কবিতার পরিবারের একমাত্র ব্লগজিন

এখনও পর্যন্ত  Website counter  জন ব্লগটি দেখেছেন।

শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৩

ছোটগল্প - নরেশ মণ্ডল

মুখোমুখি
নরেশ মণ্ডল



অনেক্ষণ বসেছিলম মুখোমুখি। কোনো কথা নেই। পরস্পর কেমন যেন চুপ মেরে আছি।

কেন ? ঠিক বুঝতে পারছি না। আছি এটা অনুভব করতে পারছি। একটা নীরবতা গ্রাস করে নিচ্ছে আমকে।জানি না অন্যজন কেমন আছে। কারণ আমরা কেউ কাউকে স্পর্শ করতে পারি না। শত চেষ্টা শর্তেও।কোনো শব্দও শুনতে পাই না। অনুভব করতে পারি আছি। মন উজার হওয়া কথাগুলো ভাসতে থাকে চোখের সামনে। পাহাড় ধোয়া জলও ছোঁয়া যায়। অথচ শব্দগুলো কেমন ভেসে যাচ্ছে সাবলীল ভাবে। ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাকে দেখতে পাচ্ছি। তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কখনও আনমনা ভাবে পাশ পাশ ফিরে অন্যদিকে চেয়ে আছে। সে যেভাবে দেখাবে আমাকে তাই দেখতে হবে। আমার মতো করে আমি তাকে দেখতে পাবো না। তাকে হাসবার কথা জানাতে পারি। সে হেসে কুটিকুটি হতে পারে। আমিও হাসতে পারি।ভীষণ জোরে গলা ফাটিয়ে। পাশের বাড়ির প্রতিবেশি ফোন করতে পারেন। সুস্থ আছি কিনা জানতে আগ্রহী হতে পারেন। নীলা বৌদির মিষ্টি রিনিঝিনি গলা কানির কাছে বেজে উঠতে পারে। কি ব‌্যাপার এত এত রাতে! গলা আরো আরো মোলায়াম হপে পারে। গাঢ় স্বর পাশের ফ্ল‌্যাট থেকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আমি ভাসছি মেঘের ভেলায়। সে কোন নদীর ধারে। কিংবা নির্জন রাস্তার ধারে উঁচু দক্ষিণ খোলা

কোণে। হুস করে দ্রুতগামী কোনো গাড়ি পার হয়। কোনো অজানা পাখি ডেকে যায় উড়ে।

মারুফার বিস্ময়ে হাসে। কপালের টিপটা আলগা হয়নি এখনো । কপালের চুলগুলো দুষ্টু বাতাসে এলোমেলো করে যায়। বাঁ হাত কপাল ছুঁয়ে ঠিক করে নিতে চায়। শব্দকে বহ্ম বলে। আমি ঠিক জানি না। ছোটো খাটো শব্দগুলো ফুল হয়ে ভাসে। হাসনুহানা, গোলাপ, কামিনী', জুঁই মারুফার ছুঁয়ে আছে। কত শত মালা গাঁথা হয়।প্রতিদিন। জীবনযাপনের টুং টাং ভেঙে পড়া বোধ রুচি জমা হয় রিসাইকেলবিনে। ঘেঁটে দেখার সময় বড় কম। জমতে থাকা ঝুড়িটা একদিন কেউ না কেউ সাফ করে দেয়। ফিরে দেখে ক’জন! আমার ফুলের সুবাস নিলে না তুমি। আসলে তুমি নিতে পারো কিনা সেটাই জানা হয়ে ওঠে না। তোমার ফুলের সুবাসও আমি নিতে পারিনি। কোনো না কোনো কারণে গড়ে ওঠে সম্পর্ক। হাত ধরে হাঁটি। আইসক্রিমে গাল ভরিয়ে পেসট্রিটে কামড়। কিছু একটা করব বলে টলটলে পায়ে ফিলটারেই ধরায় আগুন।

শূন্যটা গ্রাস করে আছে। আমাদের একত্র জীবনযাপনের ফাঁক গলে আমরাই কখন হয়ে উঠি অন্য মানুষ।আমাদের ছোটোকাল, উনিশ-কুড়ি জানা হয় না। জানতে চাই না বা জানাই না।

গোপনতা জমে থাকে নিজস্ব গোপন কুঠুরিতে। কালাধারে। কিছুটা অচেনাই থেকে যাই। বের হলে কখনও বিপন্নতা। সেখানেই মুখোমুখি। অন্য কোনো মুখ আর এক মুখের কাছে আসে। জানি না। অচেনা চেনা হয় দূর থেকেই। না জানা বাড়তে থাকে। তখনই....

-ভালো আছো?

-তুমি?

-ভালো। তোমার কবিতার অনুষ্ঠানটা কেমন হলো।

-বেশ ভালো হয়েছে। অনেকেই বেশ খুশি । কেউ কেউ এসে অভিনন্দন জানিয়ে গেল।

-তাহলে খুব ভালো হয়েছে বলো। তুমিতো খুব চিন্তায় ছিলে। বলে ছিলাম না মনে জোর আনো। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমাকে পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি এখান থেকে তোমাকে আর কতটা সাহায্য করতে পারি। কিছু বইয়ের খবর দিতে পারি। কিন্তু জোগাড় তোমাকেই করতে হয়েছে। আমি এক প্রান্তে আর তুমি কোথায়। অন্য দেশে। তবু আমরা কত কাছে। মনে হয় তোমার নিঃশ্বাসের শব্দও আমি পাই। কোন ফুলের অভিনন্দন নেবে তুমি। তোমার ঘরের রঙ জানি না। কোন ফুলে সাজানো ঘর। তোমার পরিবারপরিজন কিছুই জানি না আমি। তুমিও জানো না। কখনো কারো ছবি দেখোছো। যেমন আমিও। এখানেই মুখোমুখি চেনা। বসে থাকা। তির তির করে বয়ে যায় শব্দ। একটা ক‌্যানভাস ক্রমশ রঙিন থেকে রঙিন হয়।

তুলির টানে গড়েওঠে অবয়ব। কুলকুলে নদী এক পার ভেঙে গড়েতোলে নিজস্ব ভূমি। সেই

অন্যভূবনে দুজন মুখোমুখি ছাড়া নেই অন্য কোনো মানুষ। পাখা মেলে অন্য জগৎ। নিজস্ব গোপনতা ভাঙে।মনের শূন্যতা ক‌্যানভাস ভরায় রঙের গভীরতায়। রাত গভীর হয় মুখোমুখি তুলি হাতে আমরা দুজন।তোমার পিছনে নেই অন্য চোখ। আমারও। দেশের গণ্ডী ছেড়ে অন্যখানে আর এক মানুষ। প্রজাপতি মেলে রঙ। চেনা জন দেখে না মেলে চোখ।

হালকা নীল শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকো ব‌্যালকনিতে। আমি তোমায় ঠিক দেখে নেব। তোমার ছড়ানো চুলের জুঁই গন্ধ ঠিক পেয়ে গেছি আমি। মারুফার চাঁদের আলো তোমাকে ছুঁয়ে যাবে।

আমার আগে কেউ তোমাকে ছুঁয়ে যাক চাই না আমি।


এবার পি সি-র আলো নিভে যাক। কাল আবার। এই পৃথিবীটা আমাদেরই থাক।

1 টি মন্তব্য: