কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৩

ধারাবাহিক - সিধ শর্মা

নিলু - সীমান্ত
সিধ শর্মা


পর্ব -১

কাল সারারাত চোখে ঘুম নেই নিলুর। পইপই করে বারণ করা সত্যেও সেই অফিস কাফেটেরিয়াতে লাঞ্চ করেছে। ইন্ডিয়ান স্পেশ্যাল - স্বাধীনতা দিবসে কয়জন ভারতীয় মিলে একসাথে খাবার খেয়েছে। কে যে হাবিজাবি খেয়ে এসেছে। সন্ধ্যেতে ফিরেই অস্বস্তি - পেটে যন্ত্রণা। রাত বাড়তেই সীমান্ত ধীরে ধীরে কাহিল -

"নিলু খুব দুখছে পেট!"

কি করলে কি ঠিক হবে ভেবে পায়না নিলু। বড়ে ভাইয়াকে দিল্লীতে ফোন লাগায় - ভাইয়া ঘুমে। ..ভাবী ধরতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে নিলু "কি করবো আমি এখন ভাবী ? ও যে আমার কথা কিছুই শোনে না। ..."

এরপর মেডিসিন - রাতভর শুশ্রুষা চলতেই থাকে। সীমান্ত ভোরের দিকে একটু ঘুমায়। স্বপ্ন দেখে -

সেই প্রথম দিককার কথা। সেও ছিল একটা স্বাধীনতা দিবসের ছুটির দিন। নিলু ওদের দেশের বাড়িতে নিয়ে গেছিল সীমান্তকে।সবুজ গাছগাছালি ভরা মনে হয় যেন সারা পৃথিবীটাই সবুজ রঙের তার মধ্যে একটা মাটির বাড়ি খড়ে ছাওয়া চাল - ভেতরটা কি সুন্দর ঠান্ডা। নিলু ওকে টেনে নিয়ে যায় হাত ধরে একটা গভীর দিঘী - বর্ষায় টইটুম্বুর ভরা যৌবনা কলসি ভরা সুখ - ওর সিঁড়িতে বসে নিলু জলে পা ডুবিয়ে ছলাত ছলাত শব্দ তোলে। নিলুর নরম পায়ে সীমান্ত পা লাগিয়ে বসে থাকে গায়ে গা ঘেঁষে। একটু দূরে সবার আড়ালে-জলে ভেসে থাকা একটা পদ্মকুঁড়ির ডগায় একটা ফড়িং-টকটকে লাল - যেন সীমান্ত ছোঁয়ায় নিলুর লাজে রাঙা মুখখানি। নিলু - সীমান্ত আর ওই ফড়িং - তিনজনই খুব সুখী তখন - আকাশ ঘন নীল- উড়ে উড়ে যাচ্ছে সবুজ টিয়া - ঘুরে ঘুরে মাছরাঙ্গা বসছে মাছের আশায় - ওই টিয়া - ওই মাছরাঙ্গা - আর সীমান্ত সকলেরই ঠোঁট লাল। ..

আষ্টেপিষ্টে কলতানে
গহীন সুখ সন্ধানে
রোমে রোমে চুম্বনে
ঠোঁট ভরে সুখ;
নিলুসুখ বাহুলতা
খুলে দিয়ে দ্বিধার ফিতা
ওষ্ঠ ডুবে থাকে
গভীর ভরাট বুক। ....সীমান্ত সাহসী হয়

"হ্যাট!" এখন না ....নিলু লজ্জায় রাঙা
"ক্যানো ?"
"ওই ওরা দেখছে না!"
"কারা ?" সীমান্ত পেছন ঘুরে দেখে -
"ওই যে ওরা" নিলু ফড়িং আর মাছরাঙ্গা দেখায় আঙ্গুল তুলে।

উফ! কিভাবে কেটেছিল সময় - কেমনে সুখস্বর্গে ভেসে গেছিল দুটি মন - সীমান্ত স্বপ্নের মধ্যেই হাসে।

নিলু বোঝে সীমান্ত স্বপ্ন দেখছে - তার মানে ওর ব্যথা একটু কমের দিকে। সীমান্তর ঠোঁটে উবু হয়ে একটা চুম্বন এঁকে দেয়....

বিহবলা রজনী
বয়ে চলা তটিনী
সুখ মন্দাকিনী
তির তির ধারায়। .....

সীমান্ত স্বপ্ন দেখেই চলে - নিলু হঠাতই দুহাতের বাঁধন থেকে পালায় ঝপ করে - শাড়ীটা গাছকোমর বেঁধে নেমে যায় ওই দিঘীতে ঝপ ঝপ ছলাৎ ছলাৎ - একটা উজ্জ্বল রাজহংসী গ্রীবা তুলে সীমান্তকে চোখের ইশারায় ডাকে -

"চলে এস!"

মন্ত্রমুগ্ধের মত সীমান্ত জলে নেমে যায় - খেয়ালই থাকেনা ট্রাউজার শার্ট খোলা হয়নি। হাত ধরে নিলু টেনে নেয় গভীরে। কি ঠান্ডা জল।..

"এই তু...মি সাঁতার জানো তো?"
"উহু"
"তালে নাবলে কেন? আমাকে জড়িয়ে রাখো"

আহা! নিলু বলছে জড়িয়ে থাকতে! তখন প্রথম দিককার কথা - নিলু অত সহজ হতে পারতনা - কিন্তু এই সময়ে কত সহজে বলে দিল "আমায় জড়িয়ে থাকো! আরে! পাগলি! তোমাকেই তো জড়িয়ে থাকবো সোনাল আজীবন।"

সীমান্ত একটা ডুবকি লাগায়। কেউ দেখতে পাচ্ছেনা এখন কোমর জড়িয়ে সীমান্ত।

"এই! ধ্যাত!" "বেশি অসভ্যতা করবে না কিন্তু!"

সীমান্ত উঠে পড়ে - অন্যদিকে মুখ ফেরায়। "বেশ"

"কি হোলো ! বাবুর রাগ হয়ে গেল? রাগ যেন একদম নাকের ডগায় লেগে থাকে!" বলে নাকটা আঙ্গুল দিয়ে ঘষে নাড়িয়ে দেয় নিলু।

"তবেরে!" সীমান্ত নিলুকে জড়িয়ে ধরে ......... উমমমমম ........

জাপটা জাপটি ঝাপটা ঝাপটি আর খিলখিল হাসির জোয়ারে পানকৌড়িগুলো দল বেঁধে একসাথে উড়ে পালালো - মাছরাঙ্গা বিরক্ত হয়ে তাকালো "ওর দৃষ্টি নিবদ্ধ মাছটা ডুব মারলো বলে" শুধু বাতাস একটু মুচকি হসে বলে গেল "আমি কিছু দেখছিনা"

নিলু বুকে লেপ্টে - একটু চোখের শাসন দিতে চেয়েছিল কিন্তু পারে না - ওই জলে মিশে যাওয়া রঙ ওই স্বপ্ন ওকে মাখিয়ে দিয়ে বাধ্য করে বলতে -

"নাও জলে ডুব দিয়ে স্বপ্ন দেখে নাও - যা খুশি - যেভাবে খুশি তোমার নিলুকে আদর করে নাও প্রানভরে কিচ্ছু বলবনা - আজ তুমি স্বাধীন।" ...

অনেকটা সময় পানিতে-দুজনে, ডুবেছে - ভেসেছে -আকাশে মুখ-চোখ বুজে-লাল, নীল, বেগুনী স্বপ্ন-মনে হচ্ছিল যেন আকাশটা অনেক নিচে নেমে আসছে- রঙধনু মেলে। ...কী যে অদ্ভুত লাগছিল..

সীমান্ত অস্ফুটে বলে ওঠে। .."নিলু" "আমার নিলু"

চোখ লেগে আসা নিলু শুনতে পায় ওঠে ধরমড়িয়ে "এই কি হচ্ছে? কষ্ট হচ্ছে সোনাবাবু? আমার সীমন !"

"না তো! তুমি সারারাত জেগে? সীমান্তর ঠোঁট ভরে হাসি ...

ভোর হোলো - প্রভাতের সূর্যোদয়কে স্বাগত জানাতে সারারাত ঝড়ে বিদ্ধস্ত পাখিটা কলকল করে গেয়ে ওঠে আনন্দগান -

আমার রাত ফুরোলো নিবিড় সুখ সন্ধানে
লজ্জাহীন বৃষ্টির ফোঁটা প্রতি স্পন্দনে
অপেক্ষা হল অবসান।
নির্মল ভোর তুমি আমি আছি পাশাপাশি
এই সুখসদনে। .....

নিলু মোবাইল টিপে কলকলিয়ে বলতে থাকে। ..."হ্যালো ভাবী ও ভালো আছে। আর চিন্তার কিছু নেই গো ...দিদি." 


1 টি মন্তব্য:

  1. যাক নিলু সীমান্ত এখানে ধারাবাহিকভাবে আসছে তবে... ভীষণ ভালো লাগা দুটো চরিত্র... ভালো লাগা রেখে গেলাম :)

    উত্তরমুছুন