কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

মৌ দাশগুপ্তা

মানিকজোড়

পলাশ আর মন্দার দুই বন্ধু, বড় ভাব দুজনের। এক্কেবারে মানিকজোড়। যদিও দুজনের চেহারা-পত্তর, স্বভাব-চরিতর, এমনকি পছন্দ-অপছন্দের অবধি কোন মিল নেই।যেমন পলাশ বলে, “ আমার বউ হবে দারুন সুন্দরী, একদম ফাটাফাটি, ধবধবে ফরসা, টানা টানা পটলচেরা চোখ,বেশ সুরেলা গলা হবে, গান টানও জানবে, বাপের মালকড়িও থাকবে, ঐ একদম শো কেস এ সাজানো ডল পুতুলটি যেন।“মন্দার বলে “ না বাবা আমার ঐ রকম ডল ফল চাইনে, আমার বউটা বেশ পড়াশুনো জানবে, নিজেই চাকরি বাকরি করে ঘরে টাকা পয়সা আনবে আর হেভী রাঁধবে।“

যথাসময়ে দুজনেই ছাদনা তলায় হাজির হোল। পলাশের বউ পলা অল্প বয়সেই বাবা মাকে হারিয়ে মামাবাড়ীতে খুব অনাদরে মানুষ। কালো, দোহারা চেহারা, অনেকটা মঙ্গোলীয় ধাঁচের বোঁচা বোঁচা মুখচোখ, তবে ভারতীয় সঞ্চার নিগমে ভালো পোস্টে চাকরী করে। গান শুনতে হয়তো ভালবাসে তবে গাইতে পারে না। খুব ছোটবেলায় একবার মেনিনজাইটিস হয়েছিল, সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে গেলেও গলাটা চির জীবনের মত ফ্যাঁসফ্যাঁসে হয়ে গেছে। ঘরজামাই মন্দারের বউ মন্দাকিনী বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে।নাম যাই হোক, সামনে এলে তাকিয়ে থাকতে হয় এমন সুন্দরী তবে কিনা বড্ড সিনেমার পোকা।বিদ্যে ঐ ক্লাস এইট।তবে নাচ টাচ জানে, রাগপ্রধান ও গাইতে পারে।সিনেমায় নামার ইচ্ছা হয়তো ছিল কিন্তু বাবার আপত্তিতে নামা আর হয়নি। মন্দারের বদরাগী শ্বশুরমশাই স্বভাবে কৃপন মানুষ। লোকে বলে হাত দিয়ে নাকি জল গলেনা। এক ঐ মেয়ের বেলাতেই কিছুটা ছাড়,তা বলে জামাইয়ের বেলায় নয়। মন্দাকিনী মানুষটাও অসম্ভব মেজাজী,এক গ্লাস জল অবধি গড়িয়ে খেতে শেখে নি।ঐ বড়লোক বাপের আদুরে মেয়েরা যেমন হয় আরকি!

পলাশ আর মন্দার কেউ আর কারো বাড়ী যায়না এখন। রাস্তায় দেখা হলে অনেক কথা বললেও কেউ ভুল করেও বলে না ” আচ্ছা বউ নিয়ে আমার বাড়ী যাস, জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।বরঞ্চ সন্তর্পনে যে যার বউয়র প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়।কি দরকার বাবা খাল কেটে কুমীর আনার! পলাশ আর মন্দার দুজনেই তাদের বউদের বড় বাধ্য। এই এক ব্যাপারে দু বন্ধুর ভারী মিল। যেমন ঐ মানিকজোড়দের হয় আর কি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন