স্বাধীনতা দিবসে পরবাসে অসংলগ্ন টুকরো চিন্তা
(আত্মসমালোচনা)
জয়ন্ত সাহা
আজ সারা ফেসবুক জুড়ে স্বাধীনতা পুজো - স্বাধীনতা উৎসব - তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া - অনেকটা ভাবনা - চেতন অবচেতনের সমস্ত পরিশীলিত অনুভব দিয়ে কত লেখা কত কবিতা ভাবনা চিন্তা। কিন্তু একটা মিল আছে - সেটা হচ্ছে নৈরাশ্য, নৈরাজ্য আর নৈব্যক্ত নৈঃশব্দ হাহাহাকার বেদনা। মনে হয় যেন কিছু ঠগ, জোচ্চর, শয়তানের কুক্ষিগত হয়ে গেছে সব সুখ - আনন্দ - শান্তি।
বিষয়টা একেবারেই ভুল - একটা জিনিস চিন্তা করতে হবে - আমরা কিন্তু নিজেরাই নিজের কাছে পরাধীন। আমরা প্রায় কেউ-ই নিজের জীবন বাঁচিনা - অন্যের জীবন বাঁচি।
ধার করা জীবন - যেখানে শখ আহ্লাদ উন্নতি সমস্ত কিছুই দেখাবতের ওপর নির্ভর করে - ছেলে মেয়ে ভালো রেজাল্ট করলো - যতক্ষণ পর্যন্ত না দশ বিশটা আহা বাহ শুনলাম মন তৃপ্তি পায় না, বাচ্চাটা নব্বই শতাংশ নাম্বার পেয়েছে - মন খুশি নয় পড়শীর বা বান্ধবীর ছেলে একানব্বই শতাংশ পেয়েছে যে, বাবা হাসপাতালে তো বন্ধুরা কেন আহা উহু করছে না ? মন খারাপ - কেউ ধর্তব্যেই নিচ্ছে না "লোক আজকাল সব সেল্ফিশ হয়ে গেছে" সাথে সাথে সিদ্ধান্ত, পাড়াতে একটা ঘটনা ঘটে গেছে - বিষয়টা ইম্পর্টান্ট-ই না যতক্ষণ পর্যন্ত ষ্টার আনন্দ কিংবা চব্বিশ ঘন্টা টি ভি তে না দেখাচ্ছে - আর দ্যাখালেই ব্যাস! "ওই দেখো পৌছে গেছে! দেখেছ এদের আর খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই", একটা হোটেলে খেতে গেলাম কি একটা জায়গাতে ঘুরতে গেলাম - ব্যাস! যতক্ষণ পর্যন্ত না দশ বিশ পঁচিশটা ছবি আপলোড করতে পারলাম আনন্দ পনেরো আনা মাটি।
এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায়। কিন্তু একটি বৃদ্ধ পথে অসুস্থ হয়ে পড়লেন, একটি বাচ্চাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, একটি মেয়ে ইভ টিজিঙের শিকার হচ্ছে আমরা অপেক্ষা করি অন্য কেউ সাহায্য করুক - আমরা আগামীকাল পেপারে পড়ব - শেষ পর্যন্ত কি হোলো। যদি সেরকম একটা কিছু ঘটে যায় ব্যাস! সাজুগুজু করে মোমবাতির মিছিলে হাটবো - কত চিন্তা করি আমরা সমাজের জন্য।
এত চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে - এত দরিদ্র হয়ে যাচ্ছি আমরা - আমি নিজেকে এনালিসিস করেই বুঝি। যখন এসেছিলাম পাঁচ বছর আগে মিডল ইস্টে - ভেবে এসেছিলাম যাচ্ছি মাত্র দুটো বছরের জন্য - যেই কোম্পানিতে কাজ করতাম নাছোড় ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে অনুরোধ করেছিলাম "স্যার দু বছরের জন্যে ছুটি দিন!" উনি জীবন দেখেছেন - তাই মুচকি হেসেছিলেন "ওকে জয়ন্ত তুমি যাও! পাঁচ বছর পরে দেখা কোরো।" এখন বুঝি - গরীব হয়ে গেছি আরও বেশি।
আমার পারাদীপের দিনগুলি ছিল সোনায় বাঁধানো (যদিও তখোনো তা রিয়েলাইজ করতাম) - কিন্তু এখন চাহিদা আর যোগান - যোগান আর চাহিদা। ..... এই চাহিদার আবেদনে সাড়া দিতে গিয়ে ধাপ্পার শিকার হচ্ছি। বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে না পড়িয়ে টিউটরিয়াল হোম বা প্রাইভেট টিউসন ফেঁদে বসে শিক্ষকের ধাপ্পা, নার্সিং হোমগুলোতে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ব্যবসা বাড়িয়ে চিকিত্সকের ধাপ্পা, ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ারের ধাপ্পা, ইস্টার্ন বাইপাসে ওৎ পেতে বসে থাকা শিকারী পুলিসের ধাপ্পা, ওকালতি আর রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজী এর তুলনায় আমার কাছে নগন্য। ওদের কাছে তো কিসছু আশাই করিনা। কাকে ধাপ্পা? নিজেকেই নিজে ধাপ্পা। তবে ব্যতিক্রমী শিক্ষক, চিকিত্সক, উকিল, শান্তিরক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার-ও আছেন - সংখ্যা নগন্য - তাদের কে "ইউজলেস" বিশেষণ জুড়ে দিতেও ভুলি না।
আমার মনে হয় স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক মুষ্টিমেয় কয়েকজন যারা কনস্ট্রাকটিভ কাজের সাথে যুক্ত। নিরুচ্চারে আত্মম্ভরিতা ছাড়া তারা নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন এখনো। তাইনা দেশটা চলছে - তাইনা বেঁচে আছি. স্বাধীনতা একেবারে অর্থহীন শব্দ নয় - এই মানুষগুলি চিরদিন স্বাধীন ছিলেন আছেন ও থাকবেন। আমার মনে হয় স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মবলিদান দেওয়া মানুষগুলি ছিলেন প্রকৃত স্বাধীন - কারণ ওনারা মহত উদ্দেশ্যের তুলনায় ব্যক্তি স্বার্থকে অনেক ছোট মনে করতেন - আপন চাহিদা মেটানো তাদের কাছে ছিল সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
স্বাধীনতা দিবসে ওই মহতী চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হবার মানসিকতায় উত্তরণ হলে সঠিক ভাবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হবে.
নতুবা কেন জানিনা স্বাধীনতা শব্দটাই আমার কাছে একটা বিরাট ধাপ্পা -
স্বাধীন ভাবে চিন্তা করা, উপলব্ধি করা, দায়িত্ব কর্তব্য বোধে উদ্বুদ্ধ হওয়া এগুলো ভুলে যদি যাচ্ছি তাহলে দিন দিন আরও পরাধীন হয়ে পরছি।
গহীন নির্জনতায় স্বাধীনতা কাঁদে
কৌরব রৌরব বেওয়ারিশ আর্তনাদে
পাংশু মুখে অন্বেষণ দ্বার থেকে দ্বারে
রুদ্ধ বাতায়নে অনাহূত আমার আমি
ক্লান্ত, রিক্ত, ব্যর্থ বারে বারে
কোমল নিষাদ ভুলে গলায় বুভুক্ষু সুরে
নাকে বারুদের গন্ধ
শরীরে দগদগে ঘা ব্যথা প্রচন্ড
চোখে সত্যের অপলাপ
কানে ঝরাপাতা করুন বিলাপ
ভবঘুরে বাতাসের সশব্দ আলাপ
ঘন কালো মেঘ আঁধারপ্রাচীর মেলে
ঝঞ্ঝাঅশনি শিখায় ওঠে জ্বলে।
বিমূর্ত একটি প্রশ্ন সহসা বলে ফেলে -
স্বাধীন হতে চাওয়া জীবন তুমি কি পেলে?
(আত্মসমালোচনা)
জয়ন্ত সাহা
আজ সারা ফেসবুক জুড়ে স্বাধীনতা পুজো - স্বাধীনতা উৎসব - তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া - অনেকটা ভাবনা - চেতন অবচেতনের সমস্ত পরিশীলিত অনুভব দিয়ে কত লেখা কত কবিতা ভাবনা চিন্তা। কিন্তু একটা মিল আছে - সেটা হচ্ছে নৈরাশ্য, নৈরাজ্য আর নৈব্যক্ত নৈঃশব্দ হাহাহাকার বেদনা। মনে হয় যেন কিছু ঠগ, জোচ্চর, শয়তানের কুক্ষিগত হয়ে গেছে সব সুখ - আনন্দ - শান্তি।
বিষয়টা একেবারেই ভুল - একটা জিনিস চিন্তা করতে হবে - আমরা কিন্তু নিজেরাই নিজের কাছে পরাধীন। আমরা প্রায় কেউ-ই নিজের জীবন বাঁচিনা - অন্যের জীবন বাঁচি।
ধার করা জীবন - যেখানে শখ আহ্লাদ উন্নতি সমস্ত কিছুই দেখাবতের ওপর নির্ভর করে - ছেলে মেয়ে ভালো রেজাল্ট করলো - যতক্ষণ পর্যন্ত না দশ বিশটা আহা বাহ শুনলাম মন তৃপ্তি পায় না, বাচ্চাটা নব্বই শতাংশ নাম্বার পেয়েছে - মন খুশি নয় পড়শীর বা বান্ধবীর ছেলে একানব্বই শতাংশ পেয়েছে যে, বাবা হাসপাতালে তো বন্ধুরা কেন আহা উহু করছে না ? মন খারাপ - কেউ ধর্তব্যেই নিচ্ছে না "লোক আজকাল সব সেল্ফিশ হয়ে গেছে" সাথে সাথে সিদ্ধান্ত, পাড়াতে একটা ঘটনা ঘটে গেছে - বিষয়টা ইম্পর্টান্ট-ই না যতক্ষণ পর্যন্ত ষ্টার আনন্দ কিংবা চব্বিশ ঘন্টা টি ভি তে না দেখাচ্ছে - আর দ্যাখালেই ব্যাস! "ওই দেখো পৌছে গেছে! দেখেছ এদের আর খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই", একটা হোটেলে খেতে গেলাম কি একটা জায়গাতে ঘুরতে গেলাম - ব্যাস! যতক্ষণ পর্যন্ত না দশ বিশ পঁচিশটা ছবি আপলোড করতে পারলাম আনন্দ পনেরো আনা মাটি।
এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায়। কিন্তু একটি বৃদ্ধ পথে অসুস্থ হয়ে পড়লেন, একটি বাচ্চাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, একটি মেয়ে ইভ টিজিঙের শিকার হচ্ছে আমরা অপেক্ষা করি অন্য কেউ সাহায্য করুক - আমরা আগামীকাল পেপারে পড়ব - শেষ পর্যন্ত কি হোলো। যদি সেরকম একটা কিছু ঘটে যায় ব্যাস! সাজুগুজু করে মোমবাতির মিছিলে হাটবো - কত চিন্তা করি আমরা সমাজের জন্য।
এত চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে - এত দরিদ্র হয়ে যাচ্ছি আমরা - আমি নিজেকে এনালিসিস করেই বুঝি। যখন এসেছিলাম পাঁচ বছর আগে মিডল ইস্টে - ভেবে এসেছিলাম যাচ্ছি মাত্র দুটো বছরের জন্য - যেই কোম্পানিতে কাজ করতাম নাছোড় ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে অনুরোধ করেছিলাম "স্যার দু বছরের জন্যে ছুটি দিন!" উনি জীবন দেখেছেন - তাই মুচকি হেসেছিলেন "ওকে জয়ন্ত তুমি যাও! পাঁচ বছর পরে দেখা কোরো।" এখন বুঝি - গরীব হয়ে গেছি আরও বেশি।
আমার পারাদীপের দিনগুলি ছিল সোনায় বাঁধানো (যদিও তখোনো তা রিয়েলাইজ করতাম) - কিন্তু এখন চাহিদা আর যোগান - যোগান আর চাহিদা। ..... এই চাহিদার আবেদনে সাড়া দিতে গিয়ে ধাপ্পার শিকার হচ্ছি। বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে না পড়িয়ে টিউটরিয়াল হোম বা প্রাইভেট টিউসন ফেঁদে বসে শিক্ষকের ধাপ্পা, নার্সিং হোমগুলোতে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ব্যবসা বাড়িয়ে চিকিত্সকের ধাপ্পা, ঘুষখোর ইঞ্জিনিয়ারের ধাপ্পা, ইস্টার্ন বাইপাসে ওৎ পেতে বসে থাকা শিকারী পুলিসের ধাপ্পা, ওকালতি আর রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজী এর তুলনায় আমার কাছে নগন্য। ওদের কাছে তো কিসছু আশাই করিনা। কাকে ধাপ্পা? নিজেকেই নিজে ধাপ্পা। তবে ব্যতিক্রমী শিক্ষক, চিকিত্সক, উকিল, শান্তিরক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার-ও আছেন - সংখ্যা নগন্য - তাদের কে "ইউজলেস" বিশেষণ জুড়ে দিতেও ভুলি না।
আমার মনে হয় স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক মুষ্টিমেয় কয়েকজন যারা কনস্ট্রাকটিভ কাজের সাথে যুক্ত। নিরুচ্চারে আত্মম্ভরিতা ছাড়া তারা নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন এখনো। তাইনা দেশটা চলছে - তাইনা বেঁচে আছি. স্বাধীনতা একেবারে অর্থহীন শব্দ নয় - এই মানুষগুলি চিরদিন স্বাধীন ছিলেন আছেন ও থাকবেন। আমার মনে হয় স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মবলিদান দেওয়া মানুষগুলি ছিলেন প্রকৃত স্বাধীন - কারণ ওনারা মহত উদ্দেশ্যের তুলনায় ব্যক্তি স্বার্থকে অনেক ছোট মনে করতেন - আপন চাহিদা মেটানো তাদের কাছে ছিল সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
স্বাধীনতা দিবসে ওই মহতী চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হবার মানসিকতায় উত্তরণ হলে সঠিক ভাবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হবে.
নতুবা কেন জানিনা স্বাধীনতা শব্দটাই আমার কাছে একটা বিরাট ধাপ্পা -
স্বাধীন ভাবে চিন্তা করা, উপলব্ধি করা, দায়িত্ব কর্তব্য বোধে উদ্বুদ্ধ হওয়া এগুলো ভুলে যদি যাচ্ছি তাহলে দিন দিন আরও পরাধীন হয়ে পরছি।
গহীন নির্জনতায় স্বাধীনতা কাঁদে
কৌরব রৌরব বেওয়ারিশ আর্তনাদে
পাংশু মুখে অন্বেষণ দ্বার থেকে দ্বারে
রুদ্ধ বাতায়নে অনাহূত আমার আমি
ক্লান্ত, রিক্ত, ব্যর্থ বারে বারে
কোমল নিষাদ ভুলে গলায় বুভুক্ষু সুরে
নাকে বারুদের গন্ধ
শরীরে দগদগে ঘা ব্যথা প্রচন্ড
চোখে সত্যের অপলাপ
কানে ঝরাপাতা করুন বিলাপ
ভবঘুরে বাতাসের সশব্দ আলাপ
ঘন কালো মেঘ আঁধারপ্রাচীর মেলে
ঝঞ্ঝাঅশনি শিখায় ওঠে জ্বলে।
বিমূর্ত একটি প্রশ্ন সহসা বলে ফেলে -
স্বাধীন হতে চাওয়া জীবন তুমি কি পেলে?
এই লেখাটিকে আপনি কেবল সংরক্ষন করে রাখবেন?
উত্তরমুছুনএখানে কেউ পড়েনি । ফেসবুকে খোলা পরিসরে আনুন লেখাটা । কিছু মানুষ নিশ্চই ভাববে একবার ।