কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১২

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য

প্রেম ও তারপর

- কেমন আছো?
- কে বলছেন?
- জেনে কি হবে? গলা চিনতে পারছো না?
- না!
- মহিলাদের গলা চিনতে পারাটা কি খুব মুশকিল?
- আমি চিনতে পারি না!
- ন্যাকা!
- কি বলছেন এইসব!
- সত্যিই চিনতে পারছো না?
- আপনি কে বলুন তো?
- হুম! আমি চন্দনা নই তবে কল্পনা!
- ..........
- কি হলো? চুপ কেন?
- .........
- লাইন তো কাটে নি! কিছু বলো!
- কি বলবো? যা বলার ছিল, কিছুই তো বলা হল না! চন্দনাও নেই !
- তোমার নম্বর কি করে পেলাম!!!!! এটা জিজ্ঞেস করবে না?
- ...............
- চুপ কেন?
- ভাবছি
- কি?
- এখনও তোমার গলা, আমার কাছে গানের মত!
- হুম! এই বয়সেও বেশ পটানো কথা বলতে পারো!
- ..............
- শোনো, আমার নাতনীর ফেসবুক প্রোফাইলে, তোমায় ফ্রেণ্ড লিষ্টে দেখলাম! আর ওখান থেকেই তোমার সেল নং! ফোটো দেখেই চিনেছি! যদিও , চুল পেকেছে আর বেশ মোটা হয়েছ। গাল- টাল ভেঙ্গেছে।
- ................
- লাইন তো কাটে নি! পাশ থেকে কিশোরের ওই গানটা শুনতে পারছি!
- হুম! কোনটা?
- ওই যে!‍ কোই হমদম, না রহা.......
- ওটা আমার প্রিয় গান!
- যাক! তোমার বয়স তো ৬৮ হলো! চুল পাকলেও মোটামুটি হ্যাণ্ডসাম আছো! মেয়ে সামনা সামনি দেখেছে তোমায়, একটা জিটি তে!
- .......
- আবার চুপ!!!!!!!
- কি হবে, এসব শুনে!
- কেন?
- যখন শুনতে চেয়েছিলাম, তখন তো আমায় হাড়গিলে বলেছিলে!
- ঈশ্বরী পাটনী তো পড়েছিলে!
- ....
- কি হলো?
- না! এমনি!
- নিন্দাচ্ছলে প্রশংসাকে কি বলে?
- জানি না!
- হুম! খুব জানো! তুমিই তো বলেছিলে- ওটা ব্যজস্তুতি অলংকার!
- হবে হয়তো!‍
- একদিন দেখা করো না আমার সাথে!
- কি হবে দেখা করে?
- ছাড়ো তো ওসব! তুমি তো নর্থে থাকো!
- হ্যাঁ
- আমি সাউথে। একটা কমন জায়গা বাছো না, দেখা করার!
- দেখো! সময়ের পরিহাস!
- কি রকম?
- সেই আজো,আমি নর্থ পোল আর তুমি সাউথ পোল!
- কুঁক! কুঁক! কুঁক! কুঁক!
- Call ended!
কিন্তু, ওই যে কথায় আছে না:- যে যায় বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে ! কারণ, সেই পৃথুলা ( বর্তমানে) মহিলার সঙ্গে এই ফোনালাপের বছরখানেক পর পার্ক ষ্ট্রিটে দেখা হয়েছিল। সঙ্গে ছিল- ওনার ১৭/১৮ বছরের সুন্দরী নাতনী। আমাকে দেখে, কুশল বিনিময়ের পর নাতনীর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেবার সময় বলেছিলেন- ইনি ই সেই !   যিনি ফ্রেণ্ডলিষ্টে আছেন আর উনি তোর ‘হলেও হতে পারত’ ঠাকুরদা!
নাতনী তো হেসেই খুন! বলল- গ্র্যানি, তুমি না খুব সুইট! এইরকম লোকের সঙ্গে আমি একটু আড্ডা দিয়ে, তোমাদের পুরোনো প্রেমের গপ্পো শুনবো।
তো, আমরা গিয়ে বোসলাম সিলভার ড্রাগনে।
নাতনী আমাকে বললো- সুইটস, তুমি বিয়ার না জিন নেবে?
আমার তো শুনেই মনটা কেমন করে  উঠলো। তাও একটু লজ্জা ভাব করে, বললাম- দেবে? তা দাও !

আমার কাছ থেকে শুনে নিয়ে, অর্ডার দিল:- দুটো জিন উইথ ফ্রেস লাইম।

একটা কোক! আর তিন প্লেট চিলি চিকেন।
জিন দুটো আমার আর ওই মহিলার জন্য। নাতনী নিল- কোক! আমি ভদ্রতা করে বললাম:- তুমি জিন নিলে না কেন?
উত্তর পেলাম:- আমি এখনও খাই না! খেলে নিতাম। আমার গ্র্যানি খুব লিবারেল। গ্র্যাণ্ড পাও তাই।
নাও! নাও শুরু করো!
বলতে লাগলাম!!!!
তোর গ্র্যানি বেশ সুন্দরী ছিলেন।
বলতেই বাধা!
হোয়াট ডু ইউ মিন? আমার গ্র্যানি, এখনও বেশ সুন্দরী!!
থতমত খেয়ে বললাম:- না! মানে ইয়ে, তখন আরও বেশী ছিল।
বেশ বেশ- নো তক্কো! চালাও পানসী বেল ঘরিয়া
শুরু কোরলাম:-
প্রেম হবার পর বহরমপুরে ( গঞ্জাম, ওড়িশা) পোষ্টিং পেলাম। চিঠিতে তো বটেই, আর কোলকাতায় এলে প্রেমটা আরও জমতো। করে, করে, বেশ চলছিল! হঠাৎ একদিন একটা টেলিগ্রাম তোর গ্র্যানির কাছ থেকে।
“কাম শার্প । মাই ম্যারেজ হ্যাজ বিন ফিক্সড! মিট মি আ্যাট যাদবপুর কফি হাউস আ্যট ওয়ান পিএম শার্প টু ফিক্স দ্য নেক্সট কোর্স অফ আ্যকশানস।”
দুপুরে টেলিগ্রাম পেয়ে, সেই দিন-ই - বিকেলের ম্যাড্রাস মেল ( তখন ওই নামই ছিল) ধরে হই হই করে চলে এলাম কোলকাতায়! ভোরবেলা হাওড়ায় নেমে,চলে গেলাম ঠিক দুপুর একটার সময়! যাদবপুর কফি হাউসের পাশেই একটা চাইনিজ রেস্তোরাঁ ছিল সেই সময় ( এখনও আছে কিনা, জানি না) টুকটাক অন্য গল্প কোরতে কোরতে তোর গ্র্যানি লাঞ্চ খাচ্ছে, কিন্তু আসল কথা আর বলে না!
শেষ হলে মুখ টুখ মুছে বলল:- শোনো, আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ে হলেই আমি আ্যমেরিকা চলে যাচ্ছি। তুমি না, আজ থেকে আমাকে বোনের চোখে দেখ। আমার মটকা গরম হয়ে গেল! একে তো লাঞ্চের বিল দিয়েছি, তার ওপর বহরমপুর থেকে আসা যাওয়ার খরচ!
বললাম:- কোনো চোখে যদি দেখতেই হয়, তবে আজ থেকে তোমাকে ‘রক্ষিতা’ র চোখে দেখবো!
তোর গ্র্যানি হেসে বলেছিল- আহা চটছো কেন? মশলা খাও!
আমার বলা শেষ হতেই একজন হ্যাণ্ডসাম বৃদ্ধ ঢুকলেন। হেসে হাত মিলিয়ে বললেন- সেল ফোনে আপনার খবর পেয়ে চলে এলাম। আমি প্রেজেন্ট, আপনি পাষ্ট!
সেদিনের বাকী মশলা একটু খান!
বেয়ারা! অওর তিনঠো জিন উইথ ফ্রেস লাইম !

সমাপ্ত

1 টি মন্তব্য: