কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা


সম্পাদকীয় -  ১ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা


ফেস বুকে প্রতিদিন-ই একটা কি দুটো নতুন গ্রুপ গজিয়ে উঠছে - রকমারি বার্তা নিয়ে সাজসজ্জায় আধুনিকতা ও চোখ ধাঁধানো মোড়কে। কিন্তু সম্পর্কের বন্ধনে বেঁধে থাকবার - একটা পারিবারিক আকর্ষণে সাহিত্য মনস্ক মানুষ গুলিকে একসাথে রেখে দেবার মানসিকতা কবিতার পরিবারের এক অসাধারণ সম্পদ। বলতে গেলে, ফেসবুকে সর্বাধিক স্বার্থক একটি পারিবারিক কবিতা সংগঠন। দুই বাংলা মিলে মিশে বিশ্বের সমস্ত প্রান্ত সীমাকে ছুঁয়ে গেছে কবিতার পরিবার - ২৪ ঘন্টা সচল - ৩৬৫ দিন। এই ভার্চুয়াল পৃথিবীতে সমস্ত লিমিটেসন অতিক্রম করে একটি পারিবারিক চেহারা দেবার এমন সুন্দর প্রচেষ্টার জন্য পরিবারের প্রাণ পুরুষ সিদ্ধার্থ শর্মা কে আমার স্নেহ ও ভালবাসা। পারিবারিক ব্লগ জিন বের করবার দুঃসাহস দিয়েছিলেন এবং আজ-ও মুখ বুজে সব পরিশ্রম সয়ে নেন সেই সুমিত রঞ্জন দাস কে আমার শ্রদ্ধা। মৌ দাসগুপ্ত, নাশিদা খান চৌধুরী , ঝুমা মজুমদার এবং সর্বোপরি মঞ্জুলা দিদির সুযোগ্য পরিচালনাতে পরিবার যেভাবে চলছে সেই আবেগে শ্রদ্ধায় আনত হই। ঐকান্তিক ইচ্ছে ও প্রাণ-প্রাচূর্যেই সম্ভব হয়েছে, কবিতার পরিবারে একই সাথে কবি ও পাঠকের দুই রকম চাহিদা মেটানোর। পরিবারে নতুন কবিদের যেভাবে উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নেবার চেষ্টা দেখেছি, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়।

খুব সুখের কথা আজ বেরুচ্ছে ব্লগজিনের ৬ষ্ঠ সংখ্যা। সুমিত বাবু ও সিদ্ধার্থ সামলাচ্ছে সব - প্রচুর মানুষ লিখছেন । প্রত্যেককে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

পারিবারিক আরও আরও ভালবাসা কুড়িয়ে নিক - পরিবার আরও সমৃদ্ধ হোক এই প্রার্থনা। ধন্যবাদ।।



পারিবারিক সম্পাদকমন্ডলীর পক্ষে শ্রীযুক্ত জয়ন্ত সাহা

ম্যানিফেস্টো - জয়ন্ত সাহা

আধুনিক কবিতা একজন সাধারণ মানুষের ভাবনায়


কবিতার পরিবারের দুই কাছের মানুষ সুমিত রঞ্জন দাস ও সিদ্ধার্থ শর্মার অনুরোধ অগ্রাহ্য না করতে পেরে এই লেখা লিখতে বসেছি - যদিও আমি নিজেই সন্দিহান আধুনিক কবিতার বিচারবোধ নিয়ে কিছু লেখার সক্ষমতা সম্বন্ধে। আমি নিজে ঠিক আধুনিক বলতে যা বোঝায় সেরকম কবিতা লিখে অভ্যস্ত নই - কিন্তু সমসাময়িক আধুনিক কবিতার পাঠক। সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে, মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু মানবচিত্তের ইচ্ছার আরতিতে কল্পনা চিরকাল মুক্ত বিহঙ্গের মত থাকে - আবার সামাজিক নিয়মে বাঁধা, অস্থির সমাজের কর্দম ও ক্ষতচিহ্ন মাখা, দগদগেঘায়ে লিপ্ত অনুভব-ও জুড়ে থাকতে চাইছে। আবেগ প্রবন ও আধুনিক কবিদের মধ্যেসবচেয়ে গীতিময় আমার প্রিয় বদ্ধুদেব বসুর মতে - "কবিতা এমন কোনো পদার্থ নয়যাকে কোনো একটা চিহ্নদ্বারা সনাক্ত করা যায়' যেহেতু আধুনিকতা হচ্ছে সমাজপ্রগতির নির্ণয়ক তাই মৌলিক প্রেম, প্রকৃতি - র সাথে চার পাশের মানুষ, সামাজিক আন্দোলন, ইত্যাদি অজান্তেই হয়ে ওঠে কবিতার মূল উপকরণ।কবিকে মনোযোগীহতে হবে দেখতে তার কাব্যকে ঘিরে আছে কিনা তীব্র সচেতনতা ও অনুভবের পটভূমি।অনেকেই যারা কবিতা বুঝলাম না কবিতা বুঝি না বলে খেদ প্রকাশ করেন তাদেরভাবতে হবে - কবিতা বোঝা নয় - কবিতা অনুভবের - কবিতা উপলব্ধির। কবি ও পাঠকের মেলবন্ধন ঘটে কবিতা। আর এই মেল্বন্ধনেই অপজাতের বিষয়াশ্রয়ী হয়েও অনেকসময়-ই কবিতা উঁচু জাতের শিল্প কর্ম হতে পেরেছে। কনোর রকম ছুৎমার্গ ছাড়াইপড়তে ভালো লাগে সেই সব কবির কবিতাও যারা তাবৎ সংস্কার ও প্রথা ভাঙার আন্দোলনে সুর্যের মত দ্বিধাহীন, এমন কিছু তরুন কবির সন্ধান-ও পেয়েছি এইবৈদ্যুতিন মাধ্যমের দ্বারা। হাংরি আন্দোলনের বয়স ছিল মাত্র চার বছর -কিন্তু আজ-ও এই পঞ্চাশ বছরে পরে কাউকে কাউকে দেখি এর ভাবধারাতে উদ্বুদ্ধহতে।

মজা হলো এই যে বিশ্বে যেই কবিতাগুলো বেশি জনপ্রিয় তার মধ্যেপ্রেমের কবিতার সংখ্যাই বেশি। বৈষ্ণব পদকারকার দেহাত্মা আর পরমাত্মার সংশ্লেষণ ঘটিয়েছিলেন তাদের কবিতায়। সেই ধারায় লেখা অনেক কবির কবিতায়আজকাল দেখি দেহাত্মা অর্থাৎ দেহজ অনুভব বেশি প্রাধান্য পায় কিন্তুপরমাত্মিক অনুভব উহ্য থেকে যায়। তাদের ভাবতে হবে এই গ্যাপ টা। পরকিয়াপ্রেমে অনেকের অনুরক্ততা কবিতায় ফুটে ওঠে - রাধা-কৃষ্ণ, ইউসুফ-জুলেখা -এদের কাছে দারুন অনুভব আনে। আবেগময় অনুভূতিতে শব্দের ব্যঞ্জনায় সাজিয়ে আবেগের উন্মাদনায় সৌন্দর্যের আস্বাদন ঘটান কত কবি আজ-ও। কিন্তু কবিতা লিখতে লিখতে কবি যখন এই বোধে উপনীত হন - প্রেম শাশ্বত, প্রেম চিরন্তন তখনঅনেক সময়-ই প্রেমের কবিতা লিখতে আর তার মন চায় না।আজকাল আধুনিক গদ্য কবিতার ভ্যন্তরে-ও অনেক কবি সহজ ও সচেতনভাবে উপস্থাপনায় প্রিয়া ও রাজনীতিকে তুলনা করতে পারেন। গদ্যগুণসমৃদ্ধ আধুনিক কবি ছন্দবিহীন পঙ্ক্তি দ্বারাও যখনগদ্যে লুক্কায়িত ছন্দ পাঠকের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হন - তা অসাধারনতায় পৌঁছে যায়। তবে সাধারণ পাঠকের কাছে খুব ন্যায্য কারণেই একটা ভাবনা আসতেপারে আধুনিক কবিতা ঠিক কতটা ভাবোন্মাদ অথবা কতটা ভাবগ্রাহী হলে কোনোকবিতাকে কবিতা রূপে গ্রহণ করা যেতে পারে। এই ভাবনাটাকেও আধুনিক কবিদেরগুরুত্ব দেওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি। তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ, আখ্যানমূলক, অন্ত্যমিলবিশিষ্ট লেখা পড়তে অভ্যস্ত পাঠকের কাছে গদ্যে ছন্দ খুঁজে দেওয়াআধুনিক কবিদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রপঞ্চর পরে প্রপঞ্চ নির্মাণের তাগিদ বাংলা কবিতা সাহিত্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।

কবিতা - পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত



সর্বাণী, দ্য হ্যাংওভার


(১)
প্রেমের ওপর সিলমোহর বসলো কাল রাত দশটায়,
স্মল ওয়ান্ডার,কথা থেকে কিংডম বিপাসা বসুর চেয়েও বেশি।
কাগজের নৌকো ভেসে চললো মিনা-বাজারের দিকে।
ঝিল আমাদের প্লেস্টেশন,সর্বাণী-থিয়েটার,আহ্লাদিত আমি।
চতুর্দিকে লয়লামজনু শ্যামা উত্তীয় গীতিকবিতার প্রবৃত্তকরণ।
তসরীফ রাখো শ্লোক কবিতার খাতায় ফল দাও,
মনের দীপ্ত আগুনে আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাই
টিলার ওপর অতিবাস্তব জাবর কাটছে কিটক্যাট
ছবি আঁকছে গসিপ নায়িকা

(২)

গান্ধর্বে আছি,এই পিংক-প্যারাডাইস কি ভাবে ইলিউশন হবে?
নিজের আঙ্গিক যেন দূর্বাদলশ্যাম।চিঠিতে লিখলাম চতুর্দশপদী।
কবির স্বাতন্ত্রভাব ফুটে উঠুক চতুষ্পার্শ্বিক রঙে,সর্বাণী নিখুঁত।
মনোবিলাসের পাখিটি শিথিলতা পায়নি তখনো,ভাবলাম খুলে দিই
সুলতানের এক ঝাঁক আবেগচুম্বন,দ্রুত শেষ করলাম সেই
গোপন বাস্তব,বিশেষ নারীতে আমি প্রস্তুত,ফুলের নির্যাস এঁকে দিলাম
খেয়ালমতো আর সেই নীরবতা চুঁইয়ে আকাঁ হলো বিপুল শ্রদ্ধা
আঁকা হলো রাশি রাশি রেশমের স্তন,রহস্যময় দ্বিপ্রহর চালসা পাহাড়

অনু কবিতা - কিরীটি সেনগুপ্ত



















কবিতা - সানাউল্লাহ সাগর



উম্মাদনা

গতোকাল সারাদিন অলস ভাবনায় কেটেছে বিচ্ছিন্ন সময়;
স্বপ্নের মাঠে আগাছা তুলে পরিচর্যা চলেছে, ভায়োলিনের কাতরতা
...
থামিয়ে উল্লাসের উম্মাদনায় মাতিয়ে তোলতে সময়। এ রকম যাচ্ছিলো
এলোমেলো দিনগুলো...হঠাৎই দেখা তোমার- স্বর্গ বিচ্ছুত নক্ষত্র তুলে নেবার কালে।
অবরুগ্ধ অন্ধকারে লাল রেখা টানা রাজ্যে। আমিও তখন দূরে দূরবীন নিয়ে
কলম্বাসের সহযাত্রী।

তারপর কিছু খুনসুটির হাঁপানি, মুছে যাওয়া নোনা জলের দাগ আলোড়ন
তুলেছে আত্মার অবয়বে। সরস সময়ের প্রেমালাপে মগ্ন কবি মাতাল থেকে
আরো মাতাল হলো অস্পষ্ট তৃষ্ণা গিলে।

বিদুৎ চমকে গেলে স্পষ্ট দেখা গেলো বেসামাল কাতরতা।
ততক্ষনে নিস্তেজ হয়ে গেছে উৎসাহি মিছিল...

কবিতা - মৌ দাশগুপ্তা



তুমি, আমার মেয়েবেলা

দুধেলা ঢাকাই,লালপাড়,
কাজলা চোখে নিঃশব্দ হাতছানি,
যতবার বিদায় বলেছি
চোখের পাতায় উঠেছে কাঁপন,
কান্না হয়ে মায়া চুঁইয়ে পড়েছে বিন্দু বিন্দু,
অথবা সজোরে আঁকড়ে ধরেছ হাত,
স্তব্ধ স্মৃতি হয়ে গেছে অসহায় সময়।

খেলাছলে যতবার ছাড়িয়ে নিয়েছি হাত।
তুমি আমার ভাবনা হয়ে ঝড় তুলেছ মনে।
ঔজ্জ্বল্যে জ্বলে উঠেছ
রোদ ঝলমলে শিশিরদানার মত।
বুকভরা কথা নিয়ে লাজুক শব্দের ভীড়ে রয়েছ
 ভালোবাসার লজ্জা নিয়ে একা তুমি।

সোহাগী প্রেমের আবেশে গলে যাও তুমি,
নিঃশ্বাসে তোমার ওঠে আদিম অশান্ত ঝড়,
অঙ্গুলি হেলনে শালীনতা সীমা ছাড়ায়,
বাস্তবের তরঙ্গমালায় দুলে একটা একটা করে
জীবনের অসমাপ্ত বৃত্তগুলিকে পার হও তুমি।
মায়াডোরে বেঁধে আমার জীবনের
সোনালী মুহূর্তগুলিকে কেড়ে নাও,
আর আমি ক্ষুদ্র কবি
সেই স্মৃতি ছুঁয়ে বসে থাকি।।

কবিতা - হরপ্রসাদ রায়



একটা জ্যান্ত কবিতার জন্যে

আজকের বিকেলটা তুইআমার করে দিলে
গোধূলিতে তোকে উপহার দেব একটা অমেয় কবিতা সন্ধ্যের
অনুভব
আমার সমস্ত সত্ত্বায় মানুষ হবার বিশ্বাস টা আরও একবার
ঝালিয়ে নিতে চাই একটা দ্বিধাহীন নগ্ন মানুষের মুখোমুখি হয়ে

তারজন্যেআরও একটামৃত্যু অস্বীকার করতে বল
করব, (এমনিতেই কোথায় আর বেঁচে থাকি প্রতিদিন !)
শুধু একটি বার দেখতে চাই
আমার ও অমনটা অনুভব হয় কিনা
নগ্ন শরীরে
এই অনাত্মীয় শীতের আশ্রয়ে আমার আজন্ম প্রতিবেশী
ভিখিরি’ ‘‘কানা মাসীরমতো

কানা মাসীরকাছে বিশ্বাসের বিশ্বাস পেতে এক মুহূর্ত তো
বাঁচা দরকার তার জীবনটাও

আমিযন্ত্রণার মৃত্যু কে বুড়ো আঙুল দেখানোর সাহস জুটিয়েছি এতদিন
যন্ত্রণার বাঁচাকে তো নয়
কানা মাসীরা নির্দ্বিধায় বাঁচা চালিয়ে যায়
খিধে পেটেভাববে কখন, সে নগ্ন কিনা
আমার তো পেটে খিধে নেই

তুই আমাকে আড়াল করে দাঁড়াস, ঋদ্ধ
দুটো পলের জন্যে হলেও
সন্ধ্যেয় তোকে জীবনের একটা জ্যান্ত কবিতা উপহার দেবো