কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

মৌ দাশগুপ্তা

অথ অহি – নকুল কথা

অহিভূষণ ঘোষ আর নকুলচরন বোস,ছেলেবেলার বন্ধু। এক পাড়ায় বাস,এক স্কুলে,এক ক্লাসে পড়াশুনো,এমনকি শ্বশুরবাড়ীও একপাড়ায়। সুজনেরা বলে “মানিকজোড়”। দূর্জনরা অবশ্য আড়ালে বলে “ভাবের ঠেলায় কাঁথা ছেড়ে আর কি”। তবে মোদ্দাকথা অহিভূষণ ঘোষ আর নকুলচরন বোসের,ছেলেবেলার বন্ধুত্বটা এখনও টিঁকে আছে। সম্প্রতি তো কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে ওনারা নাকি বৈবাহিক সম্পর্কে বাঁধা পড়তে চলেছেন।অহিভূষণের ছেলে অজয়ের সাথে নকুলচরনের মেয়ে নম্রতার বিয়ের কথা চলছে।

এবার একটু অজয় নম্রতার কথা বলি। অজয় হলো বাড়ীর বড়, ওরা দুই ভাই,অজয় আর বিজয়, অজয় চশমা পড়া পড়ুয়া মানুষ, সারাদিন এই বই থেকে ওই বইয়ে তার দু’চোখের, ছুটোছুটি। আর নম্রতা ? নকুলচরনের ওই একটিই মেয়ে,আদরে আদরে একটু বিগড়নো, জিদ্দী টাইপের। সারাদিন বকমবকম কথা, কাঁচ ভাঙ্গা খিলখিলে হাসি,বন্ধুদের সাথে আড্ডা। বইপোকা অজয় তার ছোটবেলার সাথীটির এই কিচমিচ স্বভাব দেখেই বোধহয় সে ধপাশ করে তার প্রেমে পড়ে গেছিল। কিন্তু প্রেমে পড়লেই তো আর হলো না,সেটা নম্রতাকে জানাতেও তো হবে, কিন্তু অজয় বেচারা হলো ক্যাবলাচরণ, লক্ষ্মী টাইপের শান্ত ভালো ছেলে। সে কি জানে কি করে মেয়েদের "ভালোবাসি" বলতে হয়? ব্যাপারটা ঠিক সিনেমার মত নয় কিনা! অনেক ভেবেচিন্তে, বন্ধু বান্ধবের সাথে শলা পরামর্শ করে, যেই না একদিন একান্তে পেয়ে নম্রতা কিছু বুঝে উঠার আগেই অজয় নম্রতাকে বলেছে
-“আমি তোকে খুব ভালোবাসি নমি, আমায় বিয়ে করবি?”,
অমনি নম্রতা হাসতে হাসতে উল্টে পড়ে আর কি।বেচারা অজয় তো লজ্জ্বায় লাল।যাই হোক, টানা আধ ঘন্টা খিলিলিয়ে গা জ্বালানো হাসির পর নম্রতা জানালো সে রাজি, তবে একটা শর্ত আছে।অজয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।একটা মোটে শর্ত তো? অত মিষ্টি মেয়ের এইটুকু দাবী তো মানাই যায়।এককথায় ঘাড় হেলিয়ে দিল বেচারা।

এরপর আর কি!! ওরা চুটিয়ে প্রেম করল দু’বছর। অজয় ইঞ্জিনীয়ারিং পাশ করল, একটা ভালো চাকরী পেল। নমি গ্র্যাজুয়েসনের পাট চুকিয়ে মাষ্টার্স ডিগ্রী নিয়ে ব্যাস্ত। এখন আর রোজ রোজ দেখা হয় না ওদের। এই ছুটির দিনে একটু এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি,অল্প গপ্পানো,তারপর মোবাইলে আড্ডাবাজী তো আছেই।দুবাড়ীর মায়েদের প্রশ্রয় তো ছিলোই, বাবারাও দেখেও না দেখার ভান করতেন, অবশেষে অহিভূষণ বাবু একদিন ছেলেকে ডেকে পাঠালেন,স্বভাবলাজুক অজয় তো লজ্জাতেই মরে আরকী। তা ওর বাবা ছেলের লজ্জারাঙ্গা মুখের দিকে অপাঙ্গে তাকিয়ে গলা টলা ঝেড়ে কপট গম্ভীর গলায় বললেন,
_'দেখো বাপু, অনেক হয়েছে। পাড়ার লোকে বড় কানাকনি করছে। এবার আমি তোমাদের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই, তুমি কি বলো? নোকলোকে সুখবরটা তবে দিয়ে আসি?’

অজয়েরও আর তর সয় না, সেও দৌড়ালো তার নমিকে এই হাতে গরম সুখবরটি দিতে। খবরটা শুনে কিন্তু অজয়ের প্রত্যশামত আবেগে খুশীতে উচ্ছ্ল হয়ে উঠলোনা মেয়েটা, একেবারে পাল্টে গেল। মুখের রক্তিম আভা আরো রক্তিম হয়ে গোলাপি রঙ ধারণ করল। নম্রতার মুখের দিকে ভালো করে তাকালো অজয়,একটু হয়তো অবাক হয়েই,।মেয়ের দুষ্টু মুখে হঠাৎই গাম্ভীর্য্যের ঘন ছায়া .অনেকদিন আসলে নম্রতার মুখের দিকে এমনভাবে তাকায়নি অজয়, মেয়ের চাউনিতে অন্যরকম একটা কিছু খেলা করছে।এ যেন ও র চেনা নম্রতা নয়। এই অন্য কেউ যাকে ও চেনে না কিংবা এমন চাউনির ভাষা ওর জানা নেই।ও মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল,হয়ত ভাবলো বলবে কি বলবে না, অথবা কি বলবে সেটাই বোধহয় মনে মনে ভেবে নিলো। কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে বলল
-আমি বিয়ের পরে তল্পিতল্পা গুছিয়ে শ্বশুরবাড়ীর কনে বউটি সেজে থাকতে পারবো না অজুদা, বাবা মাকে বুড়ো বয়সে দেখবে কে? আমার তো অন্য ভাইবোন নেই। বিয়ের পর এবাড়ী ও বাড়ী যাতায়াত চলবে,পাশাপশি তো বাড়ী।কিন্তু বিয়ের পর বাবা মাকে ছেড়ে পাকাপাকিভাবে অন্যকোথাও থাকতে পারবো না।তুমি বাড়ীতে কথাটা বুঝিয়ে বোলো। আর হ্যাঁ, এটাই ছিলো আমার শর্ত,তুমি কিন্তু শুনতে চাওনি,না শুনেই হ্যাঁ বলে দিয়েছিলে।

আচমকা নম্রতার এ হেন শর্ত অজয়কে সপাটে বাস্তবের জমিতে আছড়ে ফেললো, রীতিমত চিন্তিত করে তুলল। এমনটা তো সে ভাবে নি, এরকম হয় নাকি? হওয়া সম্ভব? বাবাকে ও ভালো চেনে, প্রস্তাবে আদৌ রাজী হবেন না। কিন্তু আবার নমির মুখের দুষ্টু মিষ্টি হাসিটুকু মুছে যাক তা ও চায় না ।নমিকে ছেড়ে থাকাও অসম্ভব। কিন্তু যে কি করবে এখন সেই চিন্তায় ছটফট করতে লাগলো বেচারা, আক্ষরিক ভাবে এখন ওর দশা, শ্যাম (উপসসস্, রাধা) রাখি না কূল? ।

দু’বাড়ীতে হুলুস্থুল পড়ে গেল। তারপর? তারপর আর কি! নম্রতার শর্ত মেনে দু’বাড়ীর গিন্নীদের আর নকুলবাবুর ঐকান্তিক আগ্রহ ও সম্মতিতে এবং অহিবাবুর চুড়ান্ত বিরোধিতা ও অসম্মতিতে বিয়েটা হয়ে গেল বটে তবে কিনা অহিভূষণ ঘোষ আর নকুলচরন বোসের,ছেলেবেলার বন্ধুত্বটা এখন আক্ষরিক অহি-নকুল সম্পর্ক হয়েই দাঁড়িয়েছে।

1 টি মন্তব্য:

  1. আমার চিরদিনের ভালোলাগার যে কয়জন কবি আছেন তাদের মধ্যে মৌ কবি অন্যতমা - তার এই প্রকাশটি অন্য অনুভবে ভরিয়ে দিলো

    উত্তরমুছুন