‘মুক্তগদ্য’
বিষয় রবীন্দ্রসংগীত
“আমার গান ঘরের মধ্যে মাধুরী পাওয়ার জন্য”-রবীন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন-প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু আবার তাঁর "আমার গান গাইতেই হবে- সব কিছুতে।” রবীন্দ্রনাথের প্রধান পরিচয় তিনি স্রষ্টা। সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশই তাঁর ধর্ম।তাঁর রচিত বিভিন্ন গানে আমরা নানান অনুভুতির প্রকাশ পাই। অসংখ্য গান তিনি রেখেগেছেন আমাদের জন্য, সামান্য দুই এক কথায়ে বলা বা বোঝান সম্ভবপর নয়।
নিসর্গের কবি রবীন্দ্রনাথ, আবার সমাজ জীবনেরও মহাকবি। তাঁর গোটা জীবনটাই ছিল বিশ্বমানবের সঙ্গে ভালবাসায় ধরা পরারা নিরন্তর প্রবাহ। তাঁর অনুভব - ‘ভালবাসা জীবনের মুল উৎস।’ প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা, সুনীল আকাশ, মুক্ত বাতাস সবুজ ঘাস, সর্বোপরি মানুষের প্রতি ভালবাসা, সেই ভালবাসার অনুভুতি থেকেই কবি লেখেন -
"গায়ে আমার পুলক লাগে, চোখে ঘনায় ঘোর / হৃদয়ে মোর কে বেঁধেছে রাঙ্গা রাখির ডোর ।" এই গান তিনি লিখেছেন
৪৮ বছর বয়সে,১৯০৯ সালে।গানটি আসাধারন গেয়েছেন , অনবদ্য স্বরে ভালবাসার অনুভূতি ফুটে উঠেছে আমাদের জর্জদা - দেব্ব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে। জর্জদার - শততম জন্মদিন ২০১১-র ২৪শে অগাস্ট পেরিয়ে এলাম।
১৯১৪ সালে অগাস্ট মাসে বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়, আমরা জানি। সেই কবির মন ছিল স্বভাবতই অস্থির অশান্ত। ব্যক্তিগত জীবনেও কছু ঘটনায় ছিল তাঁর মন বিপর্যস্ত , বিষাদময়, বিষন্ন। তিনি লিখলেন - "ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু"।
এই গানটাও জর্জদার কণ্ঠে ফুটে উঠেছে আর্তি - প্রার্থনা, বিমর্ষতার চাপ থেকে মুক্ত হবার আকুতি। বার বার দেব্ব্রত বিশ্বাসের কথাই আনতে হচ্ছে, রবীন্দ্র সংগীত আর জর্জদা যেন একে অন্যের পরিপুরক ।
গুরুদেব ব্যক্তিগত জীবনে নানা ঘাতপ্রতিঘাত দুঃখ বেদনা তাঁর লেখনীর মধ্যে ব্যক্ত করেছেন - ব্যক্ত করেন তাঁর যন্ত্রণা - "আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ..." এই গান ঝরে পড়ে তাঁর কলমের ডগায় পুত্র শমীর মৃত্যুর সময় - অবারিত জ্যতস্নায় সমস্ত জগৎ প্লাবিত, এই সুন্দর রাতে তিনি তাঁর পরম প্রিয় জনকে হারিয়েছেন, তিনি শোকাচ্ছন্ন। এই গান আমাদের মনকে আলোড়িত করে - আবার জর্জদার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কে, তাঁর সঙ্গীত নিয়ে অনেক অনেক কথা বলাযায়ে আবার বলতে পারা যায়ে না। তবু বলতে ইচ্ছা প্রকাশ করি - তিনি ছিলেন একাধারে শাক্তিমান, সচেতন, অসামান্য মেধাবী, এক জন শিল্পী। তাই তিনি লালনের বানী ও সুরকে নতুন ভাবে নির্মান করেছেন, যা একান্তই রবীন্দ্র বাউলের রচনা। লোক সংস্কৃতি বাঙ্গালীর মুল ধারার সংস্কৃতি। আর বাউল সংস্কৃতির সঙ্গে কবির ছিল প্রাণের যোগ। নিজেকে তিনি ভাবতেন বাউল সম্প্রদায়েরই একজন। লালনের গান রবীন্দ্রা মানসে এবং তাঁর সংগীতে প্রভাব ফেলে - "ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে – ও বন্ধু আমার / না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে নারে..." এই গান অসাধারণ গেয়েছেন শান্তিদেব দা - শান্তিদেব ঘোষ। শান্তিনিকেতনের ছাত্রী হবার সুবাদে শান্তিদেবদাকে খুব কাছ থেকেই দেখেছি। গুরুদেবের যোগ্য শিষ্য। রবীন্দ্রনাথের বাউল চেতনার মুলে আর একজনের নাম বলতেই হয় - গগন। গগনের "আমি কোথায়ে পাব তারে" - এই গানটির প্রেরণায় কবি লেখেন - "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায়ে ভালবাসি"... যে গানটি এখন বাংলাদেশর জাতীয় সংগীত।
কিংবদন্তী সুচিত্রা মিত্র, তিনি একজন পরিপূর্ণ শিল্পী - তাঁকে সম্প্রতি আমরা হারিয়েছি এবং একটা যুগের যেন সমাপ্তি ঘটল বলে মনে হয় - তাঁর কণ্ঠের "ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা..." এই গানই বলে দেয় ভারতগত জাতীয়তায় কবির গৌরব থাকলেও জন্মভুমির টান, সে যে নাড়ীর টান - আত্মীয় মানুষের টান - মাটির টান !! "অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো..." অসম্ভব প্রতিভাধর শিল্পী স্বাগতা - স্বাগতালক্ষী দাসগুপ্ত-র গলায়ে, তাঁর গায়কিই বলে –এই তমসাবৃত আকাশ , ব্যাপ্তচরাচর, আচ্ছন্ন সংশয় রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কে আর আমাদের ত্রাণ করবেন?
মানুষের জীবনে এমন কোন পর্ব নেই, এমন কোন চিন্তা নেই, এমন কোন ও ভাবনেই, যেখানে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নেই। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবদ্দশাতেই বলে গেছেন যে তাঁর গান হবে বাঙালির চিরদিনের বৈভব। রবীন্দ্রনাথের গান বিশ্বাত্মবোধে উজ্জীবিত সত্যের সাধনা, আমাদের সংস্কৃতি-র বিকল্পহীণ ওবোলোম্বোণ, আমাদের চৈতন্যের মুক্তির আকাশ, কবি গুরুর অত্যন্ত প্রিয়জন মোহর / কনিকা বন্দ্যপাধ্যায় - আমাদের প্রিয় মোহর দি তাই গাইলেন - “আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলবো না গো, গান দিয়ে দ্বার খোলাবো" ...
কবির প্রতিষ্ঠিত "বিশ্বভারতী" - যেখানে সমস্ত বিশ্ব উপস্থিত একনীরে। মনের মুক্তির আকাশ সবরকমভাবে খুঁজে পাবে মানুষ...শান্তিনিকেতন ...। আশ্রমের নামের মধ্যে জড়িয়ে আছে, সেই অনুভুতি - "আনন্দ"...। আশ্রমের আকাশ বাতাস মুখরিত রবীন্দ্রনাথের গানে। আকাশে বাতাসে ব্যপ্ত চরাচরে তাঁর সুর বেজে উঠুক - অন্ধকারের দ্বন্ধ থেকে উত্তরণ ঘটুক – আমাদের সকল কল্মুষ ধুয়ে যাক তাঁর সেই পুর্ন "আলোক ঝর্না ধারায়" ---
নিসর্গের কবি রবীন্দ্রনাথ, আবার সমাজ জীবনেরও মহাকবি। তাঁর গোটা জীবনটাই ছিল বিশ্বমানবের সঙ্গে ভালবাসায় ধরা পরারা নিরন্তর প্রবাহ। তাঁর অনুভব - ‘ভালবাসা জীবনের মুল উৎস।’ প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা, সুনীল আকাশ, মুক্ত বাতাস সবুজ ঘাস, সর্বোপরি মানুষের প্রতি ভালবাসা, সেই ভালবাসার অনুভুতি থেকেই কবি লেখেন -
"গায়ে আমার পুলক লাগে, চোখে ঘনায় ঘোর / হৃদয়ে মোর কে বেঁধেছে রাঙ্গা রাখির ডোর ।" এই গান তিনি লিখেছেন
৪৮ বছর বয়সে,১৯০৯ সালে।গানটি আসাধারন গেয়েছেন , অনবদ্য স্বরে ভালবাসার অনুভূতি ফুটে উঠেছে আমাদের জর্জদা - দেব্ব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে। জর্জদার - শততম জন্মদিন ২০১১-র ২৪শে অগাস্ট পেরিয়ে এলাম।
১৯১৪ সালে অগাস্ট মাসে বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়, আমরা জানি। সেই কবির মন ছিল স্বভাবতই অস্থির অশান্ত। ব্যক্তিগত জীবনেও কছু ঘটনায় ছিল তাঁর মন বিপর্যস্ত , বিষাদময়, বিষন্ন। তিনি লিখলেন - "ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু"।
এই গানটাও জর্জদার কণ্ঠে ফুটে উঠেছে আর্তি - প্রার্থনা, বিমর্ষতার চাপ থেকে মুক্ত হবার আকুতি। বার বার দেব্ব্রত বিশ্বাসের কথাই আনতে হচ্ছে, রবীন্দ্র সংগীত আর জর্জদা যেন একে অন্যের পরিপুরক ।
গুরুদেব ব্যক্তিগত জীবনে নানা ঘাতপ্রতিঘাত দুঃখ বেদনা তাঁর লেখনীর মধ্যে ব্যক্ত করেছেন - ব্যক্ত করেন তাঁর যন্ত্রণা - "আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ..." এই গান ঝরে পড়ে তাঁর কলমের ডগায় পুত্র শমীর মৃত্যুর সময় - অবারিত জ্যতস্নায় সমস্ত জগৎ প্লাবিত, এই সুন্দর রাতে তিনি তাঁর পরম প্রিয় জনকে হারিয়েছেন, তিনি শোকাচ্ছন্ন। এই গান আমাদের মনকে আলোড়িত করে - আবার জর্জদার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কে, তাঁর সঙ্গীত নিয়ে অনেক অনেক কথা বলাযায়ে আবার বলতে পারা যায়ে না। তবু বলতে ইচ্ছা প্রকাশ করি - তিনি ছিলেন একাধারে শাক্তিমান, সচেতন, অসামান্য মেধাবী, এক জন শিল্পী। তাই তিনি লালনের বানী ও সুরকে নতুন ভাবে নির্মান করেছেন, যা একান্তই রবীন্দ্র বাউলের রচনা। লোক সংস্কৃতি বাঙ্গালীর মুল ধারার সংস্কৃতি। আর বাউল সংস্কৃতির সঙ্গে কবির ছিল প্রাণের যোগ। নিজেকে তিনি ভাবতেন বাউল সম্প্রদায়েরই একজন। লালনের গান রবীন্দ্রা মানসে এবং তাঁর সংগীতে প্রভাব ফেলে - "ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে – ও বন্ধু আমার / না পেয়ে তোমার দেখা, একা একা দিন যে আমার কাটে নারে..." এই গান অসাধারণ গেয়েছেন শান্তিদেব দা - শান্তিদেব ঘোষ। শান্তিনিকেতনের ছাত্রী হবার সুবাদে শান্তিদেবদাকে খুব কাছ থেকেই দেখেছি। গুরুদেবের যোগ্য শিষ্য। রবীন্দ্রনাথের বাউল চেতনার মুলে আর একজনের নাম বলতেই হয় - গগন। গগনের "আমি কোথায়ে পাব তারে" - এই গানটির প্রেরণায় কবি লেখেন - "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায়ে ভালবাসি"... যে গানটি এখন বাংলাদেশর জাতীয় সংগীত।
কিংবদন্তী সুচিত্রা মিত্র, তিনি একজন পরিপূর্ণ শিল্পী - তাঁকে সম্প্রতি আমরা হারিয়েছি এবং একটা যুগের যেন সমাপ্তি ঘটল বলে মনে হয় - তাঁর কণ্ঠের "ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা..." এই গানই বলে দেয় ভারতগত জাতীয়তায় কবির গৌরব থাকলেও জন্মভুমির টান, সে যে নাড়ীর টান - আত্মীয় মানুষের টান - মাটির টান !! "অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো..." অসম্ভব প্রতিভাধর শিল্পী স্বাগতা - স্বাগতালক্ষী দাসগুপ্ত-র গলায়ে, তাঁর গায়কিই বলে –এই তমসাবৃত আকাশ , ব্যাপ্তচরাচর, আচ্ছন্ন সংশয় রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কে আর আমাদের ত্রাণ করবেন?
মানুষের জীবনে এমন কোন পর্ব নেই, এমন কোন চিন্তা নেই, এমন কোন ও ভাবনেই, যেখানে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নেই। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবদ্দশাতেই বলে গেছেন যে তাঁর গান হবে বাঙালির চিরদিনের বৈভব। রবীন্দ্রনাথের গান বিশ্বাত্মবোধে উজ্জীবিত সত্যের সাধনা, আমাদের সংস্কৃতি-র বিকল্পহীণ ওবোলোম্বোণ, আমাদের চৈতন্যের মুক্তির আকাশ, কবি গুরুর অত্যন্ত প্রিয়জন মোহর / কনিকা বন্দ্যপাধ্যায় - আমাদের প্রিয় মোহর দি তাই গাইলেন - “আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলবো না গো, গান দিয়ে দ্বার খোলাবো" ...
কবির প্রতিষ্ঠিত "বিশ্বভারতী" - যেখানে সমস্ত বিশ্ব উপস্থিত একনীরে। মনের মুক্তির আকাশ সবরকমভাবে খুঁজে পাবে মানুষ...শান্তিনিকেতন ...। আশ্রমের নামের মধ্যে জড়িয়ে আছে, সেই অনুভুতি - "আনন্দ"...। আশ্রমের আকাশ বাতাস মুখরিত রবীন্দ্রনাথের গানে। আকাশে বাতাসে ব্যপ্ত চরাচরে তাঁর সুর বেজে উঠুক - অন্ধকারের দ্বন্ধ থেকে উত্তরণ ঘটুক – আমাদের সকল কল্মুষ ধুয়ে যাক তাঁর সেই পুর্ন "আলোক ঝর্না ধারায়" ---
আমাদের শান্তিনিকেতনের আশ্রম সংগীত নিঃস্বাসে-প্রশ্বাসে আমরা অনুভব করি ভীষণ ভাবেই -
"আমরা যেথাই মরি ঘুরে সে যে যায় না কভু দূরে ।
মোদের মনের মাঝে প্রেমের সে তার বাঁধা যে তার সুরে।
মোদের প্রানের সাথে প্রানে সে যে মিলিয়েছে এক তানে,
মোদের ভাইয়ের সঙ্গে ভাইকে সে যে করেছে এক মন।"
আমাদের শান্তিনিকেতন।।
সুত্রঃ- বিভিন্ন পত্রিকা, নিজের গান শোনার অভিজ্ঞতা।
ঝরঝরে লেখা - অসাধারণ উপলব্ধি - একটা সুন্দর অনুভুতি পেলাম |
উত্তরমুছুনধন্যবাদ,
মুছুন