কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা



“অসতো মা সদগময়,তমসো মা জ্যোতির্গময়,মৃত্যুর্মা অমৃতংগময়”

দীপাণ্বিতার অমানিশা,
অন্তরে তার আলোর তৃষা।
তৃপ্ত হোক দীপ্তিতে সে,
ঘুচিয়ে আঁধার সর্বনেশে।
জ্ঞানের আলো তমোহরা
আলোয় সাজুক আজকে ধরা,
“আলো আমার আলো ওগো, আলোয় ভুবনভরা”

দীপাণ্বিতার আলোকধারায় স্বাগত .....আলোর উৎসব আপনাদের সকলের জীবনকে আলোকময় করে তুলুক,কলমচারিতার আরম্ভেই আপনাদের সকলকে কবিতার পরিবারের পক্ষ থেকে দীপাবলীর শুভ কামনা জানাই ।

দীপাবলীর রেশ এখনও আকাশে বাতাসে ছড়ানো, আলোর উৎসবের রোশনাই এখনও আমাদের মনে,এর মধ্যেই প্রকাশিত হল আমাদের কবিতার পরিবারের সাহিত্য মুখপত্র “পারিবারিক”।“পারিবারিক”-র বয়স খুব অল্প (এটি মোটে চতুর্থ সংখ্যা) এবং আমাদের অভিজ্ঞতাও খুব কম। তারপরেও কবিতার পরিবারের সকল সদস্য এবং শুভানুধ্যায়ীদের অনুপ্রেরণায় অসমসাহস নিয়ে “পারিবারিক”কে বিবিধ সাহিত্য-অলঙ্কারে সাজানোর এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। শব্দেরা জীবনের আত্ম কথা বলে , আর কলমনিষিক্ত বাক্যরাজি বলে আত্মার কথকতা....এই অনুভবটাতেই পারিবারিক দিনে দিনে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়ে ওঠার প্রয়াস পাচ্ছে। তাই সাফল্য বা জনপ্রিয়তার হিসাবে নয়, আপনাদের ভালোবাসা পেলেই আমাদের পথচলা সার্থক।

যতবার শুরু করতে যাই ততবারই ঐ লাইনটার কথা মনে পড়ে

" তারপর যেতে যেতে যেতে এক নদীর সঙ্গে দেখা..."
কবিতাকে দিকশূণ্যপুরে পাঠিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল
অরণ্য অথবা পাহাড় কিংবা সাগরের........।
আর সেসব না হয়ে যদি কেবল নদীর সঙ্গেই দেখা হতো তাও নাহয় চলতো ।
কিন্তু ওসব কিছু হল না , সে দেখা পেল একটা শবের ;
কবিতা চমকে উঠে মানতেচাইলো তাও ...
কিন্তু খই ফুল আর অগুরূর গন্ধে ভরা শববাহকরা কই ?
কেউ নেই কেন? শুধু ঐ শবের পাশে আবছা দাড়িয়ে আছে আরেক অন্য মৃত্যু ।
সে মুখ ঘুরিয়ে তাড়াতাড়ি পা চাললো যে দিক পাহাড় দেখা যায় সেই দিকে,….।
তারপর যেতে যেতে যেতে সে খুঁজতে থাকে জোৎস্নার ঝর্ণাকে ,
নিদেন পক্ষে প্রেমের সঙ্গে দেখা হলেও চলতো …
কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ক্ষিদের….

পূজোর ছুটীতেই নীললোহিত হারিয়ে গেল দিকশূণ্যপুরে,সাথে নিয়ে গেল কাকাবাবু-সন্তু,নীরাকেও। সাহিত্যপ্রেমী বাঙ্গালীর কাছে ম্লান হয়ে এল শারদীয়ার উচ্ছ্বাস, ঈদের আনন্দ।এরই আগে চিরজীবনের মত এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্য দুই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব,কবি হুমায়ূন আহমেদ আর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।জীবনের একেকটা অধ্যায়ে জীবনটা কাটতে থাকে একেক রকম করে।তাতে প্রাপ্তির আনন্দ যেমন আছে তেমনিই আছে বিচ্ছেদের দুঃখ। জন্ম - মৃত্যু দুই-ই একে অপরের পরিপূরক যে! একই সুতায় সেসব গাঁথা বলেই হয়ত একটার সাথে একটা যোগ করা অংকের মতন। দিন যায় দিন আসে, পরে থাকে অভিজ্ঞতা।রচয়িতা চলে গেলেও রচনা তাঁর / তাঁদের সাক্ষর বহন করে নিয়ে যায় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে।এটাই বিদ্যাদেবীর অমরত্বের আশীর্বাদ, তাঁর সেবকদের জন্য।কবিতার পরিবারের পক্ষ থেকে সাহিত্যের এই অমর সেবকদের উদ্দেশ্যে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।

দীর্ঘ সামাজিক জীবনে মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, নিত্যকার মান- অপমান, জীবনের পলে পলে ক্ষয়, গলিত ও যান্ত্রিক জীবনচর্চা -¬ তবুওতো মানুষ মানুষের জীবনেই বাঁচে । মানবসভ্যতার তীব্র সঙ্কটের মধ্যেও তার অস্তিত্ব বজায় রাখে । অন্তরশায়ী এই গভীর বেদনাবোধের ,অনুভবের প্রতিনিয়ত নুতন করে বাঁচার ইচ্ছা, মূর্তরূপ নেয় লেখার আখরে, কাব্যের ব্যঞ্জনায়,তুলির আঁচড়ে। ব্যক্তগত কিংবা সমষ্টিগত চিন্তা,অনুভুতির স্বতস্ফূর্ত উৎসারণ, জীবনের প্রতি অদম্য বিশ্বাস, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীল মনোজগত আর তার প্রত্যয় ও ভাষার কারিগরি দক্ষতা, এই বিবর্তনের ধরন-ধারন যাচাই করতে, আমাদের হাতিয়ার লেখনী কিংবা তুলি, আর সেই লেখনীর সামনের সাদা পাতা,তুলির উপযুক্ত সাদা ক্যানভাসের প্রতিরূপ আমাদের পারিবারিক।

কবিতার পরিবারের সকল সদস্যের, পারিবারিকের সকল শুভানুধ্যায়ী পাঠক/পাঠিকার ভালোবাসার,ভালোলাগার সরল অনুভবে পারিবারিকের শিশু মনের কোনে সুপ্ত জ্ঞানবৃক্ষ শিকড় ছড়িয়ে ডালপালা মেলে ঘুম ভাঙ্গছে।- ছুঁয়ে ফেলছে নিয়মে আড়াল করা নন্দিত সুখ, আস্বাদন কেউ করুক বা নাই করুক। রঙ্গীন জেল্লার বলয় পার হয়ে স্মৃতি মঞ্জুষার যত অভিজ্ঞান আজ বৃত্তকারে আবর্তিত হচ্ছে তাকে ঘিরে। বাংলা ভাষার সৃজনশীলতা ও প্রয়োগ নিয়ে “পারিবারিক”-এর ভাবনা সকলকে উৎসাহিত করবে এই আশা রাখি । আমরা দুই বাংলার সাহিত্যানুরাগীদের ভাবনার ফসল।আমাদের সাহিত চর্চার খবর যদি কেউ জানতেই না পারে তাহলে আমাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ । তাই নিজেদের আলোকিত করতে পারিবারিককে আরো উজ্জ্বল ও আকর্ষনীয় করে তুলন। আরও সুন্দরভাবে “পারিবারিক”কে সাজানো যায় কি’না এ ব্যাপারে আপনার / আপনাদের সুচিন্তিত মতামত থাকলে জানান। আপনাদের সবাইকে অনুরোধ, মনের সমস্ত দূয়ার খুলে প্রাঞ্জলভাবে পারিবারিকে লিখুন। “পারিবারিক”পড়ুন ও পড়ান। আমাদের উৎসাহ দিন, উজ্জীবিত করুন।পরিশেষে সকল লেখক/কবি/চিত্রকরবন্ধুদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সুন্দর সুন্দর রচনার জন্য এবং সে সাথে “পারিবারিক”-এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি!

“শুভম করতি কল্যাণম,আরোগ্যম ধন সম্পদা,শস্ত্রবুদ্ধি বিনাশায়,দীপজ্যোতি নমস্তুতে।।“


পারিবারিকের পক্ষে
মৌ দাশগুপ্তা
অতিথি সম্পাদক

মৌ দাশগুপ্ত

ডায়রির পাতা থেকেঃ মন খারাপ


আমার খুব মন খারাপ হয়। সহজেই মন ভালো করে ফেলি, কিম্বা হুঠহাট কাঁদতে পারি, তাই বেশিক্ষণ মন খারাপ থাকে না। সেই আমারও কদিন থেকে মন খারাপ, কারণটা আর কিছুই নয়, মাথার চুল। এমনিতেই চুলে পাক ধরেছে, তার ওপর ভুসভুস করে রোজ চিরুনি ভরে চুল উঠছে। ভয়ের চোটে চুল আঁচড়ানো প্রায় ছেড়ে দিলে কি হবে, চুল উঠতে উঠতে ব্যাপারটা প্রায় “স্মৃতিটুকু থাক”-এর পর্যায়ে চলে গেছে। ক’দিন পরে রাস্তায় প্যাঁক খেতে হবে “নেড়ি যায় বেলতলায়।” অতএব সাত পাঁচ ভেবে মেয়ের প্ররোচনায় বেশ না কদমছাঁট না ববছাঁট, ওই যাকে বলে সেমি মাশরুমছাঁট ছেঁটে আমাদের লেডিস্ ক্লাবে ঢুকতেই সব হা হা করে তেড়ে এল।

- এ কি রে সুমি, তোর চুলগুলো এভাবে খামচে কে তুলে নিল? ঊষা উদাত্ত স্বরে চেঁচিয়ে উঠল।

- দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে কল্পতরুর কাছে দাঁড়িয়ে কলা খেতে গেছল বোধ হয়, পিনপিন করে স্বপ্না সঙ্গ দিল।

- না রে না, ও বোধ হয় পাকা চুলগুলো বেছে ফেলে দিয়ে কচি সাজছে, ঊর্মি উবাচ।

- সাজছে তো সাজছে, তোর কি? তুই যে আধপাকা চুলগুলো বার্গান্ডি কালার করে জোকার সাজছিস তাতে সুমি কিছু বলেছে? খালি ওর পোকায় ধরা তরমুজের মত দাঁতগুলো বার করে হেসেছে, তা তুইও তাই কর না বাপু, পিন দিচ্ছিস কেন?

মিমিদির কথায় খুশি হব না রাগ করব বুঝতে না বুঝতেই আমাদের লেডিস ক্লাবের মধ্যমনি গীতাদির বাঁজখাই গলা অদৃশ্য থেকে বেজে উঠল।

-পিনের কথা কি যেন হচ্ছিল? কে কাকে পিন দিচ্ছে রে মিমি? কার পিন এত সস্তা হয়েছে শুনি? তা আলপিন, সেফটিপিন, হেয়ারপিন, তারপিন, কোন পিন এত মুফতে দিচ্ছিস রে? বলতে বলতে গীতাদি ধিরে সুস্থে ঘরে ঢুকে ওর মৌরসিপাট্টার ইজিচেয়ারটায় বেশ জুত হয়ে বসল।

আমি পিনপিন স্বরে ব্যাপারটা ব্যাখান করতে না করতেই মিমিদি মুখঝামটা দিয়ে বলল

- আমার পিন কোড সাত লক্ষ ছাপ্পান্ন গো গীতাদি, পিনের তো আর অভাব নেই যে দুএকটা খরচা করলে হুলুস্থুলু পড়ে যাবে।

- হুম তা তো বটেই, তবে সেই সঙ্গে আর একটা সমস্যা যে হবে সেটা কি ভেবেছিস হতভাগী?

- কি সমস্যা?

- ওই তোদের কোলকাতা ৫৬ থেকে কোলকাতা ৫৫ বা ৫৪ বা আরও কিছু হলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাসা বাড়ি চেঞ্জ করা, তোর যাতায়াতের সমস্যা, ইত্যাদি...এগুলোর কি হবে ভেবেছিস? তার ওপর তোর বর যদি ওই কোলকাতা ৫৬-র বসত বাড়ি, কি তোর শাশুড়িকে ছেড়ে তোর সাথে যেতেটেতে না চায়, তো সে আরেক সমস্যা। অতএব পিন খরচের আগে নিজের ঘর সামলে নিস।

গীতাদির ব্যাখান শুনে আমরা হেসে কূল পাই নে, আর মিমিদির মুখখানি বেশ শীতকালের বেগুনের মত ফুলে গেল। বেশ হয়েছে, খালি আমার পেছনে লাগা, না? মনে মনে গীতাদিকে বেশ বড়সড় থ্যাংকস না জানিয়ে পারলাম না।

যাই হোক, মিমিদি হল কি না ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট, চেহারাটা ঠিক বিহারী ভইসের মত কিনা,খালি বর্ণটি ধলা,এই যা। ও কিন্তু বেশ রেস্পন্সিবিলিটি নিয়ে দ্বায়িত্ব সামাল দেয়, অতএব হাওয়ার মোড় ঘুরে যাচ্ছে বুঝে চট করে নিজেও ঘুরে গেল।

- ও গীতাদি, রাখো ওই সব ছেঁদো কথা, তোমার ভাইপোর বিয়ে দেবে যে, পছন্দ মত মেয়ে খুঁজে পেলে?

লম্বা শ্বাস ফেলে বেশ একটা মন কেমন করা জর্দা মৌরীর সুগন্ধ ছড়িয়ে গীতাদি কেমন মুষড়ানো গলায় বলল

- না রে, যা চাই তা পাই না, আর যা পাই তা চাই না।

এতক্ষন পরে পরচর্চার বেশ রসালো বিষয় পেয়ে চনমনে হয়ে আমি নাক গলালাম,

- তা গীতাদি,কেমন মেয়ে চাই গো?

- মেয়েটা বেশ ফাটাফাটি রকমের সুন্দরী হবে, যাতে বউ নিয়ে বেরলে আশেপাশের লোকের চোখ টাটায়। টুকুন মানে আমার ভাইপোরও আবার বেশ ফরসা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করার খুব ইচ্ছে।

আমি বললাম- বেশ, আর কী চাই?

- মেয়েটাকে বেশ ভদ্র হতে হবে, কিছুটা সংসারী, বেশ গোছানো স্বভাবের, মানে আমাদের টুকুনের ঠিক উল্টো, আবার টুকুনের মত শান্তশিষ্ট হবে না, বেশ দুষ্টু-মিষ্টি মেয়ে হবে। আমাদের ফ্যামিলির সাথে মানিয়ে নেবে এমন। কাজ পারুক বা না পারুক, তাতে সমস্যা নেই, আমি কাজ চালানো গোছের শিখিয়েই দেব। বেশি পাশটাশ না হলেও চলবে। আর সে রকম সেরকম মার্কামারা সুন্দরী হলে লাল পাড় শাড়ি আর দু’গাছা শাঁখা-পলা ছাড়া মেয়ের সাথে আর কিছু চাইও না।

- গীতাদি, আমি বলি কি, একবার কৃষ্ণনগরের দিকে গেলে হয় না? ওখানে অর্ডার দিলে যদি...

আমাদের ক্লাবের সবচেয়ে বুদ্ধিমতী, সবার চেয়ে বিদুষী আর সব থেকে ছোট শর্মির ফুটনোট অ্যাড হল।

বহতী জলধারার মত কথার তোড়ে বাঁধা পেয়ে গীতাদি খানিকটা গুম খেয়ে শর্মির দিকে তাকিয়ে বলল

- বুঝলি শর্মি, মেয়েটা আসলে তোর মত হতে হবে। আমি যা যা বলছিলাম, তার সবই তোর মধ্যে আছে। শুধু তোর চেয়ে বয়সে একটু ছোট হতে হবে, বয়সের গ্যাপটা জরুরী।

শর্মি ঝরঝরিয়ে হেসে ফেলল। হাসলে রবি ঠাকুরের কৃষ্ণকলির মত কালো মেয়েটাকে এত মিষ্টি লাগে যে আমার তো সবসময় ওকে সুকুমার রায়ের আহ্লাদিনি সাজিয়ে রাখতে মন চায়।

আমার দিকে অপাঙ্গে চোখ টিপে শর্মি বলল- আমার মত হলে তো হবে না...

- কেন? কী সমস্যা?

গীতাদির চোখ দুটো পাঁচ টাকার রসগোল্লার মত গুল্লুস হয়ে উঠল

আমরা অবাক, বলে কী মেয়েটা?

- আমি তো ফাটাফাটি দেখতে নই, তোমার একদম প্রথম চাওয়াই তো মিললো না গো!! তারপরে তোমার সেকেন্ড রিকোয়ারমেন্ট ছিল ফর্সা, আমাকে তো আমার মাও সাহস করে শ্যামলী বলে না গো, কালো মেয়েই বলে। এই তো আজই আমার ভাইঝি বলেছে “কয়লা ধুলে ময়লা যেতে পারে, কিন্তু ছোটপিপি তোকে দুধের নদীতে চান করালে নদীটা কালো হয়ে যাবে, কিন্তু তুই একই থাকবি।”

আমরা সবাই এহেন সত্য কথনে হকচকিয়ে গেলেও গীতাদি কিন্তু খুব স্বাভাবিক গলায় বলল

- সত্যি রে শর্মি, আমি না বোকার মত এতক্ষণ তোর গুণগুলো ভাবছিলাম, তোর ঐ কালোকোলা মা কালী মার্কা চেহারার ব্যাপারটা একদমই ভাবি নি। টুকুনের বউ হিসাবে আমার কল্পনায় বেশ ফর্সা, সুন্দর দেখতে একটা মেয়েই আসছে, বুঝলি। তবে হাঁ, তোর মত গুণী মেয়ে হলে পটলচেরা চোখ টিকালো নাক না হোক, ফর্সা, পুতুল পুতুল গোছের সুন্দর মেয়ে হলেও চলবে।

ছোটবেলা থেকে আমরা শিখে গেছি কালো মানে খারাপ। যেকোনো খারাপ কিছুই কালো, আর ভালো মানে সাদা। অসৎ ব্যবসায়ী হল কালোবাজারি, অন্যায় পথে উপার্জিত অর্থ হল কালোটাকা। নোংরা কাজ করে পরিচয় হল কালোমুখ, আর অশুভ সময় কালবেলা। এভাবেই কালো গায়ের রং মানে কুৎসিত মানুষ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ বুঝলাম আমার, আমাদের ভাবাটা কতটা ভুল। আমি নিজেকে খুব স্পেশাল ভাবি না। কিন্তু আজ বুঝলাম শুধু গায়ের চামড়া ফর্সা হবার দৌলতে আমি-মিমিদি-গীতাদি সবাই শিল্পচর্চায়,সাহিত্য মনস্কতায়, বিদ্যাবুদ্ধিতে এমনকি টাকা রোজগারের মাপকাঠিতেও শর্মির থেকে অনেক খাটো হয়েও কেবল মাত্র সুন্দরী হবার মাপকাঠিতে ওর থেকে অনেকটা এগিয়ে। পহেলে দর্শনধারী, পিছে গুণবিচারী। গীতাদি হয়তো কিছু ভেবে বলে নি, অনেকদিন থেকে চিনি তো ওনাকে। কিন্তু কথাটা চাবুকের মত এসে বাজলো আমার কানে। বলছিলাম বটে যে আমার খুব কম মন খারাপ হয়, কিন্তু এখন সত্যি সত্যি আমার মনটা খুব খারাপ।।


কাশীনাথ গুঁই

সুরভী


মধুমতীর বাঁকের ছোট গাঁয়ের চাষার ছেলে অনি।ওর বাবা পণ্ডিতমশায়ের ভাগচাষী।অনিকে পরের জমিতে ঘাম ঝরিয়ে তেভাগার অকাট মুখ্যু না হতে হয় এই ছিল তার আশা।তাই হাতে পায়ে ধরায় অনিকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন পণ্ডিতমশায়।সে ছেলে যে আধপেটা খেয়ে মলাটহীন আধছেঁড়া বই ঘেঁটে ফিবছর ক্লাসে ফার্ট হবে কে জানতো সেকথা।

সুরভী পণ্ডিতমশায়ের বড় নাতনী। সে এখন ক্লাস এইট। ছোটবেলা থেকেই পাড়ার ভাল ছেলে অনির কাছে পড়ার সময় পড়া বুঝেছে এক্কাদোক্কার সাথী হয়েছে।পড়া শেষে সূয্যি পাটে বসার সময় মাঠের ধারে দিঘির পাড়ে বসে ঘাস চিবোতে চিবোতে সূয্যিটাকে দিগবলয়ে লুকোচুরি খেলতে দেখেছে।মধুমতীর বুকে নৌকা বাইচের উত্তেজনায় বুকে হাপর টানতে টানতে অনির পিঠে মুখ লুকিয়েছে।

অনির মাধ্যমিকের বছর সুরভী ক্লাস নাইনে উঠতেই তার বাবা তাকে নিয়ে গিয়ে কর্মস্থল কলকাতার এক ভাল স্কুলে ভর্তি করে দিল।পূজোর ছুটিতে এসে সুরভী অনির পরীক্ষায় লেখার জন্য পার্কার ফাউন্টেন পেনটা দিয়ে ওকে মনে রাখতে বলেছিল।ভাইফোঁটার বিকেলে নদীর পাড়ে গিয়ে ঘটিম দিয়ে মুক্ত অক্ষরে নিজের নামটা মন্দিরের দেওয়ালে লিখে অনির কানে কানে কি যেন বলেছিল।

পরদিন সুরভী কলকাতা চলে যাওয়ার আগে অনিকে টানতে টানতে আবার মন্দিরে নিয়ে গিয়ে হঠাৎ একটা প্রণাম করে হাত পেতেছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠোঁটে একটা গরম ছ্যাঁকা টের পেয়ছিল অনি। ততক্ষণে সুরভী হরিণীর মত নাগালের বাইরে।শহরে যাওয়ার সময় খেয়াঘাটে ফের একবার সুরভীর চোখে কি যেন পড়ে নিল অনি।সেই রাতেই অনির রাতজাগার হাতেখড়ি হল।

মাধ্যমিকের ফল গাঁয়ের মুখ উজ্জ্বল করলেও অনি আরও ভাল করতেই পারতো।তবু জেলার দ্বিতীয় স্থানটা ওর দখলে রেখছে অনি। তাই নারাণঞ্জের স্কুলে ভর্তি হতেও অসুবিধে হল না।কিন্তু কোঁচরে মুড়ি বেঁধে রোজ যাতায়াতে ওর শরীরটা বেশ ভেঙ্গে পড়ল।মনটাও ওর সঙ্গে শত্রুতা করতে ছাড়ল না।খেয়াঘাটে যাতায়াতে মন্দিরটা এড়িয়ে যাওয়ার পথ ছিল না যে।রাতের আকাশে তারাদের ভীড়ে সেই হাতপাতা মুখটা ওর ক্লান্ত শরীরটাকেও ঘুমের ঘরে যেতে দিতে চাইত না।

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল শহরের সেরাদের মাঝামাঝিতে নামাল অনিকে।ফল বেরোনোর দুদিন আগেই ওর বাবা সাংসারিক মায়া ত্যাগ করে অনির ভাগচাষীর ছেলের পরিচয়টার সাথে দুমুঠোর ব্যবস্থাটাও কেড়ে নিল।অগত্যা অনি রোজগারের আশায় কলকাতামুখো হচ্ছে শুনে পণ্ডিতমশায় ডেকে পাঠালেন ওকে।কলকাতা শহরের জীবনে কত কঠিন প্রতিযোগীতা ও নিদারুন পরিণতি সেকথা বুঝিয়ে অনিকে নিবৃত্ত করলেন পোড়খেকো মানুষটি।ওনার পরিচিত নারাণঞ্জের একটা মোটর গ্যারজে শিক্ষানবীশ হিসেবে কিছু রোজগারের বন্দোবস্তও করে দিলেন তিনি।নাহলে সুরভী আর তার বাবা এ ছেলে উপর দুর্বল হয়ে আরও পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দিলে বিপত্তি বাড়বে মোক্ষম। এ ছেলে যে একদিন জাতে উঠে তাঁর বংশে চুনকালি মাখাবে তা তিনি অনক আগে টের পেয়েই তো সুরভিকে কলকাতা ঠেলছিলেন।

মা আর বোনের দায় টানতে টানতেও অনি একদিন একটা গ্যরাজের সুযোগ্য মালিক হল বৈকি। বোনকে জেদ করে কলকাতাতেই সুপাত্রস্থ করলও সে।তখনই জানল যে সুরভি আর তার নেই।বোনের বিয়ের পর ওর মায়ের খুব শখ হয়েছিল বৌরান্না ভাত খাওয়ার।নানা অছিলায় অনির এড়িয়ে যাওয়াতে কারণ বুঝতেও দেরী হয়নি মায়ের।মেয়ের মেয়েকে আদর করতে করতেই এক বিকলে তার চোখে চির সন্ধ্যা নেমে এল।

বোনের আগ্রহে আর আপন মনের নিভৃত কোন বাসনার টানে অনি একদিন দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের পাশে তার ছোট্ট গ্যারেজ খুলে বসল।গুরুমশাইকে কথা দিয়েছিল অনি কখনও দখিন কলকাতামুখো হবে না। সেকথাও রেখেছে সে।অল্প দিনেই সুনামও এল তার।এল না শুধু সে, যার প্রতিক্ষায় তার এই মন্দির পাশে কাজের ছুতোয় বসে থাকা।

পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত

আমার ইমেজ


আকাশের ফুটো দিয়ে অন্য একটা দুনিয়ায় চলে য়াওয়া যায়
কাবাবের দুনিয়া লাড্ডুর দুনিয়া বিরিয়ানি আর ভোদকার দুনিয়া
আমার হ্যান্ডিক্যাম নেই বলে সঙ্গে নিলাম আরব রজনী
ওর মধ্যে আমার অভিমান ব্যথা আর রাগ আছে
ওর মধ্যেই আমার সমস্ত কবিতা আমি লুকিয়ে রেখেছি,
ও আমার লাইটহাউজ

পিঠে রুক্স্যাক নিলো আর সিগারেট ফুকতে
ফুকতে চললো সিটিসেন্টারের মাথার উপর দিয়ে
আমি গাইছিলাম বারান্দায় রোদ্দুর আমি আরাম কেদারায় বসে
২পা নাচাই রে ......
কি করে এলাম এই গাঁয়ে ফাইটার ফিশ আমি
উড়ে যেতে পারি লন্ডনপ্যারিসনুঅর্ক আকাশ ভেদ করে যাব তো আকাশের ফুটো খুঁজে পাচ্ছিলাম না ,
তখন বৃষ্টি নামলো মদ বৃষ্টি-
কেল্লা ফতে আর কেন অন্য দুনিয়ার খোঁজ করি আমাদের স্পুটনিকের
আয়ু মাত্র ১০০ঘন্টা আর ১০০ ঘন্টা মানে ৪দিনের কিছু কম সময়
তাতে কি এ্যক্সটেনশন নিয়ে নেবো, আর না ফিরলেই হলো
পুলিশের মর্জি তো আর এখানে খাটছে না
যাকে বলে ফ্রি, করতে হবে না চাকরি পেতে হবেনা পয়সা
হল্লা করবো মেয়ে দেখলেই সিটি মারবো চোখ মারবো বিন্দাস
রাজনীতি অর্থনীতি নেই পাশকুড়া গড়বেতা নেই জঙ্গলমহল ফেরেব্বাজ
কাঁধে ক্যামেরা বুকে উল্কি নজর উদাস...
যেতে যেতে নতুন আনেক পাহাড় ইগলু স্লেজ
রুমাল নেড়ে যুবতী ক্যামেরা কথা বলে গান গায় লাফায়
এত কবিতা আমাদের আছে যে তুমি অবাক হবেই
আমি রবীন পাখিটিকে শিস দিয়ে ডাকলাম আয় সমুদ্র দেখব
যুবতী অবাক এত হাল্কা উড়ে যেতে পারি
আমি পরি
আকাশ বালিকা , সবাই আমার জন্য মদ নিয়ে এলো
চুমু খেলো ঠিক মেনে নিলাম
এই আমার সৌভাগ্য ভাটার টানে হারিয়ে যেতে যেতে
ছায়াছন্ন জাদুঘর
অন্তত একটি পিয়ানো দাও একটি শোবার ঘর
নিজেকে যেন শূন্যে উড়িয়ে নিতে পারি
অ্যাডভেঞ্চার, জমকালো আমার পোর্ট্রেট



কচি রেজা

(এই কবিতাগুলি কবি সমরজিত সিনহা কে উৎসর্গীকৃত)মমিজন্ম


এই অসুখের পাশে পাশবালিশের মত শুয়ে
আহা-আহা-আহা, দুলে-দুলে-দুলে উঠছে মাধ্যম
এতদিনে নিশ্চিত আমি হে---আমার আপেলপাতা
অনুচ্ছেদ খুলে-খুলে এবার পড়বে দ্বাররক্ষী

কবরের রাজ্যে, কুঁকড়ানো-গর্ভ-দ্রুত-ক্ষয়-বন্দী
এবার পেয়ালা---প্রতিবন্ধী-যৌন-অন্ধ-উইঁপোকা
বিবাগি-চুমুক দিচ্ছে বেদনায় কুন্ঠিত ভ্রমর
এবার খুলবে দ্বার, দ্বাররক্ষী, যৌথ পতি মেনে,

মায়া-সার-আমি, শেকড়ের, ধারন করেছি ডিম
যেন তুই এক মহা ভুল, একটি দুঃখের বাড়ি,
আমি কী পেয়ালা তোর, রানি? আমার আপেলপাতা
কেউ নেই, তিনসত্যি, ছিল না আমার এই বিশ্বে,

তুমি হে আপেল, আমার সৌন্দর্য-সচেতন,
ক্ষুধা
কন্ঠরুদ্ধ হয়--কন্ঠরুদ্ধ তবু ওই মালা পরে
মেলেছি পেখম, হারিয়ে যেয়ো না হে আপেলপাতা
কতবার জন্মে, কতজন্ম পচে মমিজন্ম এই



ট্রেনের সিটি গোনে সংবেদনা



কিভাবে যে বুঝে যাও এসব কালের মোহ
ওইতো মাচান ফুঁড়ে জেগে ওঠে বিষন্ন বাঘ
দ্বিতীয়তঃ শুনেছি,এখনো কুমারী নাকি আমি
আর আমার গ্রীবার দাগ

দারুন সংবেদনা ট্রেনের সিটি গোনে
ভুল ষ্টেশনে কবে থেমে গেছি আমিও
পিতৃহত্যার প্রতিশোধে; হতভাগ্য হ্যামলেট
ভাঁজ খুলে দেখ প্রেম নয় জ্বেলেছি আগুন

এ-বাসনা একি শুধু অভিশাপ?
কবে সিংহাসনচ্যুত হলো মাতা আর অনুকূলে
এলো হোরাস,অ্যাডোনিস

আজ ও পা বেঁধে রাখা চিনে নারী আমি
গালে-মুখে রঙ করা কঠিন মুখোশ
দেহ,হায় দেহ দিতে ব্যর্থ এ দেহ
তবু অপরিবর্তনীয় থাক এই সমর্পন
প্রকৃতিকে কে করে বিদ্বিষ্ট
বেত্রাঘাত কে করে আজ নারী-যাদুকরীর হাতে!

একদিন নিদ্রা ফেলে গভীর বিশৃংখলা সেও
শিখিয়েছ তুমি-------
আমি শুধু প্রায়শ্চিত্য দিয়েছিলাম শর্তহীন পাপের
আর আমিও পাপের অধস্তন

তুমি কি গীর্যার যাজক?
ভালোবাসা বা কামনা এসবের নিহিতার্থ
তবে ভরৎসনা
তোমার একগুঁয়ে টুপি নির্ধারিত রেখো
ক্যাথলিক অন্তেষ্টির জন্য,আর জেনো

আমি উনিশ শতকের কোনো চিতা নই

আলি রেজা

শিরোনামহীন


গোবধে মত্ত নগরী হঠাৎ নিস্তব্ধ

যেনো অকাল পতনে নির্বাক পুরুষ
ঢিল ছুঁড়ে দিলে পাপড়ি খুলে যায়
কুয়াসা ভাঙ্গা সূর্যের উতল উত্থানে;
রোদ চশমায় খেলা করে ছায়াবতী
পৃথুলা নিতম্বের তলে ফুলছাপা প্যান্টি
উদরের অভিলাষ খোঁজে প্রতিটি পদছাপে;
যখন কাঁচের গুড়োর বৃষ্টি নামে
আমিও পাতার নৌকা ভাসাই দীঘল দিঘিতে
হাওয়ার আলপনায় এলোমেলো খন্ডিত খোপা
ভেসে যাবে উড়ুক্কু চুল, কে বাঁধিবে তাহারে?
ব্রীড়া আনত খোপার ভারে স্রোতে ভাসে চিৎ সাঁতার
মাটির কাছে আসো কাজলনয়না কবিতার বর্ণমালা
আমার এখন শব্দের আকাল তোমারতো বর্ণের ছড়াছড়ি।

সুব্রত রয়

দীপাবলী


চারিদিকে আঁধার এতো গহন কালো
চারিদিকে আঁধার এতো মোহন কালো
খুঁজবো তোমায় ?

এই আঁধারে ?
নিজেকেই পাইনা খুঁজে,
আমার এই বিপদ বুঝে
আলোর পথে টেনে তোল
টেনে তোল মহাকালী
তোমার হাতেই দীপাবলী।


সুমিত রঞ্জন দাস



জীবন


তোমার অস্তিত্ব নিয়ে একটা গল্প,
                   আজ কত যে প্রশ্নের জন্ম দেয় ....

গল্পটা উত্তরপর্বে এসে
                  হঠাৎ তোমার খোঁজ করে -
খোলা আকাশ আর সবুজ ধানখেতের মাঝে
ভোরের শিশির কিম্বা পরিযায়ি মেঘেদের খাঁজে,
বুকের মাঝে কোথাও যেন একটা বেহালা
                  করুন বিরহের রাগে বাজে;
পরিত্যক্ত হয়ে ছড়িয়ে থাকে স্মৃতি
                  ক্ষতচিহ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।  

গল্পটার মাঝে মাঝে ভেসে বেড়ায়
                  অনেক প্রশ্ন - অনেক উত্তর
তোমার কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চায়,
বিবেক তখনও চুপ করে থাকে, হাসে
চলতে চলতে পথটা সরু হয়ে যায়
                  দৃষ্টি আরও ঝাপসা হয়ে আসে;
এইসব দেখে গল্পটা আরও জটিল হয়
                  অস্তিত্বের প্রশ্নটা অজ্ঞাত রয়ে যায়।

খড়িমাটির মতো তোমার অস্তিত্ব
                  পরিত্যক্ত হয়ে যায় পূর্ণতার কাছে,
সংকোচের ঘুণ অস্তিত্বের অন্তঃপুরে কাটতে থাকে
অন্তঃসারশূন্য অবয়ব তখন খুঁজে নিতে হয়,
অনুভবের অতলে তলিয়ে যায় মধুরতা
                  না বিরহ - না মিলন;
এই অপূর্ণতার নামই কি জীবন ?
                  কে জানে, হবে হয়তো ....

অনুপম মন্ডল

জলভৈরবী


হননের প্রদাহে ফুটি।

কুসুম গরাদে। ক্রুশলবণ্য। গোপন ফাঁদ।
আর ক্ষয়ে যাওয়া
নাচের সুরভী শুষে উঠে গেছে
সুধাসোনালী। ক্ষত মুদ্রার নকশায়।
এত এত রাগরেশমি। প্রেতস্বর।
জল সবুজ...
তার রুপের অলিন্দ ফেটে উপচায়।
রেকাবি সুরেলা আখ্যান। চলন্ত শীতঘুম...
শেষতম লাশের বজরায়। রক্তরেণুর বিক্ষেপ।
পাপড়িতে গেঁথে এখন নৈস:ঙ্গ সুরের নোঙর...

রক্তসুরভী

হাড়বালার রক্তকলায় ভরা অই বিষের বাগিচা।

যখন পরীজনমের দিকে
নানা বরণ শকুনি চুলের ভার। লক্ষ লক্ষ ছায়াপাত।
স্তনটিলায় নিভে গেছে চাঁদ আর
ফাঁটা কুমকুমের মজ্ঞিল ছেড়ে
ঘনিয়ে আসে
মনসামালার লুপ্ত আভা।
মদনভষ্ঞের কূলে সোনালী
শ্যাওলার স্তুপ। মধুজঙ্ঘার যত আরোগ্য গান।
তাদের খোলা কামনাশকতায়
বেঁকেচুরে যায় যেন
তোমার সবুজ রুপের গান্ডিব। ছড়ানো ছিটানো
নাটমল্লার ঘুমন্ত চিতাপ্রহরায়...

সুদীপ্তা চ্যাটার্জী

কল্পচিত্র

অসুখ রঙ মেখে সাদা চাদর ...

অচেতনে, দু দণ্ড সুখী ঘুম
শ্বাসরোধকারী সাইডেক্স বাতাসে
বিমর্ষতায় বাঙময় চোখ মেলে পক্ষীশাবক
অনুচ্চারিত শব্দে...

#

চৌকো ফ্রেমে
দুলছে দুরন্ত মেয়েবেলা
ঘাসের বিছানায় পা ডুবিয়ে
গুচ্ছ কথা ঝুড়ি নামিয়ে বটগাছ...

#

নতজানু ভিক্ষুক সময়ের দ্বারে
মেঘের কান্নায় ভারী মাটির বুক
নিঃশ্বব্দে ভাঙছে পাড় ;

বিপদ সীমা পেরোচ্ছে বেনোজল
অপেক্ষা শুধু সেই ক্ষণের ...


বহু সংক্রমণের সংগ্রামে শেখা

আদিম কৌশলে
মুহূর্ত থেকে খুঁটে খাই তুলে আনা মুহূর্ত ।।


অলক বিশ্বাস

মানিক

আকাশে যেটুকু আলো

আঁধার মানিক আমার
দিলাম তোমায় নদী
থেকো শুধু ভালো ।


ঘর


সংসার স্তুপে যে বাঁশি হারিয়ে সুর

পুড়ে পুড়ে অন্ধত্বে গড়ায়,
বাসন-কোসন ভরা যত ঘরবাড়ি
ছন্দহীন, হৃদয় সরেছে বহুদূর




কাশীনাথ গুঁই

সুরভী



মধুমতীর চোরা স্রোতে হারিয়েছে অনেক জল।

সুরভীর অপেক্ষায় আমার জীবনবসন্ত আজও নিস্তরঙ্গ।
কৈশোরের পরীটি আজ বালিগঞ্জের সান্ন্যাল বাড়ীর সম্ভ্রান্ত ঘরণী।
তিন দশকের সময় প্রবাহে আমাকে ভুলতে তার বাধা কিসে আর।
মধুমতীর ঘাটের ডাইনে মন্দিরের গায়ে লেখা নাম সুরভী সান্ন্যাল
সংস্কারের কারণে মুছে গেল গত দীপাবলীর মাসে কারুকুশলীর ছেনিতে।
বুকটা সেদিন খালি হয়ে গেল একমাত্র স্মৃতি খোয়ানোর শোকে।
ভুলে গেলাম মৃত্যু শয্যায় গুরুমশাইয়ের আদায় করা -
জীবনে কখনও কলকাতামুখো না হওয়ার অঙ্গীকারের কথা।
মনের বাধার কথা শুনে দক্ষিনে না গিয়ে দক্ষিণেশ্বরের এঁদো গলিতে
আমার মোটর সারাইয়ের ছোট্ট কারবার।
দুজন মিস্ত্রী নিয়ে ওখানেই থাকি রাতে, স্বপ্ন দেখি কত।
সবাই ঘুমোলে ভাগীরথীর বুকে মধুমতী আর সুরভীকে খুঁজি।
কদিন আগেই রবিবারের ভীড়ে এক সুরেলা গলার ডাকে
হঠাৎ বিদ্যুৎ খেলে গেল আমার হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে।
মাথা ঘোরাতেই ছিটকালো স্লাইস রেঞ্চের হাতলটা-
একী সুরভী এলো কোথা থেকে!
সুরভী আসবে কিভাবে সেই আগের রূপে-
সুকন্যা খুশীতে কার্ড দিয়ে নেমতন্ন করলো কাজের শেষে।
আগামী রবিবারে ওর বিয়ে তাই এসেছিল ঠাকুরের প্রসাদী নিতে।
যত্নে লিখে যাওয়া নামের অক্ষরে চেনা কিছুর রেপ্লিকা-
বাড়ীর ঠিকানা খুলে দেখি ত্রিশ বছর আগের সুরভীর উপহার
যত্নে রাখা পার্কারের প্যাকটের ঠিকানাও ছিল একই।
সেদিনের সুরভী আজও সমান কুহকিনী।।।



লাঠি লজেন্স



তখন আমরা দশম শ্রেণী -

বিয়ের পিঁড়ি ডাকল তোমাকে।
চিঠি দেবে বলে কথা দিলে-
লাল বেনারসী গা ভরা গয়নাতে
আরো সুন্দরী হ’য়ে চলে গেলে।
আমি রয়েছি বসে বাইশ বছর ধরে-
জ্বালিয়েছি পিওন কাকাকে- কাল সে অবসর নিয়েছে।
কেউ চিঠি লেখার সময় পায়নি
কেউ ফিরে এসেও দেখা দেয়নি, সে কথা রাখেনি।
কেউ কথা রাখেনা বলেই সেও রাখতে পারেনি।
কেউ কোনদিন আসবেনা জেনেও কেন যে দিন গুনি-
দেওয়ালে কান পেতে কার পদধ্বনি শুনি আমি।
তুমি শোনো এখনও অপেক্ষাতেই আছি-
তোমাকে বড় যে ভালবাসি আমি।

মৌ দাশগুপ্তা

প্রেম



আপন পুরুষটি যখন তার চাহিদায়,পৌরুষে

ঝলসে দেয় তার কাঙ্খিত নারীটির প্রাকপুরাণিক মন,
তখন জল স্থলের পৃথিবীটাকে বৈচিত্র্যময় মনে হয় ।
নিস্তেজ রোদ্দুরের মতো ম্রিয়মান প্রাণেও
গোপনে দোলা দেয় অকাল বসন্ত।
জলের বিন্দু ঝরানো ম্লান চোখে ঝলসে ওঠে
আনন্দের বে-নি-আ-স-হ-ক-লা ।
আর সব অনৈচ্ছিক পাপ, সব প্রতিকূলতা জয় করে
আশীষ হয়ে জড়িয়ে ধরে এক পৃথিবী সুখ।
আবার সেই পুরুষের মন জয়ের ব্যর্থতায়
আঁচল ভরা গন্ধরাজের মৌ-মৌ করা সুগন্ধও যায় উবে।
তীব্র মহুয়ার নেশাও ম্লান হয় এক নিমিষেই,
মেঘে ঢাকা বিকালের মতোই,
জীবনের রোদ চকচকে মূহূর্তগুলো
একটু একটু করে মিলিয়ে যায় দিনান্তের অন্ধকারে।
বলোতো পুরুষ,তোমাতে এমন কি শক্তি আছে
যা তোমার ভালোবাসায় আছে, আছে তোমার ঘৃনার সাথেও!
জানি, কি বলবে তুমি, তুমি বলবে “প্রেম” ।

শ্রীশুভ্র

চুপচাপ জেগে থাকা ভালো!



চুপচাপ জেগে থাকা ভালো!

কি হবে কূটতর্ক করে?
কি হবে মুখোশে টান মেরে?
শিউরে ওঠা ছাড়া?
মঞ্জরিত ভালোবাসার সুধা
অমৃত নয়, গরল হয়ে গেলে
কি হবে অযথা বিলাপ করে
যুক্তি তক্কে পরবর্তী মেলে?
গূঢ়তর সৌন্দর্য্যের মানে
চোখে নেশার কাব্য পড়তে পারে!
তবু চোখকে বলে রাখা যাক;
ভালো বলে তারিফ কোরো!
নেশায় পড়ো না যেন!
জানতে চেও না
কারণ কিংবা কেন!

বিসর্জনের লাইনে দাঁড়িয়ে

যথারীতি কাণ্ডজ্ঞানে যতি
পড়তে পারে! তবুও যাবার
আগে সেদিন, চিতার উষ্ণতা
আর কবরের গভীরতা মেপে
যাওয়া ভালো! ওপারে গিয়ে
ধান ভানতে হতে পারে!

সংসারী মানুষ বলে চারিত্রিক দোষ নেই ভাবলে

দায় কে নেবে?
প্রতিধ্বনি আদর না দিলেও
রোজকার চুম্বন যথাস্থানে
ছুঁয়ে রাখতে হবে!

সৌমিত্র চ্যাটার্জী



ঘুম আয়


আঁকা বাঁকা পথ
শাল কি শিমুল নদী নিঃঝুম শান্তির ঘুম
                                      ভেসে যায়
কিছু কথা থাকে কথার আড়ালে
বৃষ্টির ছাঁট জানলায়
মন খারাপের পালা শেষ হলে
তবু কিছু কথা থেকে যায়
                                      ডেকে যায়
আবছায়া ঘর কাঁপা মোমবাতি
আঙ্গুলের ফাঁকে উত্তাপ
কাঁদছে দুটো দুটো মানুষের মন
চেনা রিংটোনে শীততাপ
                                      কেঁদে যায়
কাঁদছে এখন মানুষের মন
কাঁদছে আমার মাটি
টানছে আমায় বিবেকের সুতো
চল মানুষের মাঝে হাঁটি
                                      হেঁটে যাই
হাঁটতে হাঁটতে সীমানা পেরোব
বুকে গেঁথে নেব বিশ্বাস
গাঢ় হবে আরো মানুষের রঙ
আয় ঘুম গাঢ় নিশ্বাস
                                      ঘুম আয়

রেজা রহমান

কি পড়াও তুমি অধ্যাপিকা?


আমাকে শুনতে হবে সেরে উঠতেই যদি চান

তুলসী পাতার রস সাথে মধু তিন বেলা খান
ডাক্তার লাগবেনা বলেছিলে আজও মনে পড়ে
আরো কিছু মনে পড়ে এই রোদ এই বৃষ্টিঝড়ে।

মরবে বলেই বুঝি সেরে উঠেছিলো প্রত্নপ্রাণ

সাবধানে মার নেই মারেরও কি ছিলো সাবধান!
ঘটনাটা সামান্যই কবেকার দিনবিশেষের
সেটাই কি শুরু ছিলো না কি ছিলো সূচনা শেষের?

অসুখটা চিনি আমি আরোগ্যটা একটু যদি চিনি

তোমার কাছেই শুধু অধ্যাপিকা থেকে গেছি ঋণী।
অসুখ কি দেখতে পাও তাকালেই মানুষের মুখে
আরোগ্য শেখাও কি তুমি ছাত্রদের এখনো অসুখে?

নেভেনা কক্ষনো যদি একবার জ্বলে ওঠে শিখা

এখনো শেখাও কি তুমি শুদ্ধতম অগ্নি অধ্যাপিকা?
অঙ্কে খুব পাকা ছিলে অঙ্কে সঁপেছিলে মনপ্রাণ
অঙ্ক কি শেখাও তুমি ক্লাশে আজও হিশাববিজ্ঞান?

সে একটা দিন গেছে চোখে জল যখন তখন

তুমি গান গাইলেই বৈঠা তুলে নিতো মাঝিমন
মানুষমাত্রই জানে শস্যক্ষেত্রে জলের ভূমিকা
চোখের জল টা কি দিয়েছিলো জানো অধ্যাপিকা?

দিয়েছিলে পার্থক্য দিয়েছিলো রাত থেকে যেতে

দিয়েছিলো স্বাধীনতা বাসরশয্যার মত পেতে
সেই রাতে বলোনিকি ফেরার উপায় নেই আর
আলোটা নিভিয়ে জ্বেলে দাওনিকি প্রত্ন অন্ধকার?

বলোনিকি তুমি বলো “তোমাকে ভালো-না-বাসা পাপ”

নিজেই আগুন জ্বেলে নিজে তুমি দাওনিকি ঝাপ?
কেন শূন্যতাকে দিতে গেলে তুমি দৈর্ঘ প্রস্থ বেধ
থাকা-না-থাকার মধ্যে বিশ্বাসঘাতক প্রভেদ?

চেনালে তুমিই জল-পাথরের পার্থক্য রেখা

শেখালে কবিতা লেখা মানে শুধু ভালোবাসা লেখা
যে গান শোনাতে আগে সে গান কি নিজে তুমি শোনো
কবিতা লেখা কি তুমি অধ্যাপিকা শেখাও এখনো?


মামনি দত্ত

এসো ফিরে


চলো, এক মুঠো স্বভাব বিরুদ্ধ পৃথিবী ফিরিয়ে আনি
সমস্ত ঋন পরিশোধের পর!
হারান মাঝির ছেলে আর স্কুল কামাই করেনা,
রানু মাসির অনূঢ়া মেয়ে চৈত্রের দহন বেলায়
বর্ষা নামায় নিরন্তর ভালোলাগার আবেশে!
জীর্ণশীর্ণ চোখের তারায় ফুল কাটা নকশা
মহাকাশ থেকে নামিয়ে আনে নিঃসংগ কোন প্রাণ।

যেকোন ক্ষত তে আর কোন মাছিদের হাতযশ খেলা করবে না,
ধীরে ধীরে রঙ্গিন কোলাজে জ্যোতিষ্ক সাজিয়ে দেবে
ঈশ্বর কনা দের মহামিছিল!
তোমার আমার সামনেই, আমাদের স্বভূমি
জেগে উঠবে আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে
আশ্চর্য এক সন্ধ্যায়, সংগীত মূর্ছনায়।।।


বৈজয়ন্ত রাহা






তোমরা সকলেই



তোমরা সকলেই
বাকরুদ্ধ সৈনিকের মতো
আনন্দিত
হেঁটে যাও অগণিত মিথ্যার মিছিলে—
দুই পাশে পড়ে থাকে প্রকৃত শিবির।
তোমরা সকলেই
অন্তরালে প্রশংসায় ডুবে থাকো মৌন-বধির
পেতে পারো সরণী-আলোক এই ভেবে,
তোমরা সকলেই
একে ওকে তাকে হাতে রাখো
স্বাভিমানে জল হয়ে মিশে যাও ক্ষনিক-স্পর্ধায়,
সকলেই
হাততালি দাও, দিতে হয় বলে
পিঠে পিঠ ঘসো,
মসৃণ চামড়া আরও ফেননিভ হবে, মাখনের মতো,
হাততালি ফিরে পাবে, আদুরে বিকেলে,
তোমরা সকলেই
হাসিতেই হাসো, সহজ আলোকদানি
পীতাভ সন্ধ্যার আগুনে সুর্য ঝাপটায় পাখা,
আমার হাতের মধ্যে খেলা করে চৌরাস্তার দু-ফোঁটা রোদ্দুর,
যেনো লাট্টু, যেনো দুই পাক মেরে লেত্তিটা টানবো এস্ প্ল্যানেডের মোড়ে,
যেনো তোমার চুলের পাশে আচমকা নিঃশ্বাস—
আমার হাততালি দিতে ইচ্ছে করে না—
আমার কুচকাওয়াজ করতে ইচ্ছে করে না—
আমি ভেংচি কাটি , বক দেখাই—
তারপর ইচ্ছেমতো হেঁটে যাই একেবারে উল্টোদিকে,
প্রতীক্ষার আঁধারে,
যেখানে লুকিয়ে থাকে তোমাদের নগ্ন হনন।

কবিতার দেশে মঞ্জুলা

চাইনা কিছু


আমি চাইনা হতে মনেরও আঁচল
আমি চাইনা হতে কারো নয়নেরও জল
বৃষ্টির কাছে আমি কাঁদতে শিখেছি -
কাঁদতে তাই আমি ভালোবাসি
আমি চাইনা হতে কারো মনেরও অনল
আমি চাইনা হতে কারো চোখের কাজল
জ্বলতে শিখিয়েছে অগ্নি আমায় -
তাই জ্বলতে আমি আজ ভালোবাসি
আমি চাইনা জানতে কারো মনের কথা
আমি চাইনা হতে কারো মনের ব্যাথা
জানতে শিখিয়েছে সাগর আমায় -
তাই অসীমকে আজ আমি ভালোবাসি
পৃথিবীর কাছ থেকে চলতে শিখেছি -
পিছু ডাকে তাই আজ ভয় নেই



পরপার


ছুটছে দেখো ছুটছে সবাই পিছন ফিরে দেখছে না
কোথায় গিয়ে থামতে হবে সেটাই মনে রাখছে না
কেউ বা ছোটে টাকার নেশায় কেউ বা খোঁজে নাম
কেউ বা ঘোরে প্রেমের আশায় না জেনে পরিনাম
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সবাই পরের কথা ভাবছে না
ভালোবাসার বিধিনিষেধ কেউ বুঝি আর মানছে না
হারিয়ে গেছে ভালোবাসা প্রেমের পাখি গেছে উড়ে
সুখী আজ নেই তো কেউ গাইছে সবাই বিষাদ সুরে
যতই ছোটো নেশার আশে মরন যেন আছে পাশে
যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক সে তোমায় ছাড়বে না
ভালোবাসার সঙ্গী নিয়ে যাবে পরপারে ...



তোমার লাগি


শুধু তোমার লাগি ভোরের আলো শিশির ভেজা ঘাস
শুধু তোমার লাগি প্রথম সকাল ভালোলাগা একরাশ
তোমার মাঝে দেখি আমি ক্লান্ত দুপুর বেলা
তোমায় ভালোবেসে কাটে একটি বিকেল বেলা
তুমি আমার সারাদিনের না বলা কবিতাখানি
তুমি আমার প্রেরণা হয়ে রয়েছো জেগে জানি
শুধু তোমার লাগি দুর্গম এই জীবনে বেঁচে থাকা
শুধু তোমার লাগি জীবন দিয়ে মরণ ঢেকে রাখা



ক্ষতচিহ্ণ



ভেবেছিলাম তোকে আর ডাকবো না

ফিরেও দেখবো না তোর পানে
কি হল কে জানে -
হোল না কিছুই ভাবনাগুলো ভাবনাই রয়ে গেল
ভেবেছিলাম আসবো না আর তোর কাছে
মুছে দেব সব স্মৃতিগুলো
এতদিন যে সব স্মৃতিরা আমার খুব প্রিয় ছিল
পারলাম না কিছুই -
আমি আজো রয়ে গেলাম সবার পিছু
ভালোই হত তোকে ভুলে গেলে
ভালোই হত তোকে আর না পেলে
এত বেশি ভালোবাসি তাই ভুলতে পারলাম না তোকে
একটা গভীর ক্ষতচিহ্ণ হয়ে বেঁচে থাকি আমার বুকে