কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সমর কুমার সরকার

যাদুঘর

বাই-সাইকেল হ’লে ভাল-ই,না হ’লে হাত-ঘড়ি,
মনেতে সখ,কিনবো এ সব জমিয়ে টাকা-কড়ি।
গরীব ঘরের তরুণ যুবক,এর বেশী কি চায় ?
স্বপ্ন তো তার মাপে বাঁধা,কম যে বাড়ীর আয়।
খুচরো পয়সা,দু-এক টাকা দিতেন গুরুজনে,
খরচ ক'রে ফতুর হওয়ায় সায় দিত না প্রাণে।
কষ্ট হলেও জমিয়ে টাকা মাটির রঙীন ভাঁড়ে,
স্বপ্ন ছিল কিনব ও সব কয়েক বছর পরে।

বয়স তখন উনিশ ঘেঁষা,কলেজেতে পড়ি,
মন কেড়েছে পাশের বাড়ীর ষোড়শী সুন্দরী।
সকাল-বিকাল ছাদে উঠে,ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা,
রঙীন প্রজাপতি আমায় কখন দেবে দেখা।
এক ঝলকের চোখের দেখা,পান-পাতা ওই মুখ,
বুকের ভিতর কি আলোড়ন,মনে গভীর সুখ।
ইশারাতে মন খুলে সব বলি কেমন করে ?
মনেতে ভয়,বাড়ীর লোকের না পড়ে নজরে।

ঢিলের সাথে কাগজ বেঁধে,বার্তা পাঠাই তারে,
"বলতে যে চাই মনের কথা,মরছি জ্বলে-পুড়ে।
কাল দুপুরে,স্কুলে তুমি যেয়ো তাড়াতাড়ি,
সেখান থেকেই ‘যাদুঘরে'সটান দেবো পাড়ি।"
প্রেমিকা-কে সঙ্গে নিয়ে প্রথম কোথাও যাওয়া,
টাকা-কড়ি না নিলে কি খাব শুধুই হাওয়া ?
কত আছে দেখতে হবে,আমার কোষাগারে,
ভেঙে দেখি,তিরিশ টাকা জমেছে মোট ভাঁড়ে।

মাণিক রতন তিরিশ টাকা পকেটে-তে ভরে,
প্রেয়সীকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম যাদুঘরে।
খেয়াল হ'লো,সঙ্গিনী কে দেখছে সবাই চেয়ে,
ভাবছে বুঝি,"কেমন পাজী,স্কুল পালানো মেয়ে।
পরনেতে স্কুলের শাড়ি,কাঁধে বই-এর থলে,
সঙ্গে আবার লিকলিকে এক কচি গোঁফের ছেলে।"
প্রেম করতে এসে একেই লজ্জ্বাতে আধমরা,
তার পরেতে এ সব ভেবে পরাণ খাঁচা ছাড়া।

কেমন ক’রে বলি তারে,'তোমায় ভালবাসি',
মুখে নাহি যোগায় কথা,বোকার মত হাসি।
সঙ্গিনী কয়,"লোকের মাঝে চুপ টি ক'রে থাকো,
বুঝেছি সব মনের কথা,বলতে হবে না কো।
বলবে কি আর? এই কথা তো? 'তোমায় ভালবাসি',
ও সব আমার বোঝা সারা,নইলে কি আর আসি?
পড়লে ধরা ভীষণ বিপদ,হবে কেলেঙ্কারী,
যে করে হোক সময় মত ফিরতে হবে বাড়ী।

দিক্-দিশাহীন,স্বপ্ন রঙীন,চলা পাশাপাশি,
চোখের ভাষায় মনের কথা,মিষ্টি মধুর হাসি।
প্রাণে তুফান,জোয়ার উজান,চতুর ছলা কলা,
কত কিছু বলতে চেয়েও,কিছু নাহি বলা।
কোঁকড়ানো চুল,মন যে আকুল গন্ধ তেলের বাসে,
দাঁতের চমক,ঠোঁটের ঠমক,উষ্ণতা নিঃশ্বাসে।
বুক দুর্ দুর্,কি সুমধুর হাতে হাতের চাপ,
আলতো ছোঁয়াচ গনগনে আঁচ,বুকে তে উত্তাপ।

পাগল করা চোখের তারায়,মন হারানোর ডাক,
রক্ত কপোল,আবোল তাবোল মৃদু প্রেমালাপ।
কটাক্ষ জাল,মন বেসামাল,মত্ত মদালসা,
মনে মনে প্রাণের মিলন,নীরব ভালবাসা।
সুখের সময় চির দিন-ই ফুরায় তাড়াতাড়ি,
সঙ্গিনী দেয় তাড়া কেবল,ফিরতে হবে বাড়ি।
রেস্তোঁরা তে বসে আমায় করলো সমর্পণ,
নিবিড় ভালবাসার প্রতীক সুদীর্ঘ চুম্বন।

কষ্ট পেয়েছিলাম মনে,ভাঙতে টাকার ভাঁড়,
বিনিময়ে যা পেয়েছি,মূল্য কত তার ?
এক কিশোরী আমার ডাকে দিয়েছিল সাড়া,
সদ্য তরুণ মন কে ভীষণ দিয়েছিল নাড়া।
প্রথম কদম ফুলের মত,প্রথম প্রেমের পুলক,
স্বপ্নমায়া,আলো-ছায়ার রূপালী এক ঝলক।
এক প্রেয়সী এসেছিল,বিশ্বাসে ভর করে,
আপন হৃদয় উজার করে দিতে প্রেমিকেরে।

এই সমাজে সকল প্রেম-ই পায় না পরিণতি,
সেই কিশোরী হারিয়ে গেছে,শুধুই সে আজ স্মৃতি।
কথা ছিল,প্রথম প্রেমের দিন টি স্মরণ ক'রে,
আমরা দু'জন,সারা জীবন মিলব যাদুঘরে।
প্রতি বছর সে দিন আমি যাদুঘরে গিয়ে,
প্রতীক্ষাতে কাটাই বেলা,অনেক আশা নিয়ে।
যদি তাহার মেলে দেখা,চিনতে পারে মোরে,
চেয়ে নেব একটু ক্ষমা,অক্ষমতার তরে।


1 টি মন্তব্য:

  1. সুন্দর রূপক কবিতা...কবিতা নাকি জীবনের চালচিত্রের একটা ঝলক! খুব ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন