কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

মামনি দত্ত

দেবীপক্ষ


কলি এক দৌড়ে বাড়ি এসে বোন
কে ডাকতে লাগলো ....নিরু ..নিরু ...!মায়ের পায়ের আওয়াজ
পেয়ে ছুটে মা কে জড়িয়ে ধরলো! মায়ের দুই চোখে অবাক
চাহনি, কি হয়েছে তোর? হাঁপাচ্ছিস কেন? ......মা..মা..জ
ানো তো বাবার আসার সময় এসে গেছে! কলির কথায়
রমা থমকে যায়, মেয়ে দুটো বাবার অপেক্ষা এমন
করে করছিলো সে জানতো! কিন্তু
লোকটা এখনো কোনো খবর দেয়নি। এই কথা মেয়েদের
কি করে বলবে ...ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রমা। মা ..ও
মা...কি ভাবছো তখন থেকে?
মেয়ের কথায় সম্বিত ফেরে রমার। চিন্তা নিজের
মধ্যে রেখে হাসি মুখে বলল ....যা তো, নিরু কোথায়
দেখতো। কলি বাইরে গেলো বোন কে খুজতে। গলির
মোড়ে নিরু কে দেখে ওর চোখদুটো চকচক করে উঠল! বোনের
হাত ধরে নিয়ে চললো ওর খুশীর দুনিয়ায়! নিরু ছোট্ট ছোট্ট
পায়ে তাল মেলাতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছিলো, তবুও
প্রাণপণে দিদির হাত ধরে উড়ে চলছিলো অজানা র উদ্দেশ্যে!
খোলা আকাশ, সাদা মেঘ আর সরু বয়ে চলা নদীর
ধারে কাশফুলের সমাহার দেখে ছোট্ট নিরু অবাক হয়ে গেলো!
দিদি এ কোন জায়গায় নিয়ে এলো!!! কলি নীল আকাশের
নিচে দুহাত ছড়িয়ে গোল করে বেশ কয়েক বার পাক দিয়ে নিরুর
সামনে দাড়ালো! কিছুই তো জানিসনা ...আমি বলছি,
শুনলে তুইও আমার মতো খুশিতে পাগল হয়ে যাবি! দিদির
কথায় নিরু অজানা খুশির কারন জানার জন্য উদগ্রীব
হয়ে উঠলো। কলি বললো ..এই যে ফুল দেখছিস এর
মানে কি জানিস? এর মানে পূজো এসে গেছে, নীল
আকাশে সাদা মেঘ ...এর মানে পূজো এসে গেছে!! নিরু চোখ
গোলগোল করে দিদির কথাগুলো বুঝতে চাইছিলো। তার
মানে বাবার আসার সময় এসে গেছে দিদি?খুশিতে নিরু দিদির
কোলে মুখ গুঁজে দিলো! এমন দৃশ্যের সাক্ষী রইলো শারদ
প্রকৃতি।

দুই বোন বাড়ি ফেরে কতো পরিকল্পনা করতে করতে!
মাকে বলবে ঘরের ভাঙ্গা টালি পাল্টে নতুন টালি লাগাতে।
স্কুলের ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে নতুন ব্যাগ কিনতে হবে, এছাড়াও
পূজোর নতুন জামা তো আছেই। ঘরের মধ্যে মাকে চুপ
করে শুয়ে থাকতে দেখে দুজনে একে অপর কে দেখে,
মা তো এমন সময়ে শুয়ে থাকে না! কলি ধীরে ধীরে মায়ের
পাশে বসে, মেয়ের স্পর্শে উঠে বসে রমা। হাত বাড়িয়ে দুই
মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে! রমা জানে দুই মেয়ে কতো স্বপ্ন
বুনছে শরত্কাল কে চোখের পাতায় সাজিয়ে। একটু
আগে চিঠি এসেছে, ওদের বাবা সামনের সপ্তাহে আসছে! কিন্তু
ফ্যক্টরিতে লকআউটের জন্য সামান্য কাজ টা আর নেই।
যে কটা টাকা আছে কদিন চলবে?...ভেবে রমা চোখ মোছে।
কলি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ....কি হয়েছে মা? রমা সব
বলে মেয়েদের! ওদের মিথ্যে আশ্বাস দিতে মন চায় না।
কলি মায়ের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে ....এর জন্য
এতো ভেবোনা মা। আমাদের খারাপ সময় ঠিক
চলে যাবে ...পূজোর সময় বাবাকে কাছে পাবো, কতো আনন্দের
কথা। আর নতুন জামা পরের বার পূজোয় পড়বো! মেয়ের
মুখের দিকে তাকিয়ে রমা খুঁজে পায় এক
কিশোরী দূর্গা কে .......যে অপার শান্তি বিলায়ে চলে সব
দুখী মনে।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন