক্তির অনুশীলন আর বিকাশ। আমি এটা নিজের মত ব্যাখ্যা করেছি! সেই হিসেবেই চলি! এবার তুমি ঠিক কর, কি করবে আর না করবে।


(চলবে)

মৌ দাশগুপ্তা

মানিকজোড়

পলাশ আর মন্দার দুই বন্ধু, বড় ভাব দুজনের। এক্কেবারে মানিকজোড়। যদিও দুজনের চেহারা-পত্তর, স্বভাব-চরিতর, এমনকি পছন্দ-অপছন্দের অবধি কোন মিল নেই।যেমন পলাশ বলে, “ আমার বউ হবে দারুন সুন্দরী, একদম ফাটাফাটি, ধবধবে ফরসা, টানা টানা পটলচেরা চোখ,বেশ সুরেলা গলা হবে, গান টানও জানবে, বাপের মালকড়িও থাকবে, ঐ একদম শো কেস এ সাজানো ডল পুতুলটি যেন।“মন্দার বলে “ না বাবা আমার ঐ রকম ডল ফল চাইনে, আমার বউটা বেশ পড়াশুনো জানবে, নিজেই চাকরি বাকরি করে ঘরে টাকা পয়সা আনবে আর হেভী রাঁধবে।“

যথাসময়ে দুজনেই ছাদনা তলায় হাজির হোল। পলাশের বউ পলা অল্প বয়সেই বাবা মাকে হারিয়ে মামাবাড়ীতে খুব অনাদরে মানুষ। কালো, দোহারা চেহারা, অনেকটা মঙ্গোলীয় ধাঁচের বোঁচা বোঁচা মুখচোখ, তবে ভারতীয় সঞ্চার নিগমে ভালো পোস্টে চাকরী করে। গান শুনতে হয়তো ভালবাসে তবে গাইতে পারে না। খুব ছোটবেলায় একবার মেনিনজাইটিস হয়েছিল, সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে গেলেও গলাটা চির জীবনের মত ফ্যাঁসফ্যাঁসে হয়ে গেছে। ঘরজামাই মন্দারের বউ মন্দাকিনী বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে।নাম যাই হোক, সামনে এলে তাকিয়ে থাকতে হয় এমন সুন্দরী তবে কিনা বড্ড সিনেমার পোকা।বিদ্যে ঐ ক্লাস এইট।তবে নাচ টাচ জানে, রাগপ্রধান ও গাইতে পারে।সিনেমায় নামার ইচ্ছা হয়তো ছিল কিন্তু বাবার আপত্তিতে নামা আর হয়নি। মন্দারের বদরাগী শ্বশুরমশাই স্বভাবে কৃপন মানুষ। লোকে বলে হাত দিয়ে নাকি জল গলেনা। এক ঐ মেয়ের বেলাতেই কিছুটা ছাড়,তা বলে জামাইয়ের বেলায় নয়। মন্দাকিনী মানুষটাও অসম্ভব মেজাজী,এক গ্লাস জল অবধি গড়িয়ে খেতে শেখে নি।ঐ বড়লোক বাপের আদুরে মেয়েরা যেমন হয় আরকি!

পলাশ আর মন্দার কেউ আর কারো বাড়ী যায়না এখন। রাস্তায় দেখা হলে অনেক কথা বললেও কেউ ভুল করেও বলে না ” আচ্ছা বউ নিয়ে আমার বাড়ী যাস, জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।বরঞ্চ সন্তর্পনে যে যার বউয়র প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়।কি দরকার বাবা খাল কেটে কুমীর আনার! পলাশ আর মন্দার দুজনেই তাদের বউদের বড় বাধ্য। এই এক ব্যাপারে দু বন্ধুর ভারী মিল। যেমন ঐ মানিকজোড়দের হয় আর কি।

রবি

সীমানা
(সিলেটি ভাষায়)


কিতা কইলায় হ-পাড় যাওয়া যাইতোনায়

হ-পাড় আমার মায় থাকইন আমার হুরু ভাই থাকইন

...


-না যাওয়া যাবে না, আজ থেকেসীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া হয়ে গেছে
তা কোনক্রমে অতিক্রম করা যাবে না ।

-তুম বর্ডারকো পাস কিউ আয়া ?

তুম নেহি জানতা এহি বহত রিস্কী হে ,

বাবু আমি কিলা জানতাম আমার মায় ,ভাই না খাইয়া রইছইন

আমি পাহাড় তাকি গাছর ডালাপালা টুকাইয়া আঁটি বাইন্ধ
আমরার বাজারো বেঁইচা,
হেই টেকাদি দুই মুঠ চাউল কিনিয়া বাড়িত যাইয়া
হগলে মিলিয়া ভাত রাইন্ধা খাই একবেলা ,
আইজ একটু দেরি অই গেছে কয়টা লাকরি বেশি টুকাইতে চাইছিলাম
আমার ভাইটার অসুখ অইছে
হেরে ডাক্তার দেখাইবার লাইগি কিছু টেকা লাগবো
হেরলায়আমার মার কাছো আমি যাইতাম পারতাম নায় ই কিতা কইন ,

এটা সীমানা ,এটা তারকাঁটা সীমানা এটা পেরুনো এত সহজ নয়


আমার খিদা লাগছে আমারে যাইতে দেউ

আমার মা ভাই ও না খাইয়া রইছইন ,
আমি মানি না এই সীমানা ,
দাঁত দিয়া ছিঁড়িলাইমু এই সীমানা ....

ঝুমা মজুমদার


বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

আবহমান নীরবতা


অসম্পূর্ণ কথাগুলো আজও নির্বাক
স্তব্ধতার ওপারে সংকেতচিহ্নের দেওয়াল ঘেঁষে ।
প্রলাপের ভেতর থেকে জেগে ওঠার
কথা ছিল কবিতার..
নীলাঞ্জন লিখেছিল- তীব্র শব্দ চাই ।
অনর্গল প্রলাপ ও উন্মাদনা ।
রোদের মধ্যেও দুর্গন্ধ বাতাস
নীরবতা!
নীলাঞ্জন বলেছিল-কবিতা শুধু কবিতা চাই
নীরবতা!
আবহমান নীরবতার মধ্যে শব্দ হাতড়াতে
গিয়ে এক অলৌকিক নৈঃশব্দ খুঁজে পাই

মঞ্জুলা তুন

নতুন পৃথিবী


হারিয়ে গেল স্বপ্ন ভরা নানান রঙের দিনগুলি

বদলে গেল মানুষগুলি আজ -
মন তা কেমন যেন খালি খালি
সবাই দেখ মোবাইল সাথে
কোলে নিয়ে ল্যাপটপ
প্রাণহীন দৃষ্টি নিয়েই খোঁজে কি সব!
কলেজ পড়ুয়া অফিস যাত্রী সবাই জীবন দৌড়ে ব্যস্ত
জিততে না পারলে জীবনে যেন ভুল হয়ে যাবে মস্ত
গুগুল জ্ঞানে পৃথিবী হাতের মুঠোয়
দায়িত্ব এড়ানো যথেষ্ঠ যে কোনো ছুতো-ই
বিশ্ব জুড়ে ঝর তুলেছে ফেস বুক জুড়ে প্রেমের নামতা
জীবন বাজি রেখে সদ্য কিশোরী অন্যাসে দেয় দাম টা
ছবি তুলে ফেস বুকে না দিলে মুখ দেখানো যায় না
ফ্রেন্ড লিস্ট-এ না থাকলে ভারী ইম্পর্টান্ট হয় না
ওয়াল থেকে ওয়ালে ঘুরেও নেই কোনো ক্লান্তি
জানিনা উন্ছবৃত্তিতে আছে কিসের শান্তি ....
মন খারাপ! ইনবক্স আছে! নেই কোনো চিন্তা
প্রেম প্রেম খেলে কেটে যায় সারা দিন টা
কাছের মানুষ আজ পর হয়ে যায়
দুরের মানুষ আসে কাছে
জীবন টাকে জালে ফেলে মানুষ মাছ হয়ে বাঁচে
সব হারিয়ে ইচ্ছেরা আজ যন্ত্রে হয়েছে বন্দী
দাম পেয়ে যায় অমানুষি ফিকির ফন্দি
হু লা লা লা ভার্চুয়াল আর রিয়াল ভাবনার হয়েছে আজ সন্ধি!!!

জয়ন্ত সাহা

চৈতি হাওয়ায়

 

ঘুনধরা জীবনে -
শিউলি ফুলের হাসি কে ভালোবেসেছি
কাশফুলের সুঘ্রাণে মেতে উঠেছি
দিনান্তে সূর্য ডোবার পালে স্বপ্ন হাতরেছি
ভাঙ্গা বজ্র অস্তিত্বের দেয়াল ।

প্রেমহীন মিলনে -

প্রাণহীন ভালবাসার হাত ধরে হেঁটে এসেছি
অভিসম্পাতে পুতুল খেলায় মেতেছি
বৃষ্টিহীন মরুভূমিতে চোখের জলে আল্পনা এঁকেছি
নিলাম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিত্বের খেয়াল ।

বিরহিনী কাননে -

কল্প মেঘে মেঘবালিকাকে পেতে চেয়েছি
চৈতি হাওয়ায় উড়ন্ত চুল দেখেছি
প টুপ শিশির ভেজা পথে হাত ধরে হেঁটেছি
আলাদা হয়ে জীবন আজ বেহাল । 

 

সুদেষ্ণা চ্যাটার্জী

দুটি অনু কবিতা




চূর্ণী হাওয়ার ঘূর্ণিবেগে
নীলুর আকাশ অস্তরাগে ---
চুপ করে গান ওই উড়ে যায়
শান্ত সবুজ ক্লান্ত বাসায় ।
মন উচাটন প্রান আনচান
শূন্যস্থানে কস্তূরী ঘ্রান !




দৃষ্টি আমার সেই আলোকে
ঝুমুর তালে হরিন চোখে...
বাতাস রোখে আঁচলখানি
স্বপ্ন আঁখি পদ্মপানি -----
গন্ধ চিনে তাইতো বলি
ওই তো কবির কৃষ্ণকলি !!

শান্তা রানী পাল

নীরব সঙ্গী

চুপ কথারা ঘুমের আয়োজনে!
টিক টিক ছন্দে আলোর ঝুম ঝুম ক্ষণে
ব্যস্ত আলোর কন্যা সাঁঝ বেলা!
আমি একা।
নিরন্তর ছুটে চলার পথে আলোর আরেক কন্যা ভোর বেলা,
আমার নখদর্পণে, অঙ্গুলির ভাঁজে,
গন্ধ বিলিয়ে দিয়ে এলোমেলো করে খেলা... ।
গন্ধ! বাঁচার ইচ্ছের গন্ধ!!
আমি একা!
সাথে আলোর দুই কন্যা, ভোর বেলা আর সাঁঝ বেলা...
এদের সাথেই আমার আর চুপকথাদের নীরবে ছুটে চলা।

সিদ্ধার্থ শর্মা

কবিতা মদিরা

কর্ণফুলির জলে মদ ঢেলে দিয়েছি .....
যত পারো ........ ঢক ঢক করে আকন্ঠ খাও.....
কবিতা মহুলিতে নেশা করে নিয়েছি ...
নাও এবার আমায় তুমি সামলাও ।

ঝিম ধরা মদিরা গেলাসে গেলাসে
আকন্ঠ নিমজ্জিত মগ্ন অভিলাষে
কবিতারে করেছি তরণী
মেঘালি আকাশে দামিনী
উথাল পাতাল ঢেউ
অনুভব করে কেউ
ঝিমলী মহুলিয়া যামিনী ।।

অন্দর মহল সাজানো প্রেমিক লাগি
প্রেমের কাঁঠির ছোঁয়ায় ঘুমন্ত মানুষী ওঠে জাগি
যৌবনের তীব্র আকাঙ্খিত মিলন মাগি
নিকষ আঁধারে সমাজ বন্ধ ত্যাগী
হৃদয়ের কারুকাজে সাজি
মদিরতার ঠোঁট প্রেমিক স্পর্শে লাজি
রুম ঝুম ঝুম ঝুম রুম ঝুম ....
নুপুর শিঞ্জিত রমনী ভাঙ্গে পৃথিবীর ঘুম সুগন্ধ ছড়ানো অনুভবে ফুটে ওঠে হৃদয় কুসুম।

মামনি দত্ত

দেবীপক্ষ


কলি এক দৌড়ে বাড়ি এসে বোন
কে ডাকতে লাগলো ....নিরু ..নিরু ...!মায়ের পায়ের আওয়াজ
পেয়ে ছুটে মা কে জড়িয়ে ধরলো! মায়ের দুই চোখে অবাক
চাহনি, কি হয়েছে তোর? হাঁপাচ্ছিস কেন? ......মা..মা..জ
ানো তো বাবার আসার সময় এসে গেছে! কলির কথায়
রমা থমকে যায়, মেয়ে দুটো বাবার অপেক্ষা এমন
করে করছিলো সে জানতো! কিন্তু
লোকটা এখনো কোনো খবর দেয়নি। এই কথা মেয়েদের
কি করে বলবে ...ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রমা। মা ..ও
মা...কি ভাবছো তখন থেকে?
মেয়ের কথায় সম্বিত ফেরে রমার। চিন্তা নিজের
মধ্যে রেখে হাসি মুখে বলল ....যা তো, নিরু কোথায়
দেখতো। কলি বাইরে গেলো বোন কে খুজতে। গলির
মোড়ে নিরু কে দেখে ওর চোখদুটো চকচক করে উঠল! বোনের
হাত ধরে নিয়ে চললো ওর খুশীর দুনিয়ায়! নিরু ছোট্ট ছোট্ট
পায়ে তাল মেলাতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছিলো, তবুও
প্রাণপণে দিদির হাত ধরে উড়ে চলছিলো অজানা র উদ্দেশ্যে!
খোলা আকাশ, সাদা মেঘ আর সরু বয়ে চলা নদীর
ধারে কাশফুলের সমাহার দেখে ছোট্ট নিরু অবাক হয়ে গেলো!
দিদি এ কোন জায়গায় নিয়ে এলো!!! কলি নীল আকাশের
নিচে দুহাত ছড়িয়ে গোল করে বেশ কয়েক বার পাক দিয়ে নিরুর
সামনে দাড়ালো! কিছুই তো জানিসনা ...আমি বলছি,
শুনলে তুইও আমার মতো খুশিতে পাগল হয়ে যাবি! দিদির
কথায় নিরু অজানা খুশির কারন জানার জন্য উদগ্রীব
হয়ে উঠলো। কলি বললো ..এই যে ফুল দেখছিস এর
মানে কি জানিস? এর মানে পূজো এসে গেছে, নীল
আকাশে সাদা মেঘ ...এর মানে পূজো এসে গেছে!! নিরু চোখ
গোলগোল করে দিদির কথাগুলো বুঝতে চাইছিলো। তার
মানে বাবার আসার সময় এসে গেছে দিদি?খুশিতে নিরু দিদির
কোলে মুখ গুঁজে দিলো! এমন দৃশ্যের সাক্ষী রইলো শারদ
প্রকৃতি।

দুই বোন বাড়ি ফেরে কতো পরিকল্পনা করতে করতে!
মাকে বলবে ঘরের ভাঙ্গা টালি পাল্টে নতুন টালি লাগাতে।
স্কুলের ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে নতুন ব্যাগ কিনতে হবে, এছাড়াও
পূজোর নতুন জামা তো আছেই। ঘরের মধ্যে মাকে চুপ
করে শুয়ে থাকতে দেখে দুজনে একে অপর কে দেখে,
মা তো এমন সময়ে শুয়ে থাকে না! কলি ধীরে ধীরে মায়ের
পাশে বসে, মেয়ের স্পর্শে উঠে বসে রমা। হাত বাড়িয়ে দুই
মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে! রমা জানে দুই মেয়ে কতো স্বপ্ন
বুনছে শরত্কাল কে চোখের পাতায় সাজিয়ে। একটু
আগে চিঠি এসেছে, ওদের বাবা সামনের সপ্তাহে আসছে! কিন্তু
ফ্যক্টরিতে লকআউটের জন্য সামান্য কাজ টা আর নেই।
যে কটা টাকা আছে কদিন চলবে?...ভেবে রমা চোখ মোছে।
কলি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ....কি হয়েছে মা? রমা সব
বলে মেয়েদের! ওদের মিথ্যে আশ্বাস দিতে মন চায় না।
কলি মায়ের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে ....এর জন্য
এতো ভেবোনা মা। আমাদের খারাপ সময় ঠিক
চলে যাবে ...পূজোর সময় বাবাকে কাছে পাবো, কতো আনন্দের
কথা। আর নতুন জামা পরের বার পূজোয় পড়বো! মেয়ের
মুখের দিকে তাকিয়ে রমা খুঁজে পায় এক
কিশোরী দূর্গা কে .......যে অপার শান্তি বিলায়ে চলে সব
দুখী মনে।।

সুদীপ্তা চ্যাটার্জী

কল্পচিত্র

অসুখ রঙ মেখে সাদা চাদর ...

অচেতনে দু দণ্ড সুখী ঘুম
শ্বাসরোধকারী সাইডেক্স বাতাসে
বিমর্ষতায় বাঙময় চোখ মেলে পক্ষীশাবক
অনুচ্চারিত শব্দে...
#
চৌকো ফ্রেমে
দুলছে দুরন্ত মেয়েবেলা
ঘাসের বিছানায় পা ডুবিয়ে
গুচ্ছ কথা ঝুড়ি নামিয়ে বটগাছ...
#
নতজানু ভিক্ষুক সময়ের দ্বারে
মেঘের কান্নায় ভারী মাটির বুক
নিঃশ্বব্দে ভাঙছে পাড় ;
বিপদ সীমা পেরোচ্ছে বেনোজল


অপেক্ষা শুধু সেই ক্ষণের ...


বহু সংক্রমণের সংগ্রামে শেখা

আদিম কৌশলে
মুহূর্ত থেকে খুঁটে খাই তুলে আনা মুহূর্ত ।।

শৈলেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী মানিক

অমানুষ

এখন কত বাজে অনামিকা ?

আমি যে অন্ধ কিছুই দেখি না !
যে দিন আমি অন্ধ হ'লাম

না যে দিন অন্ধ করা হ'ল

আমি তো কোন প্রতিবাদ করিনি !
আমাকে প্রতি পলে পলে
আঘাত করা হচ্ছে
আমাকে অমানুষ বলে গালি দেওয়া হচ্ছে
আমাকে মরতে বলা হচ্ছে
যা কখনই চাইনি অনামিকা !
আমি আর ভাবতেও পারছি না
কোন কিছু যা সত্য এবং সুন্দর ।
প্রচন্ড ব্যাথায় আমি চলতেও পারছি না!
আমিতো এখানে থাকতে চাইনি কখনো
অনেক আগেই চলে যেতে চেয়ে ছিলাম!
আমি আর কোন খোকার
ক্রন্দন শুনতে পারি না ।
আমি জানি এক দিন
আমার খোকারা অনেক বড় হবে !
পৃথিবীর আকাশ বাতাস মুখরিত করবে
গাইবে আমারই কোন ভাল লাগা গান !
আজ আমি সত্যই অপদার্থ অমানুষ !
আমার চেতনার সব রং
মুছে গেছে ভেবেছো ।
একটি নিয়ামকের খুবই দরকার ছিল
অনামিকা তুমি তা পারতে !
এক দিন সত্য উন্মচিত হবেই
তখন এই অমানুষরাই গালি দেবে
দূর হও যত মানুষ বলে !

মুস্তফা কামরুল আখতার

দুই দুয়ারী ঘর


কী নেশায় দেই
রঙের উপর রঙ,
আকাশটাকে মিশিয়ে দিলাম তর্জনীতে ।
স্মৃতির উপর
জোছনা মেশাই ।

এখন পাশ ফিরে যাই,
মুখও ফেরাই
ছেড়া ক্যানভাস,মলিন রঙের ছায়া হতে ।
বন্ধ দুয়ার ?
যাই,ভুলে যাই ।

নোঙর ফেলব বলে অদম্য এক নেশা ।
সুফলা, উর্বর জমির উপর অহংকার ।
সবুজের দিকে তাকানোর এক স্পৃহা ।
বুকের ভেতর অধিকৃত হিরন্ময় চাঁদ ।
সোনালি লাঙলের ফলায় দীপ্ত জীবন ।
উষ্ণতায় জেগে ওঠা রূপোলী মাস্তুল ।

যাই, ভুলে যাই ।
স্বপ্ন আর মোহ ছেড়ে আনত
এক আশ্চর্য লীলাবতী পদাবলির কাছে ।

কত দূর যাই,
কত দূর !
কত স্বপ্নহীন
রঙহীন ছবির উপর
কত পথ খুজে নেই !

আরেক দুয়ার !
স্বপ্ন আঁকা সোনার চাবি ।
চাদের রঙে আঁকা,আমার দুই দুয়ারী ঘর ।
হাত বাড়িয়ে দিলাম ছুঁয়ে ! ...
সোনার কাঠির জীয়ন পরশ ?


আবার...
ফিরে আসি,আরেক দুয়ার নয়,
অন্য কোথাও নয়,
জীবনের নেশায় নয় ।
শুধু এক প্রান্তরে জেগে থাকা ভালবাসায়,
ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত ।
যদি ফেরে কেউ, কখনো !
সুবর্ণরেখায় ।
আমার সেই ক্যানভাসে,ইজেলে,সেই রঙে ...
সেই প্রান্তরে ।

নাশিদা খান চৌধুরী

দেয়াল ও বাস্তবতা

দেয়ালকে পেছনে রেখে

ঠায় দাঁড়িয়ে;
নির্মোহ সব স্মৃতি,
প্রচ্ছন্ন করবার অন্তহীন প্রচেষ্টা।

সে দেয়না বাঁধা,

তবে, ওপাশ যাবার পথ রূদ্ধ।
অপেক্ষার পালা - ভেদ করবার, যদি
দুর্লভ সেই বাঁধা অতিক্রম করা যায়!

অন্তহীন প্রচেষ্টা দরজা তৈরীর।


দাঁড়িয়ে থাকা নিস্তব্ধ সময় -

খুঁটে খুঁটে চলে বর্ণনাতীত কষ্টগুলো।

প্রতিচ্ছবির খেলা ভাসে,

চোখ খুঁজে চলে সেই অবয়ব -
ধুসরিত দালানে নিশ্চিন্ন করবার আকাঙ্ক্ষা।

মনে মনে শতবার ভাঙ্গে

দরজা তৈরী করে চলে,
চেষ্টা অনবরত
দেয়াল ভেদ করবার.....

সবই শুধু মনে মনে রচনা,

বিরামহীন প্রতীক্ষা।

বাস্তবতা - দেয়ালেই পিঠ দিয়ে দাঁড় করায়।

সাথী প্রজাপতি

দ্বৈত সত্তা

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যখন দেখি

তুমি শুয়ে আছ পাশে
গভীর ঘুমে অচেতন, আর মাঝে মাঝে
সেই পরিচিত শব্দে যাচ্ছ নাক ডেকে
বুকের ভিতর'টা কেমন তলপর করে
তোমাকে যত'টা কাছে পাবার
তার চেয়ে আরও দূরে ঠেলে দেবার
আমার মাঝে এখন দ্বৈত সত্ত্বার বাস।

বিছানা ছেড়ে চুপিসারে হেঁটে যাই

বারান্দাতে, যদি তোমার দেখা পাই
কথা ছিল কখনও ভুল করে
তোমার কথা মনে হলে রাতের তারাকে
জিজ্ঞাসা করব তুমি কোথায়?
অনেকদিন জিজ্ঞাসা করা হয়নি।

আজ তাই অভিমানী তারাগুলো

লুকিয়ে আছে, ভাঙ্গা চাঁদ এক কোনে
বসে দেখছে আমার অস্থিরতা
আমার ছোট্ট বারান্দার ভিতর থেকে
আকাশের অনেকখানি এখন দেখা যায় না
কে বদলে গেলো? আমি না আকাশ?

আকাশ তুমি মুক্তমনা, তোমার মন

জুড়ে আছে মেঘ, তারা, চাঁদ আর সূর্যের বাস
আর আমি হতে পারিনি, বলতে পারিনি
নীরবে বাস করা তার কথা।

অনন্যা ভট্টাচার্য

কবিতা

ঢেউ আসে আর যায় –
কিছু পায় – কিছু নেয় ;
তারপর কিছুকাল ,
স্বপ্ন থাকে ঘাটে – আষাঢ়ে ,
ছায়ার সাথে ঘরকন্না –

তাই দিয়ে ঘাট বাঁচে ।

আবার ঢেউ আসে –
আবার ঢেউ যায় ,
তৈরী হয় স্রোত – চক্রবৃদ্ধি হার ।

কোয়েল বসু সাহা

শুভরাত্রি

আলোয় আমার চোখ ধাঁধালো,
আঁধার পথে পথ হারালো,
সঙ্গী ছায়াও মুখ ফেরালো, অবশেষে।
...
অচিন দেশের পথিক হয়ে
রঙ বেরঙের সিঁড়ি বেয়ে,
ঘুম বালিশে মুখটা গুঁজে
ফিরছি আমি খুঁজে খুঁজে
সুখপাখিটার সেই ঠিকানা, স্বপ্নদেশে।

সৃজিতা মুখার্জি



আত্মপক্ষ
 
তোমরা ওপারের দিগন্ত পেরিয়ে সাগর ছুঁয়েছ 
মুঠোর ঢেউতে ঝিনুক ফসকে উঠেছে লাল ফসফরাস
বালির কনা গুনতে গুনতে চশমা ভরেছে কালো ধোয়ায়
...
রাতের স্বপ্ন থমকে দাঁড়িয়েছে যমুনাবতীর চোখের কোণে..
আর পাড়ার মোড়ে গলা উঁচিয়ে তোমরা বলেছো
"
আমরা সমানাধিকারেই বিশ্বাসী"..

শরীরী অহংকারে ফেলেছো জেদের রক্তছাপ
মুখ লুকিয়ে কৃষ্ণকলি বিসর্জন দিয়েছে মনের নীল..
পর্দা ছিড়তে হয়ত গেছে ওরা..
তবু সে পর্দাই হয়েছে ওদের শহীদ মিনার.
তোমরা ওদের ছাই গোমুখের জলে ভাসিয়ে বলেছো
"
আমরা সমানাধিকারেই বিশ্বাসী.."

বারাঙ্গনা বলেছো ওদের বাঁচার সঞ্চয়কে
নি:সংকোচে উপেক্ষা করেছ
বনলতাদের মধ্যে বাড়তে থাকা আলোর পথযাত্রীকে
সব খুইয়ে ওরা কিস্তিমাতেই সমর্পণ করেছে ওদের অস্তিত্ব..
তোমরা সাদা কালোয় ঘুঁটি সাজাতে সাজাতে
তাও চিত্কার করে বলেছো
"
আমরা সমানাধিকারেই বিশ্বাসী.."

ঝুমা মজুমদার

অন্তরালে

তোমার দু-বাহুর আলিঙ্গন
আমার নরম বুকের পাঁজর
হারিয়েছি কতবার ......
পরেনি কারো নজর !
তুমি আকাশ , অন্তহীন গভীর
আমি পাখি , তোমার নীলে স্থবির ।
আস্ফালন ! উঁচুর দিকে , বাড়িয়েছি হাত
আমার চুলে ,ঘন আঁধার ,
তোমার চোখে রাত ।।

শ্রীতমা মুখার্জী

ধোঁয়াশা

এমনভাবে ডাকো,
সাড়া দেওয়ার কথা খুঁজে পাইনা,
এমনভাবে ডাকো,
কাছে না এসে পারিনা।
পেয়েছি, যা কিছুর জন্য উদ্গ্রীব অপেক্ষা,
হয়তো পাইনি, কিন্তু কোওশিস ছাড়িনি।


সূর্যাস্ত হবার পর, পাখিরা যেমন ঘরে ফেরে,
আমিও কেমন যেন আনমনা হয়ে
আকাশের নানা রঙের আবেশে,
নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
তাকে কি বলে অন্বেষণ নাকি অবগাহন -জানিনা।
নিজেরে হয়তো ভুলে, স্বপ্নের জগতে ডুব দেই,
সাড়া দিলেও তোমায় স্পর্শ করতে পারিনা।


তুমি আলিঙ্গন করে থাকো বাহুডোরে,
আমি তবু অজানা, অচেনা, কেঁদে উঠি ডুকরে।
অর্বাচীন অলকেই হৃদয়ে, লাটাইহীণ অবস্থায় ছাড়ি,
বইয়ের পাতায়-
                    বিকেলের রোদরাঙ্গা মেঘে -
                                         জীবনের গোলকধাঁধায়,
কখনো আনন্দ উত্তাল
কভু সবকিছু ছন্নছাড়া, উথাল-পাথাল।


তুমি এমনভাবে ডাকো -
মাঝরাতে ঘুমের অতলে -
                    স্বপ্নের মায়াজালে মন্ত্রমুগ্ধ আমি
ইশারায় তোমাকে ডাকি।


তুমি হয়তো শুনতে পাওনা,
বৃক্ষের আড়ালে-আবডালে
কতো আলো, কতো ছায়া -
                    কতো ভালোবাসা;
তবু হাত বাড়ালে স্পর্শহীন।


বলতে ইচ্ছে করে কতো কী?
চিনি কি তোমায়? জানিনা!!!

অনন্যা ব্যানার্জি

এই ভরা ভাদরে

যখন রুম ঝুম বৃষ্টি পরে

তখন তুমি আসো ধীর পায়ে ,
আমার স্মৃতির ভিড়ে |
মন বলে --
এই তো আছো তুমি পাশেই

আমায় বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে
ভুলিয়ে দিয়েছো আমার সকল অবিন্যস্ত অভিমান -
চুম্বনে আদরে ঘনীভূত শ্বাসে মুছে দিয়েছো আমার সকল অশ্রু জল --
আমার চাতক তৃষ্ণা কে নিবাড়িত করে
আমায় ভাসিয়েছো তুমি বৃষ্টিস্নাত আগুনে
করেছো রচনা দীঘল প্রেম কাব্যের
এই ভরা ভাদরে --||

শ্রীশুভ্র (শুভ্র ভট্টাচার্য)

দৌড়


অবিন্যস্ত চুলের মতন
আকাঙ্খাগুলো নিয়ে
রেখেছিলাম আশার ফাইলে গেঁথে!
বড়ো জটিল পথঘাট জেনেও প্রতিটি ক্রসিং-এ
বিশ্বাসের খুঁটি পুঁতে পুঁতে
বেলা পড়ে আসে ক্রমশ!
ভরসার প্রদীপে সলতে
পাকাতে পাকাতে কবে
যেন চুল পেকে গেল!
তবুও কি অপেক্ষা ফুরোলো?

যুগে যুগে যুগান্তরের পথিক
এসে আমার খুঁটিতে
জ্বেলে দেবে বলে
প্রেমপ্রদীপ্ত আলোর সোহাগ! ভালোবেসে
রেখে ছিলাম হৃদয় দহনান্তের
পোড়া ভস্মাবশেষ!

প্রতিদিনের নাওয়া খাওয়ার
মাঝে রোজকার গ্লানি
এসে নিষ্প্রদীপ সন্ধ্যা
ঘনালে আমারও
হৃদয়, ভাঙ্গা মাস্তুলের মত
টলমল করে ডুবে যায়!
তবুও দেখ যুগান্তরের
মানুষ! তোমার ঠিকানায়
ইচ্ছেডানায় উড়িয়েছি
শেষ ইচ্ছেটুকু!
সূর্য্যোদয়ের রঙে!
আমার কবিতাখানি!

বৈজয়ন্ত রাহা

শহর জানে


শহর জানে আমার ইতিকথা
গল্প কোথায় শুরু কোথায় শেষ
শহর জানে স্কাইস্ক্র্যাপারের কাঁচে
আমার সকাল বদলে যাবার পালা--

শহর জানে আমার ইকির-মিকির
পথের উপর অমাবস্যার পা
শহর জানে আমার ভিতর ভীড়
ভাঙ্গলে কেনো বিবর্ণ শুকতলা--

আমার আছে আহিরিটোলার ঘাট
রাত ফুরালে আজান-মাফিক ভেঁপু
জেটীর মুখে বাসি পাপড়ি-চাট
পা রাখলেই বিষণ্ণ শিবতলা—

শহর জানে সময় ফিরি করি
শুকিয়ে কবে মনের পাতা কাঠ
কেউ তো কোথাও নেই, কেবল তুইই,
সারাবছর দশমীর সাজতোলা—

আমার শহর আমার মতোই বাঁচে
আমার শহর পরান্নে অধিবাস
আমার শহর বৃষ্টিরাতের দিনে
লুকিয়ে রাখে আমার বারোমাস;
কেউ কি আমার মাঝরাস্তার ভীড়ে
হারিয়ে গেছে রোজনামচার মাপে
শহর তবু কুড়িয়ে আনিস কেনো
লুকিয়ে দেখা প্রতিদিনের জ্বালা???

নাজমুল হাসান মজুমদার

পথিকবর


হে পথিকবর ,
ক্লান্ত হয়োনা তুমি,
ক্লান্ত হয়োনা তুমি তোমার পথ চলায় ;

তুমি কখনওই দেখা পাবেনা অসীম আকাশের শেষ
তবু তোমায় সামনে চলতে হবে -
অসীমতার স্পর্শ পেতে,
অসীমতার দেখা কখনওই তোমার পাওয়া হবেনা
কিন্তু তুমি যে জায়গায় আছ, সে জায়গা থেকেতো বেরুবে ,
এটাইতো পরিবর্তন তোমার,
পথিকবর ।।

হে পথিকবর ,

সামনে আমার খোলা চিঠি
তুমি পড় ,
সেই চিঠির প্রতিটি শব্দে -
আমার কান্নার জল মিশে আছে ,
তুমি আমার জীবনের কিছু অংশই শুধুই তাতে পাবে ;
তা পড়ে তুমি ভেবোনা
তোমার জন্যে আমার শুধু কান্নাময় শব্দগুলো তুলে রেখেছি
আমার হাসির দিনগুলোও এতে আশ্রয় নিয়েছে -
আনন্দ অশ্রুতে ভিজে শব্দ হয়ে ।
তোমাকে তাইতো বলি পথিকবর ,
এখানেই শেষ নয় পথ চলা তোমার
সামনে আরও পথ আছে, আরও বিস্তৃত বিশাল পথ । ।

হে পথিকবর,

কত পথ বেয়ে ,কত পথের স্বাদতো তোমার নেওয়া হল ,
কত রঙের , কত মনের মানুষতো তুমি দেখলে ,
বলতে পারো ?
তোমায় কেন আমি থামতে মানা করি ,
কেন তোমায় আমি বলি ক্লান্ত হয়োনা পথিকবর
আরও একটু, একটু দেখো এ জগতের নানামনের মানুষ ;
হয়ত তখন বুঝবে তুমি, কতটা সুখী তুমি ।
জীবনের ঝঞ্জাল থেকে বহুদুরে আবার জীবনের কাছে
দুইরকমভাবেইতো তুমি জীবনটাকে উপভোগ করছো ,
তা আর পারছি কই আমি, পথিকবর ।।

হে পথিকবর ,

জীবনের মধ্যাহ্ন , সায়াহ্নের দিন গুনতে গুনতেই আমার সময় যায়
কই পাই আর বাহিরটাকে জানতে,
সবতো ধূসর হয়ে যায় রঙ্গিন জীবনের পিছে ছুটে
কই পেলাম আর -
আসল জীবনের স্বাদ আচ্ছাদন করতে ।
তোমায় তাই বলি , পথের শেষ টেনোনা তুমি
পথ চল সামনে , জানো ওই অসমাপ্তটাকে ।।

হে পথিকবর ,

সামনে দাঁড়ায়োনা তুমি
সামনে দাঁড়ায়োনা তুমি অজানা কোন আশংকায় ,
সামনে হেঁটে যাও দূর গন্তব্যে
কিছুতো দেখা পাবে,
তোমার জন্যই এই সুবিশাল পৃথিবী দাঁড়িয়া রহিয়াছে
অজানাকে সঙগী করে তোমার স্পর্শ পেতে ,
তাকে তুমি আপন কর
তার সানিধ্য গ্রহণ কর,
হে পথিকবর, এই পৃথিবীটা তোমার
তাকে তুমি ধর
তার সুবাস নাও ,
পৃথিবীটা তোমায় ডাকছে । ।

হে পথিকবর ,

তোমার জন্যই এই পৃথিবীতে ঊষরভূমিতে হয়েছে বৃক্ষ
ধরেছে ফুল পাতার মাঝে ,
সবি তোমার দেখতে হবে
কোন কিছু না দেখেই কি বিদায় নেবে বল পথিকবর ?
তুমিতো অন্য আট-দশটা ছাপোশা মানুষের মত হতে চাও না
তুমিতো দেখতে চাও এই বিশ্ব ,
তবে কেন বল নীরব থাকবে -
দৃষ্টি দর্শন থেকে ।
তোমার জন্যইতো এই চারপাশ
এই সৌন্দর্য অপেক্ষারত ।

হে পথিকবর ,

কি আছে ,এই কয়েকদিনের জীবনে আর
বেরিয়ে পর , দর্শন করে নাও ভালভাবে চারপাশটা
দেখে নাও পৃথিবীর না দেখা অংশগুলো ,
অবলোকন কর নিজেকে , নিজের চারপাশ
বোধ করি জানা হবে আসল জীবনটাকে ,
হয়ত এর ভেতরই গমন করে -
যাপিত ও যাপন জীবনের পার্থক্য চিনবে ।
হে পথিকবর, এই পৃথিবীটা তোমার
তাকে তুমি ধর
তার সুবাস নাও ,
পৃথিবীটা তোমায় ডাকছে । ।

শামীম পারভেজ

স্মৃতিই আমায় ভালবাসে

ভবিষ্যতে কি স্মৃতি,
আমি কিছু জানিনা,

অতীতের স্বর্ন স্মৃতি,
ভুলতে কভু পারিনা ।

একা একা থাকলে বসে,
স্মৃতিগুলো কাছে আসে,
আমার একাকত্ব জীবনে,
স্মৃতিই আমায় ভালবাসে ।

বিদিশা সিনহা

একদিন সমস্ত ঝড়ও থেমে যায়


একদিন সমস্ত ঝড়ও থেমে যায়

থেমে যায় ধূলো ওড়া উড়ি
পাখির কূজন
সমস্ত শুরু ও শেষের মধ্যবর্তী সুতোয়
কোনো এক বিন্দুতে
শীত গ্রীষ্ম বর্ষা ও হেমন্তের টানাপোড়েনে
ভিজতে থাকি একা
আর অপলক দেখি
এক ডানা ঝাপটানো দলছুট পাখি
তার চোখে লেগে থাকা আকাশের খুদ
আর ডানার প্রান্ত থেকে ঝরে পড়া ঘামের বুদবুদে
অজস্র রাগ দুঃখ কবিতার সুখ
অথচ ফুলে ওঠা ঢেউ নিশ্চুপে নেমে গেলে
সব হওয়ায় মিলিয়ে যায় একের পর এক
আর অপূর্ব শূণ্যতা শুধু নিঃশব্দে ঝরে পড়তে থাকে
এহেন শূণ্যতায় আমি শুনি প্রাণ, প্রাণের অলক্ষ্য কুয়াশা-
আসলে সব কিছু জীবন্ত মর্মর
সমস্ত সম্পর্ক, মান ও সঞ্চয়, অচ্যুত বোধ, লক্ষ্য অলক্ষ্য
জীব ও জড়ের প্রাণ, প্রাণের বিন্যাস, প্রাণের ঋতু বৃত্ত ও আয়ু
আর এই অগুন্তি শুরু ও শেষের ঢেউএ
আমি ভাসতে থাকি খড়
আর ভাসতে ভাসতে তবু
গোলাপের মত ভালবাসা ঝরে গেলে
মরমে দরজায় রাখি হাত
যদি ফিরে আসি
যদি ফিরে আসে ডাক! 


দেবদাস রায় (বাবুল)

মন মৃত্তিকা

অনেক কষ্ট করে

তোমাকে তোমাকে পেতে হয়েছে....
যেখান থেকে তোমায় কুড়িয়ে পেয়েছি,
গভীর তলদেশের
গাঢ় অন্ধকারে তোমার জন্ম বলেই
মন মৃত্তিকা বলে ডাকতে
ইচ্ছে করে তোমায় ।
মন মৃত্তিকা,
জীবনকে যতটা সইজ করে
দেখছ তুমি-
আমি চলি উল্টো পথে...
তোমার চাওয়া তোমার পাওয়ার
সব উপকরণ আমার জানা নেই
তোমার মনের আদিমতার
কাছে পরাজিত আমি ।
মন মৃত্তিকা....
তোমাকে কাছে রেখে
অসংখ্য অনুভূতির সখ্যতা
গড়ে উঠলেও
কখন যে চলে যাও---
আমার দারিদ্র সীমারঅনেক উপরে । 


জিনাত জাহান খান

কোমল নৈরাশ্য

আতঙ্কের আরব্ধ সৌন্দর্যে

অসহনীয় আরাধ্য তাই
চেপে রাখি নিজেকে , গিলে ফেলি
ব্যাকুল কন্ঠে অন্ধকারে ক্রন্দন ধ্বনি
স্হিতিবোধ নেই ব্যাখ্যাত জগতে
স্বাবলম্বী জন্তুরাও জেনে গেছে আজ ,
বাকী থাকে -
ঢালুতে দাঁড়ানো বৃক্ষ , সেই পথ

দিনের পর দিন কিংবা কাল হেঁটেছিলাম ।
আছে সেই রাত্রি নিখিল পূর্ন বাতাসের
ভক্ষ্য হয় আমাদের মুখ ,
শূন্যতা ছুঁড়ে দাও বাহু থেকে
যে শূন্যে নিঃশ্বাস নাও , তাঁর মাঝে
বিস্তীর্ন বায়ুর স্বাদ বুঝে নিয়ে পাখিরা
হবে উড্ডীন আরো উত্‍সাহে ।

তাসমিনা জামান

অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো


আকাশটা এত কাঁদছে কেন?

অঝোর ধারায় ঝরছে আকাশের সব অভিমান
দূর দিগন্তের তাকিয়ে দেখো
যেন আকাশ আর পৃথিবী মিলে গেছে
যেন তাদের প্রণয় পূর্ণতা পেয়েছে।
কিন্তু যোজন যোজন পার করলেও তুমি
কোনদিন খুঁজে পারে না সেই মিলনস্থল ...
কি ভাবে পাবে বলো মিলন হলেই না
তবে মিলনস্থল খুঁজে পাবে।
কিছু কিছু প্রেমের পরিণতি হল
তারা সারা জীবনে সমান্তরাল থাকবে
ভালবাসার কমতি নেই কিন্তু তাদের
কিন্তু আজকের এই পৃথিবী সত্যিকারের
ভালোবাসা সহ্য করতে পারে না --
আমাদের ভালোবাসা কি সত্যিকারের ভালোবাসা
হয়তো তাই -- নিয়তি আমাদেরও
আকাশ আর পৃথিবী বানিয়ে দিয়েছে।
দূর থেকে মনে হয় হয়তো কাছে কাছে
আসলে যোজন যোজন দূরে আমরা --
এই দূরত্ব পার হয়ে যদিও বা কাছে আসি
ভালোবাসার জন্যে, কিন্তু পোড়া মনের ঠাঁই নেওয়া
মনুষত্ব্য কখনোই এক হতে দেয় না।
মাঝে মাঝে মনে হয় গোল্লায় যাক
এই কঠিন দুনিয়া -- কিন্তু পরক্ষণেই আমার
মধ্যে যে ভালো মানুষটা বাস করে --
আমি একটু লোভী হলেই সে আমাকে ধমকে ওঠে,
প্রচন্ড কঠিন ভাবে বাধা দেয়।
জানো, খুব ইচ্ছে করে তোমার দেয়া সব
ভালোবাসাগুলো গায়ে মেখে অলস বসে থাকি।
খুব ইচ্ছে করে তোমায় নিয়ে সুখের এক ভেলায় চড়ে
তারপর স্বার্থপর হয়ে, আমার সব স্বপ্নগুলোকে একে একে
পূর্ণতা দেই -- খুব ইচ্ছে করে, খুব ইচ্ছে করে, খুউব ইচ্ছে করে
এত অধরা অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো
আমার মনে আসে কেন বলতে পারো?
আমি কি সব সময় অসম্ভবকে ভালোবাসি?
জানি না কিছু, জানি না -- জানতে ইচ্ছে করছে না
তাই বলে ভেবো না পালাচ্ছিঃ আমি কিন্তু কাপুরুষ নই। 


রেটিনা বড়ুয়া

স্মৃতির টানে


পড়ন্ত বিকালের সূর্যের আভায় সেদিন রক্তিম হতে পারিনি

সেটা নিয়ে আজ কোন অভিযোগ নয় ।
আমার সব কটা জানালা খুলে দিয়েছিলাম
তোমাকে ভালবাসবো বলে
সেটা আমার কোন অপরাধ নয় ।

একটা বিষণ্ণতা গ্রাস করে অন্তরালের ছোঁয়ায়

জীবনের এটাই ছিলো পরম সুন্দর সময় ।
সে সময়টুকু জীবন থেকে চলে গেছে
আজ আর কিছু চাওয়া নয় ।
বারে বারে ফিরে চাই
অতীতের সেই সমুদ্র সৈকতের দিকে,
যেখানে নির্জনে না বলা কথা রোমাঞ্চে শিহরিত করেছিলো ।

মানুষ বড় ভালো লাগত আমার ?

মানুষ ছেড়ে লোকালয় ছেড়ে
চলে গিয়েছিলাম তোমারি টানে ।
আজ লোকালয়ে আমি , মরুভূমিতে নই
শুধু তুমি নাই স্মৃতি গুলো পাশে পরে রই ।

বল তো

আমি কি ভালবাসিনি তোমায় ?
এই লোকালয়ে সাধ্যাতীত ভালবাসবো বলে
ডেকেছিলাম তোমায় , তুমি দাওনি সাড়া
তাই গুঁটিয়ে নিয়েছি নিজেকে ।
আজ মন চাই আবার হারিয়ে যাই
সে তারাদের খোঁজে ।
যেখানে তুমি আর আমি আছি
আর কেউ নয় ।

রেজা রহমান

মেঘ তুই ভালো থাক


মেঘেরা এখন শাদা

মেঘেদের মুখে কাশফুল হাসি
ভুলে গেছে ওরা কাঁদা।
মেঘ কালো দেখে কোথাও বেরুতে
আজ আর নেই বাধা।

মেঘ কি আমাকে পারিস শেখাতে হাসি!

অনেক হয়েছে আর ভুল না
আর কি রে ভালোবাসি?
মেঘ তোর কোলে রোদ
তুই মুখভার করিসনে আর
এ-আমার অনুরোধ।

তোকে আর আমি দেবোনা দীর্ঘশ্বাস

আমার কাছেই থাকুক না-হয় আমার সর্বনাশ।
মেঘ তোর ভেসে বেড়ানোটা ভালো খুব
আসিসনে কাছে ভয় পাস বুঝি
তোর জলে দেবো ডুব!

তোর যাওয়া আসা বিষনীলে ভাসা

রঙের তামাশা তোর কাঁদা হাসা
তোর ছুটোছুটি তোর ওড়াউড়ি
তবে মুখপুড়ি আমি কেন পুড়ি?
এমনটা চলবেকি—
কত কি পারিস কে না জানে তুই
আমাকে নেভানা দেখি!

মেঘ তুই ভালো থাক

ফটিক জলটা দিয়ে যা আমাকে

সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব

মৃত্যুদন্ড

মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে পারেন!

নিব পিষে ফেলার অপেক্ষাতেই আছি। ইওর অনার!

ফ্লাশব্যাকে যে ঘটনা তার বিবরণে পাশবিক

বলেই খালাস!
অথচ কিভাবে বেড়ে উঠেছিল অস্থিরতা
সেই রাতে। ঘৃণার মটরবাইক
একসাথে তুলে
দিযেছিল আনাড়ি আজ্ঞাপালনে।
এখনও কাপড় সরালে স্থায়ী মুদ্রিত শোকসংবাদ
তোমাদেরই লিখতে হবে।

কলমটা আর নাড়াবেন না। কালি ঝরে যেতে পারে।

ভাঙ্গতে পারেন। ইওর অনার!
আবারও বলছি! ও চলে গেছে পাথর বিন্যাসে।

সোমদত্তা গোস্বামী

স্মৃতি বলে কিছু নেই


হঠাৎ-ই এসেছিলে ঝড়ের মত

হঠাৎ-ই চলে গেলে রেখে বেদনা ক্ষত
তোমার সাথে লিখে লিখে কথা
তারি মাঝে উজাড় করা না পাওয়ার ব্যাথা
ভেবেছি তোমায় কি ছুঁয়ে দেখা যায়
সম্পর্কেই নেই তার আবার দায়
তুমি হারিয়ে গেছো
একদিন যেতেই আজ কিম্বা কাল
শুধু একবার এসে দেখে যাও
আমি বেসামাল
কাল সারারাত বসেছিলাম
তোমার আশায়
বুঝলাম নতুন করে
ভালবাসা চোখের জলে ভাসায়
অনুভব করলাম নতুন করে
তুমি জেগে আছো আমার রাত জাগা
চোখের শিশিরে
নতুন করে জানলাম বিরহে ভালবাসা বাড়ে
পূর্ণিমার রাত ভেসে গেল
শ্রাবনের ঝড়ে
সারাদিন কাজের মাঝে চোখের জল মুছে
ভুলে থাকার ছল
স্মৃতি বলে কিছু নেই
আছে শুধু দু'চোখের জল


সুমিত রঞ্জন দাস

শরৎস্মৃতি

টেবিলে নীরেন্দ্রনাথ
সিতাংশুর অন্ধকারে খুঁজছি বিস্মৃতির আকাশ
যদি ছুঁতে পারি সেই অদৃশ্য নামাবলী
স্মৃতি সমকাল আগামীর মুক্তোহার
বাঁধনহারা মনের শিউলী শরৎ
                           অসম্পূর্ণ যত অক্ষরমালা
এক অধ্যায় যোগসুত্র লিখে যাব ইতিহাসে;

পিতামহ,
চলো ফিরে যাই সে অন্ধকারে
সিতাংশু এখনো তোমার অপেক্ষায়
অমোঘ মৃত্যুর কাছাকাছি শান্তি খুঁজে বেড়ায়
আরোহন থেকে অবরোহনে, অবরোহন থেকে ...

বাতাসে ভেসে আসে কাশফুলঘ্রাণ
মন বলে -
               আবার শৈশবেই ফিরে যাই।

সুদীপ্ত কর

মা যেন দুর্গা

বর্ষা নিয়েছে বিদায়

আকাশ ঘন নীল,
সাদা মেঘের চলাফেরা
যেন স্নিগ্ধতার মিছিল ।

জল ভরা দীঘিতে

শরতের চেনা মুখ,
কাশবনে বাতাস বয়
প্রাণে যোগায় সুখ ।

ভোরের ঝরা শিউলিতে

শিশিরের উজ্বল রূপটান,
কুমোর পাড়ায় সযত্নে
চলছে মায়ের চক্ষুদান ।

নতুন পাওয়া কাপড়ে

মন উদাসী সুবাস,
ছেলে বুড়ো সবার
মনে খুশির উচ্ছাস ।

নদী পারের পদ্মবনে

ফুল কত রাশি,
ভাবি তাই দেখে
মায়ের মুখের হাসি ।

ঢাকীপাড়ার মহড়া শুনে

সন্ধে যখন হয়,
তুলসীতলায় মাকে আমার
দুর্গা মনে হয় ।

যাযাবর জীবন

বীভৎস

কি বীভৎস সুন্দর তোর মুখচ্ছবিখানি

জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় চোখ দুটি
চেয়ে থাকলে তোর পানে
তাই তো তোকে দেখতে চাই না।

কি বীভৎস উদ্ভিন্ন যৌবনা তোর দেহখানি

ধাক্কা লাগে মনের ভালো করে দেখতে গেলে
তোর যৌবন আগুন জ্বালায় চারিদিক পুড়িয়ে দিতে
তাই তো তোকে এখন আর চোখ মেলে দেখি না।

কি বীভৎস অশান্ত তোর মনখানি

পাগলা ঘোড়ার ছুটন্ত খুড়-শব্দ ভেসে আসে
তোর মনের লাগাম টেনে ধরা আমার কম্ম নয়
তাই তো তোর মনকে এখন আর ছুঁই না।

কি বীভৎস শীতল তোর হৃদয়খানি

মাইনাসের দুশ চল্লিশ ডিগ্রীর নিচে
তোর শীতলতায় যেন হিমবাহের ঠাণ্ডা
তাই তো এখন আর তোর হৃদয়ের স্পর্শ পাই না ।

অথচ কি বীভৎস করুণ তোর চাহনিখানি

কান্নার সাগর যেন ভেসে ওঠে ওখানে
তোর চোখে চোখ পড়লে
তাই তো চোখে চোখে কথা কই না।

আসলে সব আমারই দোষ

আমি বীভৎসতা সইতে পারি না

সৌমিত্র চক্রবর্তী

জঙ্গলের রাত্রি

একসুরে একটানা কেঁদে চলেছে রাত্রি।

আকাশচুমু খাওয়া গাছের চওড়া পাতার বুকে
আছড়ে পড়ছে জল,
বিরহীনি রাত্রির আকাশ চোখের কোল
ছলকে বেড়িয়ে আসে রক্তকণা।
ঝমঝম ব্যান্ড বাজিয়ে কোথায় যেন
অভিসারে চলেছে একাকী সজারু।
গর্ভবতী রিডলের প্রেমিক
দাই সেজে বসে আছে সমুদ্রপাড়ে,
এখুনি জন্ম নেবে আরো এক বিপন্ন নতুন।
ভীষণ মনখারাপের আবেশ রিনিরিনি
ছেয়ে ফেলে জীর্ণ পাতার কুটির,
একমনে লাল ভাত রেঁধে যায়
আস্কাবাসী আদিম জঙ্গলবন্ধু;
সতর্ক কান উদ্যত কোথাও
কি সঙ্কেত দিলো বুনো কুকুরের দল!
অঝোর কান্নায় কাতর জঙ্গল
গুমগুম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
সে চিতল হরিনীরা লুকোলো কোথায়?
উচ্ছল জলতরঙ্গের নাচের নেশায়
যাকে ধাওয়া করে আজ এ মন
এ ঘন জঙ্গল জড়ায়!
টিমটিম কাঠের আগুনে
অবিশ্রাম রাত্রিকান্নায় মন বুঁদ হয়ে যায়

অভিলাষা

সাধের একতারা

একতারাটির একটি তারে,

সুর ঘনালো ভুবনপারে,

গাইছে মাটি, সবুজ বন,

উদাস মেয়ের লাজুক মন।

বিন্দু বিন্দু ব্যাথার দানায়,

লাবনি নীল অশ্রুকণায়,

সুর মিলালো নষ্ট নারী,

পাখীর ডাকে,অলির ডানায়,

ফুলের কলি,পরাগদানায়,

শ্রাবনধারায় নদীর স্রোতে,

সুর খেলছে একতারাতে।

পাড়ায় পাড়ায়,নদীর কূলে,

মাঠে ঘাটে তরুমূলে,

দুপূর রোদে আলো ছায়ায়,

সুজন বাউল সুরকে সাজায়।
কষ্টসহা এক বুক গান,

মাতছে সুরে বাউল পরান।।


একতারাটির একটি তারে,

সুর ঘনালো ভুবনপারে,

গাইছে মাটি, সবুজ বন,

উদাস মেয়ের লাজুক মন।

বিন্দু বিন্দু ব্যাথার দানায়,

লাবনি নীল অশ্রুকণায়,

সুর মিলালো নষ্ট নারী,

পাখীর ডাকে,অলির ডানায়,

ফুলের কলি,পরাগদানায়,

শ্রাবনধারায় নদীর স্রোতে,

সুর খেলছে একতারাতে।

পাড়ায় পাড়ায়,নদীর কূলে,

মাঠে ঘাটে তরুমূলে,

দুপূর রোদে আলো ছায়ায়,

সুজন বাউল সুরকে সাজায়।

কষ্টসহা এক বুক গান,

মাতছে সুরে বাউল পরান।।

মৌ দাশগুপ্তা

অনাঘ্রাত আকাশ

আকাশের গায়ে হাত রেখেছি স্পর্শসুখের লোভে,

বেদনার সাদা থান পড়া মন মুখর, মৌন ক্ষোভে।
ভাসমান মেঘ স্বপ্নে ছুঁয়েছে অসমান ঐ চাঁদ,
নিভৃতে তাই জোৎস্না পেতেছে আলো আঁধারির ফাঁদ।
পাথুরিয়া প্রাণ পেখম মেলেছে সুনিবিড় উল্লাসে,
মগ্ন রয়েছে মিথ্যের সাথে সুনিপুন সহবাসে।
উর্ণনাভ জাল হয়ে আজ আমায় ঘিরেছে যাতনা,
অসহায় তাই হাতড়ে বেড়াই,বৃষ্টির চোরাকান্না,
আকাশনীরে মন ভুলেছি পরশকাতর দুখে,
দুখবিলাসী চোখ ভরেছে কালের করাল শোকে।
সেই শোকেতেই আকাশ যে নীল,বেদনাবিধুর সাজ,
হাত বাড়ালেও অধরা আকাশ, অনাঘ্রাত আজ।। 


সুপর্ণারঞ্জনা পর্না সরকার

রক্তাক্ত কলম

কেন এভাবে খুঁচিয়ে তুলে রক্তাক্ত করলে আমাকে

কেন তুলে দিলে কলমের মুখে এমন রক্ত...
বেশ তো ছিলাম প্রেম ভালোবাসায় সুপ্ত নরম
সাহস থাকলে সামনে এসে দাঁড়াও
মোকাবিলার জন্য তৈরি হও কঠিন সত্যের
দাঁতে দাঁত চেপে প্রস্তুত কঠিন লড়াই !

ভেবেছিলাম আর কিছু বলবো না কোনদিন

...

বেছে নিয়েছিলাম নিরাপদ অন্ধকার

মুখ ফিরিয়েছিলাম প্রকৃতি চাঁদ ভালোবাসার স্নিগ্ধতা
প্রিয়তমের নরম স্পর্সে খুঁজে পাইনি শান্তির বার্তা
কাউকে বোঝাতে পারিনি আপন হারানোর কষ্ট
পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছি প্রিয় কবিতা !

তবু ফিরে আসতে হয় হৃদয়ের তাড়নায়

জীবন্ত কষ্ট-গুলো হয়ে ওঠে শব্দ সৈনিক
চোখের জলে বেরিয়ে আসে গলিত লাভা
অন্তঃস্থল থেকে বেরিয়ে আসতে চায় নীরব প্রতিবাদী
অজান্তে টের পাই সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠা
অপেক্ষা শুধু বিস্ফোরণ...
আর্তনাদ... বঞ্চনার মিলিত বিস্ফোরণ...
বাঁচতে হলে বাঁচো... পালিয়ে বাঁচো ধরাছোঁয়ার বাইরে

সেলিম উদ্দিন মণ্ডল

নগ্নতা

ছোট্টশিশু কাপড়ছাড়া হলে মহাবকুনি
মাজটা তো পূর্ণ নগ্ন, কোথায় তাদের বাতলামি?
মুখোশের আড়ালে শত শত নগ্নতার খেলা,
পর্দার বাইরেও কত শত ভীড়
কোথায় ওরা?
কামাতুর, পাপীমন, অসভ্য বিচরণ
নগ্ন সমাজে আজি উজ্জ্বল প্রতিফলন।
প্রেম সাধনা সফল, শরীর তুষ্ট হলে
ভালবাসার পসরা সজায় নিজ অঙ্গস্থলে।
সঙ্গীছাড়া বিবাহিতের যৌন শূন্য কলসখানি
তৃষ্ণা প্রবন মরুপথিকের দুরুহ এক ক্লান্তি।
ফিকে জগতসংসারী, অতলান্ত নিকট, ভ্রান্ত জীবনবানী।
উন্নত সমাজ, উন্নত প্রযুক্তি আজ
ফ্যাশানের যুগে এত সুন্দর ছোটো ছোটো সাজ
অর্ধনগ্ন শরীরে তাই নারি, কত শত সচরাচর
ক্ষুধা মেটানোর তাড়নায় ধর্ষণ, বলাৎকার।
পাড়ায় পাড়ায়, অলিতে গলিতে নিষিদ্ধ কারাগার
দলে দলে হাজির সকলে বারবার।
এরা নাকি শিক্ষিত, এরা উন্নত।
নগ্ন সমাজ, নগ্ন মন, নগ্ন আচরণ
নগ্নতার বাসা আজি পূর্ণ স্থাপন।
কে আপন, কে পর
উলঙ্গ সমাজ আজ যাযাবর।
কে দেখে, কে শোনে
আসে যায় না কারো
আপন শরীর, আপন মন শান্ত যখন
দেখবে কে? কে উলঙ্গ,কে নগ্ন এখন?

সাইদুর মিলন

ছন্দ মিলন

বলে বাঁকা ঠোটে 'মিলন' কি ? কবি ?
ছন্দে লিখে ? ও তো ছড়াকার !
আমি বলি “ আহ্‌ হা, ছড়া না কবিতা
সেই ঝগড়ায় কি দরকার ?”

ছন্দই যার মন্দ, সে তো বন্ধ দুয়ারী কবিতা হে !

ছন্দে গন্ধে জীবন ব’ন্দে, বিশ্ব রাঙাল রবি রা যে !

ছন্দ ? ও তো নুন্‌ মশলা ! খাবি তরকারী ? ওকে ছাড়া ?

নুন্‌ ছাড়া রাধা খেয়ে দেখেছিস্‌ ? খাওয়া নয় ! ধরে গেলানো তা !
যদিওবা গেলে, বিরক্তি রাগ এ মুখ কূচকায় ? দেয় গালী ?
ছন্দ গন্ধ দিয়ে পাতে দিতি ! দেখ্‌ তি ! ও চেটে খেতো থালি !

আঁত্‌লামী করে লিখা ভারে ভড়ে, বইটা ভরালি ? ছন্দ বাদ ?

কাজে না লাগুক, মনে না থাকুক ! মিটলেই হ'ল লিখার সাধ ?

ছন্দেই চলি , ছন্দেই বলি ! লিখছিস্‌ ? বসে রাত ও দিন ?

লিখতে বসার আগে তো বসা, মনঘরে ছন্দের মেশিন !
ছন্দ মেশিন চালা রাত দিন, ঘটর ঘটর ঘটাং ঘট্‌
ফাঁক বুঝে নিবি, কথা গুঁজে দিবি, বেরুবে কবিতা, ফটাং ফট্‌ !

ছন্দ হারা ছন্নছাড়া বই থাকে ভরে বই এর তাক

ছন্দেতে লিখা “দাদ খানি চাল” আজও ভরে রাখে মন এর ফাঁক ।

আজও ক্ষণে ক্ষণে খনার বচন

লোক মুখে মুখে হয়ে প্রবচন
লাগছে যে কাজে কথার রতন
তাঁর চেয়ে হবি বড় কবি ?

রবি, নজরুল ছিল মশগুল, লিখতে ছন্দে ! বাজি ল’বি ?

না কি উনাদেরও বড় হবি ?

শোন্‌ কবি,

স্বয়ং খোদারও ছন্দ পছন্দ্‌ ! ছন্দে কুরআন্‌ ! পেলো নবী !!

ফারহানা খানম

ঝড়

খুবই কি প্রয়োজন ছিল
ঝড়ের হাওয়ার সঙ্গী হওয়ার
কি এত ক্ষতি হতো বলো ?
না হয় ভেসেই যেতাম বেনো জলে ,
মেঘের সিড়িতে পা রেখে দিতাম পাড়ি
ওই দূর আকাশে
যেখানে তারায় তারায় আঁকা আছে
আমারই স্বপ্নগুলো

এই ফুল যদি নাই ফুটতো সেদিন
কি এমন ক্ষতি ছিল ?
কোন এক দিন অগণন ফুলের ভিড়ে
বুনো ফুল হয়ে যদি ফুটি
চিনে নেবে কি সৌরভে আমায়?

নিস্তরঙ্গ এই জীবনে ভীষণ
আলোড়ন আজ
অধরা সেই সুখ খুজি নক্ষত্রের
আলোর আলোয়
এই অবেলায় অনুরাগে
কথারা নির্বাক।
আমার শব্দেরা তাই ত্রস্ত ব্যাকুলতায়
ছন্দ হারায় ।।

শাশ্বত ব্যানার্জী

৫টি কবিতা

পথ


কিছুটা যেন পাখির মতো
কিছুটা যেন বাঁশি

কোন মৃত্যু আমার জন্য বাঁধা

তাই শিখতে তোমার কাছে আসি


তুমি


পাহাড়চূড়ার কুয়াশা

আজ বেশ সরে গেছে অন্য বনে।
বুড়ো লামা রোদ্দুরে বসে
লোমওলা শাদা কুকুরটাকে আদর করেছে
সকালভর
আর অকালমৃত সন্তানের নামে
ডেকেছে, - মিরাপ ... মিরাপ ...

সেই স্তব্ধ ডাক

খাদে ঝরে যাওয়া অশ্বের ক্ষীণ আর্তনাদ,
বুদ্ধমূর্তির মতো বিরাট, উঁচু ডাক
কেউ শুনতে পায়নি

অথচ তুমি অকারণ নেমে আসছ

পাকদণ্ডী পথ পেরিয়ে পেরিয়ে নেমে আসছ
দুহাতে কুয়াশা কাটিয়ে, গুল্মলতা গায়ে
নাভির পদ্মগন্ধ নিয়ে এসে দাঁড়াছ
চবুতরায়, যেখানে আদরগাছ সকালভর হয়ে ...



সাড়া


জপমালার মতো ঘুরছে আয়ুষ্কাল

একটা ... দুটো ... ভয় করতে পারি?

ভাখারিণীর কুঞ্চিত হাতে কী অপূর্ব সাড়া দিচ্ছ

কি অপূর্ব সাড়া তোমার পথের ধারে, ছায়ায় ছায়ায়
নষ্ট নারীডাকে
মুখ ফেরাচ্ছ শীতের রৌদ্র বাঁকা, ওই –
আপন বাপন ফেরিওলার ডাকে

শবদেহ যায়। ডোমবালকের কাল পরীক্ষা স্কুলে


ভয় করব? ভয় করব কাকে?



ভয়


সমুদ্রের অনেক নীচে প্রবালের মতো

গুটিয়ে যাচ্ছি, জানো

জলতলে কার মুখ ওই মৃৎনির্মাণের মতোন

অল্প অল্প গলে যায়

একেবারে ডুবে গেছি কি না – দেখতে এসে

মলিনা নথশুদ্ধু, রূপোর মল পায়ে
গলে যাচ্ছে মা

এইভাবেই খুঁজতে খুঁজতে রৌদ্রেজলে

মিলিয়ে যাচ্ছে ‘কমলা’ নামের বাড়ি

বিশ্বাস করো –

জানি, বড়ো কঠিন ব্যাধি বিপুল অন্ধকারে
তবুও আমি ... তবুও আমি ...
পৃথিবীর মতো সেরেও উঠতে পারি


অসুখ


বাইরে যাই না।

দিবাকরদাদা এসে, উঠোনে,
টুলে বসিয়ে, চুল কেটে দেয়

রোদ্দুরেও শীত করে। পরাজয়ের ভীষণ শীত।


সকাল হচ্ছে। ভোরের রেওয়াজ ওর

এখনও শেষ হয়নি।
রেলবাঁশি পুরনো বন্ধুর মতো বাবাকে ডাকে
বাবা বেরোচ্ছে। পাঁচিলের পাশ থেকে
মা লাজুক হাতটা নাড়ল একবার

পঁচিশ বছর ... ওদের এখনও অসুখ নেই

রেওয়াজ ... তুমি তখন চলবে
আমার থেকে পঁচিশ বছর পর?