কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

নরেশ মণ্ডল

মেট্রো
 
সময়টা তখন সন্ধে গড়িয়েছে বেশ খানিটা। লোকজনের বাড়ন্ত আনাগোনা। সুস্মিতা দাঁড়িয়েছিল ঠিক ফুটপথটা ছেড়ে কয়েক পা রাস্তার দিকে। গেটটার সামনে, আশপাশে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে। কারও এক হাত কানে। ঘাড়টা একটু কাত। কারও হাতটা বুকের কাছে। বকে যাচ্ছে অনর্গল। হাঁকে কেউ গরম প্যাটিস। সুস্মিতা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে লোকটাকে। ওর দিকে তাকিয়েই আওয়াজটা দিয়েছিল। পাত্তা দেয় না। লোকটা আরেক দিকে হাঁক দিতে দিতে চলে যায়। একটা লোক টুল নিয়ে বসে আছে ফুট ছাড়িয়ে রাস্তায়। সামনে একটা উঁচু যায়গায় তারের ঝুড়িতে রাখা থরে থরে সাজানো ডিম। সিদ্ধ ডিম। খোলাটা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি ছুরি দিয়ে দু'ভাগ করে আলতো কোরে গোলমরিচ আর একটু নুন। ডিমে একটা কামড় দিয়ে হলটার দিকে তাকায় দীপেন্দু। আগে কি রমরমা ছিল হলটার। আজ ক্লান্ত ঘোড়া। দুরন্ত দৌড়ের স্মৃতি বুকে। কত জনের আজও দেখা করার যায়গা। ডিমে আর একটা কামড় দেয়। না এখনো তার আসার সময় হয়নি। কখন আসবে কে জানে। ওইদিকে সুস্মিতার ঘড়িও এগিয়ে চলে। ঠায় কতক্ষণই বা একই ভাবে দাঁড়িযে থাকা যায়। অনেক্ষণ বেরও হয়েছে। একটা কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কি খাওয়া যায়। হলের গেটের সামনে থেকে রাস্তায় নেমে আসে। টুলওলা লোকটার উপর নজর পড়ে। যে লোকটি সেদ্ধ ডিম যত্নসহকারে ছাড়িয়ে নুন গোলমরিচ মাখিয়ে দিচ্ছেন। একটা ডিম না নিয়ে সে পারল না। লোকটার দক্ষতা তাকে আকর্ষণ করেছিল। আলতো কামড়ে ডিমটা ভেঙেনিল। আঃ বেশ। ডিমটা বেশ আয়েস করে খায় সুস্মিতা। কুসুমটা খেতে ওর আরো ভালোলাগে। এবার একটু জলের দরকার। ব্যাগ থেকে পলিপ্যাকে মোড়া একটা বোতল বের করে। একঢোক গলায় ঢালে। ওকে জলখেতে দেখে পাশে থাকা দীপেন্দু  হাত বাড়ায়। অচেনা হাতে জলের বোতলটা ধরিয়ে দেয় সুস্মিতা। জলটা খেয়ে ফেরত দেয় বোতলটা। হাতে ঘড়ি নেই মোবাইলে সময়টা দেখে নেয় দীপেন্দু। ডিম খেল জল খেল। এখন একটা ঠাণ্ডা খেলে মন্দ হয় না। একটা করনেটো কেনে সুস্মিতা। খেতে খেতে এসে দাঁড়ায় সেই ডিমওয়ালাটারই কাছে। লোকটা নির্বিকার মুখে একের পর এক খদ্দেরকে পেশাদারি দক্ষতায় যত্নসহকারে ডিম ছাড়িয়ে দিচ্ছে। সুস্মিতার দেখতে বেশ ভালো লাগছে। দীপেন্দুও একটা করনেটো কিনে এনে খেতে শুরু করে। একজনের ঘড়ি বাজে। আর একজনের মোবাইল। সময় পার হয়ে যায়। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করা যায়। একটা মেয়ের পক্ষে বিশেষ করে এই রকম একটা যায়গায়! সুস্মিতা আর দাঁড়ায় না। ফোনটা বাড়িতে তাড়াহুড়ো করে ফেলে এসেছে। বাস ধরার জন্য এগিয়ে যায়। ততক্ষণে ডিমওয়ালার তারের ঝুড়িটা প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। রাত বাড়ছে। তারও ওঠবার সময় হয়েছে। অনেকটা রাস্তা হেঁটে যাবে। দীপেন্দু বার বার ফোনে চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে। রিং হয়ে যাচ্ছে কেউ ধরছে না। কি মেয়েরে বাবা। ফোনটা কখন থেকে বেজেযাচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। এমন আত্মভোলা হলে চলে। এ মেয়ের কাছে ফোনের কোনো গুরুত্বই নেই। এরা ফোন রাখেই বা কেন আর লোককে নাম্বারই বা দেয় কেন বুঝতে পারে না দীপেন্দু। অনেক হয়েছে মা এবার ছেড়ে দে এই ভাব করে ফোনটা বন্ধ করে। সারা মুখে বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে একরাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে ফিরে আসে সুস্মিতা। শুধু শুধু সময় নষ্ট হলো। অনেকগুলো কাজের থেকে সময়টাকে বের করেছিল বেশ চিন্তাভাবনা করে। রাত হয়েছে হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নেয়। হাতে অনেকগুলো কাজ পড়ে আছে সেগুলো শেষ করতে হবে। মাকে বলেরাখে সকালে ওর অনেক কাজ আছে। সময় মতো যেন একবার ডেকে দেয়। নিজের ঘরে ঢুকে কাজ নিয়ে বসে পড়ে।
লেখাগুলো বের করে। বইগুলোও। ভালো করে লেখাগুলোকে সংশোধন করে দিতে হবে। লেখা কম নয় অনেকগুলো। কাল এগারোটায় লোক আসবে। নিয়ে যাবে। কয়েকদিনের মধ্যে বইটা বের হবে। সেই উপলক্ষে হবে একটা সভাও। অনেক বিশিষ্ট মানুষ সেদিন উপস্থিত থাকবেন। নিবিষ্ট মনে কাজ করে সুস্মিতা। হঠাৎ মোবাইলের শব্দ হয়। বিছানায় বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা বেজে ওঠে। চেয়ার ঠেলে মোবাইলটাকে নিয়ে আসে। ফোনটাকে এখানে ফেলে গেছিল।

হ্যালো। কে বলছেন ?
আরে ম্যাডাম যে। মোবাইল বাজিয়ে বাজিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ছিলে কোথায় !
তুমি! ব্যাপার কি তোমার। সারাটা সন্ধ্যা-রাত তোমার প্রতীক্ষায় কাটিয়ে দিলাম। তোমার পাত্তা নেই।
কি বলছো! আমার পাত্তা নেই না তোমার পাত্তা নেই।
আমি তো দাঁড়িয়ে থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে পা ছাড়াবার জন্য একটু এগিয়ে গিয়ে ডিম সিদ্ধ খেলাম। জল খেলাম। করনেটো কিনে খেলাম।
হ্যা! বলছো কি! আমিওতো রাস্তার উপর টুলে বসা লোকটার থেকে সিদ্ধ ডিম খেলাম। আবার করনেটোও খেলাম। কতবার ফোন করলাম রিং হয়ে গেল।
আমি করনেটো খেলাম বললাম অমনি তুমিও বললে করনেটো খেলে। আমার কথা শুনে শুনে সব বলা হচ্ছে। বা বেশ মজা তো !
বিশ্বাস করো সুস্মিতা। আমি ঠিক কথাই বলেছি।
ঠিক আছে বলোতো দীপেন্দু তুমি সেদ্ধ ডিম কোথায় খেয়েছো ?
কেন! হলটার সামনে একটা লোক বিক্রি করছিল। তাইতো।
লোকটা কোথায় বসেছিল ?
তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না! বলব লোকটা কোথায় বসেছিল। একটা টুলের উপর। সামনে একটা উঁচু যায়গায় তারের ঝুড়িতে ডিম ছিল। এবার বিশ্বাস হলো তো।
সুস্মিতা তোমার ফোনটা কোথায় ছিল ?
আরে তাড়াহুড়ো করে বেরহতে গিয়ে বিছনায় ফেলে গিয়েছিলাম। না হলে কি এত সমস্যা হতো।
ঠিক বলেছো। তোমার সঙ্গে আমার দেখা হলো না। অতটা সময় মেট্রোর সামনে কাটালাম অথচ!
কখনও কখনও এমন হয়।
জানো ওখানে দাঁড়িয়ে আমি একটা মেয়ের কাছ থেকে জলও খেলাম।
বলছো কি!
হ্যাঁ, ঠিক বলছি।
আরে একটা ছেলেতো আমার কাছথেকেই জল চেয়ে খেল !
ছেলেটার গায়ে কি ছিল ?
বাটিক প্রিন্ট-র পাঞ্জাবী।
আরে আমার গায়েই তো ওটা ছিল।
জলটাতো আমার কাছেই ছিল।
তাহলে ?
বুদ্ধুরাম!

1 টি মন্তব্য: