দাদাকে লেখা জলচিঠি
১ জানুয়ারি ২০১৩, ১৮ পৌষ ১৪১৯, ১৮ সফর ১৪৩৩
দাদা
আজ এখানে অন্ধকার চুপ করে আছে
সন্ধ্যা নামছে ছোট্ট দ্বীপের কোল ঘেঁষে...
হোক না অন্ধকার,
থাক না অন্ধকার দ্বীপের মাতলামি
তবুও যদি হাওয়া আসে ফের
এই দ্বীপের বুক চিঁড়ে...
আমি তাঁরা হয়ে যাবো
জীবনের সব কাজ বাকী রেখেই......
এইদ্বীপে কোন ছাঁদ নেই প্রবল তুষারপাতের কারনে, তাই ছাঁদ হয়ে চাঁদ দেখারওসুযোগ নেই। তবে প্রতিটা বাড়িতেই এক চিলতে বারান্দা আছে, আর প্রতিটাবারানাদাই ফুলে ফুলে ঠাঁসা যেন একটা আর্কাইভ...যেদিন আমি এই দ্বীপে পারেখেছিলাম সেদিনই আমার ভাইয়া হাসনাহেনা সহ আরো কিছু ফুলের চারা পুঁতেছিলবারান্দার বাতিল টবগুলোতে। সেখানে এখন সবুজের মেলা বসে গেছে। কোন কোনটাতেফুল ধরেছে... লাল-সাদা, সবুজে-হলুদে সে এক আশ্চর্য মাতামাতি। তাদের যতোগোপন কথা সব সূর্যের সঙ্গে। রাতের শিশির জমে জমে গাছগুলোর পাতায় ও ফুলেতৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত মাদকতা, সেই আমন্ত্রন ছরিয়ে পড়ে বাতাসেবাতাসে...ভোরের বীর্যবান সূর্য এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তার উপর। মেতে উঠেঅদ্ভুত খেলায়... পরিতৃপ্ত যুবতীর মতো অপার্থিব এক শিহরন ছড়িয়ে পড়েগাছগুলোর শিরায় শিরায়......
আমার যখন বুক ভরে শ্বাস নিতে ইচ্ছেহয়, আমি তখন অতল জলের মাছের মতো ফুঁস করে ভেসে উঠি এই বারান্দায়...আমারমনের ও চোখের সকল ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায় নিমিষে... মানুষের এক জীবনেরজন্য এই কি যথেষ্ট নয়...?
তোমার কারুকার্য প্রাসাদ যখন ঘুমন্ত,
আমার এখানে তখন কুমারী সন্ধ্যা...
তোমার জগতে যখন কড়া রোদ্দুর,
আমার আকাশে তখন ঘন তুষারপাত...
আমারএই লিখা যখন তোমার আকাশে পৌঁছবে আমার এই তন্বীময় দ্বীপে তখন কিশোরীভোর... আগামী ৪ জানুয়ারি এমনি এক সূর্যোদয়ের পরেই আমি ফুল বেবির মুখোমুখীহবো অপারেশনের টেবিলে আর এটার উপরেই নির্ভর করছে আমার আয়ুতকাল...
আমারশরীরের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ এবং আমি এখন প্রস্তুত পরীক্ষাপদ্ধতিতে অবতীর্ণ হোতে... ফুল বেবি ক্যানাডা থেকে এক অত্যাধুনিক যন্ত্রএনেছেন যার মাধ্যমে তিনি কাটাছেড়া না করেই দেহের ভেতোরে বসতি গড়াঅণুজীবদের নির্মূল করতে চান... এটাকে লেজার পদ্ধতি বলে। এই পরিক্ষার বেশিরভাগ গবেষক বিফলতা অর্জন করে থাকেন। তবে—ভয়ঙ্কর যে সত্যটা আমি জেনেছি, সেটাহোল—এই অপারেশনের পর বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীর স্মৃতিভ্রম ঘটে। ঘুম ভেঙে যদিআমি বন্ধু, দাদা, দিদি, দাদাই, দাদাভাই, নীল কবি, চিত্র কবি না চিনি। পাখি, ফুল, আকাশ, পাহার, প্রতারণা আর আমার ভালোবাসাটাকেই যদি না চিনতে পারি তবেতোমাদের কাছে আবেদন আর স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা... এ বেঁচে থাকা আমিকিছুতেই চাই না... আর তাই যদি না হয়—তবে আমি মরতেও চাই না... দাদা আমার এইআহ্বান আমার সকল শুভানুধ্যায়ীদের জানিয়ে দাও...
ইচ্ছে ছিল নিখুঁত সূর্যের আলোয় নতুন সকাল দেখবো। কিন্তু—শুনেছি কাল হয়তো সূর্যটার দেখাই মিলবে না তুষারপাতের সম্ভাবনায়...
তবুও আশায় বসে আছি যদি হাওয়া ঘোরে ফের...
নতুন দিনের নতুন আলোয় বিশ্ববাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা... তোমাদের প্রতিটা সকাল শুভ হোক...
ভালো থেকো দাদা নতুনের মুগ্ধতায়...
স্নেহা...
Essor toke 1ti jhok jhoke nikhut sokal dan korun.
উত্তরমুছুনTunee Mam
উত্তরমুছুন