সময়ের স্রোত
(দ্বিতীয় কিস্তি)
চোখ বুঁজলেই সেই মারের কথা আজকাল মনে পড়ে তার! প্রিন্সিপালের সঙ্গে তর্ক করার পরের দিন ভোর বেলা, পুলিশ এসে ঘিরে ফেলল তার বাড়ী। বাবা জিজ্ঞেস করলেন অফিসারকে- কি করেছে আমার ছেলে?
-ওসব কৈফিয়ত আপনাকে দেবো না!
- আপনারা তো ব্রিটিশের পুলিশ নন, এভাবে আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে পারেন না!
-আব্বে বুঢ্ঢা! চোপ! বেশী প্যায়তাঁরা করলে তোকেও নিয়ে যাব!
-আমি, স্বাধীনতা সংগ্রামী। এভাবে অপমান করছেন কেন?স্বাধীন দেশের পুলিশের এই ব্যবহার!!!!!!!!!!!
-চোপ শালা! স্বাধীনতা সংগ্রামী মারাচ্ছে। তোর ছেলে কমিউনিষ্ট পার্টি করে আর দুটো খুনও করেছে! তুই তো সব জেনে ছেলেকে আড়াল করছিস!
-দেখুন! আমার ছেলের সাথে রাজনৈতিক পার্থক্য আছে। ওদের সব কথা আমি মানিও না। কিন্তু, ওরা কোনো খারাপ কাজ করছে বলে আমি মনে করি না!!!!! আর খুন? আমার ছেলে ওর ধারকাছ দিয়েও মাড়ায় না!
- অনেক ভাষণ দিয়েছিস রে বুড়ো! সর!
বলে বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুমন্ত অপুকে তুলে নিয়ে গেছিল ওরা! বাবা অপমানে হতচকিত হয়ে গেছিলেন! বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন- ইয়ে আজাদী ঝুঠা হ্যায়!
বিড়বিড়ানির মধ্যে অপুকে টেনে হিঁচড়ে মারতে মারতে ভ্যানে তুলল পুলিশ।
মাথার ওপর একটা ডিসি ফ্যান, ঘড়ঘড় করে ঘুরছে! দুই পুলিশ অফিসার একটা টেবিলের সামনে বসে! সামনে মদের গ্লাস, মনে হল অপুর! আর প্লেটে কাজু বাদাম, কিশমিশ!
-এনেছি স্যার- হারামির বাচ্চাকে!
- ওয়েল ডান! গুড জব!
অপুর দুপাশে দুই কনষ্টেবল, মোটা মোটা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে।
বাঁ দিকের পুলিস অফিসারটা বলল-
-কিরে, শুয়োরের বাচ্চা! খুনটা করেছিলি কেন?
- আমি খুন করি নি!
- তাই নাকি?শালা খানকির বাচ্চা! খুন করিস নি?
- গালাগালি করছেন কেন, মা তুলে?বললাম তো, আমি খুন করি নি!
- ওরে! দ্যাখ! দ্যাখ! কেমন সতীর বাচ্চা এসেছে রে! রামভজন!!!!! লাগাও মধুমতি!
ধাঁই করে লাঠির বাড়ি পড়ল অপুর হাতে! একটা কাজু মুখে পুরে দ্বিতীয় জন বলল-
-সাবাশ! দ্যাখ! দ্যাখ! সতীর বাচ্চা কেমন নুয়ে পড়েছে! বলি পিস্তল দেখেছিস?
- হ্যাঁ ! অতি কষ্টে বলল, অপু!
- এই তো! এক মধুমতীতেই কাত! তা শালা মার্ক্সের বাচ্চা! কোথায় দেখলি?
- এই তো ওই ইনস্পেকটারের কোমোরে!
- শালা! মাজাকি!!!!!!! লাগাও পিয়াসা!
- আরও চারটে লাঠির বাড়ি পড়ল অপুর গায়ে!
চলতো হয়তো! কিন্তু, এক হোমড়া চোমড়া পুলিশ অফিসার ঘরে ঢুকলেন! সেই দুজন মদের গ্লাস লুকোনোর জায়গা খুঁজতে ব্যস্ত তখন!
- হোয়াটস দিস! আপনারা বিনা ওয়ারেন্টে বিষ্ণুদার ছেলেকে ধরে এনেছেন কেন?
- স্যারররররররররররররররররররর!
- শাট আপ! বেআইনী কাজ করছেন। ওপেনলি মদ খাচ্ছেন! বিনা কারণে থার্ড ডিগ্রি চালাচ্ছেন!! মগের মুলুক নাকি? যান! ওকে বাড়ী ছেড়ে দিয়ে আসুন!
অত কষ্টের মধ্যেও হেসে ফেলল অপু। এটাই কি লিবারেল বুর্জ্জোয়াজিজম্!!!!!!!!!!!!!!!!!
বাবা, খবর দিয়েছে বোধহয় হারাণ কাকাকে! হারাণ কাকা বাবার ন্যাংটো বয়সের বন্ধু নারাণজেঠুর ছোটো ভাই!
কিন্তু, পুলিশ কি সবার বন্ধু হয়?
পুলিশ যে সবার বন্ধু হয় না, সেটা টের পেয়েছিল অপু কমঃ মহাদেব ব্যানার্জ্জি মার খাওয়ার পর! কমঃ মহাদেব ব্যানার্জ্জিকে আগের দিনও স্যার বলেছে যে পুলিশ, মন্ত্রী হবার সুবাদে! পরের দিনই মন্ত্রীত্ত্ব চলে যাওয়ার পর, সেই পুলিশই লাঠি মেরে কমঃ এর হাত ভেঙ্গে দিয়েছিল।এটা , যুক্তফ্রন্ট সময়ের কথা। রণি মুর নামে সেই পুলিশটার মুখে তখন হ্রিংসতা ছিল ।
ততদিনে অপু সেলসের চাকরী পেয়ে গেছিল। মজার ব্যাপার, যিনি ইনটারভিউ নিয়েছেলেন, তিনি পার্টি দরদী ছিলেন।
ইনটারভিউতে জিজ্ঞেস করেছিলেন-Will you be able to sale pharma products?
-Sir, if you ask a football player- Can you play football? I think, he will definitely answer:-
Let me go to the filed and prove you! Same with me!
-Hmm! How many times you lie?
-It’s a situational demand. I won’t deny that I lie, but that depends!
- Do you think, your political background will be a hindrance or advantage to this profession?
- Sir! I think positive! Positive thinking is always advantageous in any layer of life!
-Okkkkk! Mr.Chatterjee, you are through!
জীবনদা, একটা কথা প্রায়ই বলতেন- দেয়ার আর মোর কমিউনিষ্টস, আউটসাইড দ্য কমিউনিষ্ট পার্টি।
অপু বলেছিল- একটু বুঝিয়ে বলুন!
-দ্যাখো, জীবনের সংগ্রামে লড়াই করা মানুষ, ঠিক তার বন্ধু চিনে নেয়। যদি কোনো কারণে, সেই বন্ধু, শত্রুও হয়ে যায়, তাও মানুষ বুঝতে পারে! তত্ত্বের কচকচানি না বুঝলেও মানুষ বোঝে- মানুষই তার বড় শত্রু। মুখোমুখি সব সময় দুটো পক্ষ! এক পক্ষ প্রলেতারিয়েত। অপর পক্ষ, বুর্জ্জোয়া!
-আচ্ছা জীবনদা, প্রলেতারিয়েত কথাটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?শুনি, কিন্তু ঠিক বোঝাতে বা বুঝতে পারি না!
-এরা হলো সেই শ্রেণী, যাদের নিজেদের খাটবার ক্ষমতা ছাড়া আর কিছুই নেই। এদের অস্তিত্বের একমাত্র উপায় হলো, পুঁজিপতিদের কাছে নিজেদের খাটবার ক্ষমতাকে বিক্রী করা।
-আর লুম্পেন প্রলেতারিয়েত?
-এক কথায়, শোষিত সমাজের শ্রেণীচ্যুত লোকেরা!
- হুম!
- শোনো অপু! সব কথাই অভ্রান্ত বলে ধরবে না! প্রয়োগে প্রমাণ হবে, কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়! এটাই হলো মূল কথা!
-বেশ!
- একটা ব্যাপারে আমি বুদ্ধদেবকে খুব মানি!
- সে কি! জীবনদা!!!!!!!
- ওনার তিনটে কথা জানো?বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, সংঘং শরণং গচ্ছামি! ধর্মং শরণং গচ্ছামি!
- একটু বুঝিয়ে বলুন।
- বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি! এখানে বুদ্ধ মানে জ্ঞান! সাবজেক্ট নলেজ না থাকলে তুমি কিছুই করতে পারবে না! তাই প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং অধীত বিদ্যাতে জ্ঞান বাড়াও!
- তার মানে আগে থিয়োরী?
- এগজাক্টলি! কিন্তু থিয়োরী ওনলী। নট হাইপথেসিস!
- বেশ!
-সংঘং শরণং গচ্ছামি! এখানে কথাটি খুব পরিস্কার! সংঘ অর্থাৎ- অরগানাইজেশন! এর তিনটে অর্থ আছে! প্রথমে নিজে সংগঠিত হও। সংগঠিত কর, তারপর সংগঠিতদের এক ছাতার তলায় আনো!
-এবার বাকী আর একটা!
-হ্যাঁ! ধর্মং শরণং গচ্ছামি! এখানে ধর্ম অর্থে – মনুষ্য ধর্ম। আর, মনুষ্য ধর্ম মানেই সৃজন শক্তির অনুশীলন আর বিকাশ। আমি এটা নিজের মত ব্যাখ্যা করেছি! সেই হিসেবেই চলি! এবার তুমি ঠিক কর, কি করবে আর না করবে।
(চলবে)
sei 72!!
উত্তরমুছুন