কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সরদার ফারুক

এবারের ম্যানিফেস্টোঃকবিতা নিয়ে কিছু কথা

বাস্তবে এই প্রশ্নটা আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে । বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সুবিধে নিয়ে এবং খুব জনপ্রিয় সোসাল সাইট গুলোর কল্যানে মানুষ এত কবিতা লিখছেন - পড়ছেন - ভাবছেন যে মনে প্রশ্নের চিহ্ন এঁকে দিচ্ছে কেমন কবিতা আমরা পছন্দ করি ? কী রকম হওয়া উচিত কবিতার শরীর ? এই প্রশ্নগুলো সবাইকে ভাবায় । অনেকদিন হ’ল আধুনিক কবিতার মৃত্যু ঘোষণা করে এসেছে পোস্টমডার্ন কবিতা । বিনির্মাণ ,বিমানবিকীকরণও এখন পুরোনো হয়ে গেছে , তবু পাশ্চাত্যের নানা কাব্য আন্দোলনে আমরা এখনো আলোড়িত হই , চলে অন্ধ অনুকরণেরও মহড়া ।

কবিতার বিষয়বস্তু নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই । মানুষের মৌল আবেগগুলো চিরন্তন , যদিও সমস্যাগুলোর চেহারা বদলায় - নতুন নতুন দর্শনের আবির্ভাব ঘটে । প্রকরণ ও প্রকাশভঙ্গিতেই সবচে’ বেশি পরিবর্তন লক্ষ করা যায় ।পরিবর্তন যাই হোক - আমাদের পর্যবেক্ষনে কবিতা ক্রমশই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ।হাজারো কবিযশোপ্রার্থীর অবিরল সাধনা সত্ত্বেও পাঠক কেবল দূরে সরে যাচ্ছে । কবিতার বই ছাপানোর কথা শুনলে প্রকাশক আঁতকে ওঠেন ।তবু নিজের খরচে অসংখ্য বই বেরুচ্ছে , আর কবিরা দেদার সেসব বই পরিচিতজনদের বিলিয়ে দিচ্ছেন ।

আমরা জানি , অগ্রসর কবিতাপাঠে পাঠকের যে যোগ্যতা অর্জন আবশ্যক , সে যোগ্যতা এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও বিরল - তবু প্রকৃত পাঠকদের অনেকেও কবিতা পাঠ থেকে আনন্দ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলেই মনে হয় ।

পাশ্চাত্য কবিতা ভাবনা থেকে আমরা অনেক কিছুই সার্থক ভাবে নিয়েছি ।ফল্ট (চ্যুতি), এসট্রেঞ্জমেন্ট (অপরিচিতিকরন ) শিল্পের ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে ।তবু ভারতীয় কাব্যতত্ত্বে বর্ণিত - ‘রসাত্মক বাক্যই কাব্য’ এখনো প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। কবিতা কি আজ তার রস হারাচ্ছে ? কবিতার শরীর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ছবি ও সঙ্গীত ,হারিয়ে যাচ্ছে গন্ধ , বর্ণ , স্পর্শ সহ অন্যান্য সংবেদন? নানা নিরীক্ষার ফলে এক ধরনের চিন্তার উল্লম্ফনকে কবিতা বলে অভিহিত করা হলেও, সেগুলো পাঠককে স্পর্শ করতে ব্যর্থ হচ্ছে ।

কবিতা কোনো নির্দেশনা মানে না,তবু কয়েকটি বিষয় আমরা সবাইকে ভেবে দেখতে বলি -
১/ কবিতায় ছবি, সঙ্গীত (গীতলতা) ফিরিয়ে আনতে হবে। ছন্দ, স্পন্দ, প্রয়োজনে অন্ত্যমিল, অনুপ্রাস সব কিছু দিয়ে কবিতাকে স্মরণযোগ্য করে তুলতে হবে।
২/ কবিতায় স্পর্শ , ঘ্রাণ সহ সকল সংবেদন স্পষ্ট করতে হবে।
৩/ সব মিলিয়ে পাঠককে আমূল নাড়িয়ে দিতে হবে শব্দের শক্তিতে। আমরা জেনেছি ‘শব্দই ব্রহ্ম্’। শব্দে শব্দে বিবাহ দিতে হবে যথাশব্দের ব্যবহারে। কোন শব্দের সাথে কোন শব্দ অনিবার্য, আমরা তা খুঁজে বের করব।
৪/ বাকসংযম অনিবার্য, যে কথা দুই লাইনে বলা যায়, সে কথা দশ লাইনে বলবোনা
৫/ রহস্য ও ব্যঞ্জনা - একাধিক পাঠে ও পাঠকবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন অর্থের সম্ভাবনা থাকবে কবিতায়।
৬/ মৌলিক আবিষ্কার ও উন্মোচন থাকবে কবিতায়।
৭/ আমাদের ঐতিহ্য, ইতিহাস, জীবন সংগ্রাম, যাপিত অভিজ্ঞতা সবই উঠে আসবে শিল্পিতভাবে।
৮/ কবিতা কোন মতবাদিক আদর্শের দাসত্ব করবেনা, যদিও জীবনলগ্ন দর্শন আবশ্যিকভাবেই উঠে আসতে পারে।
১০/ সব মিলিয়ে তৈরী হতে হবে এক অভূতপূর্ব রস - কবিতার রস।

কবিতার জয় হোক, কবিতার পরিবার সুখী হোক। "পারিবারিক" ব্লগ-জিন সকলের সদিচ্ছায় এক অনন্য সাধারণ মাধ্যম হয়ে উঠুক অসংখ্য কবিতার পাঠক পাঠিকা সৃষ্টি করুক - কবিতাকে ভালোবাসবার আত্মিক শুদ্ধতা প্রদান করুক ।

২টি মন্তব্য:

  1. Khub upokari ekta article..... Onek help korbe kobita likhte. Apnake oshongkho dhonnobad Dada :)

    উত্তরমুছুন
  2. পেশাগত ব্যস্ততায় নেটে কম আসতে পারি ।তবু তরুনদের সাথে থাকতে ইচ্ছে করে । আমার সামান্য লেখায় আপনাদের প্রতিক্রিয়ায় আপ্লুত । সবাইকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই ।

    উত্তরমুছুন