কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ ৫ম সংখ্যা

অথ লুপ্তলাঙ্গুল কথা


হে বিদ্বব্জন, পূর্বে উল্লিখিত 'বাবু'র ন্যায় একবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে মনুষ্যকুলে আরও একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের দর্শন ঘটিবে যাহারা নিজদিগকে 'কবি' বলিয়া আখ্যা দিয়া আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগিবেন। আপনারা সকলেই অবগত আছেন কবিরা সাধারণতঃ কাগজ কলম লইয়া কাব্য রচনা করিয়া থাকেন, কিন্তু এই যুগের 'কবি'রা কলম লইয়া কাগজে কবিতা লিখিতে অভ্যস্ত হইবেন না। কমপিউটার নামক একটি যন্ত্রের সাহায্য লইয়া কাব্য রচনায় মগ্ন থাকিবেন। এইসকল মনুষ্য নেটিজেন কবি বলিয়া খ্যাত হইবেন। পুরাকাল হইতে কাব্য রচনায় ছন্দ, মাত্রা প্রভৃতি কিছু পূর্বনির্ধারিত প্রথা বাংলা সাহিত্যে বর্তমান। কিন্তু এই বিশেষ কবিরা সেই সকল প্রথাগত ছন্দ বা মাত্রা মানিতে সচেষ্ট না হইয়া বরং বলিবেন ছন্দ বা মাত্রার বাঁধনে তাঁহাদের কাব্যিক ভাব নষ্ট হইয়া যায়। প্রথাগত বাক্য রচনার পদ্ধতি তাঁহারা ভাঙ্গিয়া শব্দ ওলটপালটে তাঁহারা বেশি আনন্দ উপভোগ করিবেন। কেহ কেহ দুই তিনটি শব্দ একসাথে জুড়িয়া এবং ক্রীয়াপদ বাদ দিয়া নতুন শব্দ গঠনে লিপ্ত হইবেন। যতি চিহ্ণের ব্যবহার এঁনারা প্রায় ভুলিয়াই যাবেন। স্বপক্ষ সমর্থনে এই নব্য 'কবি'রা যাহাই বলে থাকুন না কেন, প্রকৃতপক্ষে যথাযথ যতি চিহ্নের ব্যবহার এই 'কবি'রা কখনই জানিবার চেষ্টা করিবেন না। এই সমস্ত 'কবি'রা তাঁহাদের স্বরচিত কবিতা সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করিতে সমর্থ হইবেন না, কারন প্রথাগত কোন ব্যাকরণ মানিয়া কোন বাক্যই কবিতায় সম্পূর্ণরুপে বিদ্যমান থাকিবে না। কয়েকটি স্বাধীন শব্দ পাশাপাশি বসিয়া নিজেদের মধ্যে বিবাদে বিদ্যমান থাকিবে। তাঁহাদের লেখা কবিতা কেবল পাঠক/পাঠিকারাই ব্যাখ্যা করিতে সমর্থ ইবেন।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, কিছু মনুষ্য যাঁহারা নিজেদের অধিকতর বোদ্ধা ভাবিয়া আত্মসন্তুষ্টি লাভ করিয়া থাকিবেন তাঁহারা সমাজে পাঠক/পাঠিকা বলিয়া খ্যাত হইবেন। একটি কবিতাও না লিখিয়া তাঁহারা অন্য ব্যক্তির কবিতার সমালোচনায় নিজের সমস্ত সময় ব্যয় করিতে ব্যস্ত থাকিবেন। আধুনিক সমাজব্যবস্থা এইসকল কার্যাবলী উৎসাহ প্রদানের জন্য মধ্যে মধ্যে আলোচনাসভা বলিয়া বিশেষ সভায় এইসকল কবিদের বিশেষ বিশেষ পুরস্কার দানে সরস্বতীর বরপু্ত্র/কন্যা রুপে স্বীকার করিয়া তাঁহার বক্ষের ছাতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করিবেন। ফলস্বরুপ তাঁহারা সহজেই পরবর্তীকালে নিজইচ্ছায় যাহাই লিখিবেন তাহাই প্রথা বলিয়া সকলকে মান্য করাইতে সচেষ্ট হইবেন।

হে বিদ্বজন, কাগজ কলম ছাড়িয়া এই সকল 'কবি'রা অন্তর্জালে ফেসবুক নামে একটি সমাজব্যবস্থায় আত্মবিসর্জন দিয়া থাকিবেন। ইহার নামে ফেস অর্থাৎ মুখ থাকিলেও মুখপাত্র কেহ থাকিবেন না, পরিবর্তে সকলেই বাছিয়া বাছিয়া অন্যকোন সুশ্রী তরুণ-তরুণীদের ছবি লাগাইয়া নিজেকে সুশ্রী প্রতিপন্ন করিতে সচেষ্ট থাকিবেন। যদিও এখানে কোন বুক বা বইএর কোনরুপ দর্শন না পাইলেও বুক অর্থাৎ বক্ষ বিদীর্ণ করিবার বা ইচ্ছানুসারে স্ফীত করিবার সকল উপকরন প্রভুত পরিমানে এস্থলে বিদ্বমান থাকিবে। এই সমাজব্যবস্থায় নারী পুরুষদের আর পুরুষরা নারীদের (যদিও ইহার ব্যতিক্রম থাকার সম্ভাবনা প্রবলরুপে বর্তমান থাকিবে) সহিত গল্পগুজবে কালাতিপাত করিতে মগ্ন থাকিবেন। নিন্দুকেরা ইহাকে প্রেমালাপ বলিতে সচেষ্ট হইবেন। একে অপরের নিকট নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমানার্থে কেহ কেহ অপরের রচিত কাব্য নিজের বলিয়া চালাইতে সচেষ্ট হইবেন। এই চৌর্যবৃত্তিতে ধরা না পড়িলে এবং ক্রমান্বয়ে তিনি 'কবি' বলিয়া খ্যাতি লাভ করিবেন। এইরুপে মুখোশধারি আন্তর্জালিক সমাজব্যবস্থাই প্রকৃতপক্ষে এ যুগের 'কবি'দের সূতিকাগৃহে পরিনত হইবে। 

অতএব হে বিদ্বজন, আপনি যদি আপনাকে এই যুগের 'কবি' বলিয়া ভাবিতে আনন্দ পান তাহা হইলে আসুন ফেসবুক নামক সূতিকাগৃহে কদলীবালার সহিত কথোপকথনে মগ্ন হন। কুন্ঠা করিবেন না, যে সমস্ত কথা আপনি কোনদিন মুখে আনিতে শরম বোধ করে থাকেন, অনায়াসে আপনি আপনার পিতৃ/মাতৃ স্থানীয় কাহারও সম্মূখে কহিতে পারিবেন। সুতরাং কালাতিপাতে আর কাজ নাই,

এক্ষনে আমিও 'হাংরী' বোধ করিতেছি ...

পারিবারিকের পক্ষে - 
সুমিত রঞ্জন দাস
সম্পাদক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন