কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা



“অসতো মা সদগময়,তমসো মা জ্যোতির্গময়,মৃত্যুর্মা অমৃতংগময়”

দীপাণ্বিতার অমানিশা,
অন্তরে তার আলোর তৃষা।
তৃপ্ত হোক দীপ্তিতে সে,
ঘুচিয়ে আঁধার সর্বনেশে।
জ্ঞানের আলো তমোহরা
আলোয় সাজুক আজকে ধরা,
“আলো আমার আলো ওগো, আলোয় ভুবনভরা”

দীপাণ্বিতার আলোকধারায় স্বাগত .....আলোর উৎসব আপনাদের সকলের জীবনকে আলোকময় করে তুলুক,কলমচারিতার আরম্ভেই আপনাদের সকলকে কবিতার পরিবারের পক্ষ থেকে দীপাবলীর শুভ কামনা জানাই ।

দীপাবলীর রেশ এখনও আকাশে বাতাসে ছড়ানো, আলোর উৎসবের রোশনাই এখনও আমাদের মনে,এর মধ্যেই প্রকাশিত হল আমাদের কবিতার পরিবারের সাহিত্য মুখপত্র “পারিবারিক”।“পারিবারিক”-র বয়স খুব অল্প (এটি মোটে চতুর্থ সংখ্যা) এবং আমাদের অভিজ্ঞতাও খুব কম। তারপরেও কবিতার পরিবারের সকল সদস্য এবং শুভানুধ্যায়ীদের অনুপ্রেরণায় অসমসাহস নিয়ে “পারিবারিক”কে বিবিধ সাহিত্য-অলঙ্কারে সাজানোর এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। শব্দেরা জীবনের আত্ম কথা বলে , আর কলমনিষিক্ত বাক্যরাজি বলে আত্মার কথকতা....এই অনুভবটাতেই পারিবারিক দিনে দিনে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়ে ওঠার প্রয়াস পাচ্ছে। তাই সাফল্য বা জনপ্রিয়তার হিসাবে নয়, আপনাদের ভালোবাসা পেলেই আমাদের পথচলা সার্থক।

যতবার শুরু করতে যাই ততবারই ঐ লাইনটার কথা মনে পড়ে

" তারপর যেতে যেতে যেতে এক নদীর সঙ্গে দেখা..."
কবিতাকে দিকশূণ্যপুরে পাঠিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল
অরণ্য অথবা পাহাড় কিংবা সাগরের........।
আর সেসব না হয়ে যদি কেবল নদীর সঙ্গেই দেখা হতো তাও নাহয় চলতো ।
কিন্তু ওসব কিছু হল না , সে দেখা পেল একটা শবের ;
কবিতা চমকে উঠে মানতেচাইলো তাও ...
কিন্তু খই ফুল আর অগুরূর গন্ধে ভরা শববাহকরা কই ?
কেউ নেই কেন? শুধু ঐ শবের পাশে আবছা দাড়িয়ে আছে আরেক অন্য মৃত্যু ।
সে মুখ ঘুরিয়ে তাড়াতাড়ি পা চাললো যে দিক পাহাড় দেখা যায় সেই দিকে,….।
তারপর যেতে যেতে যেতে সে খুঁজতে থাকে জোৎস্নার ঝর্ণাকে ,
নিদেন পক্ষে প্রেমের সঙ্গে দেখা হলেও চলতো …
কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ক্ষিদের….

পূজোর ছুটীতেই নীললোহিত হারিয়ে গেল দিকশূণ্যপুরে,সাথে নিয়ে গেল কাকাবাবু-সন্তু,নীরাকেও। সাহিত্যপ্রেমী বাঙ্গালীর কাছে ম্লান হয়ে এল শারদীয়ার উচ্ছ্বাস, ঈদের আনন্দ।এরই আগে চিরজীবনের মত এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন বাংলা সাহিত্যের অন্য দুই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব,কবি হুমায়ূন আহমেদ আর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।জীবনের একেকটা অধ্যায়ে জীবনটা কাটতে থাকে একেক রকম করে।তাতে প্রাপ্তির আনন্দ যেমন আছে তেমনিই আছে বিচ্ছেদের দুঃখ। জন্ম - মৃত্যু দুই-ই একে অপরের পরিপূরক যে! একই সুতায় সেসব গাঁথা বলেই হয়ত একটার সাথে একটা যোগ করা অংকের মতন। দিন যায় দিন আসে, পরে থাকে অভিজ্ঞতা।রচয়িতা চলে গেলেও রচনা তাঁর / তাঁদের সাক্ষর বহন করে নিয়ে যায় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে।এটাই বিদ্যাদেবীর অমরত্বের আশীর্বাদ, তাঁর সেবকদের জন্য।কবিতার পরিবারের পক্ষ থেকে সাহিত্যের এই অমর সেবকদের উদ্দেশ্যে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।

দীর্ঘ সামাজিক জীবনে মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, নিত্যকার মান- অপমান, জীবনের পলে পলে ক্ষয়, গলিত ও যান্ত্রিক জীবনচর্চা -¬ তবুওতো মানুষ মানুষের জীবনেই বাঁচে । মানবসভ্যতার তীব্র সঙ্কটের মধ্যেও তার অস্তিত্ব বজায় রাখে । অন্তরশায়ী এই গভীর বেদনাবোধের ,অনুভবের প্রতিনিয়ত নুতন করে বাঁচার ইচ্ছা, মূর্তরূপ নেয় লেখার আখরে, কাব্যের ব্যঞ্জনায়,তুলির আঁচড়ে। ব্যক্তগত কিংবা সমষ্টিগত চিন্তা,অনুভুতির স্বতস্ফূর্ত উৎসারণ, জীবনের প্রতি অদম্য বিশ্বাস, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীল মনোজগত আর তার প্রত্যয় ও ভাষার কারিগরি দক্ষতা, এই বিবর্তনের ধরন-ধারন যাচাই করতে, আমাদের হাতিয়ার লেখনী কিংবা তুলি, আর সেই লেখনীর সামনের সাদা পাতা,তুলির উপযুক্ত সাদা ক্যানভাসের প্রতিরূপ আমাদের পারিবারিক।

কবিতার পরিবারের সকল সদস্যের, পারিবারিকের সকল শুভানুধ্যায়ী পাঠক/পাঠিকার ভালোবাসার,ভালোলাগার সরল অনুভবে পারিবারিকের শিশু মনের কোনে সুপ্ত জ্ঞানবৃক্ষ শিকড় ছড়িয়ে ডালপালা মেলে ঘুম ভাঙ্গছে।- ছুঁয়ে ফেলছে নিয়মে আড়াল করা নন্দিত সুখ, আস্বাদন কেউ করুক বা নাই করুক। রঙ্গীন জেল্লার বলয় পার হয়ে স্মৃতি মঞ্জুষার যত অভিজ্ঞান আজ বৃত্তকারে আবর্তিত হচ্ছে তাকে ঘিরে। বাংলা ভাষার সৃজনশীলতা ও প্রয়োগ নিয়ে “পারিবারিক”-এর ভাবনা সকলকে উৎসাহিত করবে এই আশা রাখি । আমরা দুই বাংলার সাহিত্যানুরাগীদের ভাবনার ফসল।আমাদের সাহিত চর্চার খবর যদি কেউ জানতেই না পারে তাহলে আমাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ । তাই নিজেদের আলোকিত করতে পারিবারিককে আরো উজ্জ্বল ও আকর্ষনীয় করে তুলন। আরও সুন্দরভাবে “পারিবারিক”কে সাজানো যায় কি’না এ ব্যাপারে আপনার / আপনাদের সুচিন্তিত মতামত থাকলে জানান। আপনাদের সবাইকে অনুরোধ, মনের সমস্ত দূয়ার খুলে প্রাঞ্জলভাবে পারিবারিকে লিখুন। “পারিবারিক”পড়ুন ও পড়ান। আমাদের উৎসাহ দিন, উজ্জীবিত করুন।পরিশেষে সকল লেখক/কবি/চিত্রকরবন্ধুদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সুন্দর সুন্দর রচনার জন্য এবং সে সাথে “পারিবারিক”-এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি!

“শুভম করতি কল্যাণম,আরোগ্যম ধন সম্পদা,শস্ত্রবুদ্ধি বিনাশায়,দীপজ্যোতি নমস্তুতে।।“


পারিবারিকের পক্ষে
মৌ দাশগুপ্তা
অতিথি সম্পাদক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন