কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম সংখ্যা

সাহিত্য ব্লগ ‘পারিবারিক’ প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হল। সম্পাদক না হয়েও প্রথম সংখ্যাটির সম্পাদকীয় লেখার দায়ভার বর্তেছে আমার ওপর – যে কোন হিসাবেই কবি নয়, অনুরাগী পাঠক মাত্র। আমি সম্মানিত।
বাংলা কবিতার প্রকাশ ও পাঠের ক্ষেত্রটি এখন অনেক বেশি প্রসারিত। মুদ্রিত পত্রিকার সীমিত পরিসর ছাড়িয়ে বাংলা কবিতা এখন পৌছে যাচ্ছে দেশে, বিদেশে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও - আরো অনেক বেশি পাঠকের ঠিকানায়, নানান অন্তর্জাল পত্রিকা, সাহিত্য ব্লগ ও কবিগোষ্ঠীর মাধ্যমে। অন্তর্জাল দুনিয়ার জনপ্রিয়তম সোস্যাল কমিউনিটি ফেসবুক গোষ্ঠীগুলি এখন নবীন প্রজন্মের কবিদের কবিতার অনুশীলন ও প্রকাশের অবিসংবাদী প্রধান ক্ষেত্র, সংশয় নেই। বস্তুত এই কবি-গোষ্ঠী’ ও ‘সাহিত্য-ব্লগ’গুলিই এখন বাংলা কবিতার সূতিকা গৃহ। ‘কবিতার পরিবার’ একটি সুপরিচিত ফেসবুক কবিগোষ্ঠী বা বাংলা কবিতার গ্রুপ। ‘পারিবারিক’ সেই কবি-গোষ্ঠীরই পত্রিকা সংস্করণ - অন্তর্জাল পরিভাষায় অনেকেই যাকে বলেন ‘ব্লগজিন’।
কবিতা প্রকাশ ও পাঠের আপন সুপরিচিত ক্ষেত্র থাকতেও একটি পৃথক সাহিত্য ব্লগের প্রয়োজন হ’ল কেন ? দুটি মূখ্য কারণ – প্রথমত, প্রকাশিত কবিতাগুলির সংরক্ষণ এবং পাঠের ক্ষেত্রটির স্থায়ীকরণ। গ্রুপে প্রচুর সংখ্যায় কবিতা ও সে সম্পর্কিত মন্তব্য, প্রতি-মন্তব্য পোষ্ট হওয়ার কারণে কবিতাগুলি ক্রমশ নীচে নেমে যায়। কিছু কিছু কবিতা ইচ্ছা থাকলেও পাঠক পুণঃপাঠের সুযোগ পাননা,কবিতাগুলি হারিয়ে যায়। অর্থাৎ গ্রুপে কবিতা পাঠের ক্ষেত্রে এক ধরণের তাৎক্ষণিকতা থাকে। সাহিত্য-ব্লগের ক্ষেত্রে তা হয়না, কবিতাগুলির সংরক্ষণ হয় প্রকাশকাল অনুযায়ী। দ্বিতীয়ত, সম্পাদনার স্বাধীনতা। গ্রুপে কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখকের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে কারণ লেখক ও প্রকাশক একই ব্যক্তি। প্রকাশিত কবিতার রূপ-রীতি বা গঠন গত সামান্যতম সম্পাদনা করার সুযোগও থাকেনা, এমনকি অশুদ্ধ বানানও সংশোধন করা যায়না। সাহিত্য-ব্লগের ক্ষেত্রে কবিতা নির্বাচন ও সম্পাদনার স্বাধীনতা থাকে যা লেখক ও পাঠক উভয়কেই সমৃদ্ধ করে। তৃতীয় আর একটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ – গ্রুপে প্রকাশিত কবিতার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেই গ্রুপের সদস্যদেরই পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ থাকে অন্য পাঠকের নয়। কিন্তু সাহিত্যব্লগ অনেক বেশি উন্মুক্ত পাঠকের কাছে।
‘কবিতার পরিবার’ পূর্ণ মর্যাদায় তার ঘোষিত লক্ষ্যে অবিচল থাকবে। বলা যেতে পারে ‘পারিবারিক’ সাহিত্য-ব্লগের প্রকাশ সেই প্রয়াসেই একটি ইতিবাচক সংযোজন। কবিতার পরিবারের যারা সদস্য ‘পারিবারিক’ সাহিত্য ব্লগ’ও তাদেরই আপনজন, তারাই এই সাহিত্য ব্লগের মূল শক্তি।
‘পারিবারিক’ কে সাহিত্য ব্লগ বলার মধ্যে একটা ইঙ্গিত থাকছে তা এই যে, এই ব্লগ শুধুমাত্র কবিতার প্রকাশের মধ্যেই সীমিত থাকবেনা, কাব্য বা সাহিত্য সম্পর্কিত মনোজ্ঞ আলোচনা, গল্প ইত্যাদিও এর শরীরে স্থান পাবে এরকম পরিকল্পনাও আমাদের আছে।
অন্য কোন কবি গোষ্ঠী বা সাহিত্য ব্লগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতায় আমরা বিশ্বাসী নই। ‘কবিতার পরিবার’গ্রুপের মত ‘পারিবারিক’ সাহিত্য ব্লগও সমস্ত কাব্য ও সাহিত্যপ্রেমির কাছে অবারিত। আমরা চাই আমাদের পরিশীলিত জীবন বোধ ও মননের যোগ্য ক্ষেত্র হয়ে উঠুক এই সাহিত্য ব্লগ ‘পারিবারিক’। ভারত রাষ্ট্রের ৬৫তম স্বাধীনতা দিবসে এই সাহিত্য ব্লগের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হ’ল। ভারত রাষ্ট্রের স্বাধীনতার মতই অটুট থাকুটা ‘পারিবারিক’ ও তার পাঠকের বন্ধন।

ফাল্গুণী মুখার্জ্জী
অতিথি সম্পাদক




মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১২

রেজা রহমান

অথচ

কতকিছু হারাও তুমি —
কখনো কলম কখনো চুলের ফিতে

কখনো কোনো কবিতার বই

যা-ই হারাক—
সেটি খুঁজে না পাওয়া অব্দি তোমার সে কি অস্থিরতা
নাওয়া খাওয়া সিঁকেয় ওঠে
চুলোয় চা’য়ের জল ফুটতে ফুটতে শুকিয়ে যায়
অফিসের গাড়ি এসে ফিরে যায়
আর গানের ক্যাসেট হারালে তো কথাই নেই
চেঁচিয়ে মাথায় তোলো সারাবাড়ি

একবার তোমার পুরনো চিঠির বান্ডিলটা
দুষ্টুমি করে সরিয়েছিলাম আমি
মনে হয়েছিল তোমাকে দেখে
সর্বস্বান্ত তোমার মত আর কেউ নেই ভূ-ভারতে

সেই তুমি আজও আগের মতই
সন্ধ্যা হলে খোঁপায় পরো বেলিফুলের মালা
আহ্নিক সেরে তানপুরাটা নিয়ে বসো খোলা ছাদে
তারাদের চোখে চোখ রেখে
সীমার মাঝে অসীমকে খোঁজো আকাশে
হারিয়ে গেল একটি মানুষ একটি পৃথিবী
অথচ—
তাকে খুঁজলেনা একদিনও।


সৈয়দ আবু মকসুদ

বিপ্লবী সমান মৃত্যু চাই

নি:র্ঝঞ্জাট দু:খ চাই
মৃত্যু চাই দূর্বেধ্য

নির্লজ্জ্ব ভালোবাসার চেয়ে
দৃষ্টান্তমুলক ঘৃনা চাই
শরীরী উশৃংখলতাকে উষ্ঠাঘাত করে
সহজলভ্য মিলন চাইনা
জীবন চাই কঠোর আর কঠিন
মিছে স্বান্তনার গোয়াল ছেড়ে
দায়িত্ববোধের হুংকার চাই
বিদ্রোহীসম জীবন না হলে
বিপ্লবী সমান মৃত্যু চাই ।



সৌমিত্র চক্রবর্তী

তবু যেতে হয়

কেউ কাউকে ছেড়ে যাবনা বলে,
কিন্তু তবুও যেতে হয়।
পৃথিবীর যেখানে যত যুগল

যেখানে যত পরিজন
সবাই কোনো না কোনো সময় বলে-
ছেড়ে যাবনা কিছুতেই…!
তবুও সেই ছায়াপ্রান্তর হাতছানি দেয়,
কেবলি ডাকে আয় আয়-
চলে আয়-
নীরব এ প্রান্তমধ্যে কেঁদে যা একাকী…!
নিশ্চিত বিচ্ছেদ জেনেও
সমস্ত প্রেমের গান ভাসে
ভেসে যায় ভুলের স্বর্ণক্ষেত্র চিরে
ভেসে যায় হাওয়ায় হাওয়ায়,
সুগন্ধী চাঁদের আলো
কোনো এক চুপকথার গল্প বলে
সেই সব না দেখা বিচ্ছেদ কল্পনা সেইসময়
দেহ ধারণ করে ঝুপসি অন্ধকারে।



শৈলেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী মানিক

অষ্টপ্রহর

আচ্ছা অনামিকা তুমি কি ভাল আছো ?
আমি অনেক দিন থেকেই ভাল নাই !

আজ এতটা মন খারাপ
তা কোন উপমা দিয়েই প্রকাশ করা যাবে না !
তোমার কি সময় হবে কিছু শোনার ?
আজ আমি বলবো কিছু কথা -
সকাল-সন্ধ্যা-রাত-ভোর ,অষ্টপ্রহর
আমাকে আঘাত করে
কোন এক মানব সন্তান !
আসলে সে পাগলও নয়
তবে মানুষও নয় !
আমি আঘাত দিই না কখনো
ও মানুষ হয়নি বলে !
আমি ভেবে ছিলাম ও হয়তো মানুষ !
না সে মানুষ হতে পারেনি এখনো ।
আর কোন দিন সে মানুষ হবে না !
মানুষের সাথে সহবাস করা যায়
অমানুষের সাথে নয় !
যারা মানুষের মঙ্গল চায় না
তারা তো মানুষ হতে পারে না !

অনামিকা ! আর কী শুনবে বলো ?
আর কথা না হয় অন্য দিন শুনো !




রুদ্রশংকর

ধূলোমাটির বিন্যাস

কান পেতেছি প্রাণ রেখেছি
মাটির ভাষায়
হলুদ-কাঁচা নিষিদ্ধ রাত

হাতের পাতায়
#
হাড়জমানো ভয়ের চোখে
বাড়ল বয়স
সবাই তোরা কণ্ঠে-কাঁটা
বন্ধুটি হোস
#
মা গিয়েছে বোন গিয়েছে
উল্টো পথে
মানুষ-পুরুষ গণ্ডি আঁকে
যৌন-ক্ষতে
#
কান পেতেছি প্রাণ রেখেছি
মাটির ভাষায়
রক্ত আর মাংসকুচি
হাতের পাতায় ৷
 
 
 

অর্কমিতা ভট্টাচার্জি

আরো একটি অসমাপ্ত কবিতা

ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরেই শেষ করে দেব
কবিতার কোটি চরণ ,
তুমি বলেছিলে "রাত্রে তারা ফোটার আগে
ফিরে এস ... এস কিন্তু
এল পি তে চৌরাসিয়া শুনব দুজনে !'

বাড়ি ফেরা মানে কি ?
অনেক চোরাগলি পেরিয়ে
শ্রান্ত শরীর টেনে তুলে
নিঃশব্দ গোপন কুঠুরিতে করোটি ঠোকা ?
সব চতুরঙ্গ ঝেড়ে ফেলে
চুপিসারে পায়ের তলে মাথা গুজে ,
শুধু সম্পূর্ণ সত্য উচ্চারণ !

ডিজেলের ধোঁয়া , জটিল তীব্র যানজট
বড় দেরী হয়ে যায় ...
শহুরে আকাশ ফালাফালা করে দিয়ে
প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে দিয়ে
ফুটে ওঠে সন্ধ্যাতারা
বড় দেরী হয়ে যায় ,
বড় দেরী হয়ে যায় .........

তুমি অপেক্ষা করনি আর
অভিমানে মিশে গেছি
জীবনের পথে ....
ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরেই শেষ করে দেব
কবিতার কটি অসমাপ্ত চরণ

কিন্তু......

দেরী হয়ে গেল বড়

অপেক্ষায় নেই তুমি .....
একটি কবিতা অসমাপ্ত রয়ে গেল তাই ........



মিলি দাস

কথোপকথন


 প্রতিবিম্বের বাঁকা হাসি
 শিড়দাড়ায় কার শীতল স্পর্শ,
 তুমি তো আমি নই!
 তুমি কি মৃত্যু?
 দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে জানান দেয়, না!
 তবে তুমি কি অশরীরী?
 আবারো একই পুনরাবৃত্তি, না
 তবে? তবে তুমি কে?
 অট্টহাস্যে তার প্রতিবাদ, জানো না?
 আমি সেই মরে যাওয়া মানব
 যার দেহে পরজিবির মত বেঁচে আছিস তোরা!
 তোরা? তোরা কারা?
 এক তুই যার মত চলন কথন সবে নাকি তোর অরুচি
 অথচ তুই সেই, সেই নিজে
 তোর সমস্ত অরুচির জিবন্ত প্রতিমূর্তি!
 আর এক তুই, যে আমার দেহটার সাথে
 আমাকে বাঁচিয়ে রাখিস বন্দী করে
 আর, মাঝে মাঝে কেঁদে উঠিস ঘুমের ঘোরে !
 তবে আমি কে?
 তুই আমার হারিয়ে যাওয়া মানুষ,
 চল, আজ তোতে আমাতে
 মরে গিয়ে বেঁচে উঠি নতুন করে!



মুস্তফা কামরুল আখতার

এক চন্দ্রাভিসারী মানুষ ও হিমু-মিসির আলী

হিমু বা মিসির আলির রহস্যময় পথে হেঁটে
জগতের অদ্ভুত রহস্যময়তা ভেদ করে
মানবমনের অতি গভীরে ঢুকে যাবেন না আর,
একজন চন্দ্রালোকিত মানুষ ।
চিন্তাগুলোকে প্রকাশের যে ধরণ চিরকালীন,
তার বাইরে গিয়ে অসম্ভব সরল গলায়
আর কেউ স্পর্শ করবেন না আমাদের মন ।
বৃষ্টিদিনে ভেজা পথে খালি পায়ে হিমু
আর জট ছড়াবে না জটিল মানুষগুলোর ...
মিসির আলি আর দেখবেন না, -
অতি রূপবতী এক মানুষের কী অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক
জীবনের পেছনে এক অন্যরকম চন্দ্রালোক ।
চন্দ্রগীতি গাইতে গাইতে তার চরিত্রগুলো আর দেখবে না,
জোছনা রাতে 'সবাই গেছে বনে' ।
কেন চলে গেলেন ! কেন ! ...

অদেখা এক মানুষ কী ভাবে সত্বায় এভাবে প্রোথিত হলেন ? ...
চোখভরা আর্তি আর জল বলে,
এই জগতের রহস্যময়তার কতটুকুই আমরা বুঝি ?


অনেক লেখা স্মৃতিতে জমতে জমতে ...
একদিন এক মানুষ জীবনে এলেন ।
কতগুলো কালো হরফে মাথার ভেতরে গড়ে ওঠা
এক পথকে বদলে দিতে । দিলেনও ।
অনেক বদলালেন । অসামান্য এক পথ তৈরি করে,
ঝিমঝিম এক মায়াজাল আবার নতুন ভাবে
নতুন মস্তিষ্ক বানিয়ে দিলেন ।

শোনালেন এক অসাধারণ চন্দ্রগীতি,-
'ও কারিগর, দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়য়,
চাননি পশর রাইতে যেন আমার মরণ হয় ।'
জোছনায়, চাঁদের আলোয় ভিজতে ভিজতে
পথে চলার দৃশ্য এঁকে দিলেন,
অপার্থিব সুন্দর, যা নেই তা না ভাবতে ।
ভাবতে, যে ভাবে ঘটে । বোঝালেন, আশপাশ আর
চরিত্রগুলোকে চিত্রিত করতে, আর চিনতে ।

বিন্দু বিন্দু করে এক মোহময় বিভ্রম
আমায় গড়ে তুলেছিল এক চন্দ্রাভিসারী মানুষ ।
একদিন শক্ত হাতে তুলে নিয়েছিলাম বৈঠা ...
এক দুরাভিমুখী জলের ধারা বেয়ে
ছুঁয়ে দিতে তুমুল জোছনার গা ।
কখন, কে আমার মনে জোছনার
স্বপ্নীল তরলে কষ্ট ভাসিয়ে দিতে শিখিয়েছিলেন !
তার চাইতেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল, - শিখেছিলাম ।

আজ মনে পড়ছে, সজল চোখেও
চন্দ্রকথায় হয়ে ওঠা যায় স্বপ্নচারী অসমসাহস ।
যিনি শেখালেন, তাকে বুকে রেখেই সরল চোখে
দেখে যেতে চাই পৃথিবীর গা বেয়ে পড়ছে
এক শুভ্র সুন্দর কল্যাণের ধারা ।
তিমিরে তীব্র জোছনার প্লাবন ।

( নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদের স্মরণে লেখা )



সিদ্ধার্থ শর্মা

নীলু - সীমান্ত
ভালবাসার মনিকোঠায়

একটি ব্যক্তিগত সংলাপ :

নীলু: সীমান্ত আমাকে বোলবে তুমি - কেন গত পক্ষকাল ধরে আমার আঙ্গিনায় বিষাদ পাখি বিরহের করুন কবিতা শোনায়?


সীমান্ত: তুমি কি জাননা মিলনের থেকেও বিরহ তোমাকে অনেক কাছে টানে আমায়? নিষ্প্রদীপ থেকে তোমার ভালবাসার স্নিগ্ধ আলোকে নিজেকে আলোকিত দেখি ...(নীলু তখন সীমান্তর দুই বাহুর বাঁধনে বক্ষলগ্না তিরতির করে কাঁপা দিশেহারা)

নীলু: তুমি তো অমনি-ই কিছু বলে দাও যাও এখন ছাড়ো .. আমার অবস্থা কি একটুও অনুভব করতে পারো?


সীমান্ত: সংজ্ঞাহীন অচেতন মন্দ্রিত আবেশে / স্বপ্নাচ্ছন্ন লাবন্যপুঞ্জে মদিরা নেশাতে মিশে / আকন্ঠ নিমজ্জিত প্রতিক্ষণে ভালোবেসে / অবাক অনুভবে সবাক মেঘাছন্ন প্রদেশে ...

নীলু: আমি জানিনা! জানিনা!! জানিনা!!! ... কবিতা ছাড়ো .... আমাকে নির্বাক করে দাও আদরের আবেশে...


সীমান্ত: এসো তবে করে দেই নির্বাক ওষ্ঠে ওষ্ঠ মিলিয়ে / মন পর্যন্ত পৌছে যাব শরীরী গলিঘুঁজি পেরিয়ে (অসম্ভব প্রত্যয়ী সীমান্ত নীলুর শরীরে মন খুঁজতে ব্যগ্র হয়ে পড়ে )

নীলু: আজ তোমার ভালবাসার আদরে ডুববো কবি / দেখব কেমনে আঁকো ভালবাসার ছবি / দিলেম তোমায় শরীরী ক্যানভাস দিলেম মনের রঙ / দেখি কেমনে সাজাতে পারো আমায় হয়ে আছি জবরজং / (নীলুর অসম্ভব সুন্দর দুটি গর্বিত চোখ তাকিয়ে থাকে সীমান্তর মুখে ... ওর লাজে রাঙা গাল / মনে করায় ভৈরবী উষাকাল )


সীমান্ত: দেখ চেয়ে আকাশে উড়ন্ত গাঙচিল / গভীর দৃষ্টিতে তোমার রহস্যের ঝীল / অবুঝ অভিমানী একটি মন / চুরি করে দেখে নেয় তোমার স্বপন / তিল তিল করে গড়ে তোলা তোমার যৌবন / আজ বিধিনিষেধ ভেঙ্গে ভালবাসার তপোবন / ইতি উতি ফুটে ওঠা মৌ মাখা সুগন্ধি রঙ বেরঙ্গি ফুল / সব্বনাসী নেশায় মাতিয়ে নেয় গুনগুনিয়ে অলিকুল / ফেরারী মন আজ দ্বার খুলে অপেক্ষায় গোনে প্রহর / তৃপ্ত হতে ...পূর্ণ হতে অতৃপ্ত অপূর্ণ কামনার কৃষ্ণ গহ্বর / (সীমান্ত অনেক অনেক সাহসী..)

নীলু: এক মুঠো জোছনা এনে দেবো / দেবো এক ঘড়া পবিত্র মেঘের জল / এক বুক ভালোবাসাতে ভরাবো / ভালবাসা পেয়ে ভালবাসা দিয়ে করবো জীবন সফল /

সীমান্ত: তোমায় পেলে - পাই না তল / স্তম্ভিত চাঁদের চোখে জল / জোছনা আমার ঘরে / বিছানা আলোকিত করে / উদ্বেলিত আলোকিত উজ্জ্বল / ভালবাসার পদ্ম কুঁড়ি দুটি / চুম্বন স্পর্শে রোমহর্ষে ফুটি / জানায় সনির্বন্ধ মিলন আকুতি / জাগাতে কিশলয়ী শরীর / সবুজ অবুঝ মন অধীর / উত্তাপের বাষ্পে সৃষ্টি করবো মেঘ / পুঞ্জিভূত আকাঙ্খিত মিলনের আবেগ ...


নীলু: প্লিজ সীমান্ত আমাকে এভাবে আদর দিয়ে পাগল কোরনা তুমি - শেষে পাগলিকে সকলে .....(নীলু অধীর)


সীমান্ত: পাগলামি যদি বিন্দাস পাগলামি হয় - বিশুদ্ধতায় পাগলি আমার সবচেয়ে প্রিয় ...../ তাকে নাইয়ে খাইয়ে চুল আঁচড়িয়ে - কপালে সব্বনাসী লাল টিপ এঁকে দিয়ে - ঠোঁটে গাড় লিপস্টিক দিয়ে লাল ঠোঁটের টিয়া করে আমার মনের সবুজ বনে ছেড়ে দেই - সে মনের সুখে উড়ে বেড়াক - ঘুরে বেড়াক পাগলামিতে এরকম অনুভব পাই তাতেই আমি নিজেকে খুঁজে পাই ...

নীলু: অবুঝ মনে সবুজ টিয়া / সবুজ বনে অবুঝ হিয়া / এত কেন ভালোবাসো - এত কেন কাছে ডাকো? / কল্পনাতে কাছে আসো - আমাকে কি স্বপ্নে দেখ?


সীমান্ত: তুমি স্বপ্ন নও - তুমি স্বপ্নিল / তুমি ভালবাসা-র ঝিল / তোমাতেই ঝাপিয়ে পড়ে উড়ন্ত শঙ্খচিল / তুমি কল্পনা নও - তুমি কল্পিত / তুমি আহ্লাদিতা নারী চুম্বিত / অস্থিরতা কাটাতে আবেগে মথিত নিস্পেষিত / তোমাকেই আঘাত করে বারবার দুরন্ত শঙ্খচিল / চুম্বন পান শেষে ভালবাসার যন্ত্রনায় তুমি নীল


নীলু: আমি নীলু - আমি সীমান্তর নীল আকাশ ... আমি সীমান্তর নিশ্বাসের বাতাস সীমান্ত: তুমি আমার প্রতিবিম্ব - তুমি বিশ্বাস ... তুমি উচ্ছ্বাস ....তুমি এহসাস ...


সীমান্ত: চাঁদ না ছুঁয়ে বুঝিনি উত্তাপ / সূর্য্য চিরদিন-ই আমার কাছে নিরুত্তাপ / চাঁদের সারা শরীরে আমার ভালবাসার ছাপ ...

নীলু: তুমি একটি আস্ত বদমাস! সেই সন্ধ্যেটা আজও মনে আছে? , সেই চাপ আজও মনে আছে?.


সীমান্ত: উজ্জ্বল নীলাভ সন্ধ্যায় / সিক্ত বসনে আহ্লাদী ভালবাসায় / এলো চুলে ঢাকা দেহবল্লরী সীমা রেখায় / আজ-ও আমাকে উদ্বুদ্ধ করে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখায় ...

নীলু: তুমি কি জানো? রোম রোম শিহরণে কেঁপে কেঁপে ওঠে / আজও প্রথম দংশন স্পর্শ পাই আমার ঠোঁটে [:)]


সীমান্ত: তুমি থাকো ... তো ঝিমলী সোনাল জড়িয়ে আমার সাথে / বৃষ্টিতে ভিজে তোমার সাথে মন জড়িয়ে থাকে পাকে পাকে / টুপ টুপ ঝরে পড়া শিশির কিংবা মন কেমন করা জোছনা আলো / তোমারে আপন করে কাছে টেনে নিল - আরেকটু আদরে ভরে দিলো - ভালোবাসাতে ভরে নিল ...


নীলু: সীমান্ত আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে / আমার মনের কথা তোমার মনে কেমনে প্রকাশ পাচ্ছে / এক ছুটে তোমার কাছে পৌছে যেতে ইচ্ছে করছে ...

সীমান্ত: সোনাই দিঘী ... আমার কাছে এসো... আমার বুকে এসে মেশ ... নীলু: আর-ও কত কাছে চাও আমায়? / কেন বার বার এভাবে আমায় জড়াও? ...

সীমান্ত: ঠোঁট ছুঁয়ে দেই চোখে / পৌঁছে দেই প্রেমের অমৃতলোকে...

নীলু: আমার সব কান্না ধুয়ে নাও তোমার ঠোঁট দিয়ে / এভাবেই থাকো শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে / তোমার সরলতা দিয়ে জটিলতার আবর্ত থেকে সরিয়ে / সব অনুভব সব পুরুষ আমার মনে ঝরিয়ে / দাও আমায় কানায় কানায় পূর্ণ করে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভরিয়ে / আমি নারী - এই অনুভব ভীষণ ভীষণ মনে করিয়ে ...

সীমান্ত: ভালবাসা আমাকে জটিলতা ছেড়ে সরল হতে শিখিয়েছে / পাহাড়ি নদীর মত স্বচ্ছ সুন্দর প্রবাহ দিয়েছে / ভালবাসার নীলু মনকে কাছে টেনে নিয়েছে / হারিয়ে যাওয়া জীবন আবার আবেগ ঘন অনুভবে ফিরিয়েছে ...

---

 

ঋত্বিক দাসশর্মা

শুধু স্রোতে ভাসা...তুমি আর আমি মিলে...হাতে হাত রেখে ছিলে...জার নাম কিছু নয় ...এক টুকু ভালবাসা...

অনুভব
এঁকেছেন ঋত্বিক দাসশর্মা



অনন্যা ভট্টাচার্য্য


মালাবদল
এঁকেছেন অনন্যা ভট্টাচার্য্য


ঝুমা মজুমদার

তামসী 
এঁকেছেন ঝুমা মজুমদার



 একান্তে
এঁকেছেন ঝুমা মজুমদার



নৈসঙ্গিনী
এঁকেছেন ঝুমা মজুমদার




সন্দীপা চক্রবর্তী

ক্ষতি কী?

হৃদয় খাতার... কবিতার পাতায়.....
উঠেছে আজ কোলাহল
লাগে যদি খুঁনসুটি... একটু-আধটু...
নাই বা হোক বেশী
ক্ষতি কী?
স্বপ্নভেলার পাশে পাশে
খানিক কাছে এসে.. ছুঁয়ে দেখে...
ভালবাসা গায়ে মেখে...
যদি হই মু্গ্ধ
ক্ষতি কী?

আধ খাওয়া কফি কাপ
কখনো আমি ডুবি... কখনো তুমি ডোবো
মন হারিয়ে খুঁজে পাই
যদি পাই স্পর্শ
না বলা কিছু কথার শব্দ
লুকোচুরি... ভালবাসাবাসি
ক্ষতি কী?

সুদেষ্ণা চ্যাটার্জ্জী

পাখি


চল আজ পাখি হয়ে যাই

ভর দিয়ে ইচ্ছে ডানায় ,

চল আজ কবিতা বানাই

আহ্বান হৃদয় জানায়,

তারা দিয়ে সেজেছিস তুই

কত ফুল গায়ে লেগে আছে

আমি যেন আকশকে ছুঁই

জিতে যাই পৃথিবীর কাছে ।


মুনীর রহমান

নিশি কাব্য


রাতের আঁধারে আমার মনের দুয়ার সব খোলা রয়;

ভেবে নেই ব্রহ্মাণ্ডের তারকামালা তখন আমার আঙ্গিনার ধূলোয় লুটোয়।

নিঃশব্দ চরাচরে জেগে থাকা আমার মতো আত্মাগুলো

খুঁজে ফেরে কালের বাঁধনহারা আগামীর রথ।

অথবা চলে যায় সুদূরে ফেলে আসা কোনও গহীন ছায়াপথ-

যেখানে এখনো ছুটে গিয়ে দিতে চাই নিজেকে বিসর্জন।



শান্তা রানী পাল

আমার আঙ্গিনায় আজ তার পদধুলি পড়েছে


আমার আঙ্গিনায় আজ তার পদধুলি পড়েছে।।
তোমরা কি তাকে চিনেছ কেউ?
সে যে শিউলি ফুলেল শুভ্রতা,
সে যে রক্ত জবার আকুলতা।
সে যে রজনী গন্ধার অভ্রতা,
সে যে গন্ধরাজের শোভার ব্যাকুলতা।
আমার আঙিনায় আজ তার পদধূলি পড়েছে।
তোমরা কি তাকে দেখেছো কেউ?
সে যে দেবতার হাতের সুনিপুণ সৃষ্টি,
তার চোখের তারার অমোঘ দৃষ্টি,
তার মুচকি মুচকি হাসি মিষ্টি,
যেন, প্রকৃতির এক শৈল্পিক কৃষ্টি!
আমার আঙিনায় আজ তার পদধূলি পড়েছে।
তোমরা কি তার কথা শুনেছ কেউ?
সে যে শ্রাবণী মেঘ কন্যা!
শ্যামল ধারা রঙিন কায়ায় প্রেম পাখির রুপংকনা।
লাল রঙা আঁচল তার পদ্ম ফুলের শোভাচ্ছন্না।
কপোল জুড়ে হাসির খেলায় দেহ জুড়ে আলোর বন্যা!
আমার আঙিনায় আজ তার পদধূলি পড়েছে।
সে আজ রক্ত লাল পায়ে, আমার আঙিনা রাঙাতে এসেছে।
মন ভুলানো মিষ্টি হেসে, আমার মন ভাসাতে এসেছে।
লাল পরী হয়ে , আমায় মুগ্ধ করতে এসেছে।
চোখের তারায় স্নিগ্ধতা মেখে, আমার চোখে নিজেকে আঁকতে এসেছে।
ঠোটের কোণে কোমলতা মেখে, আমায় নির্বাক করতে এসেছে।
নিস্পাপ ভঙ্গিমায় প্রেয়সী হয়ে, আজ শুধু তাকেই ভাবাতে এসেছে।
আমার হৃদয় আঙিনায় আজ তার পদধূলি পড়েছে।
“ভালোবাসার দেবী” আজ আমার আঙিনায় এসেছে।।

আলি রেজা

নাক্ষত্রিক দহন


দৃষ্টির সীমানায় ধাবমান পাদুকা
কাদালিপ্ত পায়ে চলা পথ
ঘন লোমে ঢাকা
বুকের উপত্যকায় ভর করে
ভেসে আসে ক্ষুরের আওয়াজ;
ম্যানহোল থেকে উঠে আসার আগে
অশ্বারোহীর ক্ষুরের ঘায়ে
ঢুবে যেতে থাকি
মল-মূত্র পঁচা শস্যদানা
আর কনডম ভাসা কালাপানিতে;
ফুসফুস ভরে শ্বাস নেই
বাতাসে হাপরের হলকা
বুকের ভিতরে উল্কা পতন
অবলুপ্ত আশ্বাসে জেগে ওঠো তুমি,
অনামিকা ছুঁয়ে দেখি
পোড়া হাড়গোড়, কুচকানো ত্বক
চেতনার সমূদ্রে নাক্ষত্রিক দহন।

তুমি ছিলে প্যাপিরাসে মোড়া প্রেম ঘৃণা
ভালবাসার অবরুদ্ধ অভিঘাত
মরা নদীর রুপালি বাঁকে বাঁকে
নিষিদ্ধ লোবানের ধাবমান ধোঁয়াসা।


সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

অর্পিতা

শেষ অনুরোধ


তোমার ব্যবহার জ্বালা ধরাল আমার মনে
তবুও আমি তোমায় ভালবাসলাম মন-প্রান দিয়ে ।
লজ্জার মাথা খেয়ে একদিন তোমাকে প্রশ্ন করলাম ,
ভালবাস কি তুমি
আমাকে ?
বেশ কিছুক্ষণ নিরুত্তর রইলে তুমি,
তারপর জবাব এল অপমান হয়ে ,
অপমানিত আমি ফিরে চললাম আবার একাকীত্বের গভীরে ।
আমার বাস্তবে তুমি নেই , কিন্তু
কল্পনায় – তুমি আছো আর আমি আছি
পাশাপাশি ...
ভালোবাসা মোদের সাথি সেখানে ।
নেই সেথা বিরহের জ্বালা , অপমান আর একাকীত্ব ।
দয়া করে মোর কল্পনায় ইতি টেনে দিও না
এই মোর অনুরোধ ।
আর সামান্য অনুরোধ –
ভালো না বাসলেও ঘৃণা করো নাহয় আমাকে
সেই হবে মোর পরম পাওয়া ।
তবু জানব – কেউ ঘৃণা করে আমাকে
অন্তত মনে করে আমাকে একটিবার
এভাবেই রয়ে যাব তোমার হৃদয়ে ...
অনুরোধ রাখবে তুমি ... ।



প্রান্তিক জসীম

যখন সন্ধ্যা নামে

ঘুমের ভেতর দেখি নদীগুলোর সজীবতা
পায়রা- বিষখালী- বলেম্বর
তোমাদের মিলনধারা বয়ে নিয়ে যায় সাগরে
যেতে যেতে দোল খায় কুমারি পথের বাঁকে
আর ,আমি অপরিনামদর্শী এক
তার চলার ছন্দে কান পেতে শুনি
নীরবতার ও হাওয়ার ভাষা থেকে উচ্চারিত
হয় তোমার নাম
যে আমার অন্তরের গভীরে লালিত জন্মথেকেই।
যেতে যেতে বেতার পাঠায় আমার পূর্বগামী মৃত আত্মাদের
আর বলে যায়, মৃত্যু কিছু নয়;
আন্ধারমানিক নদীর বুকে সন্ধ্যানামা !


অশোক কুমার গাঙ্গুলি

শুভ সন্ধ্যা

বসে থাকি একই দিকে চেয়ে আপনার মনে ,
দেখে যাই শুধু বিহঙ্গের নীড়ে ফেরা ,
বিকেলের রোদ যেন রঙিন আঁচল হয়ে ,
ধরনীর মুখ ছুঁয়ে
যাই সরে ধীরে ধীরে অলস আলিঙ্গনে ...

আর ভেবে যাই বাঁধা পরে আছি দুইজনে ,
কোনো দিন ডানা মেলে ভেসে যাব দোহে
সুদূরের দেশে , নিয়তির অমোঘ নিয়মে ...



শুভ বাবার

উত্তরবিহীন প্রশ্নের উত্তর আমি ভয়ে খুঁজিনি

উত্তরবিহীন প্রশ্নের উত্তর আমি ভয়ে খুঁজিনি
অদ্ভুত এক শূন্যতা গোটা তল্লাট জুড়ে
নৈরাশ্যের কথা বলতে চাইনা,উপমায় অজস্র জলপ্রপাত

কপাল থেকে চিবুকে হৃদয়ে ভাসে শুধু চূর্ণ কষ্টের গুঁড়ো।
ব্যস্ততা যখন তুঙ্গে নগরজুড়ে ছায়াসঙ্গী স্বার্থপর ভালোবাসা ৷

অন্ধকার থেতলে দিয়েছে অপূর্ন ইচ্ছা গুলো
ইদানিং অর্থহীন মনে হয় দিনগুলোকে
কোণঠাসা ভাবনা চিন্তার দুমড়ে মুচড়ে চটকে যাওয়া
রমণ সুখের উষ্ণতা প্রথাগত নিয়ম ব্যাখ্যা চায় না
যে সভ্যতায় আত্মসচেতনতা মেলে দেয় নিউক্লিয়ার ছোট্ট সংসার
পর্দা ফুঁড়ে ঊরুর জিজ্ঞাসায় বারংবার টুটি চেপে ধরে পরিত্যক্ত চুল্লী
অক্সিজেন খুঁজে স্থূল মানবেরা থালায় থৈ থৈ রাত
আধাঁরে একগলা যুবক যুবতীর উড়ছে বেলুন জমালো ভেজাল
দর্জির আঙ্গুল ভীরু গর্ভে কাঁচি ছুঁড়ে দিলে পূর্ণিমাচাঁদ নাড়িটান
প্যান্টে ফলেছে থিরথিরে চোখ মালিকের বাড়িতে গোলাপবাগান ৷

সর্পনখা-নাভির জন্মতিল নখের প্রান্তবিন্দুতে যৌনঘ্রাণ
সজন্মা ঘাস কস্তুরীজল
আঙুলের জ্যামিতি আরও নিচে সবজি-হরিণ
ঘামের নিজস্ব আকুতি
অবিরল উচ্ছ্বাসে পাথর চাপা সময়েও চিড় ধরে
বিলম্বিত স্বর্ণালী রোদের অপেক্ষায় রাত্রিরও ক্লান্তি আসে,
গাছ চুঁয়ে পড়ে শীতল আনন্দ
রসের কলসে অব্যবহারে মরচে পড়া
শব্দবন্ধ নড়েচড়ে হয়তো ওরই আচ্ছাদনে পেয়ে যাবো
হারানো রূপোর চাবি গোছা
বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে কষ্টের কাহন
ঋতুরা হঠাৎ এসে হঠাৎ
হারিয়ে যাচ্ছে ছায়া হয়ে ইচ্ছেহীন বসে থাকি ৷
জলহীন নদীর পারে--রঙহারানো জীবনের গল্পে, অনন্তকাল।

প্রতিদিন চিত্রকল্পের বদলে
রচনা করি অগণন কল্পচিত্র রুপটান
রাজঁপরিবারে রুপ কথার রাখাঁল সেজে চিৎকার করি বাঘের আগমনে
হায় অন্ধ কোকিল কাকের
বাসায় ডিম পেড়ে গেয়ে উঠিস কুহু-কুহু সুরে
আসলে আমরা জ্যোৎস্নার আগুনে রান্না করি গহীন অন্ধকারে
আমরা আসলে কাক তাড়াবার ছদ্দবেশে প্রতিদিন জ্যোৎস্না তাড়াই ৷


অনন্যা ভট্টাচার্য্য

পাখী

এক কুচি মেঘ
দুই পাটি রোদ্দুর
এক ছিঁটে মন
চাইছে সমুদ্দুর ।
এক চালা ঘর
টালি বলছে , “দ্যাখো - ”
এক ফোঁটা মেয়ে –
বালি দিয়ে সাঁকো ॥

স্বপ্ন আর খিদে
বাড়ছে একান্তর , -
তাল-গাছ কই মা ?
আমি উড়ব রাত-ভোর ॥


মৌ দাশগুপ্তা

অথ অহি – নকুল কথা

অহিভূষণ ঘোষ আর নকুলচরন বোস,ছেলেবেলার বন্ধু। এক পাড়ায় বাস,এক স্কুলে,এক ক্লাসে পড়াশুনো,এমনকি শ্বশুরবাড়ীও একপাড়ায়। সুজনেরা বলে “মানিকজোড়”। দূর্জনরা অবশ্য আড়ালে বলে “ভাবের ঠেলায় কাঁথা ছেড়ে আর কি”। তবে মোদ্দাকথা অহিভূষণ ঘোষ আর নকুলচরন বোসের,ছেলেবেলার বন্ধুত্বটা এখনও টিঁকে আছে। সম্প্রতি তো কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে ওনারা নাকি বৈবাহিক সম্পর্কে বাঁধা পড়তে চলেছেন।অহিভূষণের ছেলে অজয়ের সাথে নকুলচরনের মেয়ে নম্রতার বিয়ের কথা চলছে।

এবার একটু অজয় নম্রতার কথা বলি। অজয় হলো বাড়ীর বড়, ওরা দুই ভাই,অজয় আর বিজয়, অজয় চশমা পড়া পড়ুয়া মানুষ, সারাদিন এই বই থেকে ওই বইয়ে তার দু’চোখের, ছুটোছুটি। আর নম্রতা ? নকুলচরনের ওই একটিই মেয়ে,আদরে আদরে একটু বিগড়নো, জিদ্দী টাইপের। সারাদিন বকমবকম কথা, কাঁচ ভাঙ্গা খিলখিলে হাসি,বন্ধুদের সাথে আড্ডা। বইপোকা অজয় তার ছোটবেলার সাথীটির এই কিচমিচ স্বভাব দেখেই বোধহয় সে ধপাশ করে তার প্রেমে পড়ে গেছিল। কিন্তু প্রেমে পড়লেই তো আর হলো না,সেটা নম্রতাকে জানাতেও তো হবে, কিন্তু অজয় বেচারা হলো ক্যাবলাচরণ, লক্ষ্মী টাইপের শান্ত ভালো ছেলে। সে কি জানে কি করে মেয়েদের "ভালোবাসি" বলতে হয়? ব্যাপারটা ঠিক সিনেমার মত নয় কিনা! অনেক ভেবেচিন্তে, বন্ধু বান্ধবের সাথে শলা পরামর্শ করে, যেই না একদিন একান্তে পেয়ে নম্রতা কিছু বুঝে উঠার আগেই অজয় নম্রতাকে বলেছে
-“আমি তোকে খুব ভালোবাসি নমি, আমায় বিয়ে করবি?”,
অমনি নম্রতা হাসতে হাসতে উল্টে পড়ে আর কি।বেচারা অজয় তো লজ্জ্বায় লাল।যাই হোক, টানা আধ ঘন্টা খিলিলিয়ে গা জ্বালানো হাসির পর নম্রতা জানালো সে রাজি, তবে একটা শর্ত আছে।অজয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।একটা মোটে শর্ত তো? অত মিষ্টি মেয়ের এইটুকু দাবী তো মানাই যায়।এককথায় ঘাড় হেলিয়ে দিল বেচারা।

এরপর আর কি!! ওরা চুটিয়ে প্রেম করল দু’বছর। অজয় ইঞ্জিনীয়ারিং পাশ করল, একটা ভালো চাকরী পেল। নমি গ্র্যাজুয়েসনের পাট চুকিয়ে মাষ্টার্স ডিগ্রী নিয়ে ব্যাস্ত। এখন আর রোজ রোজ দেখা হয় না ওদের। এই ছুটির দিনে একটু এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি,অল্প গপ্পানো,তারপর মোবাইলে আড্ডাবাজী তো আছেই।দুবাড়ীর মায়েদের প্রশ্রয় তো ছিলোই, বাবারাও দেখেও না দেখার ভান করতেন, অবশেষে অহিভূষণ বাবু একদিন ছেলেকে ডেকে পাঠালেন,স্বভাবলাজুক অজয় তো লজ্জাতেই মরে আরকী। তা ওর বাবা ছেলের লজ্জারাঙ্গা মুখের দিকে অপাঙ্গে তাকিয়ে গলা টলা ঝেড়ে কপট গম্ভীর গলায় বললেন,
_'দেখো বাপু, অনেক হয়েছে। পাড়ার লোকে বড় কানাকনি করছে। এবার আমি তোমাদের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই, তুমি কি বলো? নোকলোকে সুখবরটা তবে দিয়ে আসি?’

অজয়েরও আর তর সয় না, সেও দৌড়ালো তার নমিকে এই হাতে গরম সুখবরটি দিতে। খবরটা শুনে কিন্তু অজয়ের প্রত্যশামত আবেগে খুশীতে উচ্ছ্ল হয়ে উঠলোনা মেয়েটা, একেবারে পাল্টে গেল। মুখের রক্তিম আভা আরো রক্তিম হয়ে গোলাপি রঙ ধারণ করল। নম্রতার মুখের দিকে ভালো করে তাকালো অজয়,একটু হয়তো অবাক হয়েই,।মেয়ের দুষ্টু মুখে হঠাৎই গাম্ভীর্য্যের ঘন ছায়া .অনেকদিন আসলে নম্রতার মুখের দিকে এমনভাবে তাকায়নি অজয়, মেয়ের চাউনিতে অন্যরকম একটা কিছু খেলা করছে।এ যেন ও র চেনা নম্রতা নয়। এই অন্য কেউ যাকে ও চেনে না কিংবা এমন চাউনির ভাষা ওর জানা নেই।ও মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল,হয়ত ভাবলো বলবে কি বলবে না, অথবা কি বলবে সেটাই বোধহয় মনে মনে ভেবে নিলো। কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে বলল
-আমি বিয়ের পরে তল্পিতল্পা গুছিয়ে শ্বশুরবাড়ীর কনে বউটি সেজে থাকতে পারবো না অজুদা, বাবা মাকে বুড়ো বয়সে দেখবে কে? আমার তো অন্য ভাইবোন নেই। বিয়ের পর এবাড়ী ও বাড়ী যাতায়াত চলবে,পাশাপশি তো বাড়ী।কিন্তু বিয়ের পর বাবা মাকে ছেড়ে পাকাপাকিভাবে অন্যকোথাও থাকতে পারবো না।তুমি বাড়ীতে কথাটা বুঝিয়ে বোলো। আর হ্যাঁ, এটাই ছিলো আমার শর্ত,তুমি কিন্তু শুনতে চাওনি,না শুনেই হ্যাঁ বলে দিয়েছিলে।

আচমকা নম্রতার এ হেন শর্ত অজয়কে সপাটে বাস্তবের জমিতে আছড়ে ফেললো, রীতিমত চিন্তিত করে তুলল। এমনটা তো সে ভাবে নি, এরকম হয় নাকি? হওয়া সম্ভব? বাবাকে ও ভালো চেনে, প্রস্তাবে আদৌ রাজী হবেন না। কিন্তু আবার নমির মুখের দুষ্টু মিষ্টি হাসিটুকু মুছে যাক তা ও চায় না ।নমিকে ছেড়ে থাকাও অসম্ভব। কিন্তু যে কি করবে এখন সেই চিন্তায় ছটফট করতে লাগলো বেচারা, আক্ষরিক ভাবে এখন ওর দশা, শ্যাম (উপসসস্, রাধা) রাখি না কূল? ।

দু’বাড়ীতে হুলুস্থুল পড়ে গেল। তারপর? তারপর আর কি! নম্রতার শর্ত মেনে দু’বাড়ীর গিন্নীদের আর নকুলবাবুর ঐকান্তিক আগ্রহ ও সম্মতিতে এবং অহিবাবুর চুড়ান্ত বিরোধিতা ও অসম্মতিতে বিয়েটা হয়ে গেল বটে তবে কিনা অহিভূষণ ঘোষ আর নকুলচরন বোসের,ছেলেবেলার বন্ধুত্বটা এখন আক্ষরিক অহি-নকুল সম্পর্ক হয়েই দাঁড়িয়েছে।

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১২

দুর্গা রায়

তড়স

ওই যায় হাসনের একতারা বলাকার মন নিয়ে
বাউলিয়ানায় মশগুল !

মন চোরা , দেহ ঘড়ি বাঁধো হৃদি পাশে , আহত পিপাসা
ঠোঁট থেকে ঝরে পড়ে ।

আট কুঠুরি নয় দরজা
কতো প্রাণ এই হৃদে
শুধু ও- ই জানে ।

ফেরাও ফেরাও ওকে
গহীন চোখে চেয়ে চেয়ে
পোড়ালো সাধের ঘর তামাটে তৃষ্ণায় ।

কোন আহেতুক নদী যেন ধুলো মাখা জলে
বানভাসি মানুষের স্বপ্ন না আঁকে

তাই একান্ত সোহাগে
লুকিয়ে রেখেছে সাধক চাবির গোছা
গেরুয়া জামার আস্তিনে ।

কেমন ধারা যেন হাসনের প্রেম
সব কেড়ে নেয় , শিউলি এনে শরৎ এনে
ভরা শাওনে চাতক এনে ।

চাঁদ সমাগত , তাও নিশ্চিত হয় না
লতা গাছের মতো গুটিগুটি তবু
আশ্বাস ছুঁয়ে দেখে

ওর বাউল চোখে মানুষের মন
পিছলে যাবে পা ,
আর এগোস না উড়াল পাখি
পড়িস না নিজ ফাঁদে ।

তোর সাথে ভিন গাঁয়ে নিশীথ যাপনে
সব ভুলে দিগন্তে উল্কাপাত মাঝ রাতে

উথাল পাথাল তড়স
অনুগত হওয়ার তড়স
ভালবাসার তড়স
আকুল নীল শিরায় বয়ে যাওয়ার তড়স
চিবুক আঙ্গুল ঠোঁট ভিজে যায় তড়সে তড়সে

কাঁধে কাঁধ , আঙ্গুলে আঙ্গুল
ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াও হাসন রাজা

নইলে উথাল বুকে , তুকতাক গুণ বশ
তড়স পাগল হব বুঝি আজ ।

এক মুঠ আকাশের তড়স
অনন্য বাতাসের তড়স
বাউল রূপের তড়স

ঘর নেই , ঘর নেই ,
বাউল ডানা থেকে খসে পড়ে
শীত গ্রীষ্ম বর্ষা হেমন্ত ভৈরবী সুর ।

দাঁড়াও হাসন রাজা
হাত ধরো ..................।



কাশীনাথ গুঁই

মেহেরবানী

আমি খুব অযোগ্য একটা জীবন।
যতবার জীবন অঙ্ক কষেছি
যোগফলে শূণ্য ছাড়া কিছু মেলেনি ।
আসলে অঙ্কটাই শিখতে পারিনি
শূণ্যের সাথে শূণ্য ছাড়া
কোন যোগফলে শূণ্য আসে নাকি।
তবু বারবার একই ভুল করেছি।
তবু আমাকে কেউ মানুষ বলবে
আশা নিয়ে আহাম্মকির চূড়ান্ত করেছি।
আজ ওগো সৃষ্টির মালিক
একটু মেহেরবানী করবে কি।
মানুষ নামটা মুছে দিয়ে
সৃষ্টির মর্যাদা রাখা উচিৎ নয় কি।



দীপাঞ্জন গাঙ্গুলী

কল্প মন  

সময়ের মায়াজালে বন্দী সবাই, একটা ট্রেন,
একটা রিকশা-এই তো রোজনামচা
কফির কাপের প্রেমে পড়তে চাই আবার,
কিন্তু পারিনা
চাই সেই ফাঁকা রাস্তা, জানি ট্রাম নেই, বাস নেই, নেই কোন ইমারত...
পাখির কলোরব, শিশুর ক্রন্দন যেথায় ঘুম ভাঙ্গায়,
নিয়ম ভাঙ্গার খেলায় যেথা মেতে ওঠে মন,
যেথায় ব্যস্ততার লেশমাত্র নেই,
নেই নিরাশক্ত ইমোশনের কচকচানি,
যেখানে নেই কোন লক্ষন রেখা,
নেই কোন অতিবাদির হুংকার,
যেখানে আছে পাগলা দাসুর মত্ততা,
খাঁচার পাখির বনের পাখি হওয়ার আর্তি,
শিশির ভেঁজা ঘাস যেখানে শিহরণ জাগায়,
সোনার পাথরবাটি যেখানে এক 'অদ্ভুত সুন্দর' বাস্তব।।


সুদেষ্ণা বন্দোপাধ্যায়

তোর কোলে মাথা রাখবো সমুদ্র

সমুদ্র পাড়ে বসে লিখছি তোরই নাম
সাক্ষী রইলো তোমার মুছে দিয়ে যাওয়া ঢেউগুলো
ঢেউএর গর্জন আজ বড়ই এলোমেলো,
যেন তোমারই অগোছালো হৃদয়ে স্পন্দন।
এক উচ্ছাস ঢেউ আছড়ে পড়ে পায়ের কাছে,
আর তোর স্মৃতি ভেজায় এই দু'চোখ
'সমুদ্র' তোকে শুধুই দেখি
কেন তোর মাঝে হারাতে পারিনা বলতো?
যতবার দুর থেকে তোকে দেখেছি
খুঁজে পেয়েছি নীলাভ বিষ রাশি...
কিন্তু ছুঁয়ে দেখেছি তুই ও স্বচ্ছ ওর মনের মত
তুইও আজ বহুদুরে, চাইলেও ছুঁতে পারিনা তোকে
বারে বারে তাই তোর কাছেই ছুটে আসি,
তোকে একবার দেখার জন্য
তার কথা মনে রাখার জন্য
তুই মনে করিয়ে দিবি তো তাকে আমার কথা?
বলবি তো আমি পাই তার চোখে অসীম সাগর?
হয়তো সে আসবে একদিন তোরই বুকে,
স্রোতের টানে ভাসতে ভাসতে...
ততোদিন অপেক্ষায় পড়ে থাকব তোরই কোলে।
দেখা করিয়ে দিবি তো তুই ওর সাথে?
একবার ... শুধু একবার
সেদিন তুই আর নিরবে থাকিস না,
মত্ত হয়ে যাস আমার মত
তোর কোলে মাথা রেখে খুব কাঁদবো সেদিন,
আর নিঃশব্দে মিশে যাবো তোরই মাঝে,
কেউ জানবেনা সেদিন... কেউ না...
আমি ঘুমোবো তোর বুকে খুব নিশ্চিন্তে,
সারা জীবন, প্রত্যেক ঢেউ এর আদরে...


ইন্দ্রানী ব্যানার্জি

পৃথিবী


পৃথিবী হটাত ছোট হয়ে গিয়ে বোকা বাক্সে বন্ধ
থমকে গিয়ে বদলে দেয় গতি
পৃথিবী কখনো আমার মতই তোমার নেশায় অন্ধ
লাভের পাল্লা তোমার দিকে আর আমায় দিলে ক্ষতি !

পৃথিবী কখনো শ্রান্ত পথিক ,
ভ্রান্ত মনের দাস
পৃথিবী কখনো সলিল সমাধি
দমকা খুশির উচ্ছাস !!

পৃথিবী কখনো ক্রোধী কামদেব
দাবানল বারো মাস
আগুন লাগায় মনের গভীরে
শিরায় শিরায় সন্ত্রাস !!

পৃথিবী আসলে শিরোনাম হীন
নগর বাউল হায়
পৃথিবী আসলে আমারিই মত
তোমাকেই-ই শুধু চায়!!



ঝুমা মজুমদার

অন্য সাধনা

আমি চলন্তিকা ,
চলেছি এক টানা .........
চারু ভাস্কর্যে এঁকেছি জীবনের খণ্ড চিত্র ,
করেছি মৃত্যু সাধনা !


রক্ত দিয়ে গড়েছি মূর্তি ,
বহুকাল ...সহস্র বছর ,
চেয়েছি নরকের ,শ্রেষ্ঠ বিচার ...
কেটেছি বালিতে ,সহস্র আঁচড় !

মৃত্যু আসে নি ।
পেলাম শুধু ,বেঁচে থাকার অধিকার ,
চাই না আমি এমন জীবন ...
"প্রতিনিয়ত মৃত্যু " আসে যেখানে বার বার ।।



শান্তনু মৈত্র

বৃষ্টিপাত আর এলোমেলো রবীন্দ্রনাথ

অঝোর বৃষ্টিপাতে এক পলক তোমায় দেখা ,
সেটাই বুঝি গল্পের শুরু !!
নাকি সেটাই শান্ত আকাশে এক চিলতে বিদ্যুৎ ??
পৃথিবী তোলপাড় করেছি আমি মুক্তির আশায় ...
একটু একটু করে লিখে রেখেছি ধ্বংসের আলাপ
নিস্তব্ধ আষাঢ়ের দুপুরে ... কলঙ্কের শেষ পৃষ্ঠায়।

অত্যাচারীর বন্য সোহাগ, শুধু তোমার জন্য
হারিয়ে যায় নির্বিরোধী স্কাইস্ক্র্যাপারের আড়ালে ,
দুঃখের সন্তাপ আর নিঃসীমতায় হারিয়ে যেতে যেতে
সৃষ্টি হয় আমাদের অলিখিত মৃত্যুরহস্য ।
এমন বৃষ্টিতে মুছে যেতে থাকে শুকিয়ে যাওয়া জলের দাগ ...
বদলে যায় একটা বেরঙ্গীন সম্পর্কের ইতিবৃত্ত
আমরা রাস্তা ভুলে চলতে থাকি নিরুদ্দেশে
অক্ষমতায় খুঁজি রবীন্দ্রনাথের গান , অঝোর শ্রাবণে
হারিয়ে যেতে থাকা “বজ্র মানিক দিয়ে গাঁথা” আষাঢ়ের মালা ।।


শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১২

কল্পনা ভদ্র

একটি গর্ভস্থ শিশুর আর্ত্তনাদ :

মা,আমাকে বাঁচাও। এই বিচিত্র সমাজে বিচিত্র সব মানুষ,যাঁদের সঙ্গে তুমি বাস করো। আমি তোমাকেই চয়ন করেছি আমার মা রূপে। তোমার উপরে প্রচণ্ড চাপ, যাতে তুমি পুত্র সন্তানের জন্ম দাও। কিন্তু মা আমি যে তোমার গর্ভে এসে গেছি,তবে আমি পুত্র নই,কন্যা। তুমি অকালে গর্ভপাত করে,আমার বিকৃত দেহকে পলিথিনে মুড়ে, ঐ দুরের ডাষ্টবিনে ফেলে দিয়ো না। এক মায়ের অনেক সন্তান থাকে, কিন্তু এক সন্তানের জন্মদাত্রী মাতা শুধু এক জন ই হয় ... আমি তোমার স্নেহভরা কোলে আসতে চাই ....তুমিই একমাত্র আমাকে বাঁচাতে পারো সমাজের এই দস্যুদের হাত থেকে। আমি কথা দিচ্ছি, একদিন আমি পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজের মুখ ভেঙ্গে দিতে তোমাকে সাহায্য করবো। পৃথিবীর কাউকে খুশি করি বা না করি, তোমাকে আমি অবশ্যই খুশি করবো।






রাজর্ষি ঘোষ

অবশেষে কবিতারা


অবশেষে বিকলাঙ্গ
প্রমাণিত হল ঈষৎ হাসনুহানা; আজ একটি কবিতা আমায় সৃষ্টি করেছে।
বর্ষার মরিয়া শ্রাবণে অপর্যাপ্ত, যদিও সে আলগোছে গড়ে নিল বিকৃত মুখ।
ম ম করে উঠল পশ্চিমী গলি, জমা জল -ছপছপে কিছু মেঘের মোড়কে।
নাহয় বাতিঘর, তবু অস্তগামী হল শেষ ধ্রুবতারা অনেক স্মিত নির্বাসনে। 

অবশেষে ফুটপাথে
আজ একটি কবিতা অন্তঃসত্ত্বা হয়। সে গর্ভে ধারণ করে শিশু ভারতবর্ষ।
অভ্যস্ত পুষ্প-স্তবক ঝরে ঝরে পড়ে নি আকাশপথে তবুও জেরুজালেম;
এক মুঠো রোদেলা বিদ্রোহী শুষে নেয় ওজোন লেয়ার সাময়িক বালিঝড়ে।
অতএব বেজন্মা পতঙ্গর রূপডানা ছুঁয়ে সাদা মেঘ লিখে দিল প্রজাপতি।

অবশেষে খেলাঘর
যেহেতু জোটে নি কার্বাইড হাতে, একটি কবিতা মেলে দিল ছায়া ক্যানভাস।
অশীতিপর হাতে আঁকা হল নবান্নের গান, শিশিরের কান্না ইতি অশরীরী;
ইতিকথা সাঁঝবাতি হলে ডুবে গেল সুবর্ণরেখা কদমের বনে যদি ভালবাস।
যদি ভালবাস ডুবে যাবে ছই; অনুকূল, প্রতিকূল এবং অনন্ত মহাকাশচারী। 

অবশেষে কবিতারা
নাকচ করে দিলে একটি কবিতা, যদিও বিশুদ্ধ প্রলাপ বকেছিল মস্তিষ্ককোষ।
প্রাচীন অশ্বমেধে কোন জনমেজয়ের রাশ টেনে ধরে আলেকজান্ডারের ঘোড়া
চেঁচিয়ে বলেছিল নিপাতে যাক রোমান সাম্রাজ্য। রাজপথে হ্যামলিনের বাঁশী
কখনো জন্ম দেয় না যিশুখ্রিস্টর। তবে, তবে পথভ্রষ্ট কবিতারাও মানুষ হল না।

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য

প্রেম ও তারপর

- কেমন আছো?
- কে বলছেন?
- জেনে কি হবে? গলা চিনতে পারছো না?
- না!
- মহিলাদের গলা চিনতে পারাটা কি খুব মুশকিল?
- আমি চিনতে পারি না!
- ন্যাকা!
- কি বলছেন এইসব!
- সত্যিই চিনতে পারছো না?
- আপনি কে বলুন তো?
- হুম! আমি চন্দনা নই তবে কল্পনা!
- ..........
- কি হলো? চুপ কেন?
- .........
- লাইন তো কাটে নি! কিছু বলো!
- কি বলবো? যা বলার ছিল, কিছুই তো বলা হল না! চন্দনাও নেই !
- তোমার নম্বর কি করে পেলাম!!!!! এটা জিজ্ঞেস করবে না?
- ...............
- চুপ কেন?
- ভাবছি
- কি?
- এখনও তোমার গলা, আমার কাছে গানের মত!
- হুম! এই বয়সেও বেশ পটানো কথা বলতে পারো!
- ..............
- শোনো, আমার নাতনীর ফেসবুক প্রোফাইলে, তোমায় ফ্রেণ্ড লিষ্টে দেখলাম! আর ওখান থেকেই তোমার সেল নং! ফোটো দেখেই চিনেছি! যদিও , চুল পেকেছে আর বেশ মোটা হয়েছ। গাল- টাল ভেঙ্গেছে।
- ................
- লাইন তো কাটে নি! পাশ থেকে কিশোরের ওই গানটা শুনতে পারছি!
- হুম! কোনটা?
- ওই যে!‍ কোই হমদম, না রহা.......
- ওটা আমার প্রিয় গান!
- যাক! তোমার বয়স তো ৬৮ হলো! চুল পাকলেও মোটামুটি হ্যাণ্ডসাম আছো! মেয়ে সামনা সামনি দেখেছে তোমায়, একটা জিটি তে!
- .......
- আবার চুপ!!!!!!!
- কি হবে, এসব শুনে!
- কেন?
- যখন শুনতে চেয়েছিলাম, তখন তো আমায় হাড়গিলে বলেছিলে!
- ঈশ্বরী পাটনী তো পড়েছিলে!
- ....
- কি হলো?
- না! এমনি!
- নিন্দাচ্ছলে প্রশংসাকে কি বলে?
- জানি না!
- হুম! খুব জানো! তুমিই তো বলেছিলে- ওটা ব্যজস্তুতি অলংকার!
- হবে হয়তো!‍
- একদিন দেখা করো না আমার সাথে!
- কি হবে দেখা করে?
- ছাড়ো তো ওসব! তুমি তো নর্থে থাকো!
- হ্যাঁ
- আমি সাউথে। একটা কমন জায়গা বাছো না, দেখা করার!
- দেখো! সময়ের পরিহাস!
- কি রকম?
- সেই আজো,আমি নর্থ পোল আর তুমি সাউথ পোল!
- কুঁক! কুঁক! কুঁক! কুঁক!
- Call ended!
কিন্তু, ওই যে কথায় আছে না:- যে যায় বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে ! কারণ, সেই পৃথুলা ( বর্তমানে) মহিলার সঙ্গে এই ফোনালাপের বছরখানেক পর পার্ক ষ্ট্রিটে দেখা হয়েছিল। সঙ্গে ছিল- ওনার ১৭/১৮ বছরের সুন্দরী নাতনী। আমাকে দেখে, কুশল বিনিময়ের পর নাতনীর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেবার সময় বলেছিলেন- ইনি ই সেই !   যিনি ফ্রেণ্ডলিষ্টে আছেন আর উনি তোর ‘হলেও হতে পারত’ ঠাকুরদা!
নাতনী তো হেসেই খুন! বলল- গ্র্যানি, তুমি না খুব সুইট! এইরকম লোকের সঙ্গে আমি একটু আড্ডা দিয়ে, তোমাদের পুরোনো প্রেমের গপ্পো শুনবো।
তো, আমরা গিয়ে বোসলাম সিলভার ড্রাগনে।
নাতনী আমাকে বললো- সুইটস, তুমি বিয়ার না জিন নেবে?
আমার তো শুনেই মনটা কেমন করে  উঠলো। তাও একটু লজ্জা ভাব করে, বললাম- দেবে? তা দাও !

আমার কাছ থেকে শুনে নিয়ে, অর্ডার দিল:- দুটো জিন উইথ ফ্রেস লাইম।

একটা কোক! আর তিন প্লেট চিলি চিকেন।
জিন দুটো আমার আর ওই মহিলার জন্য। নাতনী নিল- কোক! আমি ভদ্রতা করে বললাম:- তুমি জিন নিলে না কেন?
উত্তর পেলাম:- আমি এখনও খাই না! খেলে নিতাম। আমার গ্র্যানি খুব লিবারেল। গ্র্যাণ্ড পাও তাই।
নাও! নাও শুরু করো!
বলতে লাগলাম!!!!
তোর গ্র্যানি বেশ সুন্দরী ছিলেন।
বলতেই বাধা!
হোয়াট ডু ইউ মিন? আমার গ্র্যানি, এখনও বেশ সুন্দরী!!
থতমত খেয়ে বললাম:- না! মানে ইয়ে, তখন আরও বেশী ছিল।
বেশ বেশ- নো তক্কো! চালাও পানসী বেল ঘরিয়া
শুরু কোরলাম:-
প্রেম হবার পর বহরমপুরে ( গঞ্জাম, ওড়িশা) পোষ্টিং পেলাম। চিঠিতে তো বটেই, আর কোলকাতায় এলে প্রেমটা আরও জমতো। করে, করে, বেশ চলছিল! হঠাৎ একদিন একটা টেলিগ্রাম তোর গ্র্যানির কাছ থেকে।
“কাম শার্প । মাই ম্যারেজ হ্যাজ বিন ফিক্সড! মিট মি আ্যাট যাদবপুর কফি হাউস আ্যট ওয়ান পিএম শার্প টু ফিক্স দ্য নেক্সট কোর্স অফ আ্যকশানস।”
দুপুরে টেলিগ্রাম পেয়ে, সেই দিন-ই - বিকেলের ম্যাড্রাস মেল ( তখন ওই নামই ছিল) ধরে হই হই করে চলে এলাম কোলকাতায়! ভোরবেলা হাওড়ায় নেমে,চলে গেলাম ঠিক দুপুর একটার সময়! যাদবপুর কফি হাউসের পাশেই একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁ ছিল সেই সময় ( এখনও আছে কিনা, জানি না) টুকটাক অন্য গল্প কোরতে কোরতে তোর গ্র্যানি লাঞ্চ খাচ্ছে, কিন্তু আসল কথা আর বলে না!
শেষ হলে মুখ টুখ মুছে বলল:- শোনো, আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ে হলেই আমি আ্যমেরিকা চলে যাচ্ছি। তুমি না, আজ থেকে আমাকে বোনের চোখে দেখ। আমার মটকা গরম হয়ে গেল! একে তো লাঞ্চের বিল দিয়েছি, তার ওপর বহরমপুর থেকে আসা যাওয়ার খরচ!
বললাম:- কোনো চোখে যদি দেখতেই হয়, তবে আজ থেকে তোমাকে ‘রক্ষিতা’ র চোখে দেখবো!
তোর গ্র্যানি হেসে বলেছিল- আহা চটছো কেন? মশলা খাও!
আমার বলা শেষ হতেই একজন হ্যাণ্ডসাম বৃদ্ধ ঢুকলেন। হেসে হাত মিলিয়ে বললেন- সেল ফোনে আপনার খবর পেয়ে চলে এলাম। আমি প্রেজেন্ট, আপনি পাষ্ট!
সেদিনের বাকী মশলা একটু খান!
বেয়ারা! অওর তিনঠো জিন উইথ ফ্রেস লাইম !

সমাপ্ত

আবির দে

কবিমন - মানালি - আমি

কবিমন চায় পাহাড়ি ঝরনা কে
যে চঞ্চলা হরিণী হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে রুক্ষ মরু বুকে
ঠোঁটের কোণে জ্যোত্স্না মেখে থাকবে … সুখে কিংবা দুঃখে ...
.
কবিমন চায় পূর্ণ শুভ্র চাঁদ কে
যে রুপগুনে হার মানাবে অন্য জ্যোতিষ্ক কে
দূরে থাকলেও মাখাবে ভালবাসা , দেবে কালো কে ঢেকে
.
মানালি ,
কবি সাজাবে কবিতা তার নিজের মত করে
কখনো ভেঙ্গে  কখনো গড়ে ...
তবুও
তুই তোর অন্তরে অমলিন মানালি কে রাখিস ধরে ...
অনুভবের ঝরনায় পরিস ঝরে

রেখে দে তোর মানুষকে আপন করে

মানালি ,
তোর নীল চোখে সতেজতা , স্নিগ্ধতার ছবি
বুকে ঝড় তোলা নদীর জোয়ার
মনে হৃদয় ভাঙ্গা কষ্টকল্পিত রূপ ভাঁটার
তুই শুধুই শান্ত, স্থির দিঘি

নিশ্চুপে কবি মন ডুব লাগাই |


পারমিতা চ্যাটার্জি

মনে পড়ে

আজ আকাশের চোখ ছলোছলো,
মন তাই ভেজা ভেজা,
মন যে কি চায়
মন খুজে চলে
ভেজা আকাশের মাঝে।


তুমি আর আমি কবে ভিজেছিলাম
এই বাদল সন্ধ্যাতে?
মনে কি পড়ে সেই
ভেজা দিনের মাদক রাতের কথা?
ডুং ডুং ডং মাদল বাজনা
আমার দুজন নেশায় মাতলাম,
ডুবে ছিলাম কোন অনন্ত অতলে,
আজ তো সে সব স্মৃতি হয়ে গেছে তাইনা?
তবুও যে মন খুজে চলে
সেই পুরানো দিনের ভাবনা।


আব্দুল্লাহ জামিল

তোমার শহরে
 
অনেক দিন অরণ্যে বসবাস করে
আজ এসেছি তোমার শহরে অজান্তে
এতোটা পরিবর্তন হয়ে গেছে সব
তোমার বাড়ীর গলিপথ চেনা দায় আজ, গৌরী।

এখানে নিয়ম হয়েছে যে অনিয়ম
নীতি হয়েছে দুর্নীতি আজ
সততা মানে বোকামি যেনো
এতো অনাবশ্যক মরণ!
বহুকাল বনে থেকে কান্না ভুলে গেছি।

বসবাসের অনুপযোগী এ’শহরে
ভালো আছো গৌরী?
চলো আমারা অরণ্যে যাই।



সুমিত রঞ্জন দাস

রেট্রোস্পেকটিভ

পাহাড়ের অনেক নীচে মানুষের ঢল
                       ওখানে পাথর নেই
গাছ ফুল পাখি আর জল
আমি পাথর নয়, পাথর চাপা বুকে;

পাহাড়ের ওপর থেকে সবাই মানুষ
                  মুখোশের বালাই নেই
আকাশ দেখা চোখে ফানুস
পাথরের স্বপ্ন নয়, ভোরের সূর্য মুখে;

পাহাড়ের সামনে ধু ধু উপত্যকা মাঠ
                 একা হাঁটা শূণ্যের দিকে
বিন্দু বিন্দু সব দিকচক্রবাল
জ্বলে আর নেভে, আমি ছুঁতে পারি না;

উপত্যকার রাত শান্ত নিঃঝুম নিঃশ্চুপ
                      মানুষ হিমজলে ভেজা
কষ্টহাসি গোপন কঠিন মুখ
ক্যানভাসে সাদা, আমি আঁকতে পারি না;

আমি যে পাহাড় কেটে মানুষ বানাতে পারি না ...



অলক বিশ্বাস

অর্ধেক তুমি

দেওয়ালে হেলান দেওয়া জবা গাছটি
এখনো আছে , ছড়ানো ডালে ডালে ঘুমোলে দুপুর
প্রজাপতি একা একা ওড়ে, ফুল তাকে
আলো করে রাখে নিজেই উল্লাসে ।

ঘুমে আচ্ছন্ন মানুষ জানলায় হাওয়া খায় বটে
দক্ষিণের সেই পথে ঝাকড়ানো আমগাছ কেটে উঠেছে ফ্লাটবাড়ি
সামনের খেলার মাঠে ব্যস্ত অফিস, পাঁচিলে ঘিরেছে সরকার!
ফাঁকা নেই আর, কালবৈশাখী আসে না এখানে !

এখানেই একদিন বৃষ্টিতে ভিজেছিলে
বিনীত মুদ্রায় হেসে, ভালোবেসে
স্বপ্নদুপুর তুমি কুহকবেলা।

এখন সে সব গল্পের মতো, রাস্তার বাঁকে
আলোকিত অর্ধেক তুমি—
রাতের জানলা খোলা ঘরে রবি ঠাকুরের গানে
‌অজস্র রেখা হয়ে গতিময় থেকো।



শাশ্বত ব্যানার্জি

সাড়া

এতক্ষণে ধাঁধাটা পরিষ্কার হল পরাশরের। আবছা কুয়াশার মধ্যে ফুটে উঠছে ছেলেবেলা। রাঙাভাই চৌকির মধ্যিখানে কাঁথাকানির বিছানায় শুয়ে ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে উঠছে। কাঁদছে। কাকিমা দৌড়ে এসে আঁচলে হাতের জল মুছে চাপড়ে দিচ্ছে। আলতো ছোটো ছোটো চাপড়। বুকে। আবার শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে একরত্তি ভাই। যেন পুতুল একখানা। হাঁ করে চৌকির কোণাটা ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পরাশর। মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠছে ভাই।

ও এমন করে কাঁদছে কেন?

সবে মায়ের গব্‌ভ ছেড়ে বেরিয়েছে তো। তাই এখনও মায়ের বুকের ধুকপুকটা শুনতে পায়। আর যেই হারিয়ে ফেলে, ওমনি কাঁদে। তখন চাপড় মেরে থামিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়, ঠাকুমা বুঝিয়ে বলেছিল।

মাথায় একটা জাড় কেটে যাচ্ছে পরাশরের। বৌ বলে পাগল। ছেলে বলে, ঢিলে। কপালে টাটকা কাটাটায় রক্ত শুকিয়ে জমে কাঠ হয়ে আছে। খুন্তি, বউয়ের। কাল সকালেই পড়েছে। পরাশর জলখাবারের জলমুড়িতে একটু চিনি চেয়েছিল। কচি ছেলের মতো ফুটফুটে সকালের রোদ দেখে খুব ফুর্তি হয়েছিল পরাশরে। চড়া-পড়া জিভটা শুলিয়ে উঠেছিল খুব। গরুর দড়িটা হাতে পাকিয়ে নিয়ে উঠোন ছাড়তে ছাড়তে ছেলে বলেছিল, চিনি কেন? একেবারে এইটা নাও না। দড়িটা একটু উঁচু করে দেখিয়েছিল নিতাই। দড়ি, গরু, সন্তান, - তারই। সব তার। ওই ছেলের ন্যাংটোবয়সের নালঝরা মুখের মতোই রোদ। একাবোকা। ন্যাওটা। কেবলই কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে গায়ে। খুন্তির ঘা খেয়ে মাথা ঝোঁকাতেই মাটির ওপর শাদা আলোয় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরতে দেখে হেসে ফেলে পরাশর। কী সুন্দর! কী মিল! রক্তের ফোঁটাটা পড়তেই যেন টাক্‌রায় হালকা আওয়াজ করে শুষে নিল মাটি। বউ, রক্ত, মাটি – সবই তো তার। পরাশর ঝুঁকে দেখতে গেল ...

কাপড়পেটার মুগুরটা পড়েছিল পিঠে। অমন মার এতদিনে গতরে সয়ে গেছে, কিন্তু এই মনজোড়া সুন্দরটা ভেঙে দেওয়ার জন্য খুব দুঃখ পেয়েছিল পরাশর। তারপর যাচ্ছেতাই গালিগালাজ। মর্‌ মর্‌ মর্‌ ... কিসের এত সুখ রে তোর চারধারে ... কুকুরের মতো বাতাস শুঁকে শুঁকে কী খুঁজিস তুই দিনরাত? পাগলের হদ্দ পাগল ... পাগলের ঝাড় ...

বুকটা মাটিতে ঠেকিয়ে অনেকদিন পর শুয়েছিল পরাশর। আর তখনই ওই ধুকপুকটা মাটি থেকে যেন দশহাতে উঠে এল বুকে। নিঃসাড়ে। তবে কি মায়েরই বুকের ধুক্‌পুক্‌?
লোহার লাইন কাঁপিয়ে ঝম্‌ঝম্‌ করে প্রায় এসে পড়েছে ট্রেনখানা। একগাল হেসে খুব প্রসন্নমনে লাইন থেকে গলাখানা তুলে নিল পরাশর।



শিপ্রা হালদার

অশরীরী তুমি


দখিন  হাওয়া  তুমি  বইবে  বলে
এনেছিলাম  মধুক্ষরণ;
আকাশের  অজস্র  তারায়  যদি  ঢেউ  ওঠে
তারা  গুলি  নেমে  আসে  ঘর-এর আঙ্গিনায়
করেছিলাম স্বপ্নচারণ
পথিকের মত খুঁজি পথ
পূর্ণ করতে মনোরথ -
ভিখিরির মত চেয়ে চেয়ে ফিরি
চাতকের মত ছাতি ফাটা তৃশারী
আমার  আকুল  ডাকে  মূর্ছিত  হয়ে
আনবে  তুমি  সুরের  অশরীরী  রথ,
রহস্যময়  পিপাসা অনুভব  জেগে  রবে ।
নিতান্ত  মুগ্ধতা  বসে  নেমে  আসবে চোখ জুড়ে ঘুম
দু  চোখে তোমার অসীম দিগন্ত ছোঁয়া রূপ ধুম
আমি ডুবে যাই দেখতে গভীর স্বপ্ন
তবু  চলে  যাব  দূরে  বহুদূরে
যেথা  শুধুই  বাজে  বসন্তমাদল
যেথা  শুধুই কুহু কুহু গান
বয়ে যায় নির্মল বাতাস সুর লয় তান 
তোমার ভালবাসতেই আমার ভালবাসার অনুসন্ধান
মন ও শরীর জুড়ে অশরীরী তুমি ।



শিবেন মন্ডল

মনকল্প

এখন চাঁদের দেশে তার ঘর সংসার ,
তাই দূর থেকেই পূর্ণ করি হৃদয় ,
কাছে গেলে প্রান খুঁজে পাবো না ,
জানি বলেই দুরত্ব তৈরী অনিচ্ছাতেই ।

আলো আঁধারে চেনা মানুষ,
এক দিন বলেছিলো ,
 "অনিয়মই আমার শৃঙ্খলা "

এখন আমিও ভাবি ,
ঠিক তোমারি মতো
শেষের দিন গুলি কাটবে ।
ধরা বাঁধা নিয়ম তোমার থাক ।
আমার আছে ,থাকবে ,
বাঁধনহীন মুক্ত আকাশ ।
কোন এক শ্রাবনের বৃষ্টিতে যখন
ডানা গুলি ভীষন ভারী হবে ,
শরীর এলিয়ে দেবো মধ্য আকাশে,
প্রানহীন দেহ খোঁজ দিবে না ,
ফেলে আসা অনিয়ম
কষ্ট সুখের দিন ।।



বৈজয়ন্ত রাহা

নিস্ফলা

নদিতে পা রেখেছি যেই, ভেবেছিলাম ভেসে যাবো,
খরস্রোতে আছড়ে পড়ব তলায়।
না,
বরং জল মসৃণ হয়ে গেলো, গায়ে লাগলই না।
আর, রোদ উঠে গেলো।

বৃষ্টি এসেছিল, চলেও গেলো।
রাস্তায় এখন কাদা,
পাশ দিয়ে চলতে চলতে ছিটকে জামাকাপড়ে এসে লাগে,
ধুয়ে দিলে উঠে যায়, শুধু কোনোটা কোনোটা উঠতে চায়না,
বড় শক্ত,
যেন ভারতবর্ষের ম্যাপ ।

এই এখন হাঁটতে হাঁটতে এইসব ভাবছি।
ঘরে ঢুকে তোমাকে লিখব। মেসেজ।
অনেক দূর থেকে চিঠির মতো...
আর তুমি,
বর্তমান আবহাওয়ার খবরের মতো সেইসব পড়বে,
অথবা পড়বে না।
এই যেমন,
আকাশ পরিষ্কার হল, আবার ময়লা হবে বলে,
আমাদের মনের মতো;
বা, আমার পকেটের শেষ দশ টাকাও আমি ওই হিজরেটিকে দিয়ে এলাম,
স্রেফ বিস্ম্রিত এক মায়ায়,
চলতে চলতে আমার জুতোর স্ট্র্যাপ ও আমার থাকতে চাইল না,
কেউই তো এক জায়গায় থাকতে চায় না......এইসব।

আমিতো ভালবাসার কথা বলতে পারিনা
সারাদিন ভাবনার ভিতর মনে রাখতে পারি শুধু...
সেই কথাই , নীল হাওয়ার সাথে তোমার কাছে পৌঁছে যাবে।
সেসময় তুমি হয়তো রাস্তা পেরোচ্ছ, হাতে বাজারের ব্যাগ,
বা, অটো থেকে নেমে বাড়ির দরজার কাছে ...
একবার দেখবে, বা দেখবেও না।
অবলীলায় মুছে দেবে......
আসলে কখনো কখনো দানও নিষ্ফলা হয়, পূর্ণতার কারণে।

তুমি ভালো থেক,
ও, হ্যাঁ,
আর...,
আমাকে দয়া কোরো না।



আরশাদ উল্লাহ

গোমতীর তীরে

গোমতীর তীরে সেই - বন্তোৎসবের দিন
মাধুরী নামে টিয়ারং শাড়ি পরা বিম্বাধরা
এক অনুপসুন্দরী - মেয়েকে দেখে সেদিন
হারিয়েছিলাম তার মাঝে -কেঁপেছিল বুক
দেখেছি তার বিভুসিত - কুসুমমুকুল মুখ
মরিমরি রূপ আর হাসি হাসি দু’টো চোখ।
গভীর সে চোখে চোখ রেখে আমি বিমূঢ় মূক
সে দিনটি ছিল জীবনে আমার মণিকাঞ্চনযোগ।

সে আমায় ডেকেছিল দু’হাত তুলে
গিয়েছি কাছে তার -সবকিছু ভুলে
চোখে চোখে কথা মনে হল কত চেনা
চিত্তে এসে নৃত্য করল নতুন ভালবাসা
বলেছিল সে আমায়, ‘চিনি আপনাকে-
শৈশবে খেলাঘর বেঁধেছি দু’জনে,মনে পড়ে?’
মৃদু হেসে সে আমার বুকে পড়েছিল ঢলে।
বিমোহিত আমি মূর্ত্যন্তর ডুব দেই জলে।

বঙ্গোপসাগরে ডুবে চীন সাগরে উঠে
জাপান সাগর থেকে কুরুশিয় স্রোতে
উত্তর সাগর হয়ে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে
কুড়িয়ে এনেছি আমি লাখো মণিমূক্তা
ভালবাসার মণিহার পড়িয়ে তার গলে
আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেছি মাধুরীকে
ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি তোমাকে।
সেদিন দু’জনের সেই মহাব্যাকুলতা
সুখস্বপ্ন হাস্যমুখে নেমে গোমতীর জলে
নেয়েছি দু’জনে দু’জনার হাত ধরে।
কখন যে কোন ক্ষণে সে নদী পেরিয়ে
মহাউল্লাসে হেঁটে গেছি দখিনের পথে,
তারপর বসেছি দুজন সবুঝ ঘাসের 'পরে
সূর্যাস্তের কিছু আগে নির্জন সাগর কূলে!
অত্যাজ্য কামনা বাসনায় প্রমত্ত হয়ে
মাধুরীর কাছাকাছি যখন একান্ত আমি
সূর্যকে শীতল - করেছে সাগরের পানি।

জীবনের যত জড়তা তার উষ্ণ নিঃশ্বাসে
কখন যে উড়ে গেছে স্নিগ্ধ মলয় পবনে –
সবকিছু ভুলে গিয়ে - সেই সমুদ্র তটে
জড়িয়ে ধরেছি তারে বুকের মাঝে চেপে,
সাগর ঝিলমিল পূর্ণ জোয়ার চাঁদের টানে
মধুযামিনীর মধুরিমার স্বাদ পেয়েছি চুম্বনে।
কখন যে সুখের মাঝে দুঃখ নেমে আসে
সে কথা বুঝার সাধ্য - ক’জনের আছে!
হঠাৎ সুনামি এসে কেড়ে নিল তারে
পারিনি কিছুতেই তারে ধরে রাখতে
চলে গেল ফেলে রেখে একা আমাকে।

চলে গেছে তবু সে আছে এ বিদগ্ধ বুকে
সেই চোখ সেই মুখ সেই মণিকাঞ্চনযোগ
জীবন চলার পথে যুগের পর যুগ।
সব পাখি বাঁধে নীড় নতুন বসন্ত এলে
সব পাখি ব্যস্ত থাকে নতুনের আগমনে।
বাঁধন হারা এ জীবন, ঘুরি শহরে নগরে
ভুলতে যে পারিনা আমি কিছুতেই তারে।

থেমে তো যায়নি আজো গোমতীর স্রোত
এখনো এই দিনে ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে
সোণাল, কৃষ্ণচূড়া, শিমুলের বিম্বিত রূপ
দেখি সবই আছে যায়নি তো কিছু মুছে,
আছে হিলাময় গঙ্গা মেঘনা পৃথিবীর বুকে
সব নদী বনভূমি সাগর মহাসাগর
বয়ে যায় নদীর জল বছর বছর।
সবই আছে চলমান এই পৃথিবীর বুকে
শুধু সে নেই কাছে, সে যে চলে গেছে
নিয়ে গেছে তারে চিরতরে সুনামি এসে
জানি সে আর কভু আসবে না ফিরে
স্মৃতিটুকু আজো তার প্রদীপ হয়ে জ্বলে
আমার এ মন কাঁদে খুঁজে খুঁজে তারে
প্রতি বসন্তোৎসবে এ গোমতীর তীরে ।।



ফারহানা খান্নাম

তোমায়


তোমায় সাজাই কবিতার শব্দ-ছন্দে - অলঙ্কারে
চন্দ্রকলার মতন
শব্দ শুভ্র মেঘেদের লুকোচুরি খেলা
মনের আকাশ জুড়ে।

ছন্দরা এলোমেলো তন্দ্রাভঙ্গ বিক্ষুব্ধ
তবুও অতিন্দ্রিত চোখে কিছু স্বপ্ন
জেগে থাকে
চেতনায় আলো - আঁধারি ভাবনায়,
ছায়ায়, তরঙ্গে।

যেন ভোরের বাতাসে ভেসে আসা চেনা ফুলের
অচেনা সৌরভ।

জীবনের আনন্দ-উৎসব আর বিষন্ন কান্নার
গভীর থেকে আসে কবিতার শব্দমালা
নিজের কাছে নিজেই অনতিক্রম্য
নিশ্চল আবেগহীন।

তোমাকে যতোই সাজাতে চাই শব্দ -ছন্দ অলঙ্কারে
তুমি মূর্ত আপন অহঙ্কারে |



সাইদুর রাহমান মিলন

খুঁজি তো ! চল্‌ !

ভূত্‌ কি আছে রে ? বিশ্বাসে ভূত্‌ ।
যাস্‌ একা রাতে ? বাঁশ তলা !
তেমনি প্রেম এক ভূতের গল্প
রাখে মশগুল 'আশ্‌' তলা ।

মানব মানবী প্রেম ভালোবাসা
ক্ষণিকের মোহ ! চাওয়া, পাওয়া, আশা
বল্‌তে পাইনা সাহস ও ভাষা
ওটাই তবুও বাঁচার বল্‌ ?

বল্‌ এর ছলনে বাঁচ্‌বি ? বল্‌ ?

সহমর্মিতা, সহাবস্থান, সহবাস আর সহযোগী
এই ই তো তোর সংজ্ঞা প্রেমের !
রাজী তুই ? হতে এই রোগী ?

সহ সহ সহ সহজে যে প্রেম
নাই আমি তাতে, বাদ্‌ দে তো !
সহ মরণেও যাবি ? যদি মরি !
তাই বলি প্রেম নাই যে গো ।

তুই ই বল্‌,
থাক্‌তোই যদি প্রেম বলে কিছু
কাবীন লেখকে ছাড়তো কি পিছু ?
স্রষ্টারও বাণী ভালবাসা প্রেমে
পাস্‌ কি ধর্মে ?

খুঁজি তো ! চল্‌ !



নরেশ মণ্ডল

তুমুল বৃষ্টির মধ্যে

তুমি চাইলে মেঘ
আমি চাইলাম বৃষ্টি
মেঘের গায়ে মেঘ, হুড়োহুড়ি

লুটোপুটি তোমার পছন্দ।
ঝির ঝিরে ঝম ঝমে
বৃষ্টি আমার।

আকাশের মুখভার
অস্থির মানুষজন, কাতর
ফুটিফাটা মাঠঘাট, পুকুর
খাল বিল জলহীন।

তুমি চাইলে মেঘ
আমি চাইলাম বৃষ্টি
মেঘে মেঘে তুমুল হল্লা
নাচন উঠলো গাছে গাছে
পাখপাখালির আর্তনাদ
উড়োউড়ি।

বৃষ্টি নামল
তুমুল বৃষ্টির মধ্যে আমাদের
হেঁটে চলা বিপন্ন পক্ষীশাবকের দিকে
তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ।



সমর কুমার সরকার

যে প্রেম নিকষিত হেম


গিন্নী আমার মাঝবয়েসী,আমি বৃদ্ধ নর,
প্রেম-পিরীতির অভিজ্ঞতা বড়ই ভয়ঙ্কর।

নানা রকম প্রশ্ন,সাথে আজে বাজে কথা,
বুদ্ধি করে রাখতে যে হয়, সুস্থ আমার মাথা।
যদি বলি, ''গিন্নী, আমার মন করে তোলপাড়,"
বলবে, "তোমার এ ছাড়া তো কাজ কিছু নেই আর"।
জানলা গুলো দেখবে আগে, বন্ধ, না কি খোলা,
সময় টা কি রাত্রি গভীর, না কি বিকেল বেলা।
বলবে - "তোমার দাঁত মাজা টা হয়েছে তো ভালো ?
নীল বাতি টা দাও নিভিয়ে, ভাল্লাগেনা আলো।
দাড়ি বুঝি কামাও নি আজ ? গাল যে খোঁচা, খোঁচা,
বুড়ো হাবড়া সবুর করো, এত কেন ওঁচা ?
এ মাসেতে তেল ফুরালো, খেয়ে আলুর দম,
এত করে বুঝাই, তবু খাও না কেন কম ?
চা-য়ের সাথে খাচ্ছো চিনি,টানছো বসে বিড়ি,
দেখেছ কি চেহারা টার হচ্ছে কেমন ছিরি !
এ মা, ছিঃ ছিঃ, ঘামের গন্ধ, দাও নি গায়ে সাবান ?
গন্ধে আমার আসছে বমি, করে এসো স্নান।
উঁহু,উঁহু,এগিয়ো না, পাবে না প্রশ্রয়,
বুড়ো হলেই মানুষ গুলো, এমন ধারার হয়।"
আর যা বলুন, রাত গভীরে করতে হলে স্নান,
ভালবাসা মাথায় ওঠে, থাকে না আর মান।
এমনি ক’রেই যায় কেটে দিন, এমন ধারার প্রেম,
কাব্যে বলে, এ প্রেম না কি “নিকষিত হেম”।


রাখি দত্ত

কবিতার খোঁজে


মনের মত কবিতা খুঁজেছি
মায়ের মাখা ভাতে
ড্রেসিং টেবিলের কাঁচে আটকানো টিপ'এ
বাবার ক্লান্ত মুখে
আর
বন্ধুদের চার অক্ষরে ...

অনেক খুঁজে পেতে
ভূগোলের খাতা থেকে
বেড়িয়ে এলো কবিতা
সেই যেদিন
পড়ার ব্যাচে ডুব মেরে
তোর সাথে গিয়েছিলাম ফুচকা খেতে,
দু'টাকায় পাঁচটা ...

ঘেমো বিছানার চাদরে
লেপ্টে থাকে কবিতা
আর থাকে
প্রেমিকের প্রত্যাখ্যানে ...



সুমিত্রা পন্ডিত

মাধবিলতার কুড়ি

মাধবিলতার একটি ছোট্ট কুড়ি
ঘুমিয়ে আছে তার আপন অন্তরে
সকালের রোদ্দুর রোজ একবার তাকে
উঁকি দিয়ে দেখে যায় ...

বাতাস তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে
জ়েগে ওঠো মেয়ে
বসন্ত আসে যায়
পাখিরা গান গেয়ে গেয়ে ক্লান্ত হল
অবগুন্ঠিতা মাধবিলতা নতমুখি হয়ে রইল
একদিন তুমি এসে দাড়ালে ...

মেঘের ঘননীল বেশ পরে
বাড়িয়ে দিলে হাত
বললে -
আমার সঙ্গে হারাবে ঐ নীল দিগন্তে ?

মাধবিলতা মুখ তুলে চাইল
তারপর তার আপন রঙ্গিন পাপড়ি
অজান্তেই মেলে ধরল তোমার দিকে।



জয়ন্ত সাহা

বিষাদের কান্না

অখন্ড নীরবতায় চুপ করে থাকা ...
অবাক ভাবনায় ফ্যাল ফ্যাল দেখা  ...
জীবন যাচ্ছে সময়ের সরণী দিয়ে বয়ে ......
ফুল হয়ে ফুলেল হয়ে ....
গাছে ফুটে থাকলে -
ভুল কে পারিনা চিনে নিতে ।
মনের দর্পনে নিজেকে খুঁজতে গিয়ে
হুট করে ভুল করে ভুলকে যাই ভুলে -
কুয়াশাস্তর ভেদ করে বেজে ওঠে
অধরা সুখের সানাই ....
বা কেবলই ভুল-ভাল বুঝে -
ক্লান্ত হই ছায়ার সাথে যুঝে;
আনমনে দুলতে থাকে ভালবাসার নাম-ঠিকানা
গন্তব্য থাকে চিরকাল-ই  অজানা
সীমানায় পৌঁছে দেখি সিঁথিতে সিন্দুর এঁকে
অচেনা ডাকপিয়নের থেকে
অসময়ে আসা চিঠি দেখে বিষাদের কান্না ।



নীলাঞ্জনা নীল

প্রথম শ্রাবণ

যদি ভালবেসে বাড়াও হাত,
একটু পেতে তোমার ছোঁয়া ...

আমি বর্ষা হতেও রাজি।

যদি ছিড়েও নাও নিজ হাতে,
তোমার প্রিয়ার জন্য,

হয়ে যাব প্রথম কদম !

বৃন্ত থেকে ছিড়ে নিও তুমি আমায়,
হবো মাখামাখি দু'জনায়।

আজ খুলে দিয়েছি পুরনো বাঁধন,
ভিজিয়ে দিতে অমিয় সুধায়;

তীব্র হতে অন্তঃধারায়,
হয়ে গেছি প্রথম শ্রাবন !



কোয়েল বসু সাহা

অচেনা

চেনা অচেনার দর্পণে আজ চিনেছি
কত চেনা চেনা মুখ
অচেনা ভাষায় চেনা সুখ দুখ
অচেনা সে আজ ও, দাঁড়ালে সমুখ।
চেনা অচেনার ধ্বজার তলে,
চেনা চেনা সেই মোড়ক আড়ালে,
সবই অচেনা, ধরা না দিলে।।

উড়িয়ে হাওয়ায় মোড়ক যত,
রোদে জ্বলে পুড়ে রঙ সব গত,
চেনা অচেনার ভিড়ে একা আজ
চিনিনা কিছুই, তবু পরিচিত।

কত যে চেনা কে , চেনাতে চেনাতে
চিনতে চিনতে, হারাল দুরেতে
দূর হতে তব আরও দূরে কেউ
শুনিয়েছে গান, অচেনা সুরেতে।

সুর অচেনা, গান তবু চেনা
চেনা রঙ তুলি, ছবি অচেনা
চেনা সে সড়ক, চেনা আনাগোনা
অচেনা বাজারে চেনা বেচা কেনা।
চেনা আলোতে, আমিও অচেনা
অচেনাদিনের তুমি কত চেনা,
মোড়কের ভাঁজে, তুমিও অচেনা।



অমৃতা মুখার্জ্জী

রিমঝিম- রুমঝুম

রি্মঝিম রুমঝুম বৃষ্টি যে পড়ছে
মেঘেদের গর্জনে বড় ভালো লাগছে।

গ্রীষ্মের পরই হই বর্ষার আগমন
গরমের জ্বালা থেকে নিস্তার পায় মন
হাওয়ার মাতনে লাগে গাছে গাছে ঘর্ষণ
ভাললাগে, বেশ লাগে বর্ষার এই বর্ষণ ।

বিদ্যুৎ চমকায়, চারিদিক মেঘে ছায়
বেনুবন মর্মর জেন কোন গীত গায়
ছলাত্‌ ছলাত্‌ জল চারিদিকে ছিটকায়
জমা জল রাস্তায় গাড়ি চলা আটকায় ।

নদীনালা, খালবিল জলে জলে ভরছে
টিপটিপ, অবিরাম বৃষ্টি যে পড়ছে ।
ফসলের জমিগুলি জলে যেন ভাসছে
চাষি ভাই খুশি খুব ফসল যে ফলছে ।

চুপচাপ শুনি বসে বর্ষার দুপুরে
ঝুম্‌ঝুম্‌ শব্দ হয় যেন নুপুরে
গান গেয়ে যায় হাওয়া অদ্ভুত বেসুরে
মন ছুটে চলে যায় , যেন কোন সুদুরে।

ভাললাগে ভাললাগে বর্ষার এই ঝুম্‌ঝুম্‌
বৃষ্টি যে পড়ছে রিম্‌ঝিম্‌ রুম্‌ঝুম্‌ ...



আহম্মেদ রফিক

তমসাছন্ন বাসর


একদিন তমসাছন্ন কোন এক কুঠুরিতে
তোমার বাসর হয়েছিল মনেমনে !
আর সেই স্মৃতি বুকে বইতে বইতে দাগ লাগিয়ে নিয়েছ ।

সেদিন তোমার কণ্ঠে যে গান ছিল, অবশেষে
তোমার ফুরিয়ে যাওয়া __ ফিরে পাও’নি স্বপ্ন ।
কত বড় আকাশটা ভেঙে পড়েছিল মাথায় শিরিষের ।

তুমি হা করে তাকিয়ে ছিলে__
আজো ভাস্কর্য টা স্বপ্নের মত তেমনি হা করে আছে !



আহমেদ মুনীর

তোমার হাত


এই নিশীথ রাত্রিতে নরম জ্যোত্স্নায় টপ টপ ঝরছে শিশির
বইছে কোমল হিমাঙ্ক বাতাস
ভালবাসার অর্গলে ধরেছি তোমার হাত
সাজায়েছি ছন্দের পসরা লিখি কবিতা তোমার জন্য
আর কবিতার মধ্যে খুজি তোমাকে তোমার মুখ
গাদ্যিক পাদ্যিক যাহাই হউক আমি চাই
কবিতার নরম শরীর আর তোমার নরম হাত ।

শক্ত করে রেখেছ কেন তোমার হাতের মুঠোটি
খুল হাত আলগা করে দাও শক্ত মুঠোটি
চেয়ে দেখ আমার উন্মুক্ত প্রসারিত বাহু আর হাত
বিবশ হয়েছে সেই সরব সন্ধায়
হাত দাও হাত রাখ আমার হাতে আমার বুকে
স্পর্শ কর দেখ কাছ থেকে সেই কখন থেকে এ নিশীথ রাত্রিতে
বসে আছি তোমার নরম হাতের নরম ছোয়া পাব বলে
দয়া কর যদি পার একটিবার আলগা করে দাও
তোমার ইষ্পাত কঠিন নরম হাতের মুঠোটি
মুক্তি দাও আমাকে জীবনে।





নাশিদা খান চৌধুরী

পেস মেকার

ভীষণ ভালবাসতে ইচ্ছে করে আমার।
এই যে এত করে বলো
“ভালবাসি, ভীষণ ভালবাসি”
আমারও বলতে ইচ্ছে করে কথাটা।
যদি পারতাম তোমার মত করে বলতে!!

বিশ্বাস হয়না বুঝি?
তুমি বুঝবেনা -
মনের মধ্যে সর্বক্ষণ একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়-
ভালবাসা – এটা কেমন?
খুব জানতে ইচ্ছে করে
ভালবাসা – উপলব্ধিটা কি?

হাসছো? ভাবছো তোমায় এড়িয়ে যাচ্ছি?
কি করে বোঝাই, যতবার ও কথা বলো
কি কষ্ট হয় মনটায় –
এত যে বলো “ভালবাসি”
কেন টের পাইনা এ অনুভূতিটা?
গলা পর্যন্ত উঠে আসে
“আমিও ভালবাসি তোমায়”
মুখে আসতে গেলেই থমকে যাই –
একি আমার সত্য উপলব্ধি নাকি কৌশল তোমায় ঠান্ডা করার???
মন বলতে চায় না,
কষ্ট পাই – না বলতে পারায়।

প্রায়ই বলো - আমি অহংকারী
গর্বিত তোমায় অবহেলায়।
বুঝবেনা, যেমন করে আমি নিজেই বুঝতে পারিনা।

মাঝে মাঝে মনে হয় – আমার হৃদয় নেই
যা আছে তা একটি জীবন্ত যন্ত্র মাত্র।
ডান অলিন্দ – বাম অলিন্দ
ডান নিলয় – বাম নিলয়....
দুষিত রক্ত বহন করে
আর পরিষোধিত করে ছড়ায় শিরা-উপশিরায়।
এর আর অন্য কোন ফাংশান নেই
শুধুমাত্র বেঁচে আছি – এ ঘোষনাটাই দেয়।

খুব ইচ্ছে হয় ভালবাসতে
তোমার মত – ঠিক যেমন করে তুমি বল
“তোমাকে ভালবাসি”
বুঝতে পারিনা কি দেব প্রত্যুত্তর ?
আমার যে হৃদয় নেই -
যা আছে, ভালবাসার কোন ক্ষমতা নেই তার
বলতে পারো – ওটা আমায় বাঁচিয়ে রাখার এক জীবন্ত “পেস মেকার”।



ভোলা রায়

বৃষ্টি নামার মুখে


ভাবছি
সেইসব নদীতে ডুব দেওয়া হয় নি অনেকদিন
যে নদীতে পাথরের সাথে ক্ষয়ে যায় মনখারাপের জীবনবোধ
এমনকি সেই দিনও
দুই মেরুতে যখন প্রবল অভিসার
প্রচন্ড এক ধাক্কা
কেঁপে উঠল তোমার ঘর বাড়ী
বুকের দেওয়াল থেকে ধ্বসে গেল পলেস্তারা
ঝিরঝির করে ঝরে পড়ল ধুলো
দেওয়াল ঘড়ি থেকে খসে পড়ল কাটা
হঠাত্ ঝুপ শব্দে যখন
তোলপাড় হল সবুজ সন্ধ্যা
ফুলপাখি ছেড়ে গেল বাসা
শিকড়ে পড়ল টান
শিশু প্যাঁচা কেঁদে উঠল
নিজেকে কিসের দোহাই দিলে?
সত্যি করে বলো
নাহয় একটি বারই বলো
কিসের অমোঘ টানে
বুকে পেরেক পুতে দিলে?
বলেছিলাম
প্রত্যেকের কাছেই একেকটা সমুদ্র আছে
আর একেকটা সমুদ্রে দুই সমুদ্রের তৃষ্ণা লুকিয়ে আছে
তুমি বুঝলে না
এক হাটু জলে নোঙ্গর হয় না
তুমি মানলে না নোনতা জলে শরবত হয় না,
তিরতির করে কেঁপে উঠল ঠোট
শিরশির করে সাপ উঠে গেল হিমালয়ে
হিমালয় ছাড়িয়ে আন্দিজ
হয়তো আরও বহুদুর..
এদিকে বৃষ্টি নামার মুখে
অরণ্যকে ছুঁয়ে যায় একাকীত্ব
আর আমি ভাবছি
সেইসব নদীতে ডুব দেওয়া হয় নি অনেকদিন...



পৃথা রায় চৌধুরী

চৌমাথায় চৌকশ চিন্তা



জীবন মৃত্যুর মাঝে
উত্তেজক শৈত্য জড়িয়ে চোর পুলিশ খেলা
এই আছি, এই নেই অবান্তর
কথোপকথন নিষেক ফলায় মুখোশধারি বেলা।

অনিশ্চিত উৎস খুঁজে কুৎসা গাওয়া
অভ্যেস বশে রোজনামচায় জিন বিশ্লেষণ,
পোড়ো মন্দিরের দেওয়ালে মানতের অশ্বত্থচারা
নিরুপায়, নিশ্চুপ নৈবেদ্যলোভী বুড়ো ঈশ্বর।

রাত বাড়লেই কথা দেবার কথাগুলো ভুলে গিয়ে
মজ্জা চুষে স্বভাবসিদ্ধ ছলচাতুরির গড়িমসি
অন্ধকারের প্রতিযোগিতায় জিতে গেলেই
আগামিকাল সকালটা নিশ্চিন্ত দুই পক্ষই।

স্থবির পাপের ঘটে আম্রপল্লব সাজিয়ে পুণ্যসঞ্চার
পাঞ্চজন্যরও লাগে অ্যানুয়াল মেন্টেনেন্স কন্ট্র্যাক্ট
নুড়ি পাথরের মাঝে শিব খুঁজে ফিরে হয়রান,
সবজান্তার মতো মাথা নাড়িয়ে, এটাই ফ্যাক্ট, এটাই ফ্যাক্ট।



মামনি দত্ত

পরে থাক মূহুর্ত


শুধু তোমার জন্যে ভবঘুরে জীবন, জীবন উচ্ছিষ্ট
'উদ্বায়ী বাসনায়।
সীমানার একপ্রান্তে গেঁথে থাকা কাঁটা তার,
উপড়ে মিশে গেছি দুর্বার স্রোতে!
আসন্ন বিদায় দৃশ্যে যবনিকা নেমেছে, নীলচে কষ্ট
বুকে জমিয়ে!

প্রতিটি পরিত্যক্ত প্রহর
কুন্ডলী পাকিয়ে নিশ্চিন্তে শীত ঘুম দেয়।
ঘুম ঘুম স্বপ্নে, অন্ধ জীবন জুড়ে চলে পরাবাস্তবতার
খেলা!
অবচেতন ইন্দ্রিয়ের রোমান্টিকতায় দুরারোগ্য
অসুস্থতা হাতছানি দেয়!!
বাতাসে ফুলের মৃদু সুবাস জানান দেয়, তার অস্থিরতা।

হাওয়ায় এই মূহুর্তে জেগে ওঠে, কতো বারুদ আর লাশের
গন্ধ!
মৃত গন্ধ খসে পড়ে হিজলের ছায়া মেখে, পদ্মপাতায়
জীবন বাজি ধরে চলে!
অপস্রিয়মান চাঁদের অট্টহাসিতে প্রহেলিকা আরও
গাঢ় থেকে গাঢ় হয়।
তিক্ততার স্বাদ হনহনিয়ে হেঁটে আসে, গভীর
অন্তরসমূহে।
আর নিজেকেই ছিন্নভিন্ন করে চলি, সব মৃতের দুর্ভাগ্য
ললাটে মেখে।


যাযাবর জীবন (আহসান )

অর্ধ-মানব

অর্ধ-মানব;
আমায় তুমি এই নামেই তো ডাকো, তাই না?
কেন ডাক?
আমি কি আসলেই অর্ধ-মানব?
অর্ধ-মানবের সংজ্ঞা যে আমি জানি না।
কি জানি?
হয়তো বা হতেও পারি আমি অর্ধ-মানব;
তুমি বলেছ যখন।

জানো, মাঝে মাঝে তোমার এই ডাক শুনে
আমি নিজের দিকে তাকাই
নিজেকে বুঝতে চেষ্টা করি
মাঝে মাঝে কিংবা প্রায়শই;
কখনোবা আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকি
অপলক চোখে
যদি সেথা অর্ধ-মানবের ছবি ফুটে ওঠে।

চোখের সামনে দুটি হাত মেলে দেখি
নাহ্, হাত তো আমার দুটিই আছে
পায়ের দিকে তাকাই, সেথাও দুটি দেখতে পাই
আঙ্গুলও-তো গুনে পাই ১০টি করে সেথায়
হাতে আর পায়ে;
মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়াই
আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখি নিজের;
দুটি চোখ, চোখের জায়গায়
নাক, কান, মুখ, গলা সব-ইতো আছে
নিজ নিজ স্থানে
তবে অর্ধ-মানব হলাম কিভাবে?
কি জানি?
হয়তো হতেও পারে
তুমি বলেছ যখন।

হঠাৎ কি মনে হতে মনের ভেতরে একবার উঁকি মেরে দেখি
একটু একটু করে হৃদয়ের ভাঁজ খুলে দেখি
নাহ, হৃদয়তো এখনো ধ্বক ধ্বক করছে প্রতি মূহুর্তেই
তোমাকেই মনে করে
দিন দিন যেন তোমারই ভালোবাসার ভাবনা
ছুটে বেড়াচ্ছে আমার লোহিত কণিকা জুড়ে
তোমাকে কাছে পাওয়ার কামনা যেন
প্রতি অণুতে পরমাণুতে ছড়িয়ে পড়ছে
আগের থেকে অনেক অনেক গুন বেশি করে।

তবে কি তোমায় এত ভালোবাসার কারণেই
আজ আমি অর্ধ-মানব এ পরিণত হয়েছি
তোমার কাছে।

যদি তাই হয়
তবে আমি অর্ধ-মানব হয়েই বাঁচতে চাই
তোমাকেই ভালোবেসে, শুধুই তোমাকে।


কেশোয়ারা সুলতানা সাথী

কবিতার সাথে কথোপকথন

সদ্য সৃষ্টি কবিতাটি মুখগোমড়া করে
আমাকে বলল,
এত সহজ করে আমাকে লিখলে কেন? কিছু উপমা,
কিছু কাব্যিক ভাবনা তুমি অবলীলায় দিতে পারতে!
এত সহজ করে কি কেউ লিখে?

আমি কলমটিকে নিয়ে খেলা করার ভঙ্গিতে বললাম,
তোমাকে জন্ম দেয়া আমার কর্তব্য।
তাই বলে কি লেখার ভাবটা আমার হবে না?
তুমি আসবে ঠিক সে ভাবে যে ভাবে আমি চাইবো।

কবিতাটি অসহায়ের মত মুখ করে বলল,
এত নির্যাতন সহ্য হবে না, কিছুটা ভালবাসাও আমাকে দাও
সৃষ্টি করা অধিকার তোমার হলে
তোমার লিখনিতে রূপান্তরিত হবার আগে
কিছু বলবার অধিকার আমারও আছে।

যদি ভাল না বাসো হারিয়ে যাব একদিন
তোমাকে ফেলে বুঝলে?
থাকবে একা তুমি
কাগজ ও কলমটাকে নিয়ে, আমি বিহীন।



বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১২

রেটিনা বড়ুয়া


সম্পর্ক

যতই কাঁদাক যতই পোড়াক
ভালোবাসা চিরন্তন,
তা যদি সত্যি হয়
তুমি ফিরে আসবে একদিন ।
তুমি করেছ অপমান
দিয়েছ বিষের ভাণ্ডার,
তা সত্ত্বেও আমি ভালবাসেছি তোমায় ।
এখন তোমার আমার মাঝে
রয়ে গেছে শুধুই সম্পর্কহীনতা ।
কোনও সম্পর্কই নেই আজ
ভেতরে ভেতরে তবু ঝড়,
মনের মালিন্য মোছে কল্পিত ঠোঁটের স্পর্শে
অমর মেঘমল্লার হৃদয় তন্ত্রীতে ।
অস্তিত্তের ঝড়ে উড়ে গেছি আমি,
এখনও রাত জেগে জেগে ভোঁর দেখি
খুঁজি সেই অষ্টাদশী চাঁদ,
যার মরমী আলোয় আমি নিজেকে পোড়াই ।
কতো রং কতো ছবি স্বতঃস্ফূর্ত মোছে
তবুও সম্পর্কহীন এ সম্পর্ক মোটেও মোছে না ।
না হয় তোমার কাছে ছিল সব মিথ্যার খেলা,
আমার কাছে সব ছিল সাহসের বেলা ।
যতই লিখি ততই ভাবি
সম্পর্কহীন সে এসে পড়ে,
সমস্ত লেখায় তাই শুধু তাঁকে আঁকি
অস্তিত্বের মাঝে যেনও সে লেখা হয়ে থাকে ।


অংকন নন্দী (সাতকাহন)

কেন্দ্রাতিগ আবেগ

শাপান্ত হই পুনর্বার-
তোমার ছায়া মাড়ানোর অপরাধে;
প্রতিরোধ-প্রতিবাক…. নীরব, নির্বোধ-
আজো কৃতদাসের মত ঘুরপাক খায়….
তোমারি চারিপার্শ্বে;
অহমের অলংকারে বিভূষিতা অঞ্জনা তুমি-
যার অঙ্গনের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত,
আর ভালোবাসা সেথায় ভাবাবেগ হারিয়ে….
ঠোকরায় মাথা অভিশাপের প্রস্তরে;
প্রাণের শেষ হয়…..
হয়না অন্ত অস্তিত্বের ।

অতঃপর আবার শুরু হয় অভিযাত্রা-
প্রদক্ষিণ করে আমার নির্লজ্জ অনুভূতিরা….
নিঃসঙ্গতার পাঁচিল পেরিয়ে-
তোমার অহমিকার চারিধারে;
কেন্দ্রের মায়াটানে বাঁধা পড়ে রই-
পেরোনো যায়না অমোঘ নিয়তির পরিধি….
তবু রয়ে যায় দু’জনার মাঝে ব্যাসার্ধের সমান দূরত্ব;
অনুভবেরা ঠোকর খেতে খেতে পরিক্রমণ করে-
একপেশে ভালোবাসার আবর্তে ।

মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১২

তমিজ তমোহর

পাতায় পাতায় লেখা

ধুধু বালি,অবুঝ তৃষ্ণা
মরীচিকা, মরীচিকা
দু’চোখ আর ভুল দেখাস না
-অবুঝ মন।

তুমি ক্ষণিকের আহবান
ক্ষনজন্মা ক্ষনজন্মা
সাপের দাঁতে লুকানো বিষ
তোমাকে গিরে যত বাসনা
- ভুল চাওয়া।

তুমি সুন্দর, লুপ্ত নদীরেখা
জল গড়ায়, জল গড়ায়
উদাসীন পথ, জল খুঁজে চোখ
তুমি চোখের ঠিকানা
- স্বপ্ন।

এই চোখ ভুল দেখে
সময় বদলায় সময় বদলায়
গোপন বার্তা, অন্ধতার লম্বা করিডোর
মুহুত্বে দিকভ্রান্ত করে দিতে পারে
কাঠ ঠোকরার প্রতিটি ঠকোর
-কালের খেলা।


আব্দুল্লাহ আল জামিল

সমান্তরাল

তুমি নোংরা কর্দমাক্ত পথে চলতে পছন্দ করোনি কখনো
ছিমছামভাবে চলাটাই তোমার পছন্দ।
শেষমেশ ঠিকই তো পা রাখলে সে’রকম পথে
কিন্তু সেই পথের গন্তব্য ছিলো ভিন্ন।

আমি চিরপরিচিত পথ ধরে চললাম নিয়ম মাফিক
কখনো বা হেঁটে হেঁটে, কখনো বা গরুর গাড়িতে
ভাঙ্গা রাস্তায় পদস্খলন হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়
দুলুনি লেগে কোমরে ব্যথা কিছুটা হবারই কথা।

দু’রকম দুটি পথ কখন যেনো অজান্তে এসে
মিলিত হয় যে এক মোড়ে
অযাচিত এ’মিলনে ভীষণ একটা ধাক্কা লাগে
নাকি ছিলো তা বহু কাঙ্খিত?

দু’রকম দুটি পথ যে সমান্তরাল
দু’রকম দুটি পথ চলে যে নিজস্ব ভাবে আজ!



সিদ্ধার্থ শর্মা

জীবনের রঙ্গমঞ্চে

জীবনের রঙ্গমঞ্চে ....
পোশাকি একটা নাম পেয়েছি - পেয়েছি কিছু সাথী

ব্যাস! নিজেকেই নিজে ভুলেছি - ছুটেছি দিবারাতি ।

আনিনি কিছুই - নেবনা কিছুই সাথে
'নেই' 'নেই' ধ্বনি সারা দিন এমনকি রাতে
'চাই' 'চাই' 'আরো চাই' - কি যে চাই - কি যে হারাই ?
পাগলের মত চুল ছিঁড়ে হিসেব মেলাই ।

নিখিল পৃথিবীর স্বামী - প্রভু যিনি বিশ্বস্রষ্টা
করুন চোখে দেখেন সব-ই উনি উপদ্রস্টা
দেখিনি মেদিনী করিনি অনুভব সুন্দর এই ভুবন
অযাচিত ভাবে করেছি কলুষিত আমার জীবন ।

মেঘ ভেঙ্গে বর্ষা ঝরে কোকিল কুহু কুহু গান গায়
শারদীয়া কাশফুল কামিনী বকুল গন্ধে প্রাণ মাতায়
দেখতাম যদি প্রকৃতির খেলা আমার প্রিয়ার চোখে মুখে
ভালবাসা পাকাপাকি বাসা বাঁধত হতদরিদ্র বুকে -
হত জীবন আনন্দময় দিবস রজনী অনুভব সঞ্চয়
আজ কবিতা লিখে মন ভরে এই প্রত্যয় ।।


পর্না ব্যানার্জ্জী

ভালোবাসা - মার্কেট প্লাস

উদ্বৃত্ত ভালোবাসা
টুকরো করে বিলিয়ে দিতে চাই
দাম নির্ধারণ করা হয়নি
অকশান এ বসাবো ভাবছি
চলুক না দর হাঁকা হাঁকি
বেশ হবে
১০০... ১০১... ১০২...
দেখিনা থামে গিয়ে কোথায়
হাজার না কোটি কতোতে থামে গিয়ে দেখি
উদ্বৃত্ত তো ক্ষতি কি
একটু না হয় ভাগ সহ্য করে নিস
“সতীন হিসেবে ধরছিস কেন ... ধরে নিস না এক মায়ের পেটের দুই বোন”
ব্যাস কোনো অশান্তি নেই
ভালো করে গুছিয়ে দিস ফুলশয্যার ঘর
আলতা পায়ের ছাপটারও ত্রুটি রাখিসনা
অকশান এর ভালোবাসা বোলে কথা
দাম দিয়ে কিনবে আমায়
আত্মমর্যাদাটা রাখতে হবে ভালো করে
ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকবি তুই
রোজ দেখতে যাবো তোকে আমার সেই পুরনো ভালোবাসা নিয়ে
উদ্বৃত্ত ভালোবাসা তো দ্বিতীয়জনার... ভাবনা কিসের?
আসল ভাগ তোর
ফুরিয়ে যাবে যেদিন উদ্বৃত্তের ভাণ্ডার
দেখবি ফিরে আসব সেই তোর কাছে এক ভাবে
অপেক্ষায় থাকবি তো তুই সেইরকম ভাবে সেজেগুজে?
দেখিস ভুল করে তখন উদ্বৃত্ত জঞ্জাল ভেবে ফেলে দিস না আমায়
এখন না হয় অল্প মানিয়ে নিস
দেখিনা আমার ভালোবাসার দর বসিয়ে
চড়াই উৎরাই জীবনের উত্থান পতন সবের সাথে একটু
“ভালোবাসার মার্কেট প্লাস খেলা খেলে”।